বাংলাদেশ-সাউথ আফ্রিকা সিরিজ

তাইজুলের ৫ উইকেটের পরও এগিয়ে সাউথ আফ্রিকা

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 09:33 সোমবার, 21 অক্টোবর, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

মিরপুরের স্পিনবান্ধব উইকেটে ব্যাটারদের বিষাদে পুড়িয়ে স্পিনাররা উইকেট নেয়ার খেলায় মেতে উঠবেন এটাই তো বোধহয় স্বাভাবিক। কেশভ মহারাজ, ড্যান পিটদের বাঁকানো স্পিনে বেঁকে যাওয়ার কথা ছিল সাদমান ইসলাম, মুমিনুল হক কিংবা মুশফিকুর রহিমদের। অথচ মিরপুরে বাংলাদেশের ব্যাটাররা কাগিসো রাবাদা, উইয়ান মুল্ডারদের উইকেট দিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার মিছিলে নামলেন। চিরচেনা ব্যাটিং ব্যর্থতায় নাজমুল হোসেন শান্তরা থামলেন ১০৬ রানে। স্বাগতিকদের প্রথম উইকেটও এনে দিলেন পেসার হাসান মাহমুদ। তবে পরের সময়টা কেবলই স্পিনারদের, বিশেষ করে তাইজুল ইসলামের। একের পর এক টার্নে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ভ্যাবাচ্যাকায় ফেলে দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। তাইজুলর ৫ উইকেটের পরও বাংলাদেশের চেয়ে ৩৪ রানে এগিয়ে সাউথ আফ্রিকা। ৬ উইকেটে ১৪০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের সকালে ব্যাটিংয়ে নামবে সফরকারীরা।

বাংলাদেশকে ১০৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি সাউথ আফ্রিকার। হাসানের শুরুর ৫ বলে ৯ রান নিলেও শেষ বলে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন এইডেন মার্করাম। প্রোটিয়া অধিনায়কের বিদায়ে ক্রিজে আসেন ট্রিস্টিয়ান স্টাবস। ডি জর্জিকে সঙ্গে নিয়ে প্রোটিয়াদের স্কোরবোর্ডে রান যোগ করতে থাকেন এই ব্যাটার। যদিও মেহেদী হাসান মিরাজের বল অন সাইডে খেলার চেষ্টায় সোজা শর্ট লেগ ফিল্ডার বরাবর মারেন স্টাবস।

ধরার মতো উচ্চতায় থাকলেও হাতে জমাতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয়। ৮ রানে বেঁচে যান স্টাবস। এরপর তাইজুলের ওভারের প্রথম দুই বলে বাউন্ডারি মারেন তিনি। এর এক বল পরই জবাব দেন তাইজুল। ফুল লেংথ ডেলিভারি ব্যাক ফুটে রক্ষণাত্মক খেলার চেষ্টায় স্লিপে সাদমান ইসলামের হাতে ধরা পড়েন ২৭ বলে ২৩ রান করা স্টাবস। এরপর ডেভিড বেডিংহ্যামকে নিয়ে আর কোন উইকেট না হারিয়ে চা বিরতিতে যান জর্জি। 

চা বিরতির পর নেমে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বেডিংহ্যাম। তাইজুলের বেশ বড় টার্ন করা ডেলিভারি কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হলেন তিনি। ২৫ বলে ১১ রান করে ফিরলেন তিনি। ক্রিজে নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে আসেন রায়ান রিকেল্টন। টনি ডি জর্জি ও তিনি মিলে দলের রান একশ পাড় করেন। তবে তাইজুলের বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই ওপেনার। ৭২ বলে করেন ৩০ রান। নিজের চতুর্থ উইকেট শিকার করতে অবশ্য বেশি সময় নেননি তাইজুল।

বাঁহাতি এই স্পিনারের বল লিভ করতে গিয়ে বোল্ড হন ম্যাথিউ ব্রিটসকি।  প্রোটিয়া ব্যাটাররা লিড নিলেও সেই লিড বড় হওয়ার আগেই নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। রিকেলটনকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন এই স্পিনার। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০০তম উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তাইজুল। প্রথম দিন শেষে ৪১ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪০ রান করেছে সফরকারীরা।

এর আগে টস ভাগ্য শান্তর পক্ষে গেলেও সুযোগটা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকার বোলারদের তোপে প্রথম সেশনে এলোমেলো হয়ে যায় স্বাগতিকদের ব্যাটিং অর্ডার। ৬০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে গেলেও বিরতির পর ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় শান্তবাহিনী। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে এইডেন মার্করামের উইকেট হারিয়ে ব্যাট করছে সফরকারী। 

ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন সাদমান। দ্বিতীয় ওভারে মুল্ডারের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ ডেলিভারি ড্রাইভ করার চেষ্টায় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন বাঁহাতি ওপেনার। রানের খাতাও খুলতে পারেননি তিনি। এরপর মাহমুদুল হাসান জয়কে সঙ্গে দিতে এসে বেশিক্ষণ উইকেটে টিকতে পারেননি মুমিনুলও। মুল্ডারের দ্বিতীয় ওভারে ড্রেসিং রুমে ফেরেন মুমিনুল। ফুল লেংথ ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় কানায় লেগে কট বিহাইন্ড হন ৪ রান করা এই ব্যাটার।এরপর চার নম্বরে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

কিন্তু শান্তও উইকেটে বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। রাউন্ড দা উইকেট থেকে মুল্ডারের ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি অন সাইডে খেলার চেষ্টায় শান্তর ব্যাটের সামনের কানায় লাগে। শর্ট কভারে সহজ ক্যাচ নেন কেশাভ মহারাজ। ৭ বলে ৭ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দ্রুত ৩ ব্যাটারের বিদায়ে হাল ধরার চেষ্টায় ব্যাট করতে থাকেন মুশফিক ও জয়। তাদের ব্যাটে প্রথম ঘন্টার ধাক্কা সামাল দেয় বাংলাদেশ। কিন্তু পানি বিরতির পর আক্রমণেই ফিরেই আঘাত করেন রাবাদা।ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে বোল্ড হন ২০ বলে ১১ রান করা মুশফিকুর রহিম।

একইসঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেট পূর্ণ করেন রাবাদার। সাউথ আফ্রিকার ষষ্ঠ বোলার হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। খানিক পর দারুণ এক ডেলিভারিতে লিটন দাসকেও ফিরিয়ে দেন রাবাদা। রাবাদার লাফানো ডেলিভারিতে গালিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান। বাম দিয়ে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন ট্রিস্টান স্টাবস। ৫০'র আগে ৫ উইকেট হারালেও মেহেদি হাসান মিরাজ ও জয় মিলে দলকে ৫০'র ওপর নিয়ে যান। কিন্তু লাঞ্চের আগে আবারও বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।

মহারাজের বলের লাইন মিস করেন মিরাজ। লেগ বিফরের ফাঁদে পড়ে দলীয় ৬০ রানে বিদায় নেন তিনিও। এরপর লাঞ্চে বিরতিতে যায় শান্তবাহিনী। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ভালো শুরু পেয়েছিলেন জয়। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মধ্যাহ্ন বিরতির পর ২ বলের ব্যবধানে আউট হয়েছেন ওপেনার জয় ও অভিষিক্ত জাকের আলী। ইনিংসের ৩০তম ওভার করতে আসেন পিট। এই অফ স্পিনারের ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মারেন মাহমুদুল।

পরের বল করতে রাউন্ড দ্য উইকেটে আসেন এই বোলার। সেই আর্ম ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান ৯৭ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলা জয়। এরপর মহারাজের ঝুলিয়ে দেয়া বলে স্টাম্পড হয়েছেন। অভিষেক ম্যাচের অভিষেক ইনিংসে তার ইনিংস থেমেছে ১৫ বলে মাত্র ২ রানে। দলকে ঠেলেঠুলে ১০০'র ঘরে নিয়ে যাওয়ার পর রাবাদার বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন নাইম হাসান। শেষ উইকেটে হিসেবে তাইজুলকে বোল্ড করেন মহারাজ। ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

বাংলাদেশ- ১০৬/১০ (৪০.১ ওভার) (জয় ৩০, মুশফিক ১১, মিরাজ ১৩, তাইজুল ১৬) (মুল্ডার ৩/২২, রাবাদা ৩/২৬, মহারাজ ৩/৩৪)

সাউথ আফ্রিকা- ১০৮/৬ (৩২) (ওভার) (জর্জি ৩০, স্টাবস ২৩, রিকেলটন ২৭; তাইজুল ৫/৪৯, হাসান ১/৩১)