'বোর্ড আমাদের হাতে ধরে খেলিয়ে দিতে পারবে না'

ছবি: বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, ক্রিকফ্রেঞ্জি

।।ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট।।
জাতীয় দলের পাইপলাইন হিসেবে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটকেই অভিহিত করা হয়। কেননা এখান থেকেই উঠে আসেন প্রতিভাবান সব বোলার এবং ব্যাটসম্যানেরা। আজকের মাশরাফি, সাকিব, তামিমরাও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেই জাতীয় দলে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন।
ডিপিএল, এনসিএল, বিসিএলের মতো ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মাধ্যমেই নিজেদের গড়ে নেয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা। কিন্তু এমন অনেক ক্রিকেটারই আছেন যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার পরও নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন বারংবার। অথচ তাদের প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ নেই কারোই।
তবে মূল অভাব যেটি রয়েছে সেটি হল চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার মানসিকতার অভাব। পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে ভালো করার স্পৃহাটাও অনুপস্থিত দেখা যায় অনেকের মধ্যেই। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল খান তাই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের মানসিকতার দিকেই জোর দিচ্ছেন বেশ। সাফল্য পেতে হলে নিজেদের মধ্যে চ্যালেঞ্জিং একটি মনোভাব তৈরি করতে হবে বলেই বিশ্বাস করেন তিনি। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তামিম বলেছেন,
'দেখুন, ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে অনেকে অনেক ধরনের কথা বলে। আপনি দুনিয়ার সব সুযোগ সুবিধা দিতে পারেন, কিন্তু প্লেয়ারদের মধ্যে যদি চ্যালেঞ্জটা না থাকে তাহলে কিন্তু কোন লাভ নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের মধ্যে চ্যালেঞ্জ থাকাটা। ভালো করার স্পৃহাটা থাকতে হবে। বোলিংয়ের কথা যদি বলি, বোলারদের লম্বা স্পেল খেলার চেষ্টা করতে হবে। এটা নিজের সাথে নিজের চ্যালেঞ্জ, কি আমার পক্ষে আছে আর কি আমার পক্ষে নেই এইসব না ভেবে ভালো করার চেষ্টা করা উচিত।'

খারাপ পারফর্ম করার ক্ষেত্রে উইকেট কোনও অজুহাত হতে পারেনা বলেও মনে করেন তামিম ইকবাল। এক্ষেত্রে গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের উদাহরণ টেনেছেন তিনি। উইন্ডিজদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের উইকেট ছিল যথেষ্ট সবুজ। আর তাই সেখানে পেসাররা সাফল্যও পেয়েছিলো বেশি।
এ ধরণের উইকেটে একেবারেই ভালো খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৪৩ রানে অলআউট হয়েছিল তারা। অনেকেই এই পারফর্মেন্সের পেছনে দায়ী করেছেন দেশের মাটিতে ফ্ল্যাট উইকেটে খেলার অভ্যাসকে। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উইকেটে অনেক সময়েই খেলা হয় ব্যাটিং সহায়ক অথবা ফ্ল্যাট উইকেটে।
উইন্ডিজ সফরে এই কারণেই সমস্যায় পড়তে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। তবে তামিম ইকবাল মনে করছেন কন্ডিশন কিংবা উইকেট যেমনটাই হোক না কেন ভালো খেলার চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করা উচিৎ ছিল সকলেরই। সেটি না পারাতেই কপাল পুড়েছে বাংলাদেশের। তামিমের ভাষ্যমতে,
'উদাহরণ হিসেবে আমাদের প্রথম টেস্টের কথাই ধরুন, আমরা তো সেখানে গিয়ে তর্ক করতে পারি না যে আমাদের ফ্ল্যাট উইকেট দেন। কন্ডিশন যেটা ছিল সেটাকে আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া উচিত ছিল সেটা আমরা নিতে পারি নি। এমন অনেক টেস্ট সিরিজ আছে যেখানে আমরা ভালো করেছি, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ভালো করেছি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও একই কথা, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে।'
শুধু তাই নয়, সকলের থেকে আলাদাভাবে চিন্তা করাটাই মুখ্য হিসেবে দেখছেন তামিম। বিশেষ করে যেকোনো উইকেটে নিজেকে প্রমাণ করাটাকেই সাফল্য বলে মনে করেন তিনি। আর এর জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করাটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন,
'১০ জন গড়পড়তা চিন্তা করলে আপনাকে আলাদা চিন্তা করতে হবে। ভাবতে হবে, এই ফরম্যাটে এই উইকেটে আমি নিজেকে কিভাবে ভালো করতে পারি। ব্যক্তি যদি নিজে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয় তাহলে সহজ হয়ে যাবে। বোর্ডের তরফ থেকে যা দেয়া দরকার তারা দিচ্ছে। এরচেয়ে বেশি আর কি আশা করতে পারি।'
বোর্ডের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন টাইগার ওপেনার। জানিয়েছেন বিসিবি তাদের সাধ্যমতো যা করার করছে। এখন বাকি সব কিছু করতে হবে ক্রিকেটারদেরকেই। বোর্ডের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে তামিমের ভাষ্য,
'বোর্ক একটা ভালো মাঠ দিচ্ছে, উইকেট দিচ্ছে, সব সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে ... এরচেয়ে বেশি তো আর তারা দিতে পারে না। তারা তো আমাদের হাত ধরে খেলিয়ে দিতে পারবে না। আমাদের নিজেদের দায়িত্ব হলো ওই অবস্থা থেকে আমাদের নিজেদের জন্য ভালো পারফর্মেন্সটা বের করে নিয়ে আসা।'