স্টিভেন স্মিথ খুনী নন

ছবি:

দৃশ্যটা দেখে নিজেকে সামলানো খুব কঠিন। জোহানেসবার্গ বিমানবন্দরে তাকে নিয়ে এগোচ্ছে পুলিশ। দু পাশ থেকে দু জন পুলিশ দুই হাত শক্ত করে ধরে রাখা। পেছন থেকে কাঁধের কাছে ধরে রেখেছেন আরও কয়েক জন। যেনো মারাত্মক কোনো অপরাধী; এতোটুকু ঢিল দিলেই পালিয়ে যাবে।
বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, এই দু দিন আগেও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। রূপকথার মতো যিনি নিজেকে একজন লেগস্পিনার থেকে বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যানে পরিণত করেছিলেন, সেই স্টিভেন স্মিথ।
সেই স্মিথকে আজ পুলিশের হাতে এভাবে নিজেকে সপে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়তে হলো। কেনো? স্মিথ কী খুন করেছেন? না, স্মিথ আইনের বিচারে কোনো অপরাধ করেননি। ম্যাচ পাতাননি, ম্যাচের তথ্য কাউকে ফাঁস করে ফিক্সিংয়ে সহায়তা করেননি। কিচ্ছু না।
একটা বল টেম্পারিংয়ের ঘটনা ঘটেছে তার দলে। তিনি সেই ঘটনা জানতেন। জেনেও বাঁধা দেননি এই অপরাধে তার সাথে ঘৃন্য অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে। অথচ স্মিথ চাইলে এই কান্ডে প্রতারণা করে নিজেকে নিরপরাধ রাখতে পারতেন। বল টেম্পারিং ক্রিকেটে অহরহ হয়।

সেটা যে ক্রিকেটার করেন, তিনিই শাস্তি পেয়ে থাকেন। শাস্তিটাও খুব সামান্য। দলের ৫ রান জরিমানা আর ম্যাচ ফির একটা অংশ কেটে নেওয়া। কোনো সময় বল টেম্পারিংয়ের কথা কেউ স্বীকার করে না। সে জন্য এটা নিয়ে বেশীদিন কথাও হয় না। এবার স্মিথ একটা উদাহরণ তৈরী করলেন।
তার সহঅধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার বল টেম্পারিংয়ের পরিকল্পনা করলেন এবং কাজটা মাঠে করলেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। এটা ধরা পড়লো ক্যামেরায়। স্মিথ চাইলে অন্য সব অধিনায়কের মতো কিছু জানি না, বলে চুপ থাকতে পারতেন। তিনি তা না করে নায়োকোচিত একটা কাজ করলেন।
ব্যানক্রফট ও ওয়ার্নারের সামনে এসে দাড়ালেন। সংবাদ সম্মেলনে বললেন, তিনি সব দায় নিচ্ছেন। এই কথাটাই তাকে ফাঁসিয়ে দিলো। তরুন ক্রিকেটারকে বিপদে না ফেলতে যে দায় স্বীকার করলেন, তার ফলে ইতিমধ্যে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন। প্রায় ৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে এই এক বছরে।
পাশাপাশি স্পন্সর হারাতে শুরু করেছেন। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এ ছাড়া হয়তো উপায়ও ছিলো না। কারণ, স্মিথ এভাবে প্রকাশ্যে স্বীকার করায় দেশটির প্রধাণমন্ত্রী অবধি ক্ষেপে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া স্পন্সর হারানোর ভয় ছিলো তাদের। যদিও শাস্তি দেওয়ার পরও স্পন্সর হারাচ্ছে তারা।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ার কারণটা বোঝা যায়। তারা যে বাড়াবাড়ি করছেন, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাড়াবাড়ির কারণ হলো, নিজেদের রক্ষা করা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকান প্রশাসন কেনো এই বাড়াবাড়িটা করলো? তাদের কী নিরাপত্তার নামে স্মিথকে এই অপমানটাও করা জরুরী ছিলো!