সাউথ আফ্রিকা - বাংলাদেশ সিরিজ

সুইপ-রিভার্স সুইপের রঙিন ছবিতে জাকের-মিরাজ

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 21:06 বুধবার, 23 অক্টোবর, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

সাদা বলের ক্রিকেটের চেয়ে টেস্টের ব্যাকারণটা একটু ভিন্ন। টিকে থাকার মানসিকতা একজন ব্যাটারকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তোলে। মোদ্দা কথা আপনাকে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ড কিংবা ভারতের ব্যাটিং দেখে এটা নাও মানতে পারেন। কিংবা একটু উল্টিয়ে বলতে পারেন। যদিও সাদা পোশাকের সাফল্যের মূলমন্ত্র অনেকটাই এমন। উইকেট ভিন্নতায় টেস্ট খেলার ধরণটা অবশ্য একেক রকম হয়ে থাকে। পেস সহায়ক উইকেটে আপনি যতটা সাবলীল ব্যাটিং করবেন স্পিন উইকেটে সেটা নাও করতে পারেন।

উইকেট যদি স্পিনারদের জন্য স্বর্গ হয় তাহলে কথাই নেই। এমন উইকেটে টিকে থাকতে ব্যাটাররা ভিন্ন ভিন্ন শট খেলার চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্পিনের ‘কালাজাদু’র বিপক্ষে ব্যাটাররা সুইপ আর রিভার্স সুইপের দ্বারস্থ হয়ে থাকেন। ভারত সফরে টেস্টে যারা বাংলাদেশের ব্যাটিং যারা খুব ভালো করে দেখেছেন তাদের নিশ্চয় চোখে পড়েছে। চেন্নাই টেস্টে রবীন্দ্র জাদেজার বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে লিটন দাস আর রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে সাকিব আল হাসানের আউট হওয়াই তো সবচেয়ে বড় ছবি।

কানপুরে তাদের ছবিটা আরও রঙিন করেছেন রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত ও সুইপ শটে আউট হওয়া মুমিনুল হক। টেস্টে সুইপ কিংবা রিভার্স সুইট শট খেলাটা দোষের নয়। এমন নয় এসব শট আর কেউ খেলেন না। তবে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ভিন্নধর্মী কিংবা আত্মঘাতী শট খেলে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। সেটার একটা বড় কারণ উইকেটের আশেপাশে শট খেলতে গিয়ে প্রায়শই মৃত্যু ডেকে এনেছেন।

সাউথ আফ্রিকার সিরিজে আগেও আলোচনায় তাই সুইপ এবং রিভার্স সুইপ শট। কেশভ মহারাজ, ড্যান পিটদের সামলে নিতে নেটে এসব শটের প্রস্তুতিও সেরেছেন নাজমুল শান্ত, লিটন দাসরা। সতর্কতা ছিল সফরকারী ব্যাটারদের মাঝেও। প্রস্তুতির ছবিগুলো দেখে ম্যাচের আগেরদিন বাংলাদেশের অধিনায়কের কাছে সুইপ ও রিভার্স সুইপ নিয়ে প্রশ্ন এসেছে অবধারিতভাবেই। উইকেটের আচরণে ভিন্নতা না এলে ব্যাটারদের এসব শট খেলতেই বরং অনুপ্রাণিত করেছিলেন শান্ত।

বাংলাদেশের অধিনায়ক সেদিন বলেছিলেন, উইকেটে যদি স্পিন হয়, অবশ্যই সাইড শট খুব গুরুত্বপূর্ণ, সুইপ-রিভার্স সুইপ। আমরা সাধারণত দেখি, কেউ এই ধরনের শট খেলতে গিয়ে আউট হলে অনেক কথা আসে। তবে এটাও বুঝতে হবে, এই ধরনের উইকেটে কোন শটটা গুরুত্বপূর্ণ।’

উইকেট বিবেচনায় এমন শট খেলে আউট হলেও ব্যাটারদের নিয়ে কোন সমস্যা থাকবে না, এটা আগেই নিশ্চিত করেছিলেন শান্ত। তিনি বলেছিলেন, ‘কোনো উইকেটে যে ধরনের শট খেলা গুরুত্বপূর্ণ, ক্রিকেটাররা যদি ওই ধরনের শট খেলে আউট হয়, আমার কোনো সমস্যা নেই। ক্রিকেটাররা ঠিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। আমি আশা করি, ওভাবেই ম্যাচটা খেলবে।’

বাংলাদেশের অধিনায়কের এমন কথা কাইল ভেরেইনা শুনেছিলেন কিনা জানা নেই তবে কাজটা ঠিকই করেছিলেন। সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর বোলিংয়ে ঝলক দেখাতে থাকেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারে ঘূর্ণিতে ৯৯ রানে ৫ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। সেখান থেকে সফরকারীদের টেনে তুলেছেন ভেরেইনা, উইয়ান মুল্ডার, পিটরা। সবচেয়ে বড় অবদানটা সেঞ্চুরিয়ান ভেরেইনার। দিনের খেলা শেষে প্রোটিয়া ব্যাটার নিজেই জানিয়ে গেছেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া সেঞ্চুরির চেয়েও এটা গিয়ে।

কেন এমনটা বলেছেন সেটা তো নিশ্চয় বুঝেছেন। মিরপুরের উইকেটের পড়তে পড়তে ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জ থাকে। ভেরেইনা সেই চ্যালেঞ্জ উতরে গেছেন সুইপ আর রিভার্স সুইপে। ১১৪ রানের ইনিংসের পুরোটা সময়ে ৮ বার এই ঘরানার শটস খেলেছে তিনি। একটিতে তো ছক্কাও মেরেছিলেন। দেখে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের স্পিনারদের জবাবে ‘ঝাড়ুপেটা’ করেছেন প্রোটিয়া ব্যাটার। ২০২ রানে পিছিয়ে ব্যাটিং নামা বাংলাদেশের শুরুটা হলো যাচ্ছে তাই ভাবে। কাগিসো রাবাদার গতির কাছে যেন পেরেই উঠতে পারছিলেন না।

ইনিংস হারের শঙ্কায় থাকা বাংলাদেশের বিপদ কেটেছে জাকের আলী অনিক ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে। হাফ সেঞ্চুরির পর অভিষিক্ত জাকের ফিরে গেলেও আলোর দিশারী হয়ে আছেন মিরাজ। তৃতীয় দিনের বাংলাদেশের জ্বলজ্বল করা ছবি তারা দুজনই। ১৩৮ রানে ‍জুটি গড়তে ভেরেইনার মতো সুইপ আর রিভার্স সুইপকে কাজে লাগিয়েছেন তারা। ভেরেইনাকে দেখেই অনুপ্রাণিত কিনা কে জানে। সবমিলিয়ে দুজনে ১৬বার এমন সব শট খেলেছেন। যেখানে ১২বারই এসেছে মিরাজের ব্যাট থেকে।

এমন স্পিন উইকেটে ব্যাটারদের সুইপ খেলে রান বের করায় মুশতাক আহমেদ বরং খুশিই হলেন। তিনি বলেন, ‘এশিয়ান স্পিনার হিসেবে একটা জিনিস আমি জানি- যদি ভালো বলে সুইপ, ব্যাকফুট, ফ্রন্টফুট না খেলো, সিঙ্গেলের পেছনে ছুটো, অবশ্যই তোমাকে সংগ্রাম করতে হবে। তাই এভাবেই রান বের করতে হবে। ৭০-১০০ রান যারা করে ওরা প্রচুর সুইপ খেলে। আজ আমাদের ব্যাটাররা সফলও হয়েছে। এমন পিচে বোলাররা ভালো করলে আপনাকে এভাবেই খেলতে হবে। তাইজুলও ভালো বল খেলেছে, কিন্তু ওরা সুইপ, রিভার্স সুইপ করে গেছে। এটা স্পিনারদের চাপে ফেলে। আমাদের ব্যাটারদের অ্যাটাকিং অপশনে আমি খুশি। সুইপ ভালো একটা অপশন।’