কোচ খুজি কেনো আমরা?

ছবি:

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবির একজন সহকারী আছেন-ভুলু।
সুস্বাদু
লেবু চা বানিয়ে সবাইকে খাওয়ানোর জন্য বিখ্যাত মানুষ। তার চা নিয়ে ক্রিকইনফোতে ফিচার
হয়েছে, ধোনি-কোহলি-ওয়াকাররা এই চা খেয়ে ‘আহ-আহা’ করেছেন। এতেই মহাখুশী মানুষটা।
ভুলু প্রায়
বধির; একটা যন্ত্র ছাড়া কিছু শুনতে পায় না। কথা বলতেও সমস্যা হয়। তারপরও বিভিন্ন বিষয়ে
মত দিতে ওস্তাদ মানুষ। আজ সকালেই আমাদের চা খাওয়ানোর সময় নিজে থেকেই বলে বসলো, ‘কোচ
গেলে খোজে কেনো? কোচ আগে থেকে ট্রেনিং করানো যায় না?’
একটু থ হয়ে
গেলাম।
প্রায় বধির,
অংশত বাক প্রতিবন্ধী একজন ভুলু কথাটা বোঝে, জানে। জানি না কেবল আমরা। আমরা একজন কোচ
চলে গেলে কোচ খুজে মরি। কোচ বানানোর কোনো চেষ্টাই নেই আমাদের। আমাদের মাথাতেই নেই যে,
কোচ ব্যাপারটাও তৈরী করতে হয়।
ক দিন ধরে
ভাবছিলাম, কেমন কোচ চাই আমরা?

রিচার্ড পাইবাসের
মতো হাড়িতে কালি না পড়া কোচ? পাইবাই হয়তো কোচ হয়ে যাবেন এই দফায়। কিন্তু মনে রাখতে
হবে এই পাইবাসই চার মাস চাকরি করেই বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এই পাইবাসই বাংলাদেশ
থেকে গিয়ে এই দেশের বোর্ডের অপেশাদারিত্ব নিয়ে বহু কথা বলেছেন। এই পাইবাসের কোথাওই
সংসার জমে না। কোথাও চুক্তির শেষ করতে পারেন না তাত্ত্বিক এই কোচ। তিনি খোজেন আদর্শ
পরিবেশ। আর সেটা না পেয়েই চটে ওঠেন।
কিংবা আমরা
হয়তো ফিল সিমন্সকে পেতে পারি। তিনি খেলোয়াড়দের কোচ। খেলোয়াড়দের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে
ওয়েস্ট ইন্ডিজে টিকতে পারেননি বিশ্বকাপ জেতানোর পরও। তিনি বোর্ডকে চোখ রাঙাতে দ্বিধা
করেন না। এমন কোচ বিসিবির হজম হবে তো?
আমরা জিওফ
মার্শের কথাও শুনছি। তিনি অস্ট্রেলিয়ার সুপার প্রফেশনাল কাঠামো দেখে অভ্যস্থ। এখানে
একদিনও টিকতে পারা কঠিন। আমাদের এখানে অবকাঠামো, পেশাদারিত্ব যে অবস্থায় আছে, তাতে
এটাকে ভিনগ্রহ মনে হতে পারে মার্শের।
ফলে পাইবাসই
আমাদের ভরসা।
কিন্তু পাইবাসও
তো আমাদের মনের মতো কোচ নন। মনের মতো কোচ তো কেউ নন। মনের মতো কোচ রেডিমেট পাওয়া যায়
না। আর এটাই ছিলো ভুলুর প্রশ্নটা।
এ ক্ষেত্রে
আমরা অস্ট্রেলিয়ার দিকে তাকাতে পারি। বিসিবি প্রথম ধাক্কাতেই হাথুরুসিংহে চলে যাওয়ার
পর জাস্টিন ল্যাঙ্গারকে প্রস্তাব দিয়েছিলো। ল্যাঙ্গার সে প্রস্তাব তক্ষনাৎ ফিরিয়ে দিয়েছেন।
কেনো জানেন? কারণ, ল্যাঙ্গার অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী কোচ।
এটা কোনো
লুকোচুরি ব্যাপার নয়, গোপন করে রাখা তথ্য নয়। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড ল্যাঙ্গারকে
পরবর্তী কোচ হিসেবে তৈরী করছে। সে জন্য তাকে
ইতিমধ্যে ট্রেনিং করানো, লেহম্যানের কোচিং কাছ থেকে দেখানোর মতো কাজ করছে তারা। এমনকি
লেহম্যান ছুটিতে থাকায় দুই দফা অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে কাজও করেছেন তিনি।
শুধু পরের
কোচ নয়, তার পরের জন্যও তৈরী অস্ট্রেলিয়া। এরপর তাদের কোচিংয়ের দায়িত্ব নিতে কাজ শুরু
করেছেন ব্র্যাড হাডিন। মানে অস্ট্রেলিয়া দল জানে, তাদের পরবর্তী দু জন কোচ কে কে হতে
যাচ্ছেন!
কী দূরদর্শিতা।
সেখানে আমরা
কোচ চলে গেলে পানিতে পড়ি। আমরা তখন খুজতে শুরু করি, কে হতে পারেন পরের কোচ। আমাদের
সাপোর্ট স্ট্যাফের ভেতর কোনো ভবিষ্যত কোচ লুকানো থাকে না। আমরা কোনো সালাউদ্দিনকে ডেকে
বলি না যে, তুমি তৈরী হও। আমরা ভবিষ্যত ভেবে দলে কাউকে নিয়োগ দেই না। এখানেই আমাদের
সাথে ভুলু বা অস্ট্রেলিয়ার পার্থক্য।