ভারত-পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার বছর

ছবি:

আজ শেষ হতে যাওয়া বছরটা আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ঠিক কারো একার ছিলো না। সব ফরম্যাটে নিজেদের মাঠে অমিত শক্তিধর ছিলো ভারত। অন্য দিকে পাকিস্তান জিতেছে বছরের একমাত্র বৈশ্বিক ট্রফি। আর অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজ জিতে গৌরব ফিরিয়েছে।
এসবকিছুর সাথে আরও অনেক ঘটনা ছিলো বছর জুড়ে। তার থেকেই বাছাই করা কিছু ঘটনায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক-
চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান
এই ইংল্যান্ডে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিলো এই পাকিস্তান। কিন্তু সেই দলের সাথে বর্তমান দলের তুলনাই হয় না। কেউ তাই প্রত্যাশাই করেনি। অথচ ওয়ানডের শীর্ষ আট দলের অংশগ্রহণে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শিরোপা জেতে পাকিস্তান। শুরুর দিকে পাকিস্তানের পক্ষে বাজি ধরার লোক ছিল নগণ্য। সেই পাকিস্তানই একের পর এক মাচ জিতে জায়গা করে নেয় ফাইনালে।
সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। কাগজে কলমে অথবা শক্তির বিবেচনায় ভারতের ধারেকাছেও ছিল না পাকিস্তান। কিন্তু সবাইকে অবাক করে সেই পাকিস্তানই প্রথমবারের মতো ঘরে তোলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা। আর সেখানে শেষ চারে গিয়ে শেষ হয় ১১ বছর পর খেলতে নামা বাংলাদেশের।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া
এই সিরিজটা শুরুর আগে থেকেই একটা যুদ্ধ যুদ্ধ রব ছিলো। ভারত নিজেদের মাটিতে অনেকদিন ধরে অপরাজেয়। সেখানে উপমহাদেশে অস্ট্রেলিয়ার কখনোই বড় কোনো পারফরম্যান্স ছিল না। সিরিজ শুরু হতেই ব্যাপারটা উল্টে গেলো। স্টিভ ও'কিফের ঝলকে পুনেতে ‘অপরাজেয় ভারতকে’ ৩৩৩ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। ওই টেস্টে ও'কিফ একাই নেন ১২ উইকেট।
এরপর বেঙ্গালুরু টেস্ট। সেই টেস্টের প্রথম দিনই নাথান লিঁওর জাদুতে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ওখান থেকেই ঘুরে দাড়ায় ভারত। সিরিজে বাকিটা সময় নিজেদের প্রমাণ করে কোহলির দল। যদিও, লড়াই হয়েছিল হাড্ডাহাড্ডি। তবে শেষ অবধি জয়ী দলের নাম ভারত। অনেক তর্ক-বিতর্কও হয়। সিরিজ শেষে কোহলি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে আর কোনও বন্ধুত্ব নয়।’
অস্ট্রেলিয়ার উত্থান

বাংলাদেশের কাছেও টেস্ট হারার পর লোকেরা মনে করেছিলো, এই অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আর অ্যাশেজ অন্তত জেতা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে ইংল্যান্ড গত পাচ অ্যাশেজের মধ্যে চারটিই জেতার পর এটা তাদে পক্ষেই মত বেশী ছিলো। কিন্তু স্টিভেন স্মিথের সাথেই পেরে উঠলো না ইংল্যান্ড। প্রথম তিন টেস্টেই হেরে অ্যাশেজ খোয়ালো তারা।
দুই গ্রেটের বিদায়
পাকিস্তানের সোনালী প্রজন্ম চলে যাওয়ার পর দলটাকে টেনে নিচ্ছিলেন দুই গ্রেট মিসবাহ-উল হক ও ইউনুস খান। ২০১০ সালে ফিক্সিং ইস্যুতে বিধ্বস্থ পাকিস্তান দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মিসবাহ। এরপর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে পাকিস্তানকে তুলেছেন টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষে। তার অধিনায়কত্বে ৫৬টি টেস্ট খেলে ২৬টিতেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান।
গেল মার্চে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টেস্টে বিদায় জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে। একই ম্যাচে ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন ইউনুস। সেই সিরিজেই প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
মনোহরের মন বদল
শশাঙ্ক মনোহরকে বলা হয়, আইসিসির ত্রাতা। আইসিসি যখন ডুবতে বসেছিলো, তিনি এসে হাল ধরেন এই প্রতিষ্ঠানের। ২০১৬ সালের মে মাসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আইসিসির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শশাঙ্ক মনোহর। কিন্ত বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মে মাসে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন আইসিসির প্রথম স্বাধীন চেয়ারম্যান। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় তাকে। আইসিসির বোর্ড কমিটির সদস্যদের অনুরোধে ফেরেন শশাঙ্ক। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আইসিসির চেয়ারম্যান পদে দেখা যাবে তাকে।
নতুন দুই টেস্ট খেলুড়ে
দীর্ঘদিন ধরেই টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা আটকে ছিলো দশে। সর্বশেষ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া নতুন দেশ ছিলো বাংলাদেশ। তারপর থেকে চলতে থাকা এই অচলায়তন অবশেষে ভাঙলো এই বছর। টেস্ট স্ট্যাটাস পেলো আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান। যদিও এই দুটি দেশের অবকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে এই অর্জনটা করেছে তারা।
টেস্ট স্ট্যাটাস পেলেও এখনও অভিষেক হয়নি আফগানিস্তান-আয়ারল্যান্ডের। যতদূর বোঝা যাচ্ছে, আফগানিস্তান নিজেদের প্রথম টেস্ট খেলবে ভারতের বিপক্ষে। আর আয়ারল্যান্ডের প্রথম টেস্ট প্রতিপক্ষ হবে ইংল্যান্ড কিংবা পাকিস্তান। একই সাথে পাল্টে গেছে ক্রিকেটের ভবিষ্যতও। আগামী ২০১৯ সাল থেকে টেস্ট ও ওয়ানডে লিগের আদলে যাত্রা শুরু করবে আধুনিক ক্রিকেট।
পাকিস্তানে ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন
পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরাানোর জন্য সব চেষ্টা যখন বিফলে গেলো, তখন হাত লাগিয়েছে আইসিসি। ২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কার টিম বাসে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজন থেকে নির্বাসিত হয় পাকিস্তান।
২০১৫ সালে ঝুঁকি নিয়েই পাকিস্তান সফরে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। অবশেষে এই বছর আইসিসি এক পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়ে পাকিস্তানে ক্রিকেট ফেরানোর জন্য কাজ শুরু করে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবার লাহোরে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বিশ্ব একাদশ। এরপর অবশ্য শ্রীলঙ্কা দলও একটি টি-টোয়েন্টি খেলে এসেছে।
স্টোকসের কাণ্ড
তখন ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড। পরদিন ম্যাচ, এমন সময় বিশাল এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। ব্রিস্টলের এক নাইট ক্লাবে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে।
তখন স্টোকসের সাথে ছিলেন তার সতীর্থ অ্যালেক্স হেলস। স্টোকসের এমন কাণ্ড ভালভাবে নেয়নি ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। শাস্তি স্বরূপ অ্যাশেজ সিরিজের জন্য ঘোষিত ইংল্যান্ড দল থেকে বাদ পড়েন সহ-অধিনায়ক স্টোকস। তবে ওয়ানডে সিরিজের জন্য দলে বিবেচিত হয়েছেন স্টোকস-হেলস দুজনই।