নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দুঃখ ঘুচানোর মিশন

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 21:12 বুধবার, 02 অক্টোবর, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিমান ধরার আগে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ক্রিকেটারদের খানিকটা উৎসবের আবহ দেয়ার চেষ্টা করেছিল বিসিবি। দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার তেমন চেষ্টা অনেকটা সফলও বলা চলে। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে মিরপুরে ছেলেদের মতো করেই ফটোসেশন সেরেছেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। গণমাধ্যমকর্মীদের উপচে পড়া ভীড়ে মিডিয়া সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেছেন স্কোয়াডে থাকা প্রায় সব ক্রিকেটার।

এমন উন্মুক্ত সাক্ষাৎকারের আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আগে নিজেদের স্বপ্নের কথা জানিয়েছিলেন জ্যোতি। স্বপ্নের সঙ্গে আক্ষেপের কথা বলতেও মুখ লুকাননি বাংলাদেশের অধিনায়ক। ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ জেতা বাংলাদেশের মেয়েরা ঘরের মাঠে পাকিস্তানের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতলেও ২০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেদের বলার মতো কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেননি। ভারত, অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের বিবেচনায় টি-টোয়েন্টিতে বেশ পিছিয়ে বাংলাদেশ।

এমনকি এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনাতেও এগিয়ে যাবার সুযোগ নেই। টি-টোয়েন্টিতে দেশের মেয়েরা কতটা পিছিয়ে সেটা আরও একটু পরিস্কার ধারণা দেয় বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে ২০ ওভারের ক্রিকেটে প্রথমবার খেলতে নেমেছিলেন সালমা খাতুনরা। দেশের মাটিতে হওয়া সেই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই শুরু আর সেই যেন শেষ হয়ে আছে।

২০১৪ সালের পর আরও চারটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে ম্যাচ জেতা হয়নি একটি আসরেও। বিশ্বকাপের নতুন মিশন শুরুর আগে ঘুরেফিরে তাই সামনে এসেছে পুরনো সেই আক্ষেপ। সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই জ্যোতি জানিয়েছিলেন, অন্তত একটি ম্যাচ জিততে চান, স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ছন্দ ফেলে স্বপ্ন দেখেন সেমিফাইনাল খেলারও। সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার পর এবার বিশ্বকাপে নেমে পড়ার সময় হয়েছে বাংলাদেশের।

বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড। মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে আইসিসির একাডেমি মাঠে শেষ মুহূর্তে নিজেদের অনুশীলন সেরেছেন ক্রিকেটাররা। প্রথম ম্যাচে আগে ঘুরেফিরে এলো সেই ম্যাচ জিততে না পারার কথা। জ্যোতি অবশ্য আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই জানালেন দুঃখ ঘুচানোর কথা। স্কটিশদের হারিয়েই এমন কিছুর স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক।

বিসিবির এক ভিডিও বার্তায় এ প্রসঙ্গে জ্যোতি বলেন, ‘আমি বলব পুরো দলের জন্য অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এজন্য কারণ হচ্ছে গত আমরা যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি ২০১৪ বিশ্বকাপ বাদে কোন বিশ্বকাপে আমরা বলার মতো কিছু করতে পারিনি। আমরা চাই এই বিশ্বকাপটা যেন আমাদের জন্য মনে রাখার মতো এবং স্মরণীয় হয়।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি বলব খুবই হতাশাজনক কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এবার এই দুঃখটা আমরা ঘুচাতে চাই। যেন আমাদের এই দুঃখ আর না থাকে। আমরা শুরুটা করতে চাই আগামী কালকের ম্যাচ দিয়ে।’

বাংলাদেশ অধিনায়কের এমন আত্মবিশ্বাসের রসদ অবশ্য পুরনো স্মৃতি। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে চারবারের দেখায় সবকটিতে জয় পেয়েছে টাইগ্রেসরা। সবশেষ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে স্কটিশদের হারিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। শতভাগ জয়ের রেকর্ড থাকলেও তাদেরকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ দেখছেন না জ্যোতি।

তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা স্কটল্যান্ডের সঙ্গে যতবার খেলেছি ততবার আমরা আসলে জয় পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য ভালো ব্যাপার কিন্তু তবুও বলব কোন দলকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ প্রত্যেকটা দলই এখানে সমান সামর্থ্য নিয়ে এসেছে এবং সবার মাঝে একই ধরনের ক্ষুধা আছে, সবাই ম্যাচ জিততে চায়। আমরা এক ম্যাচ চিন্তা করে এগোবো। তাদের বিপক্ষে যেসব পরিকল্পনা করলে আমরা ভালো করব সেগুলো নিয়েই ভাববো।’

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে জ্যোতির। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৯৯ ম্যাচ খেলেছেন ডানহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটা তাই জ্যোতির জন্য বিশেষ। নিজের শততম ম্যাচ নিয়ে বেজায় খুশি বাংলাদেশের অধিনায়ক। তবে এমন ম্যাচে দেশের জয়ে অবদান রাখতে পারলেই খুশি তিনি।

জ্যোতি বলেন, ‘এটা অন্যরকম একটা অনুভূতি। একশতম ম্যাচ খেলার অনুভূতিটা অন্য রকম। অনেক বেশি খুশি, অনেক সময় আবার অবাকও লাগে এই ক্যারিয়ার শুরু করেছি দেখতে দেখতে ১০০ টা ম্যাচ হয়ে যাচ্ছে। যদি আল্লাহ পাক সুস্থ থাকেন আগামীকাল সেটা হবে। সেদিক থেকে আমি অনেক বেশি আনন্দিত। সবচেয়ে বেশি খুশি হবো যদি একশতম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে যদি কোন অবদান রাখতে পারি সেটা হবে আমার জন্য সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়।’

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের শক্তির জায়গা স্পিন। রাবেয়া খানের সঙ্গে বল হাতে ঘূর্ণিতে প্রতিপক্ষে চেপে ধরতে পারেন নাহিদা আক্তার, ফাহিমা খাতুন, স্বর্ণা আক্তার, সুলতানা খাতুনরা। সবশেষ কয়েক বছরে বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছেন তারা। তবে পেসার হিসেবে আলো ছড়াতে পারেন মারুফা আক্তার, দিশা বিশ্বাসরা। তাদের সঙ্গে পেস ইউনিটকে আরও খানিকটা শক্তিশালী করে তুলতে পারেন জাহানারা আলম ও রিতু মনি।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ হতে পারে ব্যাটিং। টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার সবশেষ কয়েক বছরে টাইগ্রেসদের বেশি ভুগিয়েছে ব্যাটারদের ব্যর্থতা। দিলারা আক্তার, সাথী রানী কিংবা মুর্শিদা খাতুনরা একটুখানি স্বপ্ন দেখালেও ধারাবাহিকতার অভাব ভাবিয়ে তুলতে পারে বাংলাদেশকে। টপ অর্ডার থেকে রান না পেলে জ্যোতির ভরসায় থাকতে হবে তাদের। তাতে বেশিরভাগ সময়ই একশ ছোঁয়া ইনিংসে হারতে হয়েছে বাংলাদেশের মেয়েদের। তবে খানিকটা স্বস্তি মিলতে পারে স্বর্ণা, তাজ নেহার কিংবা দিশার ব্যাটিংয়ে।

৩ অক্টোবর পর্দা উঠছে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের। যেখানে ১০ দলের টুর্নামেন্টে ‘বি’ গ্রুপে আছে বাংলাদেশ। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ সাউথ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্কটল্যান্ড। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী দিনে ৩ অক্টোবর জ্যোতিদের খেলতে হবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর যথাক্রমে ৫ অক্টোবর ইংল্যান্ড, ১০ অক্টোবর ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ১২ অক্টোবর সাউথ আফ্রিকার মোকাবেলা করতে হবে বাংলাদেশকে।