টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

বাংলাদেশকে হারিয়ে স্বপ্নের সেমিফাইনালে আফগানিস্তান

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
Publish Date: 06:03 Tuesday, June 25, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন আগেই শেষ হয়েছে বাংলাদেশের। তবুও ম্যাচ জিতে দেশে ফিরতে চাইলে শেষ ১২ বলে ১২ রান করতে হতো লিটন দাসদের। নাভিন উল হকের করা ১৯তম ওভারের প্রথম তিন বলে ৩ রান করলেন তাসকিন আহমেদ ও লিটন। তখনও জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশের সমর্থকরা। এমন সময় নাভিনের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে ফেরেন তাসকিন। পরের বলে আফগান এই পেসারের লেংথ ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করলেন মুস্তাফিজুর রহমান।

বল প্যাডে লাগতেই আবেদন, অনায়াসে আঙুলও তুললেন ল্যাংটন রুজের। আফগানিস্তানের ক্রিকেটাররা তখন দিগ্বিদিক ছুঁটতে ব্যস্ত। মুস্তাফিজ রিভিউ নিলেন, তবে শেষ পর্যন্ত লাভ হলো না একটুও। বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে রোমাঞ্চকর জয়ে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে রশিদ খানের আফগানিস্তান। সেরা চারে আফগানদের প্রতিপক্ষ সাউথ আফ্রিকা। বাংলাদেশের হারে সুপার এইট থেকে বাড়ির পথ ধরেছে অস্ট্রেলিয়াও।

বৃষ্টি আইনে ১৯ ওভারে ১১৪ রান তাড়া করতে হতো বাংলাদেশ। রানের বিবেচনায় লক্ষ্যটা খুব বেশি কঠিন নয় বাংলাদেশের জন্য। তবে সেমিফাইনালে যেতে হলে বিভিন্ন সমীকরণ মিলিয়ে ১৩ ওভারের মধ্যে জিততে হবে টাইগারদের। এমন অবস্থান নাভিন উল হকের প্রথম ওভারে চার ও ছক্কা মেরে ইতিবাচক শুরু এনে দিয়েছেন লিটন দাস। তবে পরের ওভারেই উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফজলহক ফারুকির অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে নিজের রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।

বিশ্বকাপের এবারের আসরে তৃতীয় ডাক মারলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্রুত রান তোলার তাড়নায় শুরু থেকেই তাড়াহুড়ো করছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। যার ফলে নিজের উইকেট দিয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে। নাভিন উল হকের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ঘুরিয়ে মিড উইকেট দিয়ে খেলতে গিয়ে মোহাম্মদ নবির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন শান্ত। বাঁহাতি এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে এসেছে ৫ রান। ঠিক পরের বলে গোল্ডেন ডাক মেরে আউট হয়েছেন সাকিব আল হাসানও। 

ডানহাতি পেসারের গুড লেংথ ডেলিভারিতে ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে লিডিং এজ হয়েছেন তিনি। নিজের বলে নিজে ক্যাচ নিয়ে সাকিবকে ফিরিয়েছেন নাভিন। বৃষ্টি শেষে আবারও খেলা শুরু হওয়ার একটু পরই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রশিদ খানের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে লেগ সাইডে পুশ করার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করেছেন সৌম্য সরকার। বাঁহাতি এই ব্যাটারকে ফিরতে হয় মাত্র ১০ রানে। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই জীবন পেয়েছেন তাওহীদ হৃদয়।

মোহাম্মদ নবির বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনি। তবে খানিকটা দৌড়ে এসেও সেটা লুফে নিতে পারেননি ফজলহক। যদিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি হৃদয়। রশিদের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৪ রান করা এই ব্যাটার। দ্রুত রান তুলতে না পারা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউট হয়েছেন রশিদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। পরের বলে বোল্ড হয়েছেন রিশাদ হোসেনও। 

ইনিংসের ১৩তম ওভারে বোলিং আসেন রশিদ। আগের ওভারের শেষ দুই বলে টানা দুই উইকেট নেয়ায় এটি ছিল আফগান অধিনায়কের হ্যাটট্রিক ডেলিভারি। রশিদ হ্যাটট্রিক করতে না পারলেও ডেলিভারিটি হতেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। এদিকে চোটের কারণে মাঠের বাইরে যাওয়া গুলবাদিন নাইব ফিরেছেন একটু পরই। এরপর বোলিং এসে ফিরিয়েছেন তানজিম হাসান সাকিবকে।

বাংলাদেশের ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে চেষ্টা করলেন কেবল লিটন। ৪১ বলে করেছেন হাফ সেঞ্চুরিও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এবারের আসরে এটিই তার প্রথম পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস। লিটন ৫৪ রানে অপরাজিত থাকতেই বাংলাদেশ অল আউট হয়েছে ১০৫ রানে। আফগানদের হয়ে চারটি করে উইকেট নিয়েছেন রশিদ ও নাভিন।

এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে সাবধানী শুরু করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ৫ রান এলেও পরের ওভার গুলোতে রানের চাকা সচল রাখেন তারা। দুই প্রান্ত দিয়ে দুই পেসার তানজিম সাকিব ও তাসকিন আহমেদকে বল করানোর পর পঞ্চম ওভারে শান্ত বল তুলে নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানের হাতে। পেতে পারতেন উইকেটও।

সাকিবের করা শর্ট লেংথের বলে টেনে মেরেছিলেন ইব্রাহিম। চেয়েছিলেন এক্সট্রা কাভার দিয়ে খেলতে। তবে সেই বল লাফ দিয়ে নাগালে পেয়ে যান তাওহীদ হৃদয়। তবে সেই ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি। বাউন্ডারি বাঁচলেও নিশ্চিত উইকেটের সুযোগ হারিয়েছে টাইগাররা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে আফগানিস্তানের সংগ্রহ বিনা উইকেতে ২৮ রান।

প্রথম উইকেট পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১তম ওভার পর্যন্ত। রিশাদ হোসেনের বলে তানজিম হাসান সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। রিশাদের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লগ করতে চেয়েছিলেন ইব্রাহীম। তবে ব্যাটে বলে করতে পারেননি। লং অফে দৌড়ে গিয়ে দারুণ ক্যাচ মুঠোয় জমিয়েছেন তানজিম। ফলে ৫৯ রানে থেমেছে আফগানিস্তানের ওপেনিং জুটি।

১২তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভারে এসে মেইডেন নেন তাসকিন। তার ৬ বলে কোনো রানই নিতে পারেননি গুরবাজ। রিশাদ ইনিংসের ১৪তম ওভারে খরচ করন ১৩ রান। প্রথম বলেই অবশ্য ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তবে ডিপ কাভার থেকে ছুটে এসেও ক্যাচের নাগাল পাননি তানজিদ হাসান তামিম।

পরের ওভারে প্রথম বলেই সাকিবের বলে তাকেই ক্যাচের মতো উঠিয়েছিলেন ওমরজাই। তবে বল লিডিং এজ হয়ে সাকিবের হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে জীবন পেয়ে যান এই আফগান ব্যাটার। ১৬তম ওভারে এসে তাকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারের শর্ট লেংথের বলে আউট সাইড এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ওমরজাই।

যদিও ক্যাচের আবেদন নাকচ করে দিয়েছিলেন আম্পায়ার নিতিন মেনন। দ্রুতই রিভিউ নিয়ে এই আফগান ব্যাটারকে আউট করে বাংলাদেশ। এরপর গুরবাজকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের বলে সৌম্য সরকারকে সুইপার কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন ৫৫ বলে ৪৫ রান করা এই ব্যাটার।

২ বল পর রিশাদ আউট করেছেন গুলবাদিন নাইবকে। ফুলার লেংথ বলে ডিপ কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সৌম্যর হাতে ধরা পড়েছেন ৪ রান করা নাইব। তাসকিন নিজের শেষ ওভারে এসে আউট করেছেন মোহাম্মদ নবিকে আউট করেছেন। তাসকিনের ওপর চড়াও হতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে শান্তর হাতে ধরা পড়েছেন এই আফগান ব্যাটার।

১৯তম ওভারে এসে মাত্র ১ রান খরচ করেন মুস্তাফিজ। ফলে রান বাড়ানোর সুযোগ পায়নি আফগানিস্তান। শেষ ওভারে তানজিমকে দুই ছক্কায় ১৬ রান নিয়ে আফগানিস্তানকে লড়াইয়ের সংগ্রহ এনে দেন রশিদ খান। এই ব্যাটার ১০ বলে ১৯ রান নিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

আফগানিস্তান- ১১৫/৫ (২০ ওভার) (গুরবাজ ৪৩, জাদরান ১৮, ওমরজাই ১০; রিশাদ ৩/২৬, মুস্তাফিজ ১/১৭)

বাংলাদেশ-   ১০৫/১০ (১৭.৫ ওভার) (লিটন ৫৪*, তানজিদ ০, শান্ত ৫, সৌম্য ১০, হৃদয় ১৪)