ভারত - বাংলাদেশ সিরিজ

বাংলাদেশের নতুন সিরিজে মুশফিক-সাকিবদের পুরনো চ্যালেঞ্জ

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 21:25 বুধবার, 18 সেপ্টেম্বর, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

কাগজ-কলমে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও পাকিস্তান সফরে অবিশ্বাস্য এক গল্পের রচনা করেছে বাংলাদেশ। যাদেরকে কখনও হারানোর স্বাদ পাওয়া হয়নি তাদের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে সিরিজ জেতাকে অবিশ্বাস্য না বলে উপায় কী। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া সিরিজ জয়কে নাজমুল হাসান শান্ত বর্ণনা করেছিলেন দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা মুহূর্ত হিসেবে আখ্যা দিয়ে। সিরিজ জয়ের তকমা নিয়ে দেশে ফিরেই ভারত সফরের প্রস্তুতিতে নেমে পড়েন ক্রিকেটাররা।

দুই সিরিজের মাঝে সময়ের ব্যবধানে পার্থক্য ছিল তিন সপ্তাহের একটু কম। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করলেও সেটা নিয়ে বসে থাকার একদমই সুযোগ ছিল না ক্রিকেটারদের সামনে। ১০ সেপ্টেম্বর সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করতে গিয়ে লিটন দাস তাই বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তবে এটা এরই মধ্যে অতীত হয়ে গেছে।’ বাংলাদেশের নজর যে পরের ভারত সফরে সেটা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল লিটনের সেদিনের কথায়।

ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্ট শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে পাকিস্তানে সিরিজ জেতায় সংবাদ সম্মেলনে এসে অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন গৌতম গম্ভীর। অভিনন্দন বার্তার সঙ্গে ভারতের প্রধান কোচ বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন, ‘এটা নতুন সিরিজ, নতুন প্রতিপক্ষ।’ বাংলাদেশের অধিনায়ক শান্তও কথা বললেন অনেকটা গম্ভীরের সুরে। বাঁহাতি ব্যাটারের কাছেও ভারত সিরিজ বাংলাদেশের জন্য একেবারেই নতুন কিছু।

পুরনো সিরিজ জয় আত্মবিশ্বাস জোগালেও ভারতে যে নতুন কিছু করে দেখাতে হবে সেটা বুঝতে নিশ্চিত কারও বাকী থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের জন্য সিরিজটা নতুন হলেও চ্যালেঞ্জটা অনেকাংশে পুরনো। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে দুই যুগ পেরিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের পরিসংখ্যান একদমই সুখকর নয়। এখন পর্যন্ত ১৩ টেস্টের ১১টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচ ড্র হলেও সেখানে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অবদান ছিল বেরসিক বৃষ্টির। ১১ হারের মাঝে টাইগাররা ৫ টেস্ট হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক টেস্ট হয়ত ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মিরপুরে। ভারতের টপ অর্ডারকে গুঁড়িয়ে দিয়ে জয়ের আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত সবকিছু ধুলিসাৎ হয়েছে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং শ্রেয়াস আইয়ারের হাত ধরে। দেশের মাটিতে ভালো স্মৃতি থাকলেও ভারতে বাংলাদেশের সবশেষ সফরটা ছিল বিভীষিকার। ইন্দোরে পৌনে তিনদিনে হারার পর কলকাতায় মুমিনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ হেরেছিল সোয়া দুইদিনে।

ভারতের মাটিতে তাই ইনিংস ব্যবধানে হার আটকানো এবং খেলা পঞ্চম দিনে নিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করবে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাওয়া সিরিজ জয় যে একেবারেই ফ্লুক নয় সেটাও প্রমাণ করতে হবে মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মেহেদী হাসান মিরাজদের। সেই চ্যালেঞ্জ উতরাতে পাড়ি দিতে হবে লম্বা পথ। দল হিসেবে ভারত বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা।

অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের সঙ্গে সেরা বাছাইয়ে সবার উপরে উঠে আসে কোহলিদের নাম। ভারতকে কঠিন প্রতিপক্ষ মানলেও সেটা নিয়ে ভাবতে চান না। বরং নিজেদের কাজ করে যাওয়াতে মন বাংলাদেশের অধিনায়কের। শান্ত বলেন, ‘অবশ্যই। সবচেয়ে কঠিন একটি প্রতিপক্ষ, এটা আমরা সবাই স্বীকার করি। কিন্তু প্রতিপক্ষকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তা না করে নিজেদের নিয়ে চিন্তা করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রতিপক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশকে ভাবতে হচ্ছে চেন্নাইয়ের উইকেট নিয়েও। প্রথাগতভাবে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধা থাকলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত কোন ধরনের উইকেটে খেলবে সেটাই বড় প্রশ্ন। দীনেশ কার্তিক, হার্শা ভোগলেরা তো আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে স্পিন উইকেটের সুযোগ নেই। তাতে নাকি সাকিবদের সঙ্গে ব্যবধান কমবে স্বাগতিকদের। তবে চেন্নাইয়ের লাল মাটির উইকেটে সবাই যে সুবিধা পাবেন সেটা ধারণা করা যাচ্ছে।

পেসাররা যেমন বাড়তি বাউন্স পাবেন তেমনি সময়ে বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে স্পিনাররাও টার্ন পেতে শুরু করবেন। এমন অবস্থায় একাদশে বানাতে খানিকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতে হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারতকে। বেশিরভাগের দাবি বাংলাদেশকে হারাতে স্পিনেই শক্তি বাড়াবেন গম্ভীর। সেক্ষেত্রে অশ্বিনের সঙ্গে দেখা যেতে পারে রবীন্দ্র জাদেজা এবং কুলদীপ যাদবকে। দুই পেসারের একাদশে জসপ্রিত বুমরাহর সঙ্গে পছন্দের শীর্ষে থাকবেন মোহাম্মদ সিরাজ।

নিজেদের ঘরের মাঠে খেলা হওয়ায় ভারতের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া বোধহয় খানিকটা সহজই। ভারতের মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশ কেমন একাদশ নিয়ে খেলতে নামে সেটাই বোধহয় সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। সিরিজ জয়ের কম্বিনেশন ভাঙতে না চাইলে চেন্নাই টেস্টে ফেরা হচ্ছে না মাহমুদুল হাসান জয়ের। পাকিস্তান সফরে গিয়ে ‘এ’ দলের হয়ে খেলা ডানহাতি এই ব্যাটার চোটে পড়ে রাওয়ালপিন্ডিতে খেলতে পারেননি। জয় না থাকায় সুযোগটা বেশ ভালোভাবে লুফে নিয়েছিলেন সাদমান ইসলাম।

জাকির হাসানের সাথে প্রথম টেস্টে তাই দেখা যেতে পারে বাঁহাতি ওপেনারকেই। সংবাদ সম্মেলনে এসে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। তিন থেকে যথাক্রমে থাকছেন নাজমুল শান্ত, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব, লিটন এবং মিরাজ উইকেট স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধার আশায় সাকিব ও মিরাজের সঙ্গে একাদশে যুক্ত করা হতে পারে তাইজুল ইসলামকে। সেক্ষেত্রে দুই পেসার নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদকে নিয়ে মাঠে নামতে পারে সফরকারী বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, নাহিদ রানা এবং তাসকিন আহমেদ।