বিপিএল

‘ছোট দেশ থেকে আসায় চাপ বেশি, ভালো না করলেই বাদ পড়ব’

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 00:25 সোমবার, 29 জানুয়ারি, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||

কার্টিস ক্যাম্ফারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাউথ আফ্রিকায়। প্রোটিয়াদের হয়ে ২০২০ যুব বিশ্বকাপও খেলেছেন তিনি। তবে বর্তমানে নিজেকে চেনাচ্ছেন আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটার হিসেবে। পারিবারিক সূত্রে আয়ার‌ল্যান্ডের পাসপোর্ট থাকায় নেইল ও’ব্রায়েনের প্রস্তাবে দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা শুরু করেন ক্যাম্ফার। সেখানে ভালো করায় ডাক পড়ে আইরিশদের হয়ে জাতীয় দলে খেলার। সেই সুযোগ দুই হাতে লুফে নিয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। ক্রিকেটের পরাশক্তি হয়ে উঠতে না পারলেও আয়ারল্যান্ডে খেলে তারকা বনে গেছেন ক্যাম্ফার।

সিকান্দার রাজার মতো ক্যাম্ফারকেও বলা হয়ে থাকে ছোট দেশের বড় তারকা। জাতীয় দলের হয়ে নিয়মিত খেলতে থাকা ক্যাম্ফার গত বছর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে খেলেছিলেন বিপিএল। এবারও বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে চট্টগ্রামের জার্সিতে খেলছেন তিনি। সিলেটে খেলার ফাঁকে ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি আবিদ মোহাম্মদ এর সঙ্গে কথা বলেছেন ক্যাম্ফার। যেখানে শুনিয়েছেন হকি ছেড়ে ক্রিকেট বেছে নেয়ার গল্প, বিপিএল নিয়ে অভিজ্ঞতা এবং নিজের দেশের ক্রিকেট সংস্কৃতির কথা।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো ছোট বেলায় হকি খেলতেন। যতটুকু জানি আপনি সেটা অনেক পছন্দও করতেন। সেখান থেকে ক্রিকেটার কিভাবে?

ক্যাম্ফার: দেখুন, আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাউথ আফ্রিকায়। সেখানে আপনাকে সব ধরনের খেলাই খেলতে হতো। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমি ক্রিকেটের প্রতি ঝুঁকেছি। তবে আমি সব খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েছি। হকির প্রতি শুরুতে অনেক বেশি আসক্ত ছিলাম। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নিলাম ক্রিকেটার হবো। কারণ সে সময় আমি জাতীয় দলের রাডারে চলে এসেছিলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিতেই হতো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এই যে ক্রিকেটার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সবাই কাউকে না কাউকে আদর্শ মেনে ক্রিকেটার হোন। আপনার আদর্শ কে ছিল?

ক্যাম্ফার: জ্যাক ক্যালিসকে আমি আইডল মানি। তাকে দেখেই আমার ক্রিকেটে আসা। সে আমার অনেক বড় অনুপ্রেরণা। তার সঙ্গে অবশ্য আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সেটা এসএ টি-টোয়েন্টি লিগে। দারুণ একটা মুহূর্ত ছিল আমার জন্য। সে আমার রোল মডেল।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আয়ারল্যান্ডে তো ক্রিকেট এত বেশি জনপ্রিয় না। সেখানে জনপ্রিয়তা পাওয়া কিংবা বাড়ানো তো নিশ্চয় আলাদা একটা চ্যালেঞ্জ?

ক্যাম্ফার: হ্যাঁ, সেটা তো অবশ্যই। কারণ আয়ারল্যান্ডের মানুষ এখানকার মতো এতো ক্রিকেট পাগল নয়। আমরা বাংলাদেশের তুলনায় এখনও তেমন বড় হয়ে উঠিনি। আয়ারল্যান্ডের মূল খেলা ক্রিকেট নয়, ক্রিকেট হলে প্রেক্ষাপট ভিন্ন হতো। তবে সেখানে মানুষ ধীরে ধীরে ক্রিকেটকে পছন্দ করতে শুরু করেছে। আশা করছি যত সময় যাবে তত ক্রিকেটের প্রতি আইরিশদের ভালোবাসা আরও বাড়বে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আয়ার‌ল্যান্ডে তো আপনি এখন বেশি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এখন যদি সাউথ আফ্রিকার হয়ে খেলার সুযোগ আসে, যাবেন?

ক্যাম্ফার: না, এটা আমার দ্বারা হবে না। অনেকে গেলেও আমি থেকে যাব। আয়ারল্যান্ডই আমার বাড়ি। তবে আফ্রিকায় ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয় আমার। সেগুলো আমি নিয়মিতই খেলি। দেশটির ঘরোয়া ক্রিকেট অনেক মানসম্পন্ন, অনেক কিছু শিখতে পারব। আশা করি দ্রুত আয়ারল্যান্ডের হয়ে সাউথ আফ্রিকা জাতীয় দলের বিপক্ষে আফ্রিকায় খেলব। কিন্তু আয়ারল্যান্ড ছেড়ে কখনও সেই দেশের ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে নেই।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এবার একটু বিপিএল প্রসঙ্গে আসা যাক, গত বছর চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএল খেলেছিলেন। এবারও তাদের হয়েই খেলছেন। এখন পর্যন্ত বিপিএলের অভিজ্ঞতাটা কেমন?

ক্যাম্ফার: অভিজ্ঞতার কথা যদি বলি তাহলে বলবো এক কথায় দারুণ। বিপিএলে ফিরে এসে ভালো লাগছে। বাংলাদেশ দারুণ উপভোগ্য জায়গা। এটা নিয়ে মনে হয় তৃতীয় বা চতুর্থবার এলাম। প্রথমবার এসে অনেক কিছু শিখেছিলাম। এখানকার সংস্কৃতি আমাদের থেকে অনেক ভিন্ন। এই নিয়ে বিপিএলে দ্বিতীয়বার এলাম। আশা করছি চট্টগ্রামের হয়ে সেরাটা দেব এবং দলকে অনেক ম্যাচ জেতাতে অবদান রাখব।

তার চেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় বাড়ির মতো হয়ে গেছে। এখানকার মানুষ অনেক ক্রিকেট পাগল। শেষবার সিলেটে এসে মাঠে ভর্তি দর্শক পেয়েছিলাম, এবারও একই দেখেছি। মাঠ ভর্তি দর্শকের মাঝে খেলার আনন্দ অন্যরকম। এ বছর এখন পর্যন্ত খুব ভালো অবস্থানে আছে। মানসিক দিক দিয়েও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে সবাই। সামনে আরও ভালো হবে আশা করি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এবারের বিপিএলে আপনার লক্ষ্যটা কি? দলকে কোথায় দেখতে চান?

ক্যাম্ফার: আমার লক্ষ্য এবার দলকে গতবারের তুলনায় আরও বেশি কিছু দেয়া। যেখানেই আপনি খেলেন না কেন, সবাই অনেক আশা করে আপনার থেকে। আমাদের আরও কয়েকজন বিদেশে যোগ দিয়েছে, তারাও ভালো। চট্টগ্রাম এবার ভালো করবে আমার বিশ্বাস। শুরুতে প্লে-অফ নিশ্চিত করতে হবে। আমি নিজেও চাই রান করতে উইকেট নিতে। এরপর আমরা ফাইনাল নিয়ে ভাববো।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলে আপনি চট্টগ্রামের হয়ে খেলছেন, সিলেটে আপনার সতীর্থ হ্যারি টেক্টরও আছে। এই যে আপনারা ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলে বেড়াচ্ছেন তাতে করে আয়ারল্যান্ডের ক্রিকেটেরও উন্নতি হচ্ছে নিশ্চয়?

ক্যাম্ফার: হ্যাঁ, অবশ্যই। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটাও ভালো হচ্ছে। মাঝে মাঝে অবশ্য একটু চাপ অনুভব হয় যে আমরা ছোট দেশ থেকে এসেছি। তবে ভালো করতে হলে আমাদের এই জায়গায় মানিয়ে নিতে হবে। আমাদের ভালো খেলতে হবে না হলে বাদ পড়ার সুযোগ থাকে। মার্ক অ্যাডায়ারকে দেখুন আইসিসির বর্ষসেরা টি-টোয়েন্টি একাদশে সুযোগ পেয়েছে।

এটা পরিষ্কার ধারণা দেয় যে আমাদের মাঝে ভালো করার সক্ষমতা এবং সম্ভাবনা আছে। আশা করি সেও দ্রুত ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে আসবে। তবে বাকিদের বিভিন্ন লিগে খেলতে দেখে দারুণ লাগে আমার। এখন হয়তো আমরা পাঁচ-ছয় জন খেলছি তবে এটা আরও বাড়বে আশা করি। যত বেশি বাইরে খেলবো তত বেশি সব দেশের উইকেট, কন্ডিশন সম্পর্কে জানবো। এটা আমাদের ক্রিকেটের উন্নয়নে অনেক সাহায্য করবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: হ্যারি টেক্টরের সঙ্গে কথা হয়েছে নিশ্চয়? সে কি বলল?

ক্যাম্ফার: হ্যাঁ, তার সঙ্গে কথা হয়েছে। সে এখানকার দেশীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে বলেছে। তারা কিভাবে নেটে অনুশীলন করে, কিভাবে চিন্তা করে। এই ধরণের কন্ডিশনে খেলতে কি করতে হবে তা হ্যারিকে বলেছে। এটা ভালো, সবাই অনেক সাহায্য করছে আমাদের। সকালের কফি খাওয়া হোক বা দুপুরে লাঞ্চ হোক সবাই একসঙ্গেই করছি আমরা। এতে বন্ধন আরও শক্ত হচ্ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনাদের মাঝে থেকে জশুয়া লিটল তো আইপিএলেও খেলছে। সামনেও আরও আইরিশ ক্রিকেটার আইপিএলে খেলবে বলে মনে হয়?

ক্যাম্ফার: হ্যাঁ, আমি তো সেটা মনে করি। সে আমাদের জন্য খেলে, দেশের জন্য খেলে। দেশের নাম উজ্জ্বল করতে খেলে। সেখান থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। আইপিএল এমন একটা মঞ্চ যেখানে আপনি গেলে অনেক পরিণত হবেন। আমরা ভালো করছি বলেই তো নিলাম থেকে আমাদের নিচ্ছে। আশা করি সামনে এই সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আচ্ছা, আপনি দুবছর বিপিএল খেললেন, কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো?

ক্যাম্ফার: আফিফের সঙ্গে আমার বেশ ভালো বন্ধুত্ব আছে। গত বছর আমরা দুজনই চট্টগ্রামের হয়ে খেলেছিলাম। আপনাদের দেশে তো তামিম ইকবাল-মুশফিকদের রোল মডেল মানা হয়। আমিও তাদের এখানে দেখি। বিপিএল খেলায় খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হচ্ছে। তাদের থেকে আমি শিক্ষা নেয়ার চেষ্টা করছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনাকে তো বাংলাদেশের অনেক সমর্থকই পছন্দ করেন। বাংলাদেশের এমন কেউ আছে যাকে আয়ারল্যান্ডের মানুষ পছন্দ করে কিংবা সেখানে জনপ্রিয়।

ক্যাম্ফার: জনপ্রিয় বলবো না কিন্তু শান্ত যে ফর্মে আছে তা আমাদের বেশ ভুগিয়েছিল। তার নাম আমাদের সবার মুখে মুখে ছিল। সে যেভাবে আমাদের সাথে খেলেছে, রান করেছে সেটার প্রশংসা করতেই হয়। হ্যারি ওর সতীর্থ এই বিপিএলে। আশা করি শান্তর থেকে কিছু না কিছু শিখবে সে।