বাংলাদেশ- শ্রীলঙ্কা সিরিজ

শেষ সেশনে বাংলাদেশের ৬ উইকেট, ৪৫৫ রানে এগিয়ে শ্রীলঙ্কা

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 12:19 সোমবার, 01 এপ্রিল, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কার করা ৫৩১ রানের জবাব দিতে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭৮ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। টাইগার বোলারদের তোপে ১০৬ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে লঙ্কানরা। অবশ্য ব্যাটিং বিপর্যয়ের পড়ও শ্রীলঙ্কার লিড এরই মধ্যে ৪৫৫ রানে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের চেয়ে ৩৫৩ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি লঙ্কানদের। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। দিমুথ কারুনারাত্নেকে বোল্ড করে ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদ। প্রথম ইনিংসের মতোই শর্ট লেংথ ডেলিভারির বল ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়েছেন করুনারত্নে। ফলে ৫ বলে ৪ রান করে আউট হয়েছেন তিনি।

এরপর কুশাল মেন্ডিসকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি খালেদ আহমেদ। তার ফুল লেংথ বলে অফ সাইডে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ২ রান করা কুশাল। শেষ সেশনে পানি পানের বিরতির আগে আবারও লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন হাসান। তার অফ স্টাম্পের বাইরে শর্ট ডেলিভারি স্ল্যাশ করতে গিয়ে সোজা কাভারে মেহেদী হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন লঙ্কান ওপেনার নিশান মাদুশকা। ৫ চারে ৪৫ বলে ৩৪ রান করেন তিনি।

দ্রুত তিন উইকেট পরলে লঙ্কানদের হাল ধরার চেষ্টা চালান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দীনেশ চান্দিমাল। তবে ৯ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি চান্দিমাল। তিনি হাসানের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন শাহাদাত হোসেন দিপুর হাতে। সেই ক্যাচ দুইবারের চেষ্টায় ধরতে পেরেছেন  বাংলাদেশের এই ফিল্ডার।

তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে আরও একবার লঙ্কানদের ব্যাটিং অর্ডারে আঘাত হানেন হাসান। এবার তার শিকার হন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তিনি অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে হালকা মুভমেন্টের ডেলিভারি দূর থেকে খেলার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হন মাত্র ১ রান করা ধনঞ্জয়া।

এরপর রিভিউ নিয়ে কামিন্দু মেন্ডিসকে আউট করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৯২ রান করা এই ব্যাটার এদিন আউট হয়েছেন ৯ রান করে। খালেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন কামিন্দু। তবে ঠিকমতো হয়নি। বল জমা পড়েছিল উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে।

বাংলাদেশের বোলারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। এরপর রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়েছে উইকেটরক্ষকের হাতে। ফলে আউট হয়ে যেতে হয় কামিন্দুকে। অবশ্য একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩৯ রানে অপরাজিত আছেন ম্যাথিউস। আর ৩ রান নিয়ে তাকে সঙ্গ দিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছেন প্রবাথ জয়াসুরিয়া।

এর আগে এক উইকেটে ৫৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। জাকির হাসান ও তাইজুল ইসলাম দিনের শুরুটা করেছিলেন যথাযথ ধৈর্য নিয়ে। শ্রীলঙ্কার দুই পেসার লাহিরু কুমারা ও বিশ্ব ফার্নান্দোর চ্যালেঞ্জ সামলে প্রতিরোধ গড়েছিলেন তারা। প্রথম ঘণ্টায় কোনও উইকেটই হারায়নি বাংলাদেশ। কয়েকবার অবশ্য বিপদে পড়ার শঙ্কা ছিল জাকির-তাইজুলের। টানা লেংথ ও ব্যাক অব লেংথে বোলিং করেছেন লঙ্কান পেসাররা।

এর মধ্যে দুইবার অবশ্য জাকিরের ব্যাটের বাইরের কানাও ছুঁয়ে যায় বল। যদিও স্লিপের ফিল্ডার পর্যন্ত বল আর পৌঁছায়নি। দ্বিতীয় দিনের শেষ দিকে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুলও দারুণ খেলছিলেন। সকালেই অবশ্য শ্রীলঙ্কা তাদের প্রথম রিভিউ হারায়। জাকির হাসানের বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের আবেদন টিভি আম্পায়ারের কাছে পাঠালেও সেটা কাজে দেয়নি।

এক ঘণ্টা পার হওয়ার কিছুক্ষণ পরই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জাকির। ৯৭ বলে আটটি চারে ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। যদিও এর একটু পরই ফার্নান্দোর দারুণ একটি ডেলিভারিতে ফিরে যান তিনি। ওভার দ্য উইকেট থেকে টানা বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারি করতে করতে একটি ডেলিভারি ভেতরে ঢুকিয়ে দেন ফার্নান্দো, তাতেই বোল্ড হন জাকির। আটটি চারে ১০৪ বলে ৫৪ রান করে ফিরেন এই ওপেনার। তাইজুলের সঙ্গে তার ৪৯ রানের জুটি ভেঙে যায়।

তারপর চটজলদি আরও দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রবাথ জয়সুরিয়ার ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেট ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়ক ১১ বলে মাত্র ১ রান কর ফিরে যান। ১০৫ রানের মধ্যে তাইজুলকেও ফেরান ফার্নান্দো। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন তাইজুল। ফেরার আগে করেন ৬১ বলে ২২ রান। ১ উইকেটে ৯৬ থেকে ৪ উইকেটে ১০৫ রানে পৌঁছে যায় তারা। বাংলাদেশ প্রথম সেশনে করে চার উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান।

মধ্যাহ্নভোজ বিরতি থেকে ফিরেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ৪৫তম ওভারে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান সাকিব আল হাসান। আসিথা ফার্নান্দোর ভেতরে ঢোকা একটি ডেলিভারিতে অন সাইডে খেলার চেষ্টা করতে ব্যর্থ হন সাকিব। বল প্যাডে আঘাত করলে আম্পায়ার আউট দিয়ে দেন। সাকিব রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা যায়, লেগ স্টাম্পের বাইরের অংশ হালকা ছুঁয়ে যেত বল। যদিও মাঠের আম্পায়ার 'আউট' দেয়ায় সেই সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। ফলে ২৩ বলে ১৫ রান করে ফিরে যেতে হয় প্রায় এক বছর পর টেস্ট দলে ফেরা সাকিবকে

একই ওভারে ফিরে যান লিটন দাসও। ফলে ১৩০ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আসিথা ফার্নান্দোর লেংথে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হন লম্বা সময় ধরে অফ-ফর্মে থাকা লিটন। এর একটু পর শাহাদাত হোসেন দিপুও ফিরে যান। লাহিরু কুমারার অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে দূর থেকে খোঁচা মেরে ফিরে যাওয়ার আগে ৩৬ বলে ৮ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় স্লিপে তার ক্যাচটি নেন কামিন্দু মেন্ডিস।

ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিলে টিকতে পারেননি মেহেদী হাসান মিরাজও। প্রবাথের অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা আর্ম ডেলিভারিটি ভুল লাইনে ডিফেন্ড করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের শিকার হন এই অলরাউন্ডার। ৩১ বলে ৭ রান আসে তার ব্যাটে। মিরাজ এবং দিপু- দুজনই একটি করে 'জীবন' পান যেটি তারা একেবারেই কাজে লাগাতে পারেননি।

একদিকে কেবল টিকে ছিলেন মুমিনুল হক। আসিথা ফার্নান্দোর ফুললেংথের একটি ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রিভিউ নিয়ে উইকেটে আম্পায়ার্স কল হওয়াতে ফিরতে হয় তাকে। ফেরার আগে ৮৪ বলে ৩৩ রান করেন এই ব্যাটার। এ দিন টেস্ট ক্রিকেটে চার হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। মুমিনুল ফেরার পর আসিথা ফার্নান্দোর বলে খালেদ আহমেদ বোল্ড হলে বাংলাদেশের ইনিংস ১৭৮ রানে থামে।