promotional_ad

এইচপি প্রোগ্রাম-আশীর্বাদ না অভিশাপ?

এইচপি দল
promotional_ad

২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রথমবারের মতো দেশের ক্রিকেটে হাই পারফর্মেন্স (এইচপি) ইউনিটের কার্যক্রম চালিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার রিচার্ড ম্যাকিন্সের তত্ত্বাবধানে ওই ক্যাম্প থেকে উঠে এসেছিলেন সাকিব, তামিম এবং মুশফিকদের মতো তারকারা।


কিন্তু দুঃখের বিষয় ২০০৭ সালের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় এইচপির কার্যক্রম। যদিও ২০১১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তৎকালীন সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামাল হাই পারফর্মেন্স আবারো এইচপি প্রোগ্রাম শুরুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।  কিন্তু সেই উদ্যোগ নেয়া পর্যন্তই সার। পরবর্তীতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে আর খুব বেশি এগুনো সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে।    


তবে মুস্তফা কামাল দায়িত্ব ছাড়ার পর তাঁর দেখানো পথই অবলম্বন করেছেন বর্তমান বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে পাপনের উদ্যোগে তৃতীয়বারের মতো শুরু হয় হাই পারফর্মেন্স দলের কার্যক্রম। 


নতুন করে এই প্রোগ্রাম চালু করা হওয়ার পর এখানে যুক্ত হয়েছিলেন মোট ৬৪ জন ক্রিকেটার। কিন্তু এতজন ক্রিকেটার থেকে মাত্র দুইজন ক্রিকেটার পরবর্তী জায়গা পেয়েছেন জাতীয় দলে। আর তাঁরা হলেন মুস্তাফিজুর রহমান এবং মেহেদি হাসান মিরাজ।  


অথচ বিসিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব আনাম এর আগে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন যে এইচপি থেকে পাইপলাইনের ক্রিকেটার তৈরি করা হবে। এই প্রোগ্রামের জন্য প্রায় ১০লক্ষ টাকাও বাজেট করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি ২০১৫ সালের মে মাসে।


বিসিবির এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেসময় বলেছিলেন, 'জাতীয় দলের জন্য সেরা ক্রিকেটার তৈরির লক্ষ্যে কাজ করবে এইচপি। এই প্রোগ্রামটি সাজানো হয়েছে অনেকগুলো দলের সমন্বয়ে এবং এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা পাবে।' 


কিন্তু মাহবুব আনামের কথার সারসংক্ষেপ যাই হোক না কেন, আদতে যে লাউ সেই কদুই রয়ে গিয়েছে অনেকটা। এইচপি প্রোগ্রাম এখন পর্যন্ত সেভাবে সফলতার মুখ দেখেনি। সরাসরি এইচপি থেকে জাতীয় দলের পরিকল্পনায় এসেছেন এমন ক্রিকেটার বেশ কম।



promotional_ad

এখন পর্যন্ত চারটি এইচপি প্রোগ্রামের মধ্যে সবগুলোতেই যুক্ত ছিলেন ওপেনিং ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম। তিনি ছাড়া আরও কয়েকজন ক্রিকেটারও ছিলেন গত তিন বছরে। কিন্তু সাদমান কিংবা আর কেউই এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের রাডারে উঠে আসতে পারেননি। 


এত ঘটা করে এইচপি প্রোগ্রাম শুরু করার পর এভাবে ব্যর্থতা মেনে নেয়া আসলেই বেশ কষ্টকর বৈকি। মূলত সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনার অভাবেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে এইচপি ইউনিট বলেই ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মতামত।


তবে বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু বিশ্বাস করছেন এইচপি এখনও একটি সম্ভাবনাময় এবং সাফল্যের একটি প্রোগ্রাম। তাহলে প্রশ্ন হল এই প্রোগ্রামের শুরু থেকে অংশ নেয়া সাদমান এখনও জাতীয় দলের রাডারে আসতে পারেননি কেন?


এর জবাবে নান্নু জানিয়েছেন মূলত দীর্ঘ ফরম্যাটের ক্রিকেটে সাদমানকে প্রস্তুত করতে চাইছে বিসিবি। আর এই কারণেই নাকি তাঁকে আরও সময় দেয়া হচ্ছে। ক্রিকবাজকে নান্নু জানিয়েছেন, আমরা সাদমানকে রাখছি কেননা তাঁকে আমরা লম্বা ফরম্যাটের জন্য বিবেচিত করছি। আমি মনে করি এইচপি ক্রিকেটাররা ভালোই করছে ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং আপনি এটাকেও একটি সফলতা হিসেবে বিবেচিত করতে পারেন।'


কিন্তু প্রধান নির্বাচকের কথার পুরো উলট পুরান যেন দেখা গেল বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট চেয়ারম্যান খালেদ মাহম???দ সুজনের কথায়। তাঁর মতে এইচপি প্রোগ্রামে দায়িত্বশীলতা প্রকট অভাব রয়েছে। সুজন জানিয়েছেন,


'তবে আমি মনে করি এখানে (এইচপি) দায়িত্বশীলতার অভাব প্রচুর রয়েছে। এটি লীগের ক্রিকেটার তৈরি করার জন্য বানানো হয়নি কারণ লীগের সেরা খেলোয়াড়দেরকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় এবং তাদের পরবর্তী ধাপ উৎরাতে হয় জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়ার জন্য। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে এইচপির ক্ষেত্রে এই বিষয়টি ভিন্ন এবং আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য উপায় বের করতে হবে।'


বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের দায়িত্বে থাকার সময় লঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অবশ্য এইচপি প্রোগ্রামকে গুরুত্ব দিয়েই দেখতেন। জাতীয় দলের পাইপলাইন সমৃদ্ধশালী করতে এইচপির প্রতি নজর দেয়ার পক্ষে ছিলেন হাথুরু। লঙ্কান এই কোচের সাথে দীর্ঘদিন কাজ করা সুজন নিজেই স্বীকার করেছেন এমনটা।



হাথুরু প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, 'সাবেক প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সবসময় চাইতেন যাতে ক্রিকেটাররা এইচপি ইউনিট থেকে তৈরি হয়ে আসেন যেন তারা জাতীয় দলের জায়গা করে নিতে পারে যখন প্রয়োজন তখনই।' 


তবে এইচপি প্রোগ্রামের ময়না তদন্ত করলে আরেকটি বড় সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। আর সেটি হল কম ম্যাচ খেলা। পর্যাপ্ত তত্ত্বাবধানের অভাব তো আছেই পাশাপাশি দেশ এবং দেশের বাইরে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননা এইচপি ইউনিটের ক্রিকেটাররা।


গত বছর অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডে সফর করে আসার পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার কথা ছিল এইচপি দলের। কিন্তু এখানেও বেঁধেছে বিপত্তি। কেননা শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড (এসএলসি) এই সিরিজের খরচ বহন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।


বোর্ডের একটি সুত্র থেকে জানা গেছে এরই মধ্যে আরেকটি নতুন প্রস্তাব তাদের পাঠিয়েছে বিসিবি। যেখানে বলা হয়েছে সফরের অর্ধেক খরচ বহন করবে বিসিবি।  এই প্রসঙ্গে এইচপি প্রোগ্রামের চেয়ারম্যান এবং সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় ক্রিকবাজকে জানিয়েছেন, 'আমরা সফরটি করতে আগ্রহী। যদি আমাদের অর্ধেক খরচ বহন করতে হয় তাতেও রাজি আছি আমরা।'


সুতরাং এক কথায় বলা যায় সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণ এবং তত্ত্বাবধায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতির প্রতিষেধক হিসেবে যে কাজ করতে সক্ষম হবে এইচপি প্রোগ্রাম সেটি সহজেই অনুমেয়। এই প্রোগ্রামের ফসল হিসেবে যদি একজন মুস্তাফিজ, কিংবা একজন মিরাজ উঠে আসতে পারেন তাহলে বাকিরা কেন নয়! 


এক্ষেত্রে অনেকেই হয়তো প্রতিভার অভাবের দোহাই দিবেন। কিন্তু সেটিকে খোঁড়া যুক্তি ব্যতীত আর কিছুই বলা যাবে না। কেননা কথাতেই আছে- যেখানে দেখিবে ছাই উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন। দেশের ক্রিকেটে এইচপি প্রোগ্রাম সেই ছাইয়ের ভাগাড়ে খোঁজা অমূল্য রতন হিসেবেই কাজ করছে। 



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball