|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
আফগানিস্তানের দেয়া ২৩৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। শুরুতে তানজিদ হাসান তামিমকে হারালেও সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে বাংলাদেশের ইনিংস টানেন। এরপর সৌম্য আউট হলে মিরাজের সঙ্গে জুটি বেধে বাংলাদেশকে টানছিলেন শান্ত। এক পর্যায়ে ১২০ রানে ছিল বাংলাদেশের ২ উইকেট।
সেখান থেকেই নাটকীয় ধস নামে বাংলাদেশের। টাইগারদের শেষ ৮ উইকেট পড়েছে ২৩ রানে। আর ৯ রানের মধ্যে গিয়েছে বাংলাদেশের শেষ ৬ উইকেট। আর তাতেই বাংলাদেশের ইনিংস লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। মোহাম্মদ গাজানফার একাই নিয়েছেন ৬ উইকেট। মূলত এই স্পিনারের ঘূর্ণিরই জবাব খুঁজে পায়নি বাংলাদেশের ব্যাটাররা।
মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। এই দুজনের জুটি ভাঙে মাত্র ১২ রান করে। তানজিদ আউট করেন মোহাম্মদ গাজানফার। বৈচিত্র্যময় এই স্পিনারের ঘূর্ণি পড়তেই পারেননি বাংলাদেশের এই ওপেনার। কিছুটা নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারির বলের লাইন মিস করে হয়েছেন বোল্ড। ফলে ৩ রান করেই তাকে ফিরে যেতে হয়।
এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস টানেন সৌম্য সরকার। দুজনেই দ্রুত রান তুলতে থাকেন। আর তাতেই ৯ ওভারেই দলীয় ৫০ পূরণ হয় বাংলাদেশের। এই দুজনের জুটি পঞ্চাশ ছাড়ালে ধৈর্য্য হারিয়ে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে টপ এজ হয়েছিলেন শান্ত। দৌড়ে গিয়ে ক্যাচটা নিতে পারেননি আফগান উইকেটকিপার রহমানউল্লাহ গুরবাজ। সেই ওমরজাইকেই হুক করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছেন ফজলহক ফারুকীর হয়ে। সৌম্যর ইনিংস শেষ হয়েছে ৪৫ বলে ৩৩ রানে।
তৃতীয় উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন শান্ত। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ব্যক্তিগত ৪৭ রানে তিনি মোহাম্মদ নবির বলে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে হাসমতউল্লাহ শহীদিকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। এদিন ৪ নম্বরে প্রমোশন দেয়া হয়েছিল মিরাজকে। যদিও শুরু থেকেই রান করতে ধুঁকছিলেন তিনি। বেশ কয়েকবার জীবনও পান এই ব্যাটার। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি।
মোহাম্মদ গাজানফারের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ওমরজাইকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ২৮ রান করা মিরাজ। এরপর মাত্র ২ রান করে রশিদ খানের শিকার হয়ে ফেরেন অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি রশিদের গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে গেছেন। আর তাতেই ১৩৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
মুশফিকুর রহিমকেও থিতু হতে দেননি গাজানফার। এই স্পিনারের গুড লেন্থের ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। মুশফিকের বিদায়ের পর হৃদয়কে সঙ্গ দিতে আসেন রিশাদ হোসেন। তিন বল পর রিশাদ হোসেনকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান গাজানফার। আর ওভারের শেষ বলে তাসকিন আহমেদকে ক্যারম বলে বোল্ড করে ৫ উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার।
পরের ওভারে রশিদ খানের বলে সুইপ করতে গিয়ে তাওহীদ হৃদয় ফিরে গেলে বাংলাদেশের হার ছিল শুধু সময়ের ব্যাপার। এরপর আবারও বোলিংয়ে এসে শরিফুল ইসলামের উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে দেন গাজানফার। তিনি ইনিংস শেষ করেন ক্যারিয়ার সেরা ২৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। সবশেষ সিরিজে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া রহমানুল্লাহ গুরবাজ ফিরেছেন দ্রুতই। আগের ওভারে শরিফুল ইসলামের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে চার মেরে ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন তিনি। তবে হ্যামস্ট্রিংয়ের অস্বস্তিতে পড়তে হয় তাকে। প্রাথমিক শুশ্রূষা শেষে ব্যাটিং চালিয়ে গেলেও তাসকিনের বলে ফিরতে হয়েছে তাকে। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন গুরবাজ।
যদিও এজ হয়ে উইকেটের পেছনে থাকা মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে হয়েছে ৫ রান করা আফগান ওপেনারকে। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি রহমত শাহ। ইনিংসের অষ্টম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই বাংলাদেশকে উইকেট এনে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন রহমত। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ ব্যাটার ফিরেছেন মাত্র ২ রানে। নিজের পরের ওভারে এসে সেদিকউল্লাহর উইকেট তুলে নিয়েছেন মুস্তাফিজ।
তারকা পেসারের ফুলার লেংথে পড়ে ভেতরে ঢোকা নিচু হওয়া ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। হাশমতউল্লাহর সঙ্গে আলোচনা করলেও রিভিউ না নিয়ে সাজঘরে ফিরে যান। ইমার্জিং এশিয়া কাপে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো সেদিকউল্লাহ অভিষেক ওয়ানডেতে খেলেছেন ৩০ বলে ২১ রানের ইনিংস। একই ওভারের পঞ্চম বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকেও ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের লেংথে পড়ে অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে আউট সাইড এজ হয়েছেন ওমরজাই। তিন বল খেলা এই ব্যাটার রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
৩৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর আফগানিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন হাশমতউল্লাহ ও গুলবাদিন নাইব। একটু একটু করে স্বাগতিকদের এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন তারা দুজন। তবে তাদের জুটি ভেঙেছেন তাসকিন। ডানহাতি পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করার চেষ্টায় শর্ট মিড উইকেটে থাকা তানজিদকে ক্যাচ দিয়েছেন ২২ রান করা নাইব। পরের গল্পটা হাশমতউল্লাহ ও নবির। তাদের দুজনের একশ পেরোনো জুটিতে দুইশ পার করা পুঁজির স্বপ্ন দেখতে থাকে আফগানিস্তান। ৭১ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও একেবারে শুরু থেকেই ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাটিং করছিলেন নবি। দারুণ ব্যাটিংয়ে পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরিও।
রিশাদ হোসেনের বলে দুই রান নিয়ে ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন নবি। যদিও পরের বলেই ফিরতে পারতেন তিনি। ডানহাতি লেগ স্পিনারের লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় ক্যাচ দিলেও লং অফ থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। পরের ওভারে মুস্তাফিজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৮৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন হাশমতউল্লাহ। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর মিরাজের ওভারেই ফিরতে পারতেন হাশমতউল্লাহ। তবে অল্পের জন্য রান আউট থেকে বেঁচে যান আফগান অধিনায়ক। যদিও পরের ওভারে তাকে নিজের শিকার বানিয়েছেন মুস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসারের ভেতরে ঢোকা নিচু হওয়া ডেলিভারিতে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়েছেন ৫২ রানের ইনিংস খেলা হাশমতউল্লাহ।
আফগান অধিনায়ক ফেরার পর নবিকে সঙ্গ দিতে পারেননি রশিদ। শরিফুলের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে হুক করতে গিয়ে মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ১১ বল খেলা রশিদকে ফিরতে হয়েছে ১০ রানে। তবে টেইলএন্ডারদের সঙ্গে নিয়ে সেঞ্চুরির পথে হাঁটছিলেন নবি। আফগানিস্তানের তারকা ব্যাটারকে অবশ্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন তাসকিন। আগের ওভারে মুস্তাফিজের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে ছক্কা মেরেছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। পরের ওভারে তাসকিন প্রায় একই ধরনের বল করলেও খানিকটা গতি কমিয়ে দিয়েছিলেন। তাসকিনের স্লোয়ারে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে তানজিদকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৮৪ রান করা নবি।
পরের বলে গতিময় এক ডেলিভারিতে মোহাম্মদ গাজানফারকে বোল্ড করেছেন তাসকিন। নবি ফেরার পর আফগানিস্তানের রান বাড়িয়েছেন নাঙ্গেলিয়া খারোটে। ২৮ বলে ২৭ রানের কার্যকরী ইনিংসে খেলেছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ফারুকি রান আউট হওয়ায় ২৩৫ রানের পুঁজি নিয়ে থামতে হয় আফগানদের। বাংলাদেশের হয়ে চারটি করে উইকেট নিয়েছেন তাসকিন ও মুস্তাফিজ। প্রথমবারের মতো কোন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দুজন পেসার একই সঙ্গে চার উইকেট পেয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
আফগানিস্তান- ২৩৫/১০ (৪৯.৪ ওভার) (গুরবাজ ৫, সেদিকউল্লাহ ২১, হাশমতউল্লাহ ৫২, গুলবাদিন ২২, নবি ৮৪; মুস্তাফিজ ৪/৫৮, তাসকিন ৪/৫৩)
বাংলাদেশ- ১৪৩/১০ (৩৪.৩ ওভার) (তানজিদ ৩, সৌম্য ৩৩, শান্ত ৪৭, মিরাজ ২৮; গাজানফার ৬/২৬, রশিদ ২/২৮)