তামিমের তিন সঙ্গীর পোস্টমর্টেম

ছবি:

২০১৯ বিশ্বকাপে তামিমের ওপেনিং সঙ্গী কে হবেন? বেশ কয়েক বছর ধরে সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস ও এনামুল হক বিজয়কে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওপেনিংয়ে খেলিয়েছে ম্যানেজমেন্ট। ধারাবাহিকতার অভাবে কেউই নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করতে পারেনি। গত জুনে ইংল্যান্ডে খেলে আসা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ইনিংসের সূচনা করে।
তামিম ইকবাল টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বনে গেলেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ ছিলেন সৌম্য। ইমরুল কায়েস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তিন নম্বরে ব্যাট করে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। আর একই সময় ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা রানের মধ্যে আছেন এনামুল হক বিজয়, যিনি কিনা ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ওপেনার হিসেবে একটি ম্যাচ খেলেছিলেন। বাউন্ডারিতে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধের ইনজুরির কারনে বিশ্বকাপের মাঝপথে দেশে ফিরতে হয় বিজয়কে।
দল থেকে বাদ পড়ার পর থেকেই নিয়মিত লিস্ট এ প্রতিযোগিতায় রান করে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এখন থেকেই দল গঠন করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ২০১৯ বিশ্বকাপ মাথায় রেখে এই তিন ওপেনারের শক্তি ও দুর্বলতা গুলো খুঁজে বের করার চেস্টা করা যাক...
ইমরুল কায়েসঃ ২০১১ বিশ্বকাপে সফল ইমরুল কায়েসের পারফর্মেন্স অনেক আশার সঞ্চার করেছিল। তামিমের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে ইমরুলই ছিল তখনকার সেরা পছন্দ। বিশেষ করে তামিমের পার্টনারশিপ ম্যান হিসেবে রেপুটেশন দাঁড় করাতে সক্ষম তিনি। তামিমের ছায়ায় ব্যাট করায় পটু ইমরুল বাংলাদেশকে বেশ কিছু ম্যাচে ভালো সূচনা এনে দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা ওপেনিং জুটি খুঁজতে গেলে সবার উপরে থাকবে তামিম-ইমরুল জুটি (গড় ৪০)।
ব্যক্তিগত পারফর্মেন্স দেখতে গেলে দেখা যায়, ক্যারিয়ারের শুরুতে নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে বেশ কিছু নজরকাড়া ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন ইমরুল। ২০১০ সালের দিকে ঢাকার মাঠে ভারতের বিপক্ষে ৭০ (১০০) রানের ইনিংসটি ইমরুল কায়েসকে বেশ পরিচিতি এনে দেয়। একই সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও বেশ উড়ন্ত সূচনা (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২ রান) করেছিলেন তিনি।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন নিউজিল্যান্ড সিরিজ, নেপিয়ারে। দারুন স্ট্রোক মেকিং দেখিয়ে ১৩৮ বল খেলে ১০১ রানের ইনিংস খেলেন এই বাঁহাতি। আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা ইমরুল ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরেও রানের দেখা পান। সিরিজে ধীর গতির একটি ফিফটি হাঁকান তিনি। এশিয়া কাপেও রানে ছিলেন, ওয়ানডে মেজাজের বাইরে গিয়ে ব্যাটিং করে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফিফটি খুঁজে পান ইমরুল।
একই বছর ইংল্যান্ড সফরে ইংলিশদের আঙ্গিনায় বাংলাদেশের প্রথম জয়ের ম্যাচে স্মরণীয় ফিফটি (ব্রিস্টলে) হাঁকান তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো ফর্ম ধরে রাখেন পরের বছর ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে। ব্রিস্টলের পর চিটাগংয়ে বিশ্বকাপের ম্যাচে চাপের মুখে সময় উপযোগী রান (৬০ রান ১০০ বলে) উপহার দিয়েছেন ইমরুল। একই বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডস বিপক্ষে সত্তর ছাড়ানো স্কোর গড়েন তিনি।
ক্যারিয়ারের শুরুতে অপেক্ষাকৃত ধারবাহিক ব্যাটিং করলেও খেই হারান ইমরুল। ফলাফল স্বরূপ দল থেকে বাদ পড়তে হয় তাকে। ২০১৪ সালের দিকে ঘরোয়া ক্রিকেট পারফর্ম করে ফের জাতীয় দলে জায়গা করে নেন ইমরুল। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ওয়ানডে স্কোর গড়ার ম্যাচে ফিফটি হাঁকান তিনি। তবে ফর্ম হীনতায় ওয়ানডে দলের বাইরে যেতে হয় ইমরুলকে।
২০১৫ বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও বিবেচনা করা হয়নি এই বাঁহাতিকে। তবে আনামুল হক ইনজুরি বিশ্বকাপে ইমরুলের দরজা খুলে দেয়। আচমকা দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় উড়াল দেয়া ইমরুলের বিশ্বকাপ ছিল ভুলে যাওয়ার মত। ২০১৫-১৬ মৌসুমে সৌম্য সরকারের কাছে ওপেনিং পজিশন হারিয়ে বসা ইমরুল ওয়ানডে দলে ফিরেছেন ২০১৬ সালে, ইংল্যান্ড সিরিজে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে।
২০১৬-১৭ মৌসুমে ফের নিজেকে হারিয়ে খুঁজে চলছেন তিনি। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডে একটি ফিফটি ও বছরের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে এক ফিফটিই ইমরুলের সম্বল। বেশিরভাগ বাংলাদেশি ক্রিকেটারের মত ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট ইমরুলের ব্যাটিংয়ে। প্রান্ত বদল করে খেলাতেও দক্ষ নন তিনি। চাপের মুখে রান তাড়া করতে গিয়ে বড় শট খেলে খেই হারানোর উদাহরন রয়েছে তার। হাতে অনেক শট থাকলেও সময় বুঝে উপযোগী শট নির্বাচনে সমস্যা রয়েই গেছে দশ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ইমরুলের।
ইমরুলের ইনিংস বড় করার দক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ। ৭০ ইনিংসে টপ অর্ডারে ব্যাট করে দুইটি সেঞ্চুরির বিপরীতে ১৪টি ফিফটির মালিক ইমরুল। ধারাবাহিকভাবে উইকেটে জমে গিয়ে ইনিংস লম্বা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ব্যাটিং গড় (২৯) তারই প্রতিচ্ছবি বহন করে। স্ট্রাইক রেটও ইমরুলের হয়ে কথা বলছে না। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটে ওপেনারদের স্ট্রাইক রেট যেখানে ৯০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে ক্যারিয়ার জুড়ে মাত্র ৬৯ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন ইমরুল।

এনামুল হক বিজয়ঃ ২০১২-১৩ মৌসুমে ইমরুল কায়েস দল থেকে বাদ পড়ার পর ওপেনিংয়ে সুযোগ মিলে ডানহাতি তরুন এনামুল হক বিজয়ের। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে দারুন পারফর্মেন্সের রেপুটেশন নিয়েই বিজয়ের উত্থান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা অনেকটা ইমরুলের মত। পূর্ণ শক্তির ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুন ব্যাটিং করে আশা জাগান তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসেই খুলনার মাঠে ১২০ রানের (১৪৫ বল) ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন বিজয়। একই সিরিজে দুটি ত্রিশ ঊর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। পরের বছর শ্রীলঙ্কা সফরে দুটি ম্যাচে ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দলের বাজে ফর্মের সময় দলের ওপেনার ছিলেন তিনি।
তামিম ইকবাল রান খরায় ছিলেন তখন। ফলে ক্যারিয়ারের শুরুতেই চাপ নিয়ে পারফর্ম করতে হয় তাকে। ২০১৪ এশিয়া কাপে কয়েকটি ফিফটির ঊর্ধ্ব ইনিংস খেলেন বিজয়। তবে ইনিংস লম্বা হচ্ছিল না বিজয়ের। তবে ফতুল্লায় ভারতের বিপক্ষে মুশফিকের সেঞ্চুরির দিনে ৭৭ রান করেছিলেন তিনি। একই আসরে দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ঠিক ১০০ রান (১৩২ বলে) করেন এনামুল। সব মিলিয়ে ২০১৪ সালের দিকে ভালোই ফর্মে ছিলেন তিনি। কয়েক ম্যাচে ফিফটি ছুঁই ছুঁই স্কোর গড়ে আউট হলেও বাংলাদেশকে ধারাবাহিকভাবে ভালো সূচনা এনে দিয়েছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম ওয়ানডে নজরকাড়া সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ১৩৮ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
২০১৪ সালের শেষের দিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুইবার সেঞ্চুরির সুযোগ হাতছাড়া করেন। চিটাগংয়ে ৮০ রান (১১০ বল) ও ঠিক পরের ম্যাচেই ঢাকার মাঠে ৯৫ রানের (১২০ বল) স্মরণীয় ইনিংস খেলে আউট হন বিজয়। ফর্মে থাকা অবস্থায় ২০১৫ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে প্রথম পছন্দ হিসেবে জায়গা পান বিজয়। তবে কাঁধের ইনজুরি বিজয়ের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দেয়। ২০১৫ সালের পর বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে সুযোগ পান নি এনামুল হক বিজয়।
এখন পর্যন্ত ৩০ ম্যাচ খেলা ৩৫ গড়ে এনামুল ৯৫০ রান করেছেন। তিনটি সেঞ্চুরির সাথে তিনটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। তবে এনামুলের স্ট্রাইক রেট বেশ প্রশ্নবিদ্ধ। ইমরুলের মত এনামুলের স্ট্রাইক রেট মাত্র ৭০। প্রান্ত বদল করে খেলায় সামর্থ্য কম ছিল বিজয়ের। যার তার স্ট্রাইক রেটে প্রভাব ফেলেছে। তবে দল থেকে ছিটকে পড়া বিজয় নিজেকে বদলে ফেলেছেন। লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে বাড়ন্ত স্ট্রাইক রেটে খেলছেন তিনি। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও দুর্দান্ত ফর্মে আছেন।
সৌম্য সরকারঃ ৩২ ম্যাচের ৩১ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৫ গড় ৯৬ স্ট্রাইক রেটে ৯৬৭ এসেছে সৌম্যর ব্যাট থেকে। একটি সেঞ্চুরি ও ছয়টি ফিফটির মালিক এই বাঁহাতি। ২০১৪ সালের শেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজে অভিষিক্ত সৌম্যকে পিঞ্চ হিটার হিসেবে বিশ্বকাপে তিন নম্বরে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু ওয়ানডে টিমে ওপেনিং পজিশনে সৌম্যর সুযোগ পাওয়ার প্রথম কারন ছিল বিজয়ের কাঁধের ইনজুরি।
বিজয়-তামিম জুটি বিশ্বকাপে ইনিংস সূচনা করেছিল। বিজয়ের ইনজুরি ইমরুলের দরজা খুলে যায়। তবে পুরো আসরে স্কটল্যান্ডের সাথে ম্যাচে তামিমের মহামূল্যবান ৯৫ ছাড়া বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ছিল সম্পূর্ণ ব্যর্থ। বিশ্বকাপে তিন নম্বরে পিঞ্চ হিটার হিসেবে সৌম্যর প্রতি আক্রমন ব্যবহার করে চাপ প্রতিস্থাপন করার পরিকল্পনা দারুন কাজে দেয়।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের সাথে শুরুতে উইকেট হারিয়ে রান আটকে যায় বাংলাদেশের... আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অচেনা সৌম্য সরকার ২৫ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে মুমেন্টাম শিফট করে দেয়। পরে সাকিব-মুশির পার্টনারশিপে বাংলাদেশে ভালো স্কোর তুলতে সক্ষম হয়। ম্যাচ শেষে সুনিল গাভাস্কার বলেছিল, 'সৌম্যর ঐ ছোট ইনিংসটাই বাকিদের কাজ সহজ করে দিয়েছে।'
একই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ম্যাচেও একই রোল প্লে করেন তিনি। অ্যাডিলেডের ওই ম্যাচে এক অঙ্কের ঘরে তামিম-ইমরুল আউট, জিমি-ব্রডের বল সুইং করছিল। সদ্য ক্রিজে আসা রিয়াদ ইনিংসের শুরুতে বেশ নড়বড়ে ছিলেন। কিন্তু নতুন মুখ সৌম্য সরকার মুভিং বলের বিপক্ষে খেললেন ৫২ বলে ৪০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ফের জোড়া উইকেট হারানোর পর দারুন স্ট্রোক মেকিংয়ে ম্যাচের আবহ বদলে দেন তিনি।
একই বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম-ইমরুল দ্রুত বিদায়ের পর হাল ধরেছিলেন সেই সৌম্যই। হ্যামিল্টনে বোল্ট-সাউদির বল সাপের মত সুইং করছিল, সৌম্য সেদিন খেলছিলেন ৫৮ বলে ৫১ রানের ইনিংস। রিয়াদের সেঞ্চুরি বাংলাদেশকে বড় স্কোর এনে দিয়েছিল কিন্তু বোল্ট-সাউদির চোখে চোখ রেখে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে বাকিদের কাজ সহজ করেছিলেন তিনি।
বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজে এসে ইমরুলের জায়গায় ওপেনিংয়ে প্রথমবারের মত জায়গা পান সৌম্য। ওই সিরিজে তামিম জোড়া সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটি হাঁকিয়েছিলেন। তৃতীয় ম্যাচে সৌম্য তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান। পাক বোলারের কাঁদিয়ে দাপুটে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। ভারতের বিপক্ষে পরের সিরিজের প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত তিনশ ছাড়ানো স্কোর গড়ে।
সৌম্য-তামিম দুই ওপেনার ফিফটির দেখা পান। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে ৩৪ ও ৪০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তবে সৌম্যর ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পায় দক্ষিন আফ্রিকা।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের হারের পর বোলিংয়ে মুস্তাফিজ ও ব্যাট হাতে সৌম্যতে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। শক্তিশালী দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি আশি ছাড়ানো স্কোর গড়েন সৌম্য। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জয়ে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মত সপ্তম স্থান অর্জন করে বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির টিকেট এনে দেয়।
২০১৫ সালে ১৫ ম্যাচে ৫১ গড় ও ঈর্ষনীয় ১০০+ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন এই সৌম্য। স্বপ্নিল বছরের পর ২০১৬ সালে এনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিক্ততা অনুভব করতে থাকেন তিনি। বছরের শেষে খেলা চারটি ওয়ানডে ম্যাচে ব্যর্থতার স্বাদ পান এই তরুন বাঁহাতি। বাজে সময় দীর্ঘায়িত হয় ২০১৭ সালেও। বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ব্যর্থ হন তিনি। শ্রীলঙ্কা সফরে মৃদু ঝলক দেখালেও ২০১৫'র সৌম্যকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।
অবশেষে আয়ারল্যান্ডের উইন্ডি, ওভারকাস্ট কন্ডিশনে ব্যাট হাসে সৌম্যর। ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচ জয়ী ৬১*, আয়ারল্যান্ডের সাথে ম্যাচ জয়ী ৮৭* রান করে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মত র্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। ত্রিদেশীয় সিরিজের পারফর্মেন্স বাংলাদেশের ঊনিশ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার পথ সুগম করে।আয়ারল্যান্ডে সৌম্যর পারফর্মেন্স একই সাথে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে সমর্থকদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেয়।
কিন্তু এবার বড় আসরে ব্যর্থ হন সৌম্য। পুরো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারেননি তিনি। দক্ষিন আফ্রিকা সিরিজেও সেই ধারা বজায় থাকে। একই সিরিজে ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়েন সৌম্য সরকার। বছর জুড়ে ১২ ম্যাচে সাড়ে ২৪ গড়, ৮৯ স্ট্রাইক রেটে দুই ফিফটি হাঁকিয়েছেন সৌম্যর ব্যাট থেকে।
তবে এখন পর্যন্ত ৩২ ম্যাচ খেলা সৌম্য সরকার এযাবৎ কালে বাংলাদেশি মধ্যে সবচেয়ে আগ্রাসী ওপেনারদের মধ্যে অন্যতম। নব্বই ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে পারা এই ওপেনার যে কোন দলের জন্য সম্পদ স্বরূপ। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং তামিমের সাথে পার্টনারশিপের স্ট্রাইক রেট একশোর উপর রাখতে সাহায্য করে। যা তামিমকে অ্যাংকরের ভূমিকা পালনে সাহায্য করতো।
ওপেনার হিসেবে সৌম্য সত্যিকারের ম্যাচ উইনারের গুন ধারন করে। নিজের দিনে বিশ্বসেরা বোলিং আক্রমণকেও পাড়ার বোলারের মুখোশ পরিয়ে দিতে সক্ষম তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুর বছরে তার প্রমান রেখেছেন তিনি। সৌম্যর শক্তি জায়গা তার অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্স। হ্যান্ড অ্যান্ড আই কোঅর্ডিনেশনে বাংলাদেশে সৌম্যর ধারেকাছে কেউই নেই। কিন্তু মানসিক শক্তির জায়গায় বেশ পিছিয়ে এই তরুন। সৌম্যর অফ স্পিনের বিপক্ষে দুর্বলতা প্রায় সবার জানা। স্ট্রোক মেকার সৌম্যর শট নির্বাচনেও সমস্যা রয়েছে। তবে নিজের দিনে যে কোন প্রতিপক্ষকে মাটিতে নামিয়ে আনার শতভাগ সামর্থ্য রাখেন এই ড্যাশিং বাঁহাতি।
নির্বাচকদের মাথাব্যাথাঃ অভিজ্ঞতার বিচারে অনেকে এগিয়ে থাকলেও স্ট্রাইক রেট, ধারাবাহিকতা ও ইনিংস বড় করার ক্ষেত্রে বেশ পিছিয়ে আছেন ইমরুল কায়েস। সাম্প্রতিক ফর্ম সৌম্যর পক্ষে কথা বলবে না। কিন্তু বিশ্বের সেরা ওপেনারদের টেক্কা দেয়ার মত স্ট্রাইক রেট ও ম্যাচ জেতানোর সুপ্ত সম্ভাবনা থাকায় ভবিষ্যত পরিকল্পনায় এগিয়ে থাকবেন তিনি। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমান করেছেন বিজয়। অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় রান তুলেছেন গত দুই মৌসুম ধরে। নির্বাচকরা ভালো ফর্মের পুরস্কার হিসেবে বিজয়কে সুযোগ দিতে পারেন। তবে যেই সিদ্ধান্তই নেয়া হোক, কাজটা নির্বাচকদের জন্য সহজ হবে না।