বাংলাদেশ ক্রিকেট

‘এত তাড়াতাড়ি বড় স্বপ্ন দেখো না, প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাও’

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 16:32 শুক্রবার, 06 সেপ্টেম্বর, 2024

|| ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

অ্যাথলেটিকসের ট্র্যাকে সময়ের হিসেবে সবচেয়ে দ্রুততম দৌড়ের নাম স্প্রিন্ট। বিপরীত ঘরানার ম্যারাথন হচ্ছে আস্তে দৌড়ানো লম্বা এক ইভেন্ট। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর বাংলাদেশ কোন ট্র্যাকে দৌড়াবে সেটাই বড় প্রশ্ন। রাওয়ালপিন্ডিতে ইতিহাস গড়ার পর বাংলাদেশকে ঘিরে প্রত্যাশা বাড়ছে সমর্থকদের। ভারত সফরকে ঘিরেও বড় পরিসরে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন তারা।

আমির সোহেল অবশ্য স্বপ্ন দেখতে বাঁধা দিচ্ছেন না। তবে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার প্রত্যাশা রাখতে বলছেন আয়ত্তের মাঝেই। প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশকে সামনে এগোতে বলছেন ম্যারাথনের মতো করে। ধারাভাষ্যকক্ষে বসে বাংলাদেশের সাফল্য দেখার গল্প আমির শুনিয়েছেন ক্রিকফ্রেঞ্জিকে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে নাজমুল হোসেন শান্তদের কোন পথে হাঁটতে হবে, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানাদের পেস বিপ্লবও কথা বলেছেন।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: সিরিজ শুরুর আগে যদি আপনাকে বলতাম বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জিতবে, তাহলে আপনি কি বলতেন?

আমির: আমিও আপনাকে একই প্রশ্ন করতে চাই। আপনারা কি এটা প্রত্যাশা করেছিলেন? তারা শুধু তাদের কিংবা তাদের সমর্থকদের চমকে দেয়নি, পাকিস্তান ক্রিকেট দলকেও চমকে দিয়েছে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম তারা যেভাবে কন্ডিশন বুঝতে পেরেছে, তরুণরা যেভাবে সামনে এগিয়ে এসেছে, সিনিয়র ক্রিকেটাররা যেভাবে দায়িত্ব নিয়েছে, সব একেবারে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। পাকিস্তানকে ঘিরে তাদের পরিকল্পনা দারুণ ছিল, বাস্তবায়ন আরও ভালো ছিল।

সিরিজ শুরুর আগে কেউই তাদের সুযোগ দেখেনি। হ্যাঁ, কাগজে-কলমে হয়ত সুযোগ ছিল। তারা একটা ম্যাচ জিততে পারে কিন্তু টানা দুইটা ম্যাচ জেতা, এটা তাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। পুরো দলকে আমার টুপি খোলা অভিনন্দন। বিশেষ করে সিনিয়র ক্রিকেটার যারা কিনা দায়িত্ব নিতে শুরু করেছেন। আপনি হয়ত আশা করেন তরুণরা মাঝে মাঝে অবদান রাখবে কিন্তু সিনিয়রদের অনুপ্রেরণায় তারাও তাদের মতো পারফর্ম করেছে। তারা তাদের কাজটা করেছে এবং সত্যিকার অর্থেই বড় কিছু অর্জন করেছে।

আমাকে এটা বলতে হচ্ছে আপনারা খুব বেশি খুশি হবেন না। এটা একটা প্রক্রিয়া, বাংলাদেশ দলে যা কেবল শুরু হয়েছে। আপনি যদি খুব বেশি আশা করেন তাহলে এমন সম্ভাবনাও থাকবে যে আপনারা খুব বেশি হতাশ হবেন। তখন দেখা যাবে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে। যা দলের আত্মবিশ্বাসে বড় রকমের ক্ষতি করবে। আপনার দলকে বারবার এটা মনে করিয়ে দিতে হবে বড় কিছু অর্জনের জন্য প্রক্রিয়াটা মাত্রই শুরু হয়েছে। বেশি তাড়াহুড়ো করো না।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: এমন একটা দারুণ জয়ের পর বাংলাদেশের আরও কোন জায়গাগুলোতে নজর দেয়া উচিত?

আমির: হ্যাঁ, এটা দারুণ একটা জয়। কিন্তু আপনি আমাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন করেছেন। আমার পরামর্শ থাকবে যেটা আগেও বললাম কেবল প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। তারা এখনও বড় জায়গায় যেতে পারেনি। দেশে ফিরে প্রথম যে কাজটা তাদের করতে হবে সেটা হলো আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি টেস্ট জিতেছি এবং এখন ভারতের বিপক্ষে খেলতে যাচ্ছি। এখন আমাদের আরও কোথায় উন্নতি করতে হবে। প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে আমরা আমাদের দলে বা নিজেদের মাঝে নতুন কি যুক্ত করতে পারি।

এবার তারা পেস দিয়ে আসলেই চমকে দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ সবসময় স্পিন নির্ভর ছিল। কারণ তখন বাংলাদেশ দলে হয়ত একজন পেসার থাকতো এবং বৈচিত্র্য ছিল না। আপনি তাদেরকে শুধু বুদ্ধির সঙ্গে ব্যবহার করেছেন ব্যাপারটা এমনও নয়। যেটা আগেও বললাম বাংলাদেশের প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে। যখন একটা প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন নিখুঁত কিছু হতে গেলে অনেক কিছুরই উন্নতি করতে হয়।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি পেসারদের কথা বলছিলেন। পুরো সিরিজে ধারাভাষ্যকক্ষে সবকিছু নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন, পেসারদের আগেও তো দেখেছেন। এবার কোথায় পার্থক্য দেখলেন। নাহিদ রানার কথাও যদি একটু আলাদা করে বলতেন।

আমির: নাহিদকে আমি বিপিএলে প্রথমবার দেখেছিলাম এবং তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সে সহজাত এবং শিক্ষকবিহীন প্রতিভাবান, যা আপনাকে খ্যাতি এনে দেবে। কিন্তু কখনও কখনও তাদের মতো প্রতিভাবানরা ব্যর্থ হতে পারে। যখন বিপিএলে আমি তাকে দেখেছিলাম তখনই বুঝেছিলাম সে বাংলাদেশের হয়ে কিছু একটা জিতবে। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যখন আমি ধারাভাষ্য দিচ্ছিলাম তখন সে অনেক গতিতে বোলিং করছিল। যদিও নিজের বোলিং নিয়ে তার মাঝে পরিষ্কার একটা ধারণা ছিল না।

সে বাউন্সার করছিল কিন্তু অ্যাকুরেন্সি ঠিক ছিল না। সে পেস এবং বাউন্সার দিয়ে ব্যাটারদের চিন্তায় ফেলছে। আমার মনে আছে আমি বলছিলাম, তার পেসসহ আরও বেশ কিছু অস্ত্র আছে। কিন্তু যখনই সে বাউন্সার করে তার কোন ফলো-আপ ডেলিভারি ছিল না। এটা ছিল প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসের কথা। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সে বুঝতে পেরেছে অথবা নিশ্চই কেউ তার সাথে কথা বলেছে।

আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, কয়েকটা বাউন্সার করার পর সে অফ স্টাম্পের বাইরে একটা ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে বাবর আজমকে আউট করে দেয়। ব্যাটারকে ভড়কে দেয়ার পর তাকে এই বলগুলোই করতে হবে। দ্বিতীয় ইনিংসে সে শিখতে শুরু করে। আর তারপর দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে সে দারুণ উন্নতি করেছে, দারুণ। সত্যি বলতে তার লম্বা সময় ধরে বল করতে পারা আমাকে মুগ্ধ করেছে। যা দিয়ে সে ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশের খুব বেশি সুখস্মৃতি নেই। এমন দুটো টেস্ট জয়ের আপনি বাংলাদেশকে কোথায় দেখছেন এবং সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তাদের সামনের পরিকল্পনা কেমন হতে পারে?

আমির: আমার মনে হয়ে মিডল অর্ডারে যেমনটা দেখেছিলাম মুশফিকুর রহিম ছাড়া কেউই বড় রান করতে পারতো না। আপনাদের দুই ওপেনার জাকির ও সাদমানকে সাহস দিতে হবে। নির্বাচক হিসেবে সবসময় তাদের মাঝে ওই আত্মবিশ্বাসটা দিতে হবে যে তুমি যথেষ্ট ভালো, বিশ্বের যেকোন পেস আক্রমণকে তুমি সামলাতে পারবে। দেশের বাইরে গিয়েও তুমি ভালো করতে পারো। তোমাকে নিয়ে আমাদের সেই বিশ্বাস আছে, তাই তুমি এসব নিয়ে খুব বেশি ভেবো না। শুধু দলের জন্য পারফর্ম করো। এই বিশ্বাসটাই তাদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। অনেক সময় তাদেরকে আপনার ছাড়ও দিতে হবে। যদি তাদের দুই-একটা সিরিজ ভালো না যায়... খেলোয়াড় হিসেবে আপনি খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতেই পারেন।

আপনাকে যখন নির্বাচক কমিটি এবং দল থেকে সমর্থন দেবে তখন আপনার নিজের উপর সেই বিশ্বাসটা আসতে শুরু করবে যে আমি যথেষ্ট ভালো। এমনকি ব্যর্থ হওয়ার পরও তারা আমাকে সমর্থন দিয়েই যাচ্ছে। আমাকেও এর প্রতিদান দিতে হবে। আপনাকে এভাবেই একজন ক্রিকেটারের উন্নতি করতে হবে। আরও একটা জিনিস হচ্ছে মিডল অর্ডারদের ব্যাটারদের আরও উন্নতি করতে হবে। তৃতীয় বিষয়টা হচ্ছে আপনি আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন এবং আমি বলেছিলাম লেগ স্পিনার ও রিস্ট স্পিনার খুঁজে বের করতে হবে। আপনি যদি পেস আক্রমণের সঙ্গে রিস্ট স্পিনার যুক্ত করতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের ক্রিকেট আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলের সময় আমরা আলোচনা করেছিলাম বাংলাদেশের বেশিরভাগ উইকেটই পেসারদের পক্ষে কথা বলে না। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য বিসিবি পেসারদের জন্য কিছু উইকেট তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কী ধরনের ‍উইকেট দেখতে চান...

আমির: বিপিএলের কয়েকটা মৌসুমে কাজ করার পর দেখলাম কিছু ভেন্যুতে বেশ কিছু উইকেটে পেসাররা বাউন্স এবং সিম মুভমেন্ট পাচ্ছে। আমার যতটুকু মনে পড়ে কার্টলি অ্যামব্রোসের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম যে পেসারদের জন্য এটা দারুণ ব্যাপার হতে যাচ্ছে। তখন স্পিন বোলিংয়ের চেয়ে তারা বেশি ফাস্ট বোলিং করবে। আপনি যখন দেখেন একটা ম্যাচে তিন-চার জন পেসার খেলছে প্রাথমিকভাবে যাদের কিনা রোল মডেল ছিল স্পিনার।

এমনটা হলে প্রত্যেকে স্পিনার হতে চায় কারণ উইকেটগুলো স্পিনারদের জন্য ভালো। কিন্তু এখন সংস্কৃতি বদলানো প্রয়োজন। হ্যাঁ, তোমাদের পেস বোলার আছে কিন্তু তাদেরকে সেই ধরনের উইকেট দিতে হবে। শুধু এটাই না পুরো পেস বোলিং বিভাগ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য। তখন তারা পেস বোলিং করবে এবং বাংলাদেশে পেস বোলিংটা উপভোগ করবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আমাদের দেশে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর মতো তারকা ক্রিকেটার আছে। কিন্তু এই টেস্টে দেখলাম লিটন, মিরাজ, হাসানরা দায়িত্ব নিচ্ছে। এটা তো দারুণ ব্যাপার নিশ্চই?

আমির: আপনার মনে থাকার কথা হাসান মাহমুদ বেশ কয়েকটি ম্যাচে ধুঁকছিল। বিশেষ করে ঢাকাতে সে সুবিধা করতে পারছিল না। আমার যতটুকু মনে পড়ে সিলেটে সে বেশ ভালো বোলিং করেছিল। তখন আমরা এটা নিয়ে কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপনার তাকে কৃতিত্ব দিতে যে হাসানের সাথে কাজ করেছে এবং লাইন, লেংথের গুরুত্ব বুঝিয়েছে। এমনকি ব্যাটারদের জন্য ফাঁদ পেতে কিভাবে উইকেটে নিতে হবে সেটাও শিখিয়েছে।

এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। বোলার হিসেবে আমি খুব বেশি সময় গতিময় ডেলিভারিতে দিয়ে ব্যাটারকে আউট করতে পারবেন না। বেশিরভাগ সময়ই আপনাকে ব্যাটারের ভুলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং আপনি কিভাবে ব্যাটারকে বোকা বানাতে পারেন সেটা করতে হবে। বোলিংয়ের সৌন্দর্য্যই এটা। আমার মনে হয় সে এটা শিখেছে। আপনার প্রশ্নের উত্তর প্রসঙ্গে যদি আসি তাহলে যখন এই পেসাররা বাংলাদেশকে লম্বা সময় প্রতিনিধিত্ব করবে তখন তরুণরা তাদের অনুসরণ করবে। তখনই বাংলাদেশর জন্য ভালো হবে।

ক্রিকফেঞ্জি: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের আগের দুই আসরে বাংলাদেশ নয়ে পড়ে ছিল। এবার অবশ্য এখনই চারে উঠে গেছে। এবারের চক্রটা এখনও শেষ হয়ে যায়নি...

আমির: আমি বলবো কোন সন্দেহ ছাড়াই চারে ওঠা বড় একটা অর্জন। কিন্তু আমি আবারও বলব এবং সবাইকে আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই এটা একটা প্রক্রিয়া। এত তাড়াতাড়ি খুব বেশি বড় স্বপ্ন দেখো না। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাও, চেষ্টা করো এবং আবারও প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাও। সময় আসবেই এবং কোনভাবে তোমরা বড় জায়গায় পৌঁছাবে। কিন্তু আপনি যদি স্প্রিন্টের মতো মতো দ্রুতই যেতে চান তাহলে আপনি হোঁচট খাবেন। আপনি সবসময় ম্যারাথনের মতো করে এগোতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: দুই যুগেও বাংলাদেশ বড় কোন শিরোপা জিততে পারেনি। আপনার কি মনে হয় আগামী কয়েক বছরে বড় শিরোপা জিততে এটাতে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে?

আমির: আমার চেয়ে ‍তুমি তো সেখানকার পরিস্থিতি ভালো জানো। আমি যতটুকু দেখেছে বাংলাদেশে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। তোমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাও এটা। আমার মনে হয় বেশিরভাগ তরুণরা ক্রিকেটার হতে চায়। যদি এমন জনসংখ্যার একটা দেশের সবাই ক্রিকেটার হতে চায় তাহলে বড় কিছু জেতা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু আমি আবারও বলব এটা একটা প্রক্রিয়া।

এখনই এত বড় স্বপ্ন দেখো না। বাংলাদেশ দলের মাঝে আমি যে জিনিসটা দেখেছি সেটা হলো যখন তারা ভালো খেলতে শুরু করে তখন অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যায়। এধরনের অতি আত্মবিশ্বাস বাড়তি কিছু করার জন্য তাড়না দেয়। যেমন ধরো আমাদের এটা জিততেই হবে। তুমি যখন এভাবে চিন্তা করবে তখনই ক্ষতিটা হবে। আমার মনে হয় আস্তে আস্তে তাদের আত্মবিশ্বাসটা বাড়ানো দরকার। অতি আত্মবিশ্বাসী হইও না শুধু বলো হ্যাঁ, আমার এটা জিততে পারি। আগেও যেটা বলেছি প্রক্রিয়া, প্রক্রিয়া....

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশকে তো আপনি আগেও দেখেছেন। এবার দলের মাঝে কি ধরনের পরিবর্তন দেখলেন?

আমির: আপনি আরও বেশি সুশঙ্খলের কথা বলছো? আমি মাঠের শৃঙ্খলার কথা বলছি না, এটাও প্রয়োজনীয়। আপনি যদি মাঠের বাইরেও শৃঙ্খলাবদ্ধ হোন, এমনি আপনার অবসর সময়েও ক্রিকেট নিয়ে কথা বলছেন কিভাবে উন্নতি করা যায়। তাহলে ক্রিকেট ছেড়ে আপনি রাতের খাবার খেতে যান এবং তারপর আবারও ক্রিকেটে মনোযোগ দিন। আমার মনে হয় মাঠে যে ধরনের শৃঙ্খলা দেখায় সেটা দলের জিততে শুরু করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বুকের উপর বড় অক্ষরে লিখে প্রতিপক্ষকে আমি বার্তা দিব। শৃঙ্খলা সবকিছুর চাবিকাঠি। মাঠে শৃঙ্খলাবদ্ধ হও।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: কদিন পর বাংলাদেশ ভারত সফরে দুইটা ও তিনটা টি-টোয়েন্টি খেলবে। সেটা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

আমির: বাংলাদেশের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে তারা যখন ভারতে যাবে তখন দলকে বলুন চেষ্টা এবং ভালোভাবে লড়াই করো। আপনি যদি জিততে না পারেন তবে অন্তত জয়ের খুব কাছে যান। আপনি যদি কয়েকবার খুব কাছে যেতে পারেন তাহলে পরেরবার দল হিসেবে আপনি বলতে পারবেন আমরা জয়ের খুব কাছে ছিলাম এবং পরের আমরা এটা জিতবোই। আমরা আরও বেশি এফোর্ট দেব এবং আমরা জিতবোই।

আমরা পাকিস্তানের সাথে জিতেছি, এবার আমরা ভারত যাচ্ছি। আমাদেরকে জিততেই হবে। এমনটা বলে না পারলে আপনি চাপের মুখে পড়বেন। আমি একটু আগে যেভাবে বললাম, আমি বারবার বলছি এটা একটা প্রক্রিয়া। তাই আপনি যখন ভারতে যাবেন তখন আপনাকে এটা বলতে হবে ভারত যাই করুক না কেন আমরা সেটার কাছাকাছি যাব। এটা যদি ৫ দিনের টেস্ট ম্যাচ হয় তাহলে আমরা এটাকে পঞ্চম দিনে নিয়ে যাবো। যেমনটা তারা পাকিস্তানে করেছে। আপনি যখন খেলাটাকে পঞ্চম দিনে খেলা নিয়ে যাবেন তখন যে কেউ জিততে পারে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার কথায় খানিকটা স্বস্তি পাওয়া গেল। আর একটা ব্যাপার টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশকে অনেক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেভাবে বাংলাদেশ খেললো তাতে টেস্টেও তাদের ভালো করার সম্ভাবনা দেখছেন?

আমির: দেখুন, উপমহাদেশের এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমরা রাতারাতি ক্রিকেটারদের নায়ক বানিয়ে দিই, আবার রাতারাতি জিরো বানিয়ে দিই। আমরা দলের প্রশংসা করি এবং এমন প্রত্যাশা করতে শুরু করি তারা আমাদের চাঁদ এনে দিতে চলেছে। সমালোচনা কিংবা সমালোচনা না করুক কিন্তু আপনাকে দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে পেশাদার হতে হবে। আপনি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যান এবং লড়াই করুন। আপনি যখন একবার বড় দলের সঙ্গে লড়াই করতে শুরু করবেন তখন একটা সময় আসবে আপনি জিততেও শুরু করবেন। তখন এমন একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসবে আমরা বিশ্বের যেকোন দলকে হারাতে পারি। আমরা সেটা করার জন্য প্রস্তুত। আবারও এটা বলে শেষ করব এটা একটা প্রক্রিয়া।