টি- টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

সাউথ আফ্রিকাকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
Publish Date: 20:08 Saturday, June 29, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

কুলদীপ যাদবের ১৪তম ওভারের শেষ দুই বলে চার ও ছক্কা মেরেছিলেন ডেভিড মিলার। পরের ওভারে হেনরিখ ক্লাসেনের ঝড়ে অক্ষর প্যাটেলের ওভার থেকে এলো ২৪ রান। দুই ওভার থেকে সাউথ আফ্রিকা এনেছে ৩৮ রান। ঝড় তোলা ক্লাসেনের সঙ্গী মিলার, সাউথ আফ্রিকাও তাই প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে। শিরোপা জিততে শেষ ৫ ওভারে ৩০ রান করতে পারলেই হতো প্রোটিয়াদের। তবে দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকল পরের ওভার থেকে। বোলিংয়ের জাদু দেখিয়ে জসপ্রিত বুমরাহ দিয়ে গেলেন মাত্র ৪ রান।

নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসেই বিগ ফিস ক্লাসেনকে শিকার বানিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। সেখান থেকেই ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় রোহিত শর্মার দল। ডেথ ওভারে মাষ্টারক্লাস বোলিংয়ে ভারতকে ম্যাচে রাখলেন বুমরাহ-আর্শদীপ সিংরা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে শেষ ওভারে সাউথ আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। হার্দিকের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলটসে সোজা হাওয়ায় ভাসালেন মিলার। তবে সীমানার ওপর দাঁড়িয়ে দারুণ দক্ষতায় ক্যাচ লুফে নিলেন সূর্যকুমার যাদব।

তাতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় প্রোটিয়ারা। কাগিসো রাবাদা চার মারার পরও হারতে হয়েছে তাদের। এইডেন মার্করামের দলকে ৭ রানে হারিয়ে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। ২০০৭ সালের পর অর্থাৎ ১৭ বছর পর ২০ ওভারের ক্রিকেটের শিরোপা উঁচিয়ে ধরল তারা। তাতে খরা কেটেছে আইসিসির বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতারও। এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ডের পর তৃতীয় দল হিসেবে দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতল ভারত।

বার্বাডোসে ১৭৭ রান তাড়ায় আর্শদীপ সিংয়ের বলে চার মেরে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিলেন রিজা হেনড্রিক্স। তবে পরের ওভারে জসপ্রিত বুমরাহর বিপক্ষে টিকতে পারেননি তিনি। ডানহাতি এই পেসারের মিডল স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন হেনড্রিক্স। বুমরাহর আউটসুইং যেন বুঝেই উঠতে পারেননি ডানহাতি এই ওপেনার। ফর্মহীনতায় পুরো বিশ্বকাপ কাটানো হেনড্রিক্স ফিরেছেন ৪ রানে।

পরের ওভারে আউট হয়েছেন এইডেন মার্করামও। আর্শদীপের অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে পান্তকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। প্রোটিয়া অধিনায়কের ব্যাট থেকেও এসেছে ৪ রান। টপ অর্ডারের দুজনকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে প্রোটিয়ারা। ১২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ডি ককের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ট্রিস্টিয়ান স্টাবস। এদিন শুরু থেকেই ঝড়ো ব্যাটিং করতে থাকেন তিনি। বিপদে পড়া সাউথ আফ্রিকাকে অনেকটা টেনে তুলেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। 

যদিও নবম ওভারে স্টাবসের ঝড় থামিয়েছেন অক্ষর। বাঁহাতি এই স্পিনারের বলে অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে গিয়ে ফাইন লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টা বলের লাইন মিস করেছেন স্টাবস। ফলে বোল্ড হয়ে ফিরতে ৩১ রান করা এই ব্যাটার। ধীরগতির ব্যাটিংয়ে সাউথ আফ্রিকাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ডি কক। উইকেটের খোঁজে আর্শদীপকে বোলিংয়ে এনেছিলেন রোহিত। আগের বলে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরেছিলেন ডি কক। পরের বলের জন্য সেখানে ফিল্ডার হিসেবে আনা হয় কুলদীপ যাদবকে। প্রায় একই ধরনের ডেলিভারিতে ফাইন লেগ উড়িয়ে মারতে ক্যাচ কুলদীপের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ফাঁদে পড়ে।

সাউথ আফ্রিকার উইকেটকিপার ব্যাটারকে ফিরতে হয় ৩১ বলে ৩৯ রানের ইনিংস খেলে। ডি কক ফিরলেও স্পিনারদের বিপক্ষে রীতিমতো তাণ্ডব চালাতে থাকেন ক্লাসেন। বিধ্বংসী এই ব্যাটারের ছক্কার উত্তাপ সবচেয়ে বেশি টের পেয়েছেন অক্ষর। ১৫তম ওভারে এসেছে ২৪ রান। আগের ওভারে কুলদীপ দিয়ে গেছেন ১৪ রান। সব মিলিয়ে সেই ওভারে প্রোটিয়ারা রান করেছে ৩৮। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৩ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন ক্লাসেন। যদিও হাফ সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। 

হার্দিক পান্ডিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে পান্তের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন। ক্লাসেনকে ফিরতে হয় ২৭ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলে। নিজের শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে জেনসেনকে বোল্ড করেছেন বুমরাহ। শেষ দিকে মিলারকে ফিরিয়েছেন হার্দিক। তাতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে সাউথ আফ্রিকা আর ভারত ম্যাচ জিতে নেয় ৭ রানে।

পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই ব্যাট হাতে ছন্দে নেই বিরাট কোহলি। তবে ফাইনালে নিজের শুরুটা করলেন মার্কো জেনসেনের প্রথম ওভারে তিনটি চার মেরে। পরের ওভারে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে রোহিত নিজেও টানা দুই চার মারলেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ভারতের অধিনায়ক। কেশভ মহারাজের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা ক্লাসেনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন রোহিত। দারুণ ছন্দে থাকা এই ব্যাটার ফিরেছেন ৯ রানে।

একই ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন পান্তও। মহারাজের লো ফুলটস ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে উইকেটকিপার ডি ককের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন। ভারতের এই উইকেটকিপার ব্যাটার এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি। কোহলি এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেই আউট হয়েছেন সূর্যকুমার যাদবও। কাগিসো রাবাদার ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্লাসেনের ক্যাচ দিয়েছেন। সূর্যকুমার ফিরেছেন ৩ রানে।

৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ব্যাটিংয়ে পাঠানো হয় অক্ষরকে। পাঁচে নেমে কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের বিপর্যয়ে পড়া ইনিংস মেরামত করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে ৩৪ বলে তারা দুজনে জুটির পঞ্চাশ করেছেন। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকলেও শেষ পর্যন্ত রান আউটে কাটা পড়তে হয়েছে অক্ষরকে। রাবাদার বলে ফ্লিক করেছিলেন কোহলি। তবে ব্যাটে-বলে সেভাবে না হওয়ায় বল যায় উইকেটের পেছনে। 

রান নিতে চেয়ে ফিরে যান অক্ষর-কোহলির দুজনই। তবে নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরতে গিয়ে আলসেমি করে ফেলেছিলেন অক্ষর। তাতে ডি ককের সরাসরি থ্রোতেরান আউট হয়ে ফিরতে হয় তাকে। সেমিফাইনালে বল হাতে নায়ক বনে যাওয়া এই অলরাউন্ডার এদিন ব্যাটিংয়ে করেছেন ৩১ বলে ৪৭ রান। অক্ষর না পারলেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। অ্যানরিখ নরকিয়ার বলে এক রান নিয়ে ৪৮ বলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরের প্রথম পঞ্চাশ ‍ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই ওপেনার। 

হাফ সেঞ্চুরির পর বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন কোহলি। পরের ১১ বলে ২৬ রান করেছেন তিনি। দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা কোহলিকে ফেরান জেনসেন। বাঁহাতি এই পেসারের ব্যাক লেংথের স্লোয়ার ডেলিভারিতে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ৭৬ রানে। দুবেও খেলেছেন ১৬ বলে ২৭ রানের ইনিংস। তাদের ব্যাটেই ১৭৬ রানের পুঁজি পায় ভারত। সাউথ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নিয়েছেন নরকিয়া ও মহারাজ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত-   ১৭৬/৭ (২০ ওভার) (রোহিত ৯, কোহলি ৭৬, পান্ত ০, অক্ষর ৪৭, দুবে ২৭) 

সাউথ আফ্রিকা-   ১৬৯/৮ (২০ ওভার) (হেনড্রিক্স ৪, মার্করাম ৪, ডি কক ৩৯, স্টাবস ৩১, ক্লাসেন ৫২)