|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ম্যাচের শেষ বেলায় এসে বল হাতে তুলে নিলেন ইমরুল কায়েস। তাঁর দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জিতে নেন ঢাকা বিভাগ। ম্যাচ হারলেও সবকিছু ভুলে ইমরুলকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন সতীর্থ থেকে প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররা। আম্পায়াররা থেকে প্রতিপক্ষের ক্রিকেটার, সবাই হাত মেলালেন এবং অভিবাদন জানালেন। নিজের শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে যখন ড্রেসিং রুমের দিকে ফিরছিলেন তখন বিদায়টা আরও রঙিন করে দিলেন সতীর্থরা।
এনামুল হক বিজয়, শেখ পারভেজ হোসেনরা কাঁধে তুলে নিয়ে ইমরুলকে বিদায় দিলেন। মাঠের বাইরে এসে নির্বাচক আব্দুল রাজ্জাক ও সাবেক সতীর্থ তুষার ইমরানের সঙ্গেও ফ্রেমবন্দি হলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মানার্থে স্মারক তুলে দেয়া হয়েছে তার হাতে। বিসিবির এমন কার্যক্রমের আগে মিরপুরে প্রথম দিনে খুলনা বিভাগের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারকের পাশাপাশি গার্ড অব অনার পেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ইমরুলকে আরও একবার গার্ড অব অনার দিয়েছেন বিজয়, মোহাম্মদ মিঠুন, নাহিদুল ইসলামরা অবসরের আগে বাংলাদেশের হয়ে ৩৯ টেস্টে ১ হাজার ৭৯৭ রান করেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সব মিলিয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩৮টি ম্যাচ খেলেছেন ইমরুল। যেখানে প্রায় ৮ হাজার করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ছাড়ার কারণ জানিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যাটার। ইমরুল জানান, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার ফিটনেস থাকলেও চারদিনের ম্যাচ খেলার মতো অবস্থায় নেই।
এ প্রসঙ্গে ইমরুল বলেন, ‘আমার ফিটনেস এখন যে পর্যায়ে আছে, তাতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির জন্য নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারব এবং আরও কয়েক বছর খেলতে পারব। চার দিনের ম্যাচ খেলার জন্য যে পরিমাণ শক্তি ও দৃঢ় মনোবল থাকতে হয়, তা এখন আর নেই। আমার মনে হয়েছে, আমি যদি নিজেকে তরুণদের সঙ্গে তুলনা করি এবং ওদের মতো ছন্দে (গতিশীল) খেলতে না পারি, তাহলে নিজেকে ছোট মনে হয় এবং লজ্জা লাগে। কিন্তু সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে একদিনেই খেলা শেষ হয়ে যায়। এখানে ফুল এনার্জি দেওয়া সম্ভব।’
অবসরের পেছনে সম্মানবোধের কথাও ভেবেছেন ইমরুল। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার আরও দু’বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে দুই বছর পর কেউ যেন বলতে না পারেন “ভাই, আপনি কবে খেলা ছাড়বেন?” এমন কথা ভেবেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান বাঁহাতি এই ব্যাটার। ইমরুল মনে করেন, সম্মান থাকতে সরে দাঁড়ানোর বোধশক্তি থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
ইমরুল বলেন, ‘প্রথমত বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি যখন বিসিবিকে (অবসরের) সিদ্ধান্তের কথা জানাই, তারা ব্যাপারটিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। আমাকে অনেকেই বলেছে, “ভাই, আপনি আরও ২ বছর খেলতে পারতেন।” কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, আরও ২ বছর খেললে তারাই প্রশ্ন করত “ভাই, আপনি কবে খেলা ছাড়বেন?” এই কথাগুলো শোনার চেয়ে নিজ থেকেই চলে যাওয়াটা ভালো মনে হয়েছে। সম্মান থাকা অবস্থাতেই সরে দাঁড়ানোর বোধশক্তি থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
ক্রিকেট ছাড়ার পর আপাতত অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হয়ে কাজ করার আশা ব্যক্ত করেছেন ইমরুল। তিনি বলেন, ‘আমি চাই ক্রিকেট ছাড়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকতে এবং ক্রিকেটের আরও উন্নত জ্ঞান পেতে। সবাই জানেন, অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেটের সবকিছু আধুনিক। সেখান থেকেই আধুনিক সব বিশ্লেষণ হয়। আমি চেষ্টা করব, সেখানে বড় বড় পর্যায়ে কাজ করতে। সেখানে কোচদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা নেয়া। ভবিষ্যতে যদি কখনও বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়, আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করব।’