বিপিএল

বিপিএল দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের দরজা খুলতে চান ব্রুস

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
Publish Date: 23:45 Monday, January 29, 2024

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট, সিলেট থেকে ||

টম ব্রুসকে বলা হতো নিউজিল্যান্ডের পরবর্তী তারকা। তবে নিজেকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে পারেননি কিউই এই ব্যাটার। বরং একটা সময় হতাশায় ডুবে নিদ্রাহীন রাত কাটিয়েছেন ৩২ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার। ২০১৬ সালে প্রথম নিউজিল্যান্ডের নির্বাচকদের নজর কেটেছিলেন ব্রুস। সুপার স্ম্যাশে ওয়েলিংটনের বিপক্ষে ৪১ বলে ৭৪ এবং ওটাগোর বিপক্ষে মাত্র ২৯ বলে অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলের দরজা খুলে দেয় তাকে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকও হয়ে যায়। তবে বাবার পাসপোর্ট থাকায় ব্রুসের সুযোগ ছিল স্কটল্যান্ডের হয়ে খেলার। তবে আইসিসির নিয়মের বেড়াজালে আটকে যান তিনি। যার ফলে নিউজিল্যান্ডের হয়েই ক্যারিয়ার গড়েন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে নিজের ক্যারিয়ার লম্বা করতে পারেননি ব্রুস। ২০২০ সালে ভারতের বিপক্ষে খেলা ম্যাচই শেষ হয়ে আছে নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে। তিন বছরের বেশি সময় জাতীয় দলের বাইরে থাকলেও এখনও স্বপ্ন দেখেন নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার।

শুধু তাই নয় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলতে এসে স্বপ্ন বুনছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে। ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতা থাকা এবারই প্রথম কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছেন তিনি। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে বিপিএল খেলতে আসা ব্রুসের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি আবিদ মোহাম্মদ। যেখানে ব্রুসের কাছে জাতীয় দলের ফেরার স্বপ্ন, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট নিয়ে তার ভাবনার কথা শুনেছেন।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: প্রথমবারের মতো কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছেন। আলাদা অনুভূতি নিশ্চই?

ব্রস: সেটা তো অবশ্যই। দেখুন, আমি নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলেছি, সেখানকার ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত খেলেছি। আমার ইংল্যান্ডের কাউন্টিতেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু এবারই প্রথম কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলতে এলাম। বিপিএলে আসতে পেরে ভালো লাগছে। অল্প কয়েকদিন হলো এলেও বাংলাদেশে সময়টা ভালো কাটছে। শুনেছি এখানে খেলা অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবুও আশা করি চট্টগ্রামের জন্য নিজের সেরা খেলাটাই দিতে পারব।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার দেশে তো সুপার স্ম্যাশ হচ্ছে অথচ বিপিএল বাংলাদেশে বিপিএল খেলতে এলেন। এমন সিদ্ধান্তের পেছনের কারণটা কি?

ব্রুস: দেখুন, আমি আপনাকে আগেই বললাম এটাই আমার প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। আমি এটা জানি এখানে খেলে আমি পুরো বিশ্বে একটা পরিচিতি বানানোর সুযোগ পাচ্ছি। কারণ এখন বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চাহিদা অনেক বেশি। সব জায়গায় সুযোগ পেতে হলে আপনাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে হবে। তাই চট্টগ্রামের হয়ে সুযোগটা আসায় আমি দ্বিতীয়বার ভাবিনি। দেশে খেলা চলছিল কিন্তু আমি এই সুযোগটা কোনভাবেই হাত ছাড়া করতে চাইনি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বাংলাদেশের কন্ডিশন তো সবসময়ই চ্যালেঞ্জিং। তবে এখানে নিউজিল্যান্ডের অনেকে খেলে গেছেন। বিপিএলে আসার আগে কারও সঙ্গে কথা হয়েছে?

ব্রুস: বাংলাদেশের কন্ডিশন যে চ্যালেঞ্জিং সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। তাই এখানে খেলতে আসার আগে কলিন মুনরোর সঙ্গে সবটা নিয়ে আলোচনা করেছি। সেই আমাকে বলেছিল এখানে আসতে। এখানে খেলে আমি নিজেকে পরিচিত করার জন্য ভালো সুযোগ পাবো। এখানের উইকেটের ব্যাপারেও সে আমাকে ধারণা দিয়েছে। সুযোগ-সুবিধা নিয়ে যতটা সম্ভব বলেছে। মুনরো তো পুরো দুনিয়া জুড়ে খেলে বেড়ায়। তাই তার এসব নিয়ে অনেক জানা-শোনা আছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: মুনরোর কথা বললেন, সে তো পুরো বিশ্ব জুড়ে খেলে বেড়ায়। আরও অনেকেই আছেন যারা জাতীয় দলে না থাকলেও লিগে তাদের কদর আছে। আপনিও নিজেকে তেমন ক্রিকেটারই বানাতে চান কিনা...

ব্রুস: দেখুন, এখনই এই ধরণের পরিকল্পনা করা কঠিন। এখনই এতো দূর ভাবতে চাই না। একটা একটা করে ভাবতে চাই। দেশে সেন্ট্রাল স্ট্যাগসের হয়ে খেলতে ভালোবাসি। এখনও ইচ্ছে আছে নিউজিল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলব। এটা অনেক বড় একটা লক্ষ্য আমার। ইংল্যান্ডে ল্যাঙ্কেশায়ারের হয়ে খেলেছি, সেখানেও নিজেকে জাহির করার সুযোগ পেয়েছি। তাই বেশি দূরে ভাবতে চাই না। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে পরিচয় বানালে আশা করি আপনা আপনিই সবখানে ডাক আসবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অনেক ক্রিকেটারই বিপিএলে খেলে জাতীয় দলে আবার সুযোগ পেয়েছে। গত বছর চট্টগ্রামের হয়ে খেলা উইল জ্যাকস সেটার অন্যতম উদাহরণ। আপনিও কি তেমন কিছুই ভাবছেন?

ব্রুস: আমি তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি। কিন্তু এখানে খেলে আমি নিজেকে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবো বলে আশা করছি। কারণ পুরো বিশ্বে খেললে আপনার খেলার অনেক উন্নতি হবে। এখানে খেলে আমি নিউজিল্যান্ড দলেও ফেরার সুযোগটা তৈরি করতে চাই। যদি সেটা নাও হয় তাহলে নিজেকে যেন ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের জন্য নিজেকে একজন মানসম্পন্ন ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে পারি। আমার মাঝে এমন লক্ষ্যও থাকবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনার তো বাংলাদেশের সঙ্গেই অভিষেক হয়েছিল। সেই সময়ের কোনো স্মৃতি এখন মাথায় আছে?

ব্রুস: হ্যাঁ, আমার অবশ্যই মনে আছে। শুধু তাই নয় প্রথম বল কে করেছিল, সে সময় কি ভাবছিলাম সবই মাথায় আছে আমার। সেদিন উইলিয়ামসনের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়েছিলাম। কিন্তু প্রথম বলটা খেলেছিলাম মাশরাফির। সাকিবও ছিল সেদিন। মনে হয় কি এটা তো সেদিনের কথা। পরের ম্যাচে মুনরো শতক হাঁকিয়েছিল। সব স্মৃতি মনে আছে আমার। অভিষেক সিরিজের কথা সবারই মনে থাকে, আমার ক্ষেত্রেও ভিন্ন কিছু হয়নি।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: অনুশীলনে আপনাকে বেশ কিছু বড় শট খেলতে দেখলাম। বিপিএলে ভালো করার জন্যই কি এমন প্রস্তুতি?

ব্রুস: পাওয়ার হিটিং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমি যত বেশি অনুশীলন করব বা আপনি যত বেশি অনুশীলন করবেন তত বেশি আপনার পাওয়ার হিটিংয়ে উন্নতি হবে। তবে বাংলাদেশে পাওয়ার হিটিংয়ের মেথডটা ভিন্ন। এখানে শুধু মারলেই হবে না, আপনাকে বুঝে পাওয়ার হিটিং করতে হবে। এটা শুধু খেলার একটা অংশ কিন্তু আমার চেষ্টা থাকে ম্যাচ শেষে আসা। কারণ আমি খেলা শেষ করে আসতে ভালোবাসি। তবে বল মাঠের বাইরে পাঠালে কার না ভালো লাগে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: টি-টোয়েন্টিতে তো অনেক সময়ই শুরুর দিকে নামতে হয় আবারও কখনও শেষের দিকে। এটা কিভাবে মানিয়ে নেন?

ব্রস: আমার ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে বড় শক্তি এটা যে আমি পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারি। যে সময়েই আমাকে ব্যাটিংয়ে নামানো হোক, আমি সেটা বুঝে খেলার সামর্থ্য রাখি। ওপেনিং বা ওয়ান ডাউনের তুলনায় মিডল অর্ডারে ব্যাটিং বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ এখানে একেক সময় একেক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আমাকে কোনোদিন হয়তো দ্বিতীয় ওভারে নামতে হয় আবার কোনোদিন ১৮তম ওভারে। তো সব জায়াগায় খেলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে আপনাকে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: আচ্ছা, এর আগে তো আপনি ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন, এবার বাংলাদেশে এলেন। ওই সফর দুটি কতটা কাজে দেবে?

ব্রুস: দেখুন, এই ধরনের কন্ডিশনে অতীতে আপনার খেলার অভিজ্ঞতা থাকলে অবশ্যই সেটা কাজে দেবে। আমি তো বাংলাদেশে প্রথম এলাম। এর আগে ভারত-শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছি। সেই দুই দেশে যা শিখেছি এখানেও তার চেয়ে বেশি শেখার সুযোগ আছে বলে মনে করি। এখানে অনেক দেশি ক্রিকেটার আছেন যাদের থেকে অনেক কিছু জানার আছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে আপনার আসতে চাওয়ার অন্যতম কারণও কি এটা?

ব্রুস: হ্যাঁ, আপনি এটা বলতেই পারেন। কারণ আমি এখানে শিখতেই এসেছি। চট্টগ্রামের জয়ে অবদান রাখতে চাই। তবে এখানে আলাদা একটা চ্যালেঞ্জ আছে। এখন পর্যন্ত দল যেভাবে খেলছে তাতে আমরা খুব ভালো অবস্থানে আছি। এখান থেকে আমাদের ছন্দ ধরে রাখতে হবে। আমি দলকে আমার সর্বোচ্চটাই দেব। এখানে অনেক বিদেশির সঙ্গে পরিচয় হবে, তাদের ব্যাপারে জানব-শিখব।