promotional_ad

এই জয়ের মৃত্যু হবে না, কখনো-কোনোদিন!

promotional_ad

ভর দুপুরে মিরপুরের কড়া রোদে জাতীয় দলের বেশিরভাগ সদস্যরা হালকা অনুশীলনে ব্যস্ত। এই সময় ড্রেসিং রুম থেকে ফকফকা নতুন একটি ব্যাট হাতে নিয়ে নক করতে নামলেন ওপেনার তামিম ইকবাল। তাইজুল ইসলামের লেফট আর্ম স্পিন সামলাচ্ছিলেন তামিম।  


এদিকে এশিয়া কাপের ফাইনালের ম্যাচ চলছিল, বাংলাদেশ ব্যাট করছিল ১১৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে। সাংবাদিক ও অনুশীলনরত ক্রিকেটারদের সবাই চাপা উত্তেজনা বয়ে বেড়াচ্ছিল। বিসিবি ভবনের টিভি সেটের সামনে স্বাভাবিকের চেয়েই একটু বেশি ভিড়।


১৫তম ওভারের সময় ভারতের লিজেন্ডারি ফ্রন্ট লাইন পেসার ঝুলান গোস্বামীকে টানা তিনটি চার হাঁকিয়ে দেয় বাংলাদেশের নিগার সুলতানা। বিসিবি ভবনের আশেপাশে টিভি সেটের সামনে থাকা লোকজনের উল্লাস কি আর চাপা থাকে?


অনুশীলনরত ক্রিকেটারদের কান ছুঁয়ে যায় সেই উল্লাস। তাইজুলের বলে নক করতে থাকা তামিম সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, 'কি হইসে ভাই, চার মারসে!' জবাবে কেউ একজন স্কোর শুনিয়ে দেয় তামিম ইকবালকে। 


১১৩ রানের টার্গেটে খেলতে নামা বাংলাদেশের স্কোর তখন তিন উইকেটে ৮৩ রান। স্কোর শোনার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের অনুশীলনে মন বসল না। মোসাদ্দেককে ডেকে ব্যাটটা তার হাতে তুলে দিয়ে ড্রেসিং রুমের দিকে খেলা দেখার উদ্দেশ্যে দৌড় দিলেন তামিম।


তামিমের দৌড় দেখে দুই একজন সাংবাদিকও মোবাইলে স্কোর দেখা বাদ দিয়ে টিভি সেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। ঠিক পরের ওভারেই টানা তিন চার মেরে রান রেট নাগালে নিয়ে আসা নিগার সুলতানা আউট। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক সুলতানার আউট হওয়ার জন্য একে অপরকে অপয়া বলতে থাকেন।


অসময়ে উইকেটের পতন ঘটলেও ক্রিজে আসা রুমানার চোখে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাচ্ছিল পুরো বাংলাদেশ। বোলিংয়ে ছিল দিনের সেরা বোলার পুনম যাদব। কিপটে বোলিংয়ের সাথে চার চারটি উইকেট নিয়েছেন নিজের চার ওভারে।


মিরপুর থেকে শুরু করে পুরো বাংলাদেশে তখন হাজার হাজার কোচ টিভি সেটের সামনে তাদের মন্তব্য প্রকাশ করে যাচ্ছিল। বিসিবি মিডিয়া লাউঞ্চে কেউ একজন বলে উঠল, 'ওর (পুনম) স্পেলটা দেখে খেলুক।' রুমানারা সেটাই করল। পুনম যাদব নিজের চার ওভারের স্পেল শেষ করলেন মাত্র ৯ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়ে।



promotional_ad

১৭তম ওভারে এসে বাংলাদেশকে চেপে ধরে একতা বিস্ত। দুই ডট বলে ??াত্র চার রান আসে একতার ওভারে। তবে ভাগ্য সাথে ছিল বাংলাদেশের। ফ্রন্ট লাইন পেসার শিখা পান্ডে ইনিংসের শুরুতে প্রথম ওভারেই দুই বাউন্ডারি খরচা করার পর পা মোচকে মাঠ ছাড়েন।


আর আরেক পেসার ঝুলন গোস্বামীকে সহজেই খেলছিল বাংলাদেশি ব্যাটাররা। বাধ্য হয়ে অধিনায়ক হারমানপ্রিত কউরকে বোলিং মার্কে আসতে হল। ইনিংসের শুরুতে শিখা পান্ডে মাঠ ছাড়ার পর থেকেই বাংলাদেশি সমর্থকরা এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। 


ইনিংসের এক সময় পার্টটাইমারের কাছে যেতেই হতো ভারতীয়দের। চাপের মুখে অধিনায়ক হারমারপ্রিতিই গুরু দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিল। ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই সুইপ শটে চার মেরে কিছুটা স্বস্তি এনে দেন ফাহিমা। বল বাউন্ডারিতে পৌঁছতেই বিসিবি অফিস কেঁপে ওঠে চেনা উল্লাসে।


পরের বলে অনেকটা একই শটে দুই রান আদায় করে নেয় ফাহিমা। কিন্তু পরের বলে ভুল করে বসেন তিনি। ফের সুইপ শটের চেষ্টায় চতুর হারমানপ্রিতের কাছে ধরা পড়েন ফাহিমা। স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।


ফাহিমার আউটে উৎসুক সাংবাদিকরা অধিনায়ক সালমাকে খুঁজছিলেন। 'কখন নামবে অধিনায়ক, পাঁচ উইকেট তো গেল!,' এমন প্রশ্ন বলছিলেন কেউ একজন। কিন্তু ডাগ আউটে প্রস্তুত থাকা সালমা নন, ক্রিজে আসলেন সানজিদা।


হারমানপ্রিতের ওভারে ১০ রান আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। এক প্রান্তে থাকা রুমানাকে চাপের মুখে বেশ শান্ত মনে হচ্ছিলো। জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারের সমীকরণ দাঁড়ায় ১২ বলে ১৩ রানের। ১৯তম ওভারে এসে দিপ্তি শর্মাকে বল তুলে দেন হারমারপ্রিত কউর।


মাত্র চার রান খরচা করে বাংলাদেশের জন্য ম্যাচ কঠিন করে তোলেন দিপ্তি। তখন হয়তো বিসিবি ভবনে থাকা সাংবাদিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের মনে ২০১২ এশিয়া কাপের দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করছিল। 'আবার বুঝি ১-২ রানের আক্ষেপে ট্রফি হারাবো?,' রুমানা কি হবেন সেদিনের মাহমুদুল্লাহ?


অবশ্য নেতিবাচক ভাবনা গুলো বিস্তার হতে দিলেন না রুমানা। হারমানপ্রিতের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে রুমানাকে স্ট্রাইক দেন সানজিদা। ঠিক পরের বলেই এক্সট্রা কাভারের উপর দিয়ে ইনসাইড আউট শটে চার আদায় করে নেন রুমানা। 



দুর্দান্ত প্লেসমেন্টে সমীকরণ চার বলে চার রানে নামিয়ে আনেন তিনি। 'ম্যাচ আমাদের, এই ফাইনাল আমাদের... এখান থেকে আমরা হারতে পারি না।,' এমন চাপা উত্তেজনা মনে জন্ম নিচ্ছিল সেই সময়টায়। কিন্তু সব সম্ভবের খেলা ক্রিকেট পরের বলেই দেখিয়ে দিল অনিশ্চয়তার মারপ্যাঁচ।


তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নেয়ার পর স্ট্রাইক পাইয়া সানজিদা ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাচ শেষ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। মিড উইকেট বাইন্ডারিতে সতর্ক ভেদা কৃষ্ণমূর্তি ক্যাচ লুফে নিতে ভুল করলেন না। আউট হলেও প্রান্ত বদল হয়ে রুমানার স্ট্রাইক পাওয়া কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়।


নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে আসেন জাহানারা। দুই বলে তিন রান দরকার বাংলাদেশের, এমন সময় লেগ সাইডে সিঙ্গেল আদায় করে নেয়ার পর ফের আরেক রান আদায় করে নিতে গিয়ে শিশুতোষ ভুলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন বাংলাদেশের ইনিংস টেনে নেয়ার কারিগর রুমানা আহমেদ। 


রুমানার আউটে কয়েক মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় চারপাশ। 'ওহ, আবার দুঃসহ স্মৃতি ফিরবে না তো?' শত চেষ্টা করেও এমন চিন্তা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছিলো না। জয়ের জন্য শেষ বলে দুই রান দরকার, এমন মুহূর্তে রুমানার বিদায়ে সালমার ক্রিজে আগমন ঘটে।


স্ট্রাইকে থাকা জাহানার মিডেল স্ট্যাম্প বরাবর ফুল লেন্থের বলটিকে ডিপ মিড উইকেটে পাঠিয়ে দিয়ে প্রাণপণ দৌড়ে দুই রান আদায় করে নেন। মুহূর্তের জন্য পেশাদারিত্ব ভুলে সিনিয়র ও জুনিয়র সাংবাদিকরা জাহানারাদের সৃষ্ট উল্লাসে সামিল হন। 



মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয়ের উন্মাদনায় মৃদু কেঁপে ওঠে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামও। বাংলাদেশ নারী দলের জন্ম দেয়া কাঁপুনি মনের কোণে জমাট বাঁধুক সকলের। চিরস্মরণীয় হোক প্রথম কোন বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের গল্প। 



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball