promotional_ad

রশিদ চেয়েছিলেন এক ঘণ্টা, সেটাই যথেষ্ট হলো

ছবিঃ বিসিবি
promotional_ad

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে ||


বৃষ্টিতে স্বস্তি- টানা গরম বা তাপদাহর পর দেশের বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয় এমন। স্বভাবতই বৃষ্টিতে প্রশান্তি ফেরে জনমনে। টানা বৃষ্টি দেখে বাংলাদেশ দলেও এমন প্রশান্তি ফিরেছিল। বিপদ থেকে বেঁচে যাওয়ার কথাও ভাবছিল সাকিব আল হাসানের দল। অন্যদিকে ‘স্বস্তির’ বৃষ্টিই আফগানিস্তানের কাছে হয়ে উঠেছিল ভাগ্যকে নিয়ে পরিহাস করা নির্মম এক খেলার নাম। যে খেলার দুই প্রতিযোগী বৃষ্টি ও রোদ্দুরের লুকোচুরিতে যারপরনাই হতাশ হয়েছেন রশিদ খান-মোহাম্মদ নবিরা।


সুবাশ পাওয়া যাচ্ছিল, ওই তো একটু দূরেই জয়। কিন্তু একটু দূরকে ভাসিয়ে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছিল বেরসিক বৃষ্টির পানি। সাগড় পাড়ের মাঠ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পুরো ম্যাচে রাজত্ব করে জয় হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা আফগানদের জন্য আসল ও শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল বৃষ্টি। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহরা না লড়তে পারলেও বৃষ্টি দেবদূত হয়ে হাজির হয়েছিল বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাট ধরতে। যদিও এতে রক্ষা হয়নি। রশিদ খানের চাওয়া এক ঘন্টাতেই হেরে গেছে বাংলাদেশ। মেনে নিতে হয়েছে ২২৪ রানের বিশাল এক হার।


৩৯৮ রানের বিশাল লক্ষ্য দিয়ে চতুর্থ দিন ১৩৬ রানেই বাংলাদেশের ৬ উইকেট তুলে নেয়া আফগানিস্তান পঞ্চম দিন শুধু একটি সেশন চেয়েছে। কিন্তু পঞ্চম দিন সকাল থেকেই বৃষ্টির লুকোচুরিতে অস্থিরতা বিরাজ করছিল আফগান শিবিরে। বাংলাদেশ দল হোটেলে থাকলেও বৃষ্টির মাথায় মাঠে চলে আসে আফগানিস্তান। জয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা আফগান অধিনায়ক রশিদ খান ছাতা নিয়ে মাঠ ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। আর বলছিলেন, ‘এক ঘণ্টা হলেই চলবে।’ রশিদের এমন চাওয়ার ব্যাপারটি ক্রিকফ্রেঞ্জিকে জানিয়েছিলেন আফগানদের স্যোশাল মিডিয়া ম্যানেজার সৈয়দ হজরত সাদাত।


সাদাত বলেছিলেন, ‘রশিদ ভীষণ হতাশ। ও খুব আক্রমণাত্মক ক্রিকেটার। জয়ের খুব কাছে আসার পর বৃষ্টি হওয়ায় ও অস্থির হয়ে গেছে। রশিদ বলছিল ”আমাদের জন্য এক ঘণ্টা হলেই যথেষ্ট। তাহলেই ম্যাচ জিততে পারবো আমরা”।’ কিন্তু সেই এক ঘণ্টা মিলছিল না। থামলেও বারবার হানা দিচ্ছিল বৃষ্টি। পুরো দিনভর বৃষ্টি-রোদ্দুরের লুকোচুরি সহ্য করতে হয়েছে রশিদ-নবিদের। বিকাল চারটার দিকে সেই এক ঘণ্টা পেয়েই বাংলাদেশকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছেন রশিদ। চার উইকেটের তিনটিই নিয়েছেন তিনি।      



promotional_ad

বিকাল চারটার দিকে জানানো হয়, ম্যাচ শুরু হবে ৪টা ২০ মিনিটি। চলবে ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। অর্থাৎ, এক ঘণ্টা ১০ মিনিট। এর মাঝে খেলা হবে ১৯.৩ ওভার। কিন্তু ১৯ ওভার লাগেনি, লাগেনি এক ঘণ্টা ১০ মিনিটও। রশিদ, জহির, নবিদের এক ঘণ্টায় করা ১৭.২ ওভারেই আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। ম্যাচের পর বলাই যায়, এক কথার মানুষ রশিদ!  


মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নেমেছিল আফগানিস্তান। সেখানে চট্টগ্রাম টেস্ট ছিল বাংলাদেশের ১১৫তম ম্যাচ। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে আফগানদের ধারে কাছেও ছিল না ঘরের মাঠে পরাক্রমশালী দলের খেতাব জেতা বাংলাদেশ। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে শাসন করেছে কেবল আফগানরাই। আর অসহায়ের মতো চুপচাপ সেসব সহ্য করে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। কোন পথে আলোর দেখা মিলবে সেটা বুঝে উঠতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারই।


ঐতিহাসিক জয়ে টেস্ট ইতিহাসের এলিট রেকর্ডে নাম উঠে গেছে আফগানিস্তানের। ২০১৭ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়া আফগানরা নাম বসিয়ে নিয়েছে পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার পাশে। সবচেয়ে কম সময়ে ‍দুই টেস্ট জেতার রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার দখলে। প্রথম তিন টেস্টের দুটি জিতেছিল ক্রিকেটের আদি এই দেশ। আফগানিস্তানও ঠিক একই কাজ করে দেখালো। তিন টেস্টের দুটি জিতে রশিদ খানের দল ক্রিকেট বিশ্বকে আরো একবার জানিয়ে রাখলো, ‘আমাদের জন্য সমীহ রেখো।’


নবীন আফগানদের চোখ কপালে তোলা এমন টেস্ট রেকর্ডের পাশে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বড়ই ম্লান। দুটি টেস্ট জয়ের স্বাদ নিতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল ৩৭ ম্যাচ পর্যন্ত।


সাদা পোশাকে রঙিন পারফরম্যান্স করা আফগানদের বিপক্ষে হেরে লজ্জার একটি রেকর্ডে নাম উঠে গেছে বাংলাদেশের। একমাত্র দল হিসেবে ১০টি দেশের বিপক্ষে টেস্ট হারলো বাংলাদেশ। আর চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের রেকর্ডটা আরো সমৃদ্ধ করে নিল আফগানিস্তান।



বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ফরম্যাটেই জয়ের স্বাদ নিল আফগানরা। ওয়ানডেতে প্রথম সাক্ষাতেই বাংলাদেশকে হারিয়েছিল ক্রিকেটের নতুন এই হুমকি। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচ হারলেও পরের তিন ম্যাচেই জয় তুলে নেয় তারা। চার বছর পর ওয়ানডের পুনরাবৃত্তিই টেস্টে করলো রশিদ-নবিদের দেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২২ বছরের পথচলা হলেও অনেক দলের বিপক্ষেই বাংলাদেশের এমন সাফল্য নেই।


অনেক পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্ট খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। পরিকল্পনার প্রথম অংশ ছিল স্পিন আক্রমণ। যে কারণে কোনো পেসারই নেয়া হয়নি দলে। এরপর ব্যাটিং লাইন আপে ব্যাপক রদবদল, ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশনসহ কতো চেষ্টাই না করেছে সাকিব আল হাসানের দল। কোনো কিছুতেই রক্ষা হলো না। আফগানদের সোজা-সাপ্টা আক্রমণেই দিক হারিয়ে ২২৪ রানের বিশাল হার মেনে নিল বাংলাদেশ।


ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের মধ্যে টেস্টের বেলায় এই কথাটা নিশ্চয়ই সবচেয়ে বেশি কার্যকর। আদি এই ফরম্যাটের ম্যাচের রং ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। প্রতিটা বাঁকে বাঁকে থাকে রহস্য। যদিও চট্টগ্রাম টেস্টে এমন কিছুর দেখা মেলেনি। বৃষ্টির লুকোচুরির বাইরে ম্যাচ একটা রংয়েই ছিল। যে রংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল কেবল আফগানদের হাতে।



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball