এক ঘূর্ণি জাদুকরের আক্ষেপের গল্প

ছবি: ছবি- সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
দেশের ক্রিকেটের প্রতিথযশা ক্রিকেটার হিসেবেই সুপরিচিত ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। স্পিন ভেল্কিতে দর্শকদের মাত করতে জুড়ি ছিল না তাঁর। উপরি পাওয়া হিসেবে মারমুখী ব্যাটিংও উপহার দিতেন তিনি সকলকে। ঘূর্ণি জাদুকর হিসেবে ক্রিকেট অঙ্গনে নিজেকে উপর্যুপরি প্রমাণ করে গেছেন রফিক।
কিংবদন্তী সেই রফিকই আজ উপেক্ষিত। অবসরের পর আর দশজন সাবেক ক্রিকেটারদের মতো তাঁর জীবন সরলরেখায় চলেনি। দেশের একসময়ের তারকা খেলোয়াড়দের অনেকেই আজ কোচিংকে বেঁছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে নয়তো সম্পৃক্ত আছেন ক্রিকেটের সঙ্গে।
অথচ রফিক যেন কোথায় হারিয়েই গিয়েছিলেন। দোর্দণ্ড প্রতাপে মাঠ মাতানো সেই ক্রিকেটার বেশ কয়েক বছর লোকচক্ষুর আড়ালে অবস্থান করেছেন। যদিও চলতি বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
তবে একটা সময় বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচ হওয়ার অদম্য একটি ইচ্ছা ঠিকই কাজ করতো ৪৯ বছর বয়সী রফিকের মনে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁর ইচ্ছাকে একেবারেই দাম দেয়নি দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বরঞ্চ বিদেশি কোচদের প্রতিই বেশি নজর ছিল তাদের। এমনকি রফিককে সাক্ষাৎকার দেয়ার আহ্বানও জানায়নি বিসিবি।

একাডেমীর সঙ্গে কিছুদিন কাজ করলেও দিন শেষে উপেক্ষিত এবং অবহেলিতই থেকে গেছেন রফিক। তাই স্বাভাবিকভাবেই আক্ষেপ ফুটে উঠে তাঁর কণ্ঠে। শুক্রবার (৫ জুন) জনপ্রিয় ক্রীড়া সাংবাদিক নোমান মোহাম্মদের ইউটিউব চ্যানেল ‘নট আউট নোমানে’ লাইভে আসেন রফিক। সেখানেই নিজের হতাশা উগড়ে দিয়েছেন কিংবদন্তী এই স্পিনার।
সেই আড্ডায় রফিক প্রসঙ্গ টেনেছেন সুনীল যোশি এবং ভেঙ্কটপতি রাজুর। একাডেমীর কোচ হিসেবে কাজ করার জন্য এর আগে বাংলাদেশে আসেন ভারতের সাবেক স্পিনার রাজু। অথচ সেসময় বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন রফিক। অথচ রফিকের কাছেই নাকি অনেককিছু শিখেছিলেন রাজু।
এই প্রসঙ্গে রফিক বলেছেন, ‘আমি শুধু সুনীলের (সুনীল জোশি) কথা বলবোনা, তার আগে রাজু আসছিল একবার। তখন আমি একাডেমির সাথে এক মাসের চুক্তিবদ্ধ। একাডেমির জন্যই তাকে ডাকা হয় (মূলত জাতীয় দলের জন্য)। সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সে বলল রফিক ভাই থাকতে আমাকে কেন নিয়ে আসলেন? রফিক ভাইকে আমরা ভারতে নিয়ে যাই একাডেমিতে, এক সপ্তাহ, দশ দিন কাজ করে আসে। আমিই তার কাছ থেকে শিখি, আমাকে কি দরকার তাহলে? এরপর তাকেও নেয়নি আবার আমাকেও ব্রেক দিয়ে দিল।'
রফিককে কোচ হিসেবে সুযোগ দেয়া হবে বলে অবশ্য একবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বোর্ড। শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে রূপ নেয়নি কোনো দিনই। আক্ষেপ ভরা কণ্ঠে রফিক বলেন, ‘কত বছর ধরে ক্রিকেট থেকে রিটায়ার্ড করেছি। কিন্তু ক্রিকেটে কোন কাজ করতে পারছি না। অনেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কতজনকে বলছি, রিকুয়েস্ট করেছি। কিন্তু কেউ আমাকে কোন কাজ দেয়নি। আশ্বাস দিয়ে বলেছে, ঠিক আছে আমরা ব্যস্ত আছি। পরে বলবো, পরে বলবো- পরে বলতে বলতে তো ১২ বছর চলে গেলো। শেষ পর্যন্ত আমার আর ক্রিকেট বোর্ডে কোন কোচের চাকরি হয়নি।’
এ বছর প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামাল ধানমন্ডির হয়ে কাজ করছেন রফিক। একই সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেও কাজ করবেন তিনি। কিংবদন্তী এই স্পিনারকে মূলত সেই সুযোগ করে দিচ্ছেন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধান নির্বাহী ইশতিয়াক সাদেক। বোর্ডের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন সাবেক এই তারকা ক্রিকেটার।
রফিকের ভাষ্যমতে, ’এ বছর শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে কাজ করছি (ডিপিএলে)। পাশাপাশি ফ্রাই ডে ক্রিকেট খেলতেছি। বসুন্ধরা স্টেডিয়াম বানাচ্ছে। বসুন্ধরার মালিকের ছেলে আমাকে বলেছে, আবার ঈশতিয়াক আছে (ঈশতিয়াক সাদেক) ওরা বলেছে আমরা এখানে একাডেমি করবো। আপনি আজীবন নিজের মত করে একাডেমিটা করবেন এবং নিজের মত করেই চালাবেন। আসলে সত্যি কথা আমি ওটা নিয়েই এখন আগ্রহী। আমি জানি এত বছর হয়ে গেছে বোর্ড সাড়া দিচ্ছে না, আমি মনে করি আর সাড়া দিবেওনা।’
দেশের হয়ে ৩৩টি টেস্ট এবং ১২৫ ওয়ানডে খেলেছেন মোহাম্মদ রফিক। টেস্টে ৪০.৭৬ গড়ে ১০০ উইকেট রয়েছে তাঁর। অপরদিকে ৩৭.৯১ গড়ে ওয়ানডেতে ১২৫ উইকেট শিকার করেন তিনি। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেন রফিক। এই ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানান তিনি।