অনুশীলন ও কঠোর পরিশ্রমই সাফল্যের শেষ কথা: নিশাঙ্কা

ছবি: ক্রিকফ্রেঞ্জি

পরবর্তীতে স্কুল ক্রিকেট, ঘরোয়া ক্রিকেটে পেরিয়ে ২৭ বছর বয়সি ব্যাটারের ব্যাটিং দেখছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও। ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করা নিশাঙ্কা তিন ফরম্যাটেই পারফর্ম করছেন ধারাবাহিকভাবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চলমান সিরিজেও দুই টেস্টে করেছেন সেঞ্চুরি। মাঠের বাইরে শান্ত প্রকৃতির হলেও বাইশ গজে নিশাঙ্কা বিধ্বংসী, আক্রমণাত্বক। সিরিজ শেষের আগে কলম্বোতে ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি পারভেজ আল হাসান—এর সঙ্গে একান্ত আলাপে ভালো খেলার রহস্য, ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে বাবার অবদান ও বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার দ্বৈরথ নিয়েও নিজের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশকে ভুগিয়ে আইসিসির মাস সেরার দৌড়ে নিশাঙ্কা
৭ জুলাই ২৫
ক্রিকফ্রেঞ্জি— বাংলাদেশের বিপক্ষে পুরো সিরিজেই আপনি ভালো ক্রিকেট খেলেছেন, পারফর্ম করেছেন। এমন পারফরম্যান্সের রেসিপিটা কী?
নিশাঙ্কা: দেখুন— আমি সবসময় আমার স্বাভাবিক খেলাটা খেলার চেষ্টা করি। আমার কাছে প্রতিপক্ষ কে এটা কোন বড় বিষয় নয়। আমি মাঠে নেমে সেটাই করি যা আমি সবচেয়ে ভালো পারি এবং এভাবেই আমি সাফল্য পেয়েছি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি— শ্রীলঙ্কা তো এখন ভালো ক্রিকেট খেলছে। একটা দল যখন ভালো করে সেটার পারফরম্যান্স একজন ক্রিকেটারের উপর কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে?
নিশাঙ্কা: দলের পারফরম্যান্স ভালো হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনার দল ভালো ক্রিকেট খেলবে তখন সেটা আপনার পারফরম্যান্সেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। এটি আমাকে আরও ভালো খেলার জন্য এবং দলের জয়ে অবদান রাখার জন্য উৎসাহ দেয়। আমাদের দলের সাফল্যই আমার ব্যক্তিগত সাফল্যের অন্যতম কারণ। শুধু আমার ক্ষেত্রে না, আমার মনে দল ভালো খেললে সেটা সব খেলোয়াড়কে অনুপ্রাণিত করে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি— সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ মানেই যেন বাড়তি ঝাঁজ। সেটা মাঠে হোক কিংবা মাঠের বাইরে হোক। ক্রিকেটার হিসেবে এমন দ্বৈরথ আপনি কতটা উপভোগ করেন?
নিশাঙ্কা: আপনারা যেহেতু বাইরে থেকে দেখেন এজন্য আপনাদের কাছে লড়াইটা অন্যরকম মনে হয়। দেখুন— আপনি যখন দেশের হয়ে খেলবেন তখন তো প্রতিপক্ষকে ছাড় দিতে চাইবেন না। আমাদের দুই দেশের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। তবে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে, মাঠে ও মাঠের বাইরে আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি সবসময় এটা উপভোগ করি। আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, যখন মাঠে আপনার এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে তখন এটা আপনার পারফরম্যান্সকে ভালো করতে প্রভাবিত করবে।

ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশকে ঘায়েল করতে চায় ‘চাপমুক্ত’ শ্রীলঙ্কা
৯ ঘন্টা আগে
ক্রিকফ্রেঞ্জি— আপনাকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় আপনি একেবারে শান্ত প্রকৃতির। অথচ আপনিই যখন মাঠে নামেন তখন পুরোপুরি আলাদা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সঙ্গে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার মানসিকতা। এটার সমন্বয় করেন কীভাবে?
নিশাঙ্কা: আমি ছোটবেলা থেকেই এভাবে বড় হয়ে উঠেছি। আমি যখন মাঠের বাইরে থাকি তখন সবসময় শান্ত থাকার চেষ্টা করি। আপনি যদি বাইরে থেকে খেয়াল করেন তাহলে বুঝতে পারবেন। কিন্তু যখন মাঠে নামি তখনকার ব্যাপারটা একেবারে ভিন্ন। তখন ভেতর থেকে আলাদা একটা শক্তি পাই। মানসিকভাবে আমি খুবই শক্তিশালী। সহজেই আমি আমার আবেগ দেখাই না। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন ভালো খেললেও খুব বেশি খুশি প্রকাশ করি না আবার যদি বাজে দিন যায় তাহলেও মন খারাপ করে বসি থাকি না। নিজেকে নিজে সামাল দেয়ার চেষ্টা করি এবং আমি আমার শক্তির জায়গায় অনুযায়ী শট খেলার চেষ্টা করি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি— আপনার বাবা তো ক্রিকেটেরই একজন। আপনার আজকের পর্যায়ে আসার পেছনে উনার প্রভাব কতটা?
নিশাঙ্কা: ক্রিকেটে আমার বাবাই আমার প্রথম কোচ। আমার বাবার কারণেই আজকে আপনি এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। ছোটবেলা থেকেই সে আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছেন। আমি যেন বড় ক্রিকেটার হতে পারি সেটার জন্য উনার পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব উনি সবই করেছেন। এজন্য আমি আমার বাবার কাছে কৃতজ্ঞ। উনি আমার ক্রিকেট কোচ হওয়ায় আমার জন্য কাজটা সহজ হয়েছে। উনার কাছ থেকে আমি অনেক কিছুই শিখেছি। আমার ক্যারিয়ারের জন্য এটা একটা ইতিবাচক দিক ছিল।
ক্রিকফ্রেঞ্জি—সাম্প্রতিক সময়ে হ্যারি ব্রুক, ইয়াশভি জয়সালের মতো ক্রিকেটাররা তিন ফরম্যাটেই সাফল্য পাচ্ছেন। আপনিও তাদেরই একজন। একসঙ্গে তিন ফরম্যাটে খেলা এবং সাফল্যের রহস্যটা কী?
নিশাঙ্কা: হ্যাঁ, তিন ফরম্যাটেই আমার সময়টা বেশ ভালো যাচ্ছে। আমার মনে হয় আপনি যখন একসঙ্গে তিন ফরম্যাটে খেলবেন তখন এটা একজন ক্রিকেটারকে দারুণভাবে সহায়তা করে। এটার জন্য অবশ্য আমাকে প্রচুর অনুশীলন ও কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আমার সফল হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমি অনুশীলনে যেসব জিনিস করার চেষ্টা করি ওইগুলো আবার ম্যাচে প্রয়োগ করতে পারছি কিংবা কাজে লাগছে। আমি তিন ফরম্যাটেই খেলতে পছন্দ এবং উপভোগ করি। অনুশীলন এবং কঠোর পরিশ্রমই আসলে সব সাফল্যের শেষ কথা। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমনই।
<img src ='/public/storage/inside_article/images/99f7drf46.jpg'>
ক্রিকফ্রেঞ্জি—এখন তো বিশ্ব জুড়েই ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট তুমুল জনপ্রিয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে আপনার ভাবনা কী এবং বিপিএলে খেলার ইচ্ছে আছে কিনা...
নিশাঙ্কা: দেখুন—এখন তো সবাই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে চায়। আমার যদি কখনো সুযোগ আসে তাহলে অবশ্যই আমিও খেলব। তবে আমার কাছে জাতীয় দল সবার আগে। শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলার ফাঁকে যদি আমি কোন টুর্নামেন্টে সুযোগ পাই তাহলে আমি খেলার জন্য প্রস্তুত আছি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি— আপনার চেয়েও যারা তরুণ অর্থাৎ যারা ক্রিকেট শুরু করেছে মাত্র তাদের জন্য আপনি কী পরামর্শ দেবেন...
নিশাঙ্কা: তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে পরামর্শ হচ্ছে নিজের উপর বিশ্বাস রাখো। তারপর কঠোর পরিশ্রম করো এবং অনুশীলন করো। কোচরা যা বলে সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনো এবং মেনে চলো। ক্রিকেটার হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কখনো হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। জীবনে অনেক বাঁধা আসবে কিন্তু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলেই একদিন সাফল্য আসবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি— ধরুন, আপনাকে বলা হলো আপনি টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করবেন অথবা বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করবেন। আপনি তখন কোনটা বেছে নেবেন?
নিশাঙ্কা: স্বাভাবিকভাবেই আমি বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করার সুযোগটাকে লুফে নিব। আপনি হয়ত টেস্টে প্রায়শই ট্রিপল সেঞ্চুরির সুযোগ পাবেন কিন্তু আপনি প্রতিদিন বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরির সুযোগ পাবেন না।