নিদাহাসের শেষ ওভারে কি হয়েছিল, জানালেন সৌম্য

ছবি: ছবি- সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে পরাজয়ের ক্ষত আজও মিইয়ে যায়নি বাংলাদেশ দলের কোটি ক্রিকেট ভক্তের মন থেকে। তবে ভারতের বিপক্ষে শেষ বলে হারের দুঃখ হয়তো অন্য সকলের চেয়ে বেশি সৌম্য সরকারের। কারণ তাঁর করা শেষ বলেই ছক্কা মেরে টাইগারদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছিলেন ভারতের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান দীনেশ কার্ত্তিক।
২০১৮ সালের ১৮ মার্চ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচনার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেটি সম্ভব হয়নি ৮ বলে কার্ত্তিকের ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসের কল্যাণে। দুই বছর পর সেই স্মৃতি আবারো ফিরিয়ে এনেছেন তামিম ইকবাল।
জাতীয় দলের এই ওপেনার ফেসবুকে সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক এবং লিটন দাসদের সঙ্গে লাইভ আড্ডায় নিদাহাস ট্রফির প্রসঙ্গ উঠিয়েছিলেন। শেষ ওভারে সৌম্যর অনুভূতি কেমন ছিল সেটাই জানতে চান তিনি। তামিমের প্রশ্নের জবাবে পার্ট টাইম পেসার সৌম্য জানিয়েছেন শেষ ওভারে আদতে কি হয়েছিল তাঁর।
সৌম্য বলেন, 'প্রথম যখন আমাকে বল দিয়েছে তখন আমার মধ্যে এত কিছু ছিল না। শুধু মাথায় ছিল যে আমার একটা ওভার বোলিং করতে হবে। এর আগে আমি যখন প্রিমিয়ার লিগে পাঁচ বছর খেলেছিলাম তখন আমাকে যখন কঠিন সময়ে বল দিতো, ধরুন এক ওভারে লক্ষ্য ৮ রান দিতে পারবো, এর বেশি না। আমার কাছে নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারেও সেই বিষয়টি মনে পড়েছে।'

সেই ম্যাচে বাংলাদেশের দেয়া ১৬৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে সৌম্যর করা শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১২ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। ওভারের প্রথম বলে ওয়াইড দেয়ার পর ডট দেন তিনি। এরপর টানা দুই বলে এক রান করে দেন এই পার্টটাইম বোলার।
চতুর্থ বলে থার্ড ম্যান দিয়ে চার মেরে বসেন বিজয় শঙ্কর। পঞ্চম বলে লং অন অঞ্চলে মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে শঙ্করকে ক্যাচ বানিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন সৌম্য। কিন্তু নাটকের তখনও বাকি ছিলো। ওভারের শেষ বলে কাভার দিয়ে দুর্দান্ত একটি শটে বল সীমানা ছাড়া করেন স্ট্রাইক পাওয়া কার্ত্তিক। ফলে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।
সেই সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে সৌম্য বলেন, 'আমি যখন প্রথম তিন ওভার বল করেছি তখন কিছু মনে হয়নি। হেরে যাবো নাকি জিতে যাবো আমার মাথায় এসব কিছুই ছিল না। আমার খালি পরিকল্পনা ছিল যে এক জায়গায় বল করবো। তিন নম্বর বলের সময় সবাই বলছে তুই পারবি। কিন্তু আমি কোনো টেনশন নিচ্ছি না। হঠাৎ করে আমি পানি আনতে বলি। এরপর মুখটা ধোয়ার পর কয়েকজন পাশে এসেছে এবং বলেছে যে তুই পারবি, টেনশন করিস না। তখনই আমার মধ্যে টেনশন ঢুকে গেছে যে পারবো কিনা।'
পানি নিয়ে আসা সেই ব্যক্তিটি কে ছিল সেটি অবশ্য মনে করতে পারেননি সৌম্য। তাঁর ভাষ্যমতে, 'সেই ব্যক্তিটা কে ছিল ঠিক খেয়াল নেই, তবে ১২তম খেলোয়াড় ছিল। এরপরেই আমার মধ্যে চিন্তা এসেছে। চার নম্বর বলটি যখন সবচেয়ে ভালো করলাম যেটা চার হয়ে গেল থার্ডম্যান দিয়ে।'
কঠিন সেই পরিস্থিতিতে সৌম্যকে সাহস দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। সৌম্য বলেন, 'চার হওয়ার পর সাকিব ভাই দৌড়িয়ে আসে এবং বলে যে তোর হিরো হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু জিরো হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তুই প্রধান বোলার না। তুই যদি বাংলাদেশকে জেতাতে পারিস তাহলে হিরো হবি। এটা মাথায় নিয়ে আমি পাঁচ নম্বর বল করতে গিয়েছি। সেই বলে মনে হয় আউট করেছিলাম বিজয় শঙ্করকে। সাব্বির এবং মিরাজ মিলে ক্যাচটি ধরেছিল।'
তবে বিজয় শঙ্করের ক্যাচটি মিস করলে বরং ভালো হতো বলে মনে করেন সৌম্য। কারণ সেক্ষেত্রে স্ট্রাইক পেতেন না কার্ত্তিক। ম্যাচের ফলাফলও বাংলাদেশের পক্ষে থাকার সম্ভাবনা ছিল। এরপরও উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের কথা অনুযায়ী ওয়াইড ইয়র্কার দেয়ার চেষ্টা করে গেছেন তিনি।
আক্ষেপ ভরা কণ্ঠে সৌম্য বলেছেন, 'পরে আমার কাছে মনে হয়েছে যে ক্যাচটি না ধরলে ভালো হতো। দুই রান হলে বিজয় শঙ্কর স্ট্রাইকে থাকতো। ওই সময়টায় চিন্তা বেশি এসেছে যে শেষ বল, পাঁচ রান দরকার কি করা যায়। সেসময় আমার কারো দিকে মনোযোগ ছিল না। মুশফিক ভাই বলেছে ওয়াইড ইয়র্কার কর। আমি যদি ওয়াইড ইয়র্কার মারি তাহলে খুব বেশি হলে চার হবে। ব্যাটে ভালোভাবে লাগলে কাভারের উপর দিয়ে চার হওয়ার সুযোগ। এরপরেও আমি সেফ থাকছি। এটাই আমার লক্ষ্য ছিল।'