১১ ছক্কায় ৩৫ বলে সেঞ্চুরি, সূর্যবংশীর বিশ্ব রেকর্ডে রাজস্থানের জয়

ছবি: বিসিসিআই

মাথা থেকে হেলমেট খুলে ও ব্যাট উঁচিয়ে পুরো মাঠের দর্শকদের জানান দিলেন নিজের সেঞ্চুরির কথা। গ্যালারির দর্শকদের সঙ্গে ড্রাগ আউটে থাকা সতীর্থরাও অভিবাদন জানালেন। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে হুইলচেয়ারে বসে খেলা দেখা রাহুল দ্রাবিড় উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিলেন। সূর্যবংশী হয়ে উঠলেন আইপিএলের ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান। ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করা বাঁহাতি ওপেনার একটুর পর পেছনে ফেলতে পারেননি ক্রিস গেইলকে।
‘ব্যর্থতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই বৈভব সফল হবেন’, ভবিষ্যদ্বাণী শাস্ত্রীর
২৭ এপ্রিল ২৫
২০১৩ সালে পুনে ওয়ারিয়র্সের বিপক্ষে মাত্র ৩০ বলে আইপিএলের ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি করেছিলেন ‘ইউনিভার্সেল বস।’ গেইলকে পেছনে ফেলতে না পারলেও আইপিএলে ভারতের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান এখন সূর্যবংশী। ২০১০ সালে ৩৭ বলে সেঞ্চুরি করা ইউসুফ পাঠানকে টপকে গেছেন তিনি। ভারতের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তাঁর চেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি ছিল মানিশ পাণ্ডের। ২০০৯ সালে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৯ বছর ২৫৩ দিন বয়সে। তবে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সূর্যবংশীই দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান।
মাত্র ১৪ বছর ৩২ দিন বয়সে এমন কীর্তি গড়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। আগের রেকর্ডটি ছিল ভিজায় জোলের। ভারতের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ১৮ বছর ১১৮ দিন বয়সে ১০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মহারাষ্ট্রের হয়ে। ভারতীয় এই ব্যাটারকে ছাড়িয়ে গেছেন আরেক ভারতীয় ব্যাটার। সূর্যবংশীর ১০১ রানের ইনিংসের দিনে অপরাজিত ৭০ রান করেছেন যশস্বী জয়সাওয়াল। তাদের দুজনের ব্যাটে গুজরাটের বিপক্ষে ৮ উইকেটের জয় পেয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। টানা ৫ হারের পর রাজস্থানের এটি প্রথম জয়।

জয়পুরে জয়ের জন্য ২০৯ রান তাড়ায় একেবারে শুরু থেকেই ঝড় তোলেন সূর্যবংশী ও জয়সাওয়াল। সবচেয়ে বেশি ঝড় বইয়েছে ইশান্ত শর্মার উপর দিয়ে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে অভিজ্ঞ পেসারকে তিনটি ছক্কার সঙ্গে দুটি চার মেরেছেন সূর্যবংশী। পরের ওভারে ওয়াশিংটন সুন্দরকে দুই ছক্কা ও এক চার মেরে মাত্র ১৭ বলে করেছেন হাফ সেঞ্চুরি। আইপিএলের চলতি আসরে সবচেয়ে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি এটি।
অন্যপ্রান্তে জয়সাওয়াল ছিলেন নিজের চিরচেনা ছন্দেই। তাদের দুজনের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৭ রান তোলে রাজস্থান। পাওয়ার প্লেতে এটাই তাদের সবচেয়ে বেশি রান তোলার রেকর্ড। হাফ সেঞ্চুরির পর আরও বেশি আক্রমণাত্বক হয়ে উঠেন সূর্যবংশী। ইনিংসের দশম ওভারে করিম জানাতকে তিনটি করে ছক্কা ও চার মেরে এনেছেন ৩০ রান। পরের ওভারে রশিদকে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি ওপেনার। যদিও পরের ওভারে প্রসিধ কৃষ্ণার দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন সূর্যবংশী।
১১ ছক্কা ও ৭ চারে ৩৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস খেলা বাঁহাতি ওপেনার আউট হওয়ার পর তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন সিরাজ, রাহুল তেওয়াতিয়াসহ গুজরাটের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার। সূর্যবংশীর বিদায়ে ভাঙে জয়সাওয়ালের সঙ্গে ১৬৬ রানের জুটি। ২০২২ সালে ওয়াংখেড়েতে জস বাটলার ও দেবদূত পাডিকালের ১৫৫ রানের জুটিকে পেছনে ফেলেছেন তারা দুজন। বর্তমানের যেকোনো উইকেটে রাজস্থানের সবচেয়ে বড় জুটি সূর্যবংশী ও জয়সালের ১৬৬।
তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নীতিশ রানা। রশিদের দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ২ বলে ৪ রান করে। পরবর্তীতে জয়সাওয়াল ও রিয়ান পরাগ মিলে রাজস্থানের ৮ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন। ৩১ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা জয়সাওয়াল শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৭০ রানে। জয়পুরে টানা তিন ম্যাচেই পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন তিনি। অধিনায়ক পরাগ অপরাজিত ছিলেন ৩২ রানে।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৯৩ রান তোলে গুজরাট। ৩৯ রান করা সাই সুদর্শনকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মাহিশ থিকশানা। ২৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা শুভমান গিল সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন। তবে ৫০ বলে ৮৪ রান করা গুজরাট অধিনায়ককে সেঞ্চুরি করতে দেননি থিকশানা। শেষের দিকে অবশ্য ২৬ বলে অপরাজিত ৫০ রানের ইনিংস খেলেছেন বাটলার। তাদের ব্যাটেই ২০৯ রানের পুঁজি পায় গুজরাট। স্বাগতিক রাজস্থানের হয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন লঙ্কান থিকশানা।