বাংলাদেশ - জিম্বাবুয়ে সিরিজ

বাবার দেখানো পথে হেঁটে সাকিবের মতো হতে চান জোনাথন

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 16:07 সোমবার, 06 মে, 2024

|| ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

জিম্বাবুয়ে দল ঘোষণার পর স্কোয়াড নিয়ে যতটা আলোচনা হয়েছে তার সবটা জুড়েই ছিলেন জোনাথন ক্যাম্পবেল। বাবা অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল নিজেদের দেশের সোনালি প্রজন্মের ক্রিকেটার ছিলেন। তাকে নিয়ে আলোচনা হবে সেটাই তো বোধহয় স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। আলোচনায় সামিল অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া ক্রিকেটের ২০ ওভারের ম্যাচে অভিষেক।

প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০১৯ সালে, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটটা অবশ্য পরের বছর ২০২০ সালে রেঞ্জার্সের হয়ে টাসকার্সের বিপক্ষে। ঘরোয়া ক্রিকেটে কয়েক বছরের সাফল্যের পুরস্কার হিসেবেই বাংলাদেশ সফরের জিম্বাবুয়ের টি-টোয়েন্টি দলে জোনাথন। সুযোগটা পাওয়ার জন্য অনেকদিন ধরে যে অপেক্ষা করছিলেন সেটা বললেন নিজের মুখেই।

ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে আলাপকালে জোনাথন বলেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। আমদের দেশের হয়ে খেলার জন্য আমি অনেক লম্বা সময় ধরে আমার একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে আজ সুযোগ পেয়েছি। এটা আসলে দারুণ অনুভূতি।’

২৭ ম্যাচে ৩৩৮ রান, ১৫.৩৬ গড় এবং ১১০.৮১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন জোনাথন। পরিসংখ্যান হয়ত জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডারের পক্ষে খুব বেশি কথা বলছে না। তবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট একটু খানি এগিয়ে দিচ্ছে তাকে। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরীক্ষায় পাশ করে জাতীয় দলে এলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ মেলেনি তার।

টাইগারদের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পরদিন ঐচ্ছিক অনুশীলনে এসেছিলেন জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা, ছিলেন জোনাথন নিজেও। প্রথম ম্যাচে সুযোগ না পেলেও জোনাথনের দরজায় যে অভিষেক ক্যাপ কড়া নাড়ছে সেটা অন্তত হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন আগেরদিনই। গণমাধ্যমকেও তাই বললেন ‘আমি নিশ্চিত, সুযোগ আসবে।’ সুযোগ আসতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেয়নি।

পরের ম্যাচে অর্থাৎ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতেই পেলেন অভিষেক ক্যাপ। খেললেন ২৪ বলে ৪৫ রানের ইনিংস। চারটা চারের সঙ্গে জোনাথন ছক্কা মেরেছেন তিনটি। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শরিফুল ইসলামদের বিপক্ষে খেলেছেন দারুণ কিছু শটও। সেটা প্রকাশ পেল তার কথাতেই। জোনাথন বলেন, ‘খেলতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে। বেশ কিছু ভালো শট খেলতে পেরেছি। আশা করি সামনেও ধারাবাহিকভাবে করতে পারবো।’

অ্যালিস্টারের পাশাপাশি বাংলাদেশের মাটিতে খেলেছেন শন উইলিয়ামস, অ্যান্ডি ফ্লাওয়াররা। তবে জোনাথন বাংলাদেশে এসেছেন প্রথমবার। চট্টগ্রামে পা রাখার আগে বাংলাদেশের ক্রিকেটার ও কন্ডিশন নিয়ে পড়ালেখা করে এসেছেন ঠিকই। উপমহাদেশের কন্ডিশনে স্পিনটা হাতিয়ার, জোনাথন নিজেও স্পিনার, খেলেনও স্পিনটা ভালো। বাংলাদেশে আসার আগে নিজের তাসকিন আহমেদদের নিয়ে পড়াশোনার গল্পটাই শোনালেন।

‘সত্যি বলতে, শন উইলিয়ামস, আমার বাবা আর অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের মতো অভিজ্ঞদের কয়েকজন আমাকে বাংলাদেশ নিয়ে ধারণা দিয়েছে। তাদের ধারণার উপর নির্ভর করেই আমি বাংলাদেশে এসেছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিয়েও তারা আমাকে বেশ কিছু তথ্য দিয়েছে। আশা করি পুরো সিরিজে সেগুলো কাজে লাগাতে পারব।’

জোনাথনের বাবা অ্যালিস্টার খেলেছেন হিথ স্ট্রিক, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্লান্ট ফ্লাওয়ার, নিল জনসনদের মতো ক্রিকেটারের সঙ্গে। ওয়ানডেতে ৫ হাজারের বেশি রান করা অ্যালিস্টার টেস্টে করেছেন প্রায় তিন হাজার রান। এমন একজনের ছেলে হওয়ায় অন্যান্য ক্রিকেটারের চেয়ে তুলনামূলক বেশি চাপ নিয়ে খেলতে হয় থাকে। দেশের মানুষের চাওয়ার সঙ্গে বাবার নাম ডাক। যা একটা সময় বিপদে ফেলতে পারে যে কাউকে।

উৎকৃষ্ট উদাহরণ তো শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের ছেলে অর্জুন টেন্ডুলকার। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের বড় একটা অংশের মত বাপের নাম ডাকের চাপেই বড় হয়ে উঠতে পারছেন না অর্জুন। জোনাথন অবশ্য সেই চাপ অনেকটাই সামলেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করেছেন। জাতীয় দলের শুরুটাও করেছেন রঙিনভাবে। তবে চাপটা যে তিনি নিজেও অনুভব করেছেন সেটা অকপটে স্বীকার করলেন।

‘হ্যাঁ, খুব ভালো লাগছে। অবশ্য, যেহেতু আমার বাবা বাংলাদেশের মাটিতে ভালো খেলে গেছে এজন্য আমার উপর খানিকটা চাপ ছিল। আমার মনে হয় সেটা খানিকটা উতরে যেতে পেরেছি। এখানকার সমর্থকরা দারুণ। এমন ভালো সমর্থকদের সামনে খেলতে পারাটা দারুণ ব্যাপার।’

অভিষেক রাঙানো জোনাথনের এবারের লক্ষ্যটা বাবার দেখানো পথে হেঁটে যাওয়া। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে নিজের নামটা খোদাই করা। ২৬ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘আশা করি আমি তার দেখানো পথে হাঁটতে পারবো। সে জিম্বাবুয়ের হয়ে যতটা ভালো করেছে, নাম কামিয়েছে আমিও এমনটাই করতে চাই।’

বাবার কাছে অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়াদের গল্প শুনেছেন জোনাথন। তবে স্পিন বোলিং এই অলরাউন্ডার ছোটবেলা থেকে দেখছেন সাকিব আল হাসানকে। বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোন অখণ্ড দ্বীপ সবটা জুড়েই আছেন সাকিব। নানা প্রান্তের তরুণরাই সাকিবকে দেখে তার মতো হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ক্রিকেট শুরু করছেন। কেউ তার সাথে খেলে গর্বিত হয়েছেন। জোনাথন নিজেও সেই তরুণদের মতো একজন।

বিশ্ব ক্রিকেটে দাপুটের সঙ্গে পারফর্ম বাংলাদেশকে চেনানো সাকিবের মতো হওয়ার স্বপ্ন বিভোর ৮ হাজারের কিলোমিটারের বেশি দূরের জিম্বাবুয়ের জোনাথন। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, সাকিব আল হাসানকে আমার পছন্দ। একেবারে ছোটবেলা থেকে আমি তাকে অনুসরণ করে আসছি। সে খুবই ভালো মানের একজন ক্রিকেটার। তার মতো আমি নিজেও একজন অলরাউন্ডার। উপমহাদেশে কিংবা পুরো বিশ্বে যেভাবে সে খেলে এটা অবিশ্বাস্য কিছু। আমি তার মতো হতে চাই এবং খেলতে চাই।’

শুধু সাকিব নয় জোনাথনের খোঁজে আছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও (বিপিএল)। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, ব্রেন্টন টেলর, এলটন চিগাম্বুরা থেকে শুরু করে সিকান্দার রাজা, রিচার্ড এনগারাভা সবাই খেলে গেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে। জোনাথন নিজেও হাঁটতে চান উত্তরসূরীদের পথে।

বিপিএলে খেলা নিয়ে জোনাথন বলেন, ‘আশা করি আমিও একদিন বিপিএলে খেলব। আপাতত এটা আশা করতে পারি যে কেউ আমাকে দলে নেবে।’ বিপিএল কেবলই দেখেন জোনাথনের কাছে ব্যাপারটা এমন না। বাংলাদেশের এই লিগে জোনাথনের আছে পছন্দের দলও। নাজমুল হোসেন শান্ত, মাশরাফি বিন মুর্তজাদের সিলেট স্ট্রাইকার্সকে জিম্বাবুয়ের এই অলরাউন্ডার রেখেছেন পছন্দের শীর্ষে।

বাবা ক্রিকেটার হলেও জোনাথনের মা গলফটা ভালো খেলেন। জোনাথনের নিজেরও পছন্দ গলফই। যদিও বাবার চাওয়াতে হয়েছেন ক্রিকেটার। তবে এখনও সময় পেলেই উডস, আয়রন কিংবা পুটার নিয়ে নেমে পড়েন। বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলতে আসলেও জিম্বাবুয়ে ফেরার আগে একবার হাত পাকিয়ে নিতে চান গলফ ক্লাবে গিয়েও।

জোনাথন বলেন, ‘আমি গলফ খেলতে ভালোবাসি। আশা করি একটা পর্যায়ে সময় বের করে গলফ খেলতে যেতে পারব। শুনেছি এখানে নাকি ভালো গলফ ক্লাব আছে। আমি নিশ্চিত এখানে আমাদের খেলার সুযোগ করে দেয়া হবে।’

দল হারলেও বাবার দেখানো পথে হাঁটতে চাওয়া জোনাথনের শুরুটা হলো রঙিন খামে মোড়ানো চিঠির মতোই। তবে এখনও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে তাকে। সাকিবের মতো বিশ্ব শাসন করতে হতে হবে ধারাবাহিক, তুখোর কিংবা সাহসী। জোনাথনের স্বপ্নের শুরু গল্পটা কেবল অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হোক। গল্পটা হোক জোনাথনের, গল্পটা হোক ক্রিকেটের জয়গানের!