ভারত - বাংলাদেশ সিরিজ

‘আমরা জানি না কীভাবে ১৮০ রান করা যায়’

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 00:57 সোমবার, 07 অক্টোবর, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

কানপুরে টেস্টের আড়াই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার পরও ম্যাচের ফলাফল আসতে পারে এমন ভাবনায় হয়ত খুব কম মানুষই ভেবেছে। তবে খেলাটা বাংলাদেশের হওয়ায় অনেক দর্শকের মাঝেই একটা ভয় ছিল। সেটার প্রতিফলন ঘটতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ভারত সফর থেকে চারটা পয়েন্ট পেতে শেষদিনে উইকেটে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হতো বাংলাদেশের ব্যাটারদের। সেটা আর হলো কই? লিটন দাস, সাকিব আল হাসানরা সহসায় বিলিয়ে দিয়ে এলেন নিজেদের উইকেট।

ফরম্যাট যাই হোক, বাংলাদেশের ব্যাটিংটা এমনই। আপনি যখনই একটু আশায় বুক বাঁধবেন তখন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে দুমড়ে-মুচড়ে। টেস্টের ব্যর্থতা ছাপিয়ে ফেলার একটা বড় সুযোগ ছিল গোয়ালিয়রের টি-টোয়েন্টিতে। টসের সময় রবি শাস্ত্রী নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে একটু আশার কথা শুনতেই হয়ত জানতে চেয়েছিলেন জার্সির রঙ বদলের সঙ্গে বাংলাদেশের ভাগ্যটা বদলে যাবে কিনা। অধিনায়ক অবশ্য হ্যাঁ কিংবা না বলে উত্তর দেননি। বরং ভালো ক্রিকেটের একটা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন।

শাস্ত্রী যে ভাগ্য বদলের কথা বলেছিলেন সেটা বদলানো যায়নি একটুও। বরং ভারতের তরুণদের সামনে নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন লিটন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞরা। সূর্যকুমার যাদব, অভিষেক শর্মা, সাঞ্জু স্যামসন কিংবা হার্দিক পান্ডিয়ারা যেখানে চার-ছক্কায় একের পর এক বল সীমানা ছাড়া করছেন সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটাররা কেবল টিকে থাকতে পারলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন।

আর্শদীপ সিং, বরুণ চক্রবর্তীদের বিপক্ষে তাই আসা-যাওয়ার একটা মিছিল তৈরি করলেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। টেস্টের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠল টি-টোয়েন্টিতেও। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ২৭ রানের ইনিংস খেলতে মোকাবেলা করলেন ২৫ বল। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রানে অপরাজিত থাকা মেহেদী হাসান মিরাজ খেললেন ৩২ বল। দুজনের কেউই ১২০ ছাড়ানো স্ট্রাইক রেটে খেলতে পারলেন না। অথচ ভারতের হয়ে দুইশ স্ট্রাইক রেটে খেললেন অভিষেক, সূর্যকুমার, হার্দিকরা।

দুই দলের ক্রিকেটারদের সামর্থ্যে পার্থক্যটা একেবারেই স্পষ্ট। নাজমুল শান্ত অবশ্য বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মাঝে সামর্থ্যের ঘাটতি দেখেন না। অধিনায়কের চাওয়া দক্ষতার উন্নতি। তবে সেটা কিভাবে তা জানা নেই শান্তর। এ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বাঁহাতি ব্যাটার বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য আছে। সামর্থ্য অবশ্যই আছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তবে দক্ষতা উন্নতির অনেক জায়গা আছে। কিন্তু এই উন্নতি কীভাবে হবে?’

সবশেষ কয়েক বছরে বড়সড় পরিবর্তন এসেছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। একটা সময় ১৫০ কিংবা ১৬০ রানে জেতা গেলেও এখন পার স্কোর গিয়ে দাঁড়িয়েছে কখনও ১৮০ আবার কখনও সেটা ১৯০ রান। এমনকি ম্যাচের পর ম্যাচে দেখা মিলছে দুইশ পেরনো পুঁজিও। অথচ সবশেষ ১০ বছরে টি-টোয়েন্টিতে বলার মতো উন্নতি করতে পারেনি বাংলাদেশ।

শান্তরা ঘুরেফিরে আটকে আছে ১২০-১৫০ রানের ঘরে। কোন কোন ম্যাচে হয়ত সেটা ১৬০ কিংবা ১৬৫ রানে আটকায়। বাংলাদেশের অধিনায়কও স্বীকার করলেন নিজেদের যাচ্ছেতাই ব্যাটিংয়ের কথা। শান্ত বলেন, ‘আমি যদি গত ১০ বছর দেখি, আমরা এ রকমই ব্যাটিং করে যাচ্ছি। মাঝেমধ্যে হয়তো ভালো ব্যাটিং করি।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে গেলেই ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ বাংলাদেশের উইকেট। ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ কোথাও দুইশ রানের উইকেটের খেলা নেই। বেশিরভাগ ম্যাচ মিরপুরের স্পিন স্বর্গে হওয়ায় শটস খেলতে ভয় পেয়ে থাকেন ব্যাটাররা। এমন অভিযোগ প্রায়শই করেছেন ক্রিকেটাররা। টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত ১৪০-১৫০ রানের জন্য খেলায় কীভাবে ১৮০ রান করতে হয় সেটা জানেন না বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এমন কথা অকপটে বলেছেন অধিনায়ক শান্ত। তবে সেটার জন্য দেশে পরিবর্তন চান তিনি।

শান্ত বলেন, ‘এটার জন্য আমরা ঘরের মাঠে যখন অনুশীলন করি, তখন উইকেটের পরিবর্তন…কিছু না কিছু একটা পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা যখন ঘরের মাঠে খেলি, তখন ১৪০-১৫০ রানের উইকেটই হয়। ব্যাটসম্যানরা ওই রানটা কীভাবে করতে হয়, সেটা জানে। কিন্তু আমরা জানি না কীভাবে ১৮০ করা যায়। ওই ধরনের উইকেট অনুশীলন করলে হয়তো আমাদের আরেকটু উন্নতি হবে। তবে আমি শুধু উইকেটের দোষ দেব না। এখানে মানসিক অনেক ব্যাপার থাকে।’