মেহেদীর ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ের পর রোমাঞ্চ জাগিয়ে জিতল বাংলাদেশ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের দেয়া মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্র্যান্ডন কিংকে তানজিদের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন তাসকিন।লেগ সাইডে খেলতে চেয়েছিলেন কিং। তবে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে বল গেছে অফ সাইডে, মিড অফ বাঁ পাশে সরে ক্যাচ নিয়েছেন তানজিদ হাসান। পরের ওভারে শেখ মেহেদী ফিরিয়েছেন নিকোলাস পুরানকে। মেহেদীর ঝুলিয়ে দেয়া বল ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে চেয়েছিলেন এই ক্যারিবীয় ব্যাটার। তবে ব্যাটে বলে করতে পারেননি। সেই সুযোগে স্টাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক লিটন দাস। ফলে ২ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
তানজিম সাকিবের করা চতুর্থ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ২৫ রান। এর মধ্যে তানজিমের টানা তিন বলে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন। অবশ্য তাকে উইকেটে থিতু হতে দেননি মেহেদী। তাকে মিড অফে হাসান মাহমুদের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেন তিনি। ফলে ১২ বলে ২০ রানের ইনিংস শেষ হয় চার্লসের। আন্দ্রে ফ্লেচারকে রানের খাতাই খুলতে দেননি মেহেদী। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে এই টাইগার স্পিনারের তৃতীয় শিকার হন তিনি। এক বল পরেই ৭ রান করা চেজ কট বিহাইন্ড হয়েছেন। ফলে ৩৮ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে ক্যারিবীয়রা।
ক্যারিবীয়দের বিপর্যয় কিছুটা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন পাওয়েল ও গুড়াকেশ মোতি। তবে এই জুটিকে বড় হতে দেননি তানজিম হাসান সাকিব। এই পেসারের ব্যাক অব দ্য লেন্থ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৬ রান করা মোতি। ফলে ৫৯ রানে ৬ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আকিল হোসেনকে আউট করেছেন রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের ফুলার লেন্থের বলে স্লগ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন শামীম হোসেনের হাতে।
এক সময় ১৩ ওভারে ৭ উইকেটে ৭০ রান ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেখান থেকে ১৫ ওভারে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০৮ রান তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৪তম ওভারে পাওয়েলে তোপের মুখে পড়েন রিশাদ। তিনি তিনটি চারে খরচ করেন ১৫ রান। আর পরের ওভারে তিন ছক্কায় তাসকিনের ওভার থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ২৩ রান। যার বেশিরভাগ রানই এসেছে পাওয়েলের ব্যাট থেকে।
অন্যপ্রান্তে উইকেট গেলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলছিলেন পাওয়েল। তিনি ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ১৮তম ওভারে এসে প্রথম বলেই ২২ রান করা শেফার্ডকে আউট করেন তাসকিন। আর তাতেই পাওয়েলের সঙ্গে তার জুটি ভেঙেছে ৬৭ রানের। শেষ ওভারে জিততে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ১০ রান। স্ট্রাইকে ছিলেন আলজারি জোসেফ।
প্রথম বলে ওয়াইড লং অনে ঠেলে সিঙ্গেল নেন তিনি। এরপর স্ট্রাইকে আসেন দারুণ খেলতে থাকা পাওয়েল। হাসান মাহমুদের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাটেই লাগাতে পারেননি তিনি। তৃতীয় বলে হাসানের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ৩৫ বলে ৬০ রান করা পাওয়েল। চতুর্থ বলে বাই থেকে আসে এক রান। আর পঞ্চম বলে আলজারিকে বোল্ড করে ক্যারিবীয়দের ইনিংস ১৪০ রানে গুঁড়িয়ে দেন হাসান। বাংলাদেশ জয় পায় ৭ রানের।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই সিঙ্গেল নিয়ে বাংলাদেশ দলের রানের খাতা খোলেন তানজিদ হাসান তামিম। পরের বলে আকিল হোসাইনকে ফাইন লেগ দিয়ে চার মারেন সৌম্য সরকার। সেই ওভার থেকে আসে ৬ রান। পরের ওভারে ওবেড ম্যাকয়কে পয়েন্ট দিয়ে চার মারেন তানজিদ। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি এই ওপেনার। আকিলের ফুলার বলে জায়গা করে নিয়ে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ৬ রান করা তানজিদ। ফলে দলীয় ১৫ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
পরের বলে লিটন দাস আকিলকেই ক্যাচ দিয়ে আউট হন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আফিফ হোসেনকেও হারায় বাংলাদেশ। রস্টন চেজের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে সোজা থার্ড ম্যানে আকিল হোসেনকে ক্যাচ দেন ৮ রান করা আফিফ। ফিরতে পারতেন সৌম্যও। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি। চেজের বলে সৌম্যকে কট বিহাইন্ড দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিলে দেখা যায় বল সৌম্যের ব্যাটে লাগেনি।
বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম ছক্কার দেখা পেয়েছে অষ্টম ওভারে। চেজকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছক্কা মারেন জাকের। পরের ওভারে রোমারিও শেফার্ডের ওপর চড়াও হয়েছিলেন সৌম্য কাভার দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মারেন বাংলাদেশের এই ওপেনার। ১১তম ওভারে গুড়াকেশ মোতিকে টানা দুই ছক্কা হাঁকান সৌম্য। স্লটে বল পেয়ে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন সোম্য। পরের বলে সোজা লং নিয়ে আরেকটি ছক্কা হাঁকান তিনি।
ছক্কা মারার চেষ্টায় রোমারিও শেফার্ডকে উইকেট দিয়ে এসেছেন জাকের আলী। লং অনের সীমানায় দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন রভম্যান পাওয়েল। ফলে জাকেরকে ফিরে যেতে হয় ২৭ রান করেই। সৌম্য ও জাকেরের জুটি ভেঙেছে ৫৭ রানে। শেফার্ডের করা ১৩তম ওভারের শেষ বলে সৌম্য ক্যাচ দিয়েছিলেন মোতিকে। তবে ক্যাচ ধরে রাখতে পারেননি রিফ্লেক্সের পর বল স্পর্শ করে মাটি ফলে ৪১ রানে জীবন পান সৌম্য। তবে তিনি ইনিংস বড় করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৪৩ রানে ম্যাকয়ের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেছেন এই ওপেনার।
এরপর বাংলাদেশের ইনিংস টেনেছেন শেখ মেহেদী ও শামীম হোসেন পাটোয়ারি। বিশেষ করে শামীম আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে বাংলাদেশের লড়াইয়ের সংগ্রহে বড় অবদান রেখেছেন। ইনিংসের শেষ ওভারে ম্যাকয়ের বলে জনসন চার্লসকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ১৩ বলে ২৭ রানের ক্যামিও খেলা এই ব্যাটার। মেহেদী শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ২৬ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ১৪৭/৬ (২০ ওভার) (সৌম্য ৪৩, তানজিদ ৬, আফিফ 8, জাকের ২৭, শামীম ২৭, মেহেদী ২৬*; আকিল ২/১২, ম্যাকয় ২/৩০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ১৪০/১০ (১৯.৫ ওভার) (চার্লস ২০, পাওয়েল ৬০, শেফার্ড ২২, আলজারি ৯; মেহেদী ৪/১৩, হাসান ২/১৮)