বিপিএল

‘একার খুশির চেয়ে সবার খুশিটা হলে ভালো হতো’

মমিনুল ইসলাম

মমিনুল ইসলাম
প্রকাশের তারিখ: 15:49 সোমবার, 19 ফেব্রুয়ারি, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম থেকে ||

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজসেরা হয়ে বছর শেষ করেছিলেন শরিফুল ইসলাম। গোছানো বোলিংয়ে ২০২৩ সালটা স্বপ্নের মতো কাটিয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার। আগের বছরের আত্মবিশ্বাসের দেখা মিলেছে এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও (বিপিএল)। নতুন বলে সুইং আর স্লোয়ারে প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের বোকা বানিয়েছেন শরিফুল। দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ২২ উইকেট। এখন পর্যন্ত এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনিই।

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল হলেও শরিফুলের দল ছিল একেবারে বিবর্ণ। দেশি-বিদেশিদের পারফরম্যান্সের সমন্বয়ের অভাবে একটির বেশি ম্যাচ জিততে পারেনি ঢাকা। পুরো আসরে ১২ ম্যাচ খেলে হেরেছে ১১টিতে। বিশ্বের যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে এক মৌসুমে একটানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারার রেকর্ড এটি। ঢাকা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর একান্ত সাক্ষাৎকারে ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি মমিনুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বলেছেন শরিফুল।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার দল গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়েছে তবে আপনি ১২ ম্যাচ খেলে ২২ উইকেট নিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত আপনিই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। অনুভূতিটা নিশ্চই বেশ ভালো?

শরিফুল: দেখুন, যদি ব্যক্তিগতভাবে নিজের কথা চিন্তা করি তাহলে তো একটু ভালো লাগবেই। কিন্তু সবার কথা যদি চিন্তা করি তাহলে ভালো লাগবে না। যদি আমরা দল হিসেবে ভালো করতাম, সুপার ফোরে যেতে পারতাম তাহলে অনেক বেশি খুশি হতাম। কারণ তখন আরও দুটো ম্যাচ খেলার সুযোগ পেতাম। আমাদের দলও ভালো জায়গায় যেতো। কিছুটা খারাপ লাগছে আবার ২২ উইকেট পেয়েছি এটা ভেবেও ভালো লাগছে। আমার মনে হয় যে একার খুশির চেয়ে সবার খুশিটা হলে ভালো হতো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এমন টুর্নামেন্টের আগে তো সবাই নিজেদের একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে। আপনার কি মনে হয় আপনি আপনার লক্ষ্য ছুঁতে পেরেছেন কিংবা নিজের প্রত্যাশা মেটাতে পেরেছেন?

শরিফুল: আলহামদুলিল্লাহ, আমি চেয়েছিলাম সুস্থ থেকে টুর্নামেন্টটা শেষ করতে। কয় উইকেট পাবো জানি না তবে ভাবনায় ছিল যেন আমি ভালো বোলিং করতে পারি। আমার কাছে মনে হয় আমি মোটামুটি ভালো বোলিং করেছি, সুস্থ আছি। সুতরাং এটাই বড় পাওয়া।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: নিউজিল্যান্ডে নতুন বলে দারুণ বোলিং করেছিলেন। পুরো বিপিএলেও শুরু থেকেই আপনাকে খানিকটা আক্রমণাত্বক দেখা গেছে। নতুন বলে যখন বোলিং করেন তখন কী ধরনের পরিকল্পনা থাকে?

শরিফুল: শুরুতে যখন বোলিং করি তখন পরিকল্পনাটা এমন থাকে যে আমি যদি দুই-একটা বাউন্ডারিও খাই তাতেও কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি যদি পাওয়ার প্লেতে দুই-একটা উইকেট নিতে পারি তাহলে প্রতিপক্ষ ব্যাকফুটে চলে যাবে। আমি চেষ্টা করি উইকেট নিয়ে দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: নতুন বলে তো স্লোয়ার, ইনসুইং বেশ কার্যকরী হচ্ছে। কবে থেকে এবং কার সঙ্গে এটি নিয়ে কাজ করছেন?

শরিফুল: এটা নিয়ে সবশেষ কিছুদিন (খালেদ মাহমুদ) সুজন স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি। উনি বলেছেন সব ব্যাটাররাই প্রত্যাশা করে বোলাররা হয়তো একটু জোরে বোলিং করবে নয়তো ইনসুইং করবে। তখন স্লোয়ারটা করলে একটু ভালো। এটা নিয়েই অনুশীলন করছিলাম, সেটা ম্যাচেও করছি এবং আলহামদুলিল্লাহ ঠিকঠাক হচ্ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো সবশেষ বিশ্বকাপে মাঝের ওভারগুলোতেও দারুণ বোলিং করেছিলেন। প্রয়োজনে দলকে ব্রেক থ্রুও এনে দিয়েছেন। তখন আলাদা চ্যালেঞ্জ থাকে নিশ্চই?

শরিফুল: দেখুন, মাঝের ওভারে একেক সময় খেলার পরিস্থিতি একেক রকম থাকে। মাঝের ওভারে যেই বোলিংয়ে আসুক না কেন সবার চেষ্টা থাকে রান চেক দেয়া, টাইট বোলিং করা। তখন ব্যাটাররা ভুল করলে এমনিতেই উইকেটটা আসে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ডেথ ওভারে ভালো বোলিং করছেন আবার বেশ কিছু ম্যাচে রানও দিচ্ছেন। এটা নিয়ে চিন্তিত কিনা।

শরিফুল: না, টি-টোয়েন্টি খেলাটা এমনই। দুই-একটা ওভারে আপনি মার খাবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। কারণ আপনার সবদিন সমান যাবে না, একটা দিন খারাপ হতেই পারে। আমরা তো মানুষ, মেশিন না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ২০২৩ সালটা আপনার জন্য স্বপ্নের মতো ছিল। কিন্তু এর আগে আপনি অনেকদিন দলের বাইরে ছিলেন, চোটে পড়েছেন। সেই সময়টা কতটা কঠিন ছিল?

শরিফুল: যখন আমি দল থেকে বাদ পড়েছি তখন বিশেষ করে আমার পরিবার, আমার আব্বা-আম্মা, আমার স্ত্রী, বন্ধু-বড় ভাই, মামা সবাই খুব সাপোর্ট করেছে। মানসিকভাবে তারা আমাকে খুবই সাপোর্ট করেছে। আমার স্ত্রী আমাকে সবসময় বলেছে তোমাকে দ্বারা হবে, তুমি চেষ্টা করো। তুমি পারো বলেই সেখানে আছো, তারা তোমাকে ডেকেছে। তুমি অবশ্যই ভালো করবা। ওই সাপোর্টটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: পেসারদের জন্য ইনজুরি তো একটা বড় সমস্যা। তাসকিন আহমেদ টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ালেন। এখন শুধু ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি খেলবে। সিদ্ধান্তটাকে কিভাবে দেখছেন?

শরিফুল: তাসকিন ভাই যদি পুরোপুরি ফিট থাকতেন, কাঁধ ঠিক থাকতো তাহলে উনি টেস্ট খেলতেন। উনার কাঁধে সমস্যা দেখে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেছেন। যাতে করে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে আরও ভালো কিছু দিতে পারেন। এসব চিন্তা করেই কিন্তু উনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এখন তো অনেকেই টেস্ট ছেড়ে সাদা বলের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। পেসাররা যেহেতু একটু বেশিই ইনজুরিতে পড়ে তাই টেস্ট চালিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন?

শরিফুল: আপনি যদি টেস্ট ম্যাচটা উপভোগ করেন তাহলে সহজ, কঠিনভাবে নিলে কঠিন। প্রতিটা সেশন যদি উপভোগ করে...। আমার কাছে মনে হয় ওয়ানডের থেকে টেস্টে মজা বেশি। কম কষ্ট হয় আরকি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: তাসকিন আহমেদ তো এতদিন আপনাদের পেস বোলিংয়ের নেতা ছিলেন। এবার পুরো দলের নেতা হিসেবে ছিলেন। তাকে কেমন দেখলেন?

শরিফুল: খুব ভালো। উনার সাথে অনেকদিন ধরেই খেলছি, মানুষ হিসেবে সে খুব ভালো। উনার সঙ্গে জিম, সুইমিং, মাঠে, অনুশীলনে সব জায়গায় মজা হয়। তার কাছ থেকে অনেক বেশি শেখার আছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলে আপনার বোলিং দেখে টুইট করেছিলেন অ্যালান ডোলান্ড। সাবেক গুরু যখন এখনও এভাবে খোঁজ রাখেন তখন কেমন লাগে?

শরিফুল: এটা অনেক ভালো লাগার বিষয়। কারণ উনি এখন আমাদের সাথে নেই তবুও উনি খবর রাখছেন। এদিক বিবেচনা করলে এটা ভালো ব্যাপার। হয়তো আমাদের দেশের কিংবা খেলোয়াড়ের প্রতি তার ভেতরে সেই ফিলিংসটা আছে। তার জন্যই হয়তো আমাদের খোঁজ রাখছেন।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটা কি এখনও আছে?

শরিফুল: গ্রুপটা এখনও আছে কিন্তু খুব কম কথা হয়। কারণ উনিও ব্যস্ত থাকেন, সময়েরও একটা পার্থক্য আছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের কথা ভেবে আইপিএলের নিলাম থেকে আপনার নাম সরিয়ে নিতে হয়েছে। যে ছন্দে আছেন তাতে আইপিএল খেলতে পারলে ভালো লাগতো নিশ্চই?

শরিফুল: দেখুন, সবকিছু তো ওপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দেয়া। যদি আমার কপালে আইপিএল লেখা থাকে তাহলে খেলবো না লেখা থাকলে খেলবো না। তাই ওইটা নিয়ে এখন চিন্তা করছি না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এবছর বাংলাদেশে ১৪টি টেস্ট আছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলবেন। নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্যটা কি থাকবে?

শরিফুল: ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথা যদি বলেন তাহলে লক্ষ্য একটাই ফিট থেকে যাতে খেলতে পারি এবং দলকে জেতার মতো পারফরম্যান্স দিতে পারি।