টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 20:54 বৃহস্পতিবার, 27 জুন, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সেদিন বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়ার হাফ সেঞ্চুরিতে ১৬৮ রান তোলার পরও জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলসের তাণ্ডবে ১০ উইকেটে হেরেছিল তারা। এবারের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালটা তাই ভারতের জন্য ছিল প্রতিশোধের। এমন ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে ধীরগতির ও অসম বাউন্সের উইকেটে রোহিত শর্মার হাফ সেঞ্চুরি ও সূর্যকুমার যাদবের ৪৭ রানের ইনিংসে ১৭১ রানের পুঁজি পায় ২০০৭ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা। বড় লক্ষ্য তাড়ায় অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদবের স্পিন ঘূর্ণিতে দাঁড়াতেই পারেননি ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ১০৩ রানে গুটিয়ে যায় তারা। ইংল্যান্ডকে ৬৮ রানে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিল ভারত। ২৯ জুন হতে যাওয়া ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ অপ্রতিরোধ্য সাউথ আফ্রিকা।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে জসপ্রিত বুমরাহ ও আর্শদীপ সিংয়ের প্রথম তিন ওভারে জস বাটলার ও ফিল সল্ট করলেন বিনা উইকেটে ২৬ রান। ভারতের দেয়া ১৭২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল দুই ওপেনার সেটাই করলেন। তবে ইংলিশদের আধিপত্য টিকল বেশিক্ষণ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসেই বাটলার-সল্টের জুটি ভেঙেছেন অক্ষর প্যাটেল। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে পান্তের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন বাটলার। দারুণ শুরু করা ইংল্যান্ডের অধিনায়ককে ফিরতে হয় ২৩ রানে।

পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে সল্টকে বোকা বানিয়েছেন বুমরাহ। ডানহাতি এই পেসারের অফ কাটারে বোকা বনে নিয়ে বোল্ড হয়েছেন ইংলিশ এই ওপেনার। সল্টকে ফিরতে হয় মাত্র ৫ রানে। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে জনি বেয়ারস্টোর উইকেটও হারায় ইংল্যান্ড। অক্ষরের অফ স্টাম্পের বাইরের স্কিড করা ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন তিনি। ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। দলের রান পঞ্চাশ হওয়ার আগে মঈন আলীকেও হারিয়েছে তারা। অক্ষরের লেগ সাইডের লেংথ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়েছেন ইংল্যান্ডের সহকারী অধিনায়ক।

তিনে নামা মঈনের ব্যাট থেকে এসেছে রান। নবম ওভারে কুলদীপ যাদবের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন স্যাম কারান। বাকিদের ব্যর্থতার মাঝেও খানিকটা আশার আলো দেখাচ্ছিলেন হ্যারি ব্রুক। তবে তাকেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি কুলদীপ। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ব্রুক, করেছেন ২৫ রান। বাকিদের আসা-যাওয়ার মিছিলে ১০৩ রানে অল আউট হয় ইংল্যান্ড। ভারতের হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন অক্ষর ও কুলদীপ। দুটি উইকেট পেয়েছেন বুমরাহ।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি ভারত। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে রান খরায় ভুগতে থাকা বিরাট কোহলি ব্যর্থ হয়েছেন সেমিফাইনালেও। রিস টপলির ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ছক্কা মারার পরের বলে নিচু হওয়া ফুলটসে নিয়েছিলেন দুই রান। কোহলিকে যখনই আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিলো তখনই সাজঘরে ফেরেন। টপলির গুড লেংথ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন কোহলি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চারটি সেমিফাইনাল খেলা কোহলি এবারই প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। ইংলিশদের বিপক্ষে ভারতের ওপেনার ফিরেছেন ৯ রানে। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে পান্তের উইকেটও হারায় ভারত। স্যাম কারানের বলে মিড উইকেটে ওপর দিয়ে ফ্লিক করতে গিয়ে বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। ৬ বল খেলা পান্তের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ৪ রান। পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারানো ভারত ৪৬ রান তোলে।

বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ঘণ্টাখানেক পর মাঠে গড়ায় খেলা হয়। ম্যাচের মাঝেও বাগড়া দেয় বৃষ্টি। ভারতের ব্যাটিং ইনিংসের যখন ৮ ওভার শেষ তখনই শুরু হয় বৃষ্টি। অনেকটা অপেক্ষার পর আবারও যখন খেলা শুরু হয় তখন দেখেশুনে খেলতে থাকেন রোহিত ও সূর্যকুমার। যদিও সময় যত বেড়েছে ততই রান তোলার গতি বাড়িয়েছেন তারা দুজন। খানিকটা ধীরগতির ও অসম বাউন্সের উইকেটে কারানের বলে ছক্কা মেরে ৩৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন রোহিত।

সেই সঙ্গে ক্রিস গেইলের পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫০ ছক্কা মারার কীর্তি গড়েছেন। হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক। আদিল রশিদের দারুণ এক গুগলিতে পরাস্ত হয়ে ফিরেছেন ৫৭ রানের ইনিংস খেলে। দ্রুত রান তুলতে সূর্যকুমার অবশ্য পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। জফরা আর্চারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্রিস জর্ডানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৪৭ রানে।

এদিকে জর্ডানের টানা দুই বলে দুই ছক্কা মারার পর আউট হয়েছেন হার্দিকও। ডানহাতি এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে লং অফের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কারানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৩ বলে ২৩ রান করা এই ব্যাটার। পরের বলে বাটলারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন শিভাম ‍দুবেও। শেষ দিকে জাদেজা অপরাজিত ১৭ এবং অক্ষর ১০ রান করেছেন। তাতেই ৭ উইকেট হারানো ভারত ১৭১ রানের পুঁজি পায়। ইংল্যান্ডের হয়ে জর্ডান তিনটি উইকেট নিয়েছেন।