বিশ্বকাপ স্পেশাল

ইতিহাসে ১৯৯২ এর বিশ্বকাপ

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
Publish Date: 16:43 Friday, May 24, 2019

|| বিশ্বকাপ স্পেশাল ||

১৯৯২ সালে তাসমান সাগরপাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বসেছিল বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পঞ্চম আসর, ইতিহাসের প্রথম রঙিন বিশ্বকাপ। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই সাদা জার্সি-লাল বলের চিরায়ত ঐতিহ্য ভেঙে প্রথমবারের মত ক্রিকেটারদের গায়ে ওঠে রঙিন পোশাক; শুরু হয় সাদা বল, কালো সাইটস্ক্রিন, ফ্লাডলাইট আর দিবারাত্রির ক্রিকেটের যুগ। সেই ১৯৭৭ সালে কেরি প্যাকারের হাত ধরে যে ক্রিকেট-বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল, ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ যেন তারই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।

তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটা এসেছিল ফরম্যাটে। বর্ণবাদের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে জায়গা দিতে গিয়ে আট দলের বিশ্বকাপ হয়ে গেল নয় দলের। দুই গ্রুপের টুর্নামেন্টকে পরিণত করা হল 'গ্রুপবিহীন' রাউন্ড রবিন লীগে! যেখান থেকে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ চার দল খেলল সেমিফাইনালে। টুর্নামেন্টের ম্যাচ সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াল ঊনচল্লিশে।

ফরম্যাটের পাশাপাশি নতুনত্ব এসেছিল টুর্নামেন্টের আইন-কানুনেও। প্রথম ১৫ ওভারের ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের নতুন নিয়ম (৩০ গজের সার্কেলের বাইরে মাত্র দুজন ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতা) ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রচলিত ধারাকেই বদলে দিয়েছিল। অনেকের মতে ওয়ানডে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ লেখা হয়েছিল এই বিশ্বকাপেই।

১৯৯২ সালের 'বেনসন অ্যান্ড হেজেস' ওয়ার্ল্ড কাপের শুরুটা হয়েছিল চমক দিয়ে। প্রথম ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে বসে আসরের 'ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন' অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক মার্টিন ক্রোর অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ভর করে কিউইরা জিতেছিল ৩৭ রানে। দিনের অপর খেলায় ভারতকে ৯ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট দল ইংল্যান্ড।

এদিকে ছয় শতাধিক রানের 'হাই স্কোরিং' ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে শ্রীলঙ্কার শুরুটাও হয়েছিল দারুণ। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের সেঞ্চুরি (১১৫) আর অ্যান্ডি ওয়ালারের 'ঝড়ো' ৮৩ রানের (৪৫ বলে) সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে জিম্বাবুয়ে করেছিল ৪ উইকেটে ৩১২। জবাবে সামারাসেকেরা (৭৫), মহানামা (৫৯) আর রানাতুঙ্গার (৬১ বলে ৮৮*) ফিফটিতে ৪ বল আর ৩ উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা।

উল্লেখ্য, ওয়ানডেতে এটাই ছিল প্রথম কোন দলের তিনশ'র বেশি রান তাড়া করে জেতার ঘটনা।

এদিকে নিজেদের প্রথম খেলায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে অভিষেকেই চমক দেখিয়েছিল সাউথ আফ্রিকা। শুধু তাই নয়, আট ম্যাচের পাঁচটিতে জিতে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছিল সেমিফাইনালে। প্রায় দুই দশকের নির্বাসন কাটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা দলটির প্রথমবার অংশগ্রহণেই এমন অভাবনীয় সাফল্যের মূলে ছিল তাদের দুর্দান্ত পেস ইউনিট, নজরকাড়া ফিল্ডিং, স্কোয়াডে সীমিত ওভার উপযোগী অলরাউন্ডারের আধিক্য এবং ব্যাটিং গভীরতা।

টুর্নামেন্টের আরেক সারপ্রাইজ প্যাকেজ ছিল নিউজিল্যান্ড। শুরু থেকে টানা সাত ম্যাচ জিতে পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে থেকেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল দলটি। যার নেপথ্যে ছিলেন কিউই অধিনায়ক মার্টিন ক্রো। প্রথম ১৫ ওভারের ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের সুবিধা কাজে লাগাতে 'পিঞ্চ হিটার' মার্ক গ্রেটব্যাচকে ওপেনিংয়ে তুলে আনা, অফ স্পিনার দীপক প্যাটেলকে দিয়ে নতুন বলে বোলিং করানো কিংবা একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়ে যাওয়া সেই বিখ্যাত ডিবলি-ডবলি কোয়ার্টেট — সবই ছিল মার্টিন ক্রো'র উদ্ভাবনী রণকৌশলের অংশ। এক শতক আর চার অর্ধশতকের সাহায্যে টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ ৪৫৬ রান করা ক্রো ব্যাট হাতেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে।

পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইংল্যান্ডের শেষ চারে যাওয়াটা অবশ্য অনুমিতই ছিল। শিরোপার অন্যতম দাবিদার মনে করা হচ্ছিল তাদের। তবে টুর্নামেন্টের একমাত্র অঘটনের শিকার হয়েছিল ইংলিশরাই। প্রথম রাউন্ডে নিজেদের শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের কাছে মাত্র ৯ রানে হেরে যায় তারা। 'লো স্কোরিং' ম্যাচে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন জিম্বাবুইয়ান পেসার এডো ব্রান্ডেজ। পরবর্তীতে জিম্বাবুয়ের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পেছনে এই ম্যাচের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

তবে আসরের সবচেয়ে বড় চমক বলতে হবে পাকিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠা। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১০ উইকেটের শোচনীয় পরাজয়; প্রথম পাঁচ ম্যাচে জয় মাত্র একটিতে! তবে পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল বৃষ্টি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৭৪ রানে অলআউট হয়েও বৃষ্টির কল্যাণে তারা পেয়ে যায় মহামূল্যবান একটি পয়েন্ট।

প্রথম রাউন্ডের শেষ তিন ম্যাচে পাকিস্তানের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং তখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টের একমাত্র 'অপরাজিত' দল নিউজিল্যান্ড। অথচ সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনটি ম্যাচেই জয়লাভ করে পাকিস্তান। কিন্তু তাদের সেমিফাইনাল খেলা তখনো নিশ্চিত নয়। নিজেদের শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেয়, তাহলে শেষ চারে জায়গা করে নেবে ক্যারিবীয়রাই। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে ওই ম্যাচে ৫৭ রানে জিতে যায় অজিরা। ফলে মাত্র এক পয়েন্টের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া ও উইন্ডিজকে পেছনে ফেলে বিস্ময়করভাবে সেমিতে ওঠে পাকিস্তান।

অকল্যান্ডে বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে মার্টিন ক্রো (৯১) আর কেন রাদারফোর্ডের (৫০) ফিফটিতে নিউজিল্যান্ড করেছিল ৭ উইকেটে ২৬২ রান। জবাবে ৩৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়াল ৩৫ ওভারে ১৪০/৪। জয়ের জন্য ৯০ বলে চাই ১২৩ রান। আস্কিং রেট আটেরও বেশি! এমন সময় হঠাৎ পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন ইনজামাম-উল-হক। সেই আক্রমণের চোটেই যেন খেই হারিয়ে ফেলল কিউই বোলিং ইউনিট।

৭ চার ও ১ ছক্কায় মাত্র ৩৭ বলে ৬০ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে ইনজামাম যখন বিদায় নিলেন ম্যাচ ততক্ষণে পাকিস্তানের হাতের মুঠোয়। জাভেদ মিয়াঁদাদ (৬৯ বলে ৫৭*) আর মঈন খানের (১১ বলে ২০*) দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত ৬ বল বাকি থাকতেই ৪ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ম্যাচের সমস্ত হিসাব নিকাশ পাল্টে দেয়া এক ইনিংস খেলে দলকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে তোলায় ম্যাচসেরার পুরস্কার ওঠে ইনজামামের হাতে।

উল্লেখ্য, আসরের রাউন্ড রবিন লীগ পর্বে ইনজামামের পারফরম্যান্স ছিল বেশ হতাশাজনক। ৮ ম্যাচে ১৫.৩৭ গড়ে করেছিলেন মাত্র ১২৩ রান! কিন্তু তবুও অধিনায়ক ইমরান খান আস্থা রেখেছিলেন ২২ বছরের এই প্রতিভাবান তরুণের ব্যাটিং সামর্থ্যের ওপর। কেননা ইমরান মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, মুলতানের এই ছেলেটি যেকোন মুহূর্তে ম্যাচের রঙ বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।

পাকিস্তানের জন্য বৃষ্টি যেমন সৌভাগ্য বয়ে এনেছিল, নকআউট পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বেলায় ঘটেছিল ঠিক তার উল্টো। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে 'বিতর্কিত' বৃষ্টি আইনের অন্যায্য শিকার হতে হয়েছিল তাদের।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচের ফলাফল নির্ধারণে তখনকার প্রচলিত নিয়মটি ছিল মোস্ট প্রোডাক্টিভ ওভার মেথড। এই পদ্ধতি অনুসারে বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা দলের যত ওভার কমানো হবে, সেই ওভারগুলো হবে প্রথমে ব্যাট করা দলের সবচেয়ে কম রান তোলা ওভার। অর্থাৎ পরে ব্যাট করা দলের ইনিংসে যদি ২ ওভার কমে যায়, তাহলে প্রথমে ব্যাট করা দলের ইনিংসের যেই ২টি ওভার থেকে সবচেয়ে কম রান এসেছে সেই ২ ওভারের রানই কেবল কমে যাবে টার্গেট থেকে।

টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিং করে গ্রায়েম হিকের ৮৩ রানের সৌজন্যে ইংলিশরা তুলেছিল ৬ উইকেটে ২৫২ রান। জবাব দিতে নেমে হাডসন (৪৮), রোডস (৪৩), কুইপারদের (৩৫) ব্যাটে জয়ের পথেই এগোচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এক পর্যায়ে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৩ বলে ২২ রান। হাতে ছিল ৪ উইকেট, ক্রিজে ছিলেন ব্রায়ান ম্যাকমিলান ও ডেভ রিচার্ডসনের মতো স্বীকৃত হার্ডহিটার। এমন সময় হঠাৎ বৃষ্টি নামলে ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয় খেলা।

বৃষ্টি থামলে খেলা আবার শুরু হল ঠিকই কিন্তু বিতর্কিত 'মোস্ট প্রোডাক্টিভ ওভার' আইনের ফাঁদে পড়ে ১৩ বলে ২২ রানের লক্ষ্যটা পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়াল ১ বলে ২১ রানে; যা এককথায় অবাস্তব! নিয়তির কাছে অসহায় আত্মসমর্পন করা ছাড়া তখন আর কীই বা করার ছিল প্রোটিয়াদের!

১৯৯২ সালের ২৫ মার্চ। মেলবোর্নের ফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডের জন্য এটি ছিল তৃতীয় ফাইনাল। গ্রুপ পর্বে এই পাকিস্তানকেই মাত্র ৭৪ রানে অলআউট করে দেয়া ইংলিশরা তাই প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে।

টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক ইমরান খান। তবে স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৪ রান জমা হতেই দুই ওপেনার রমিজ রাজা (৮) ও আমির সোহেলকে (৪) প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ডানহাতি পেসার ডেরেক প্রিঙ্গল। এরপর দুই অভিজ্ঞ সেনানী ইমরান খান ও জাভেদ মিয়াঁদাদ মিলে শুরু করেন ইনিংস বিনির্মাণের কাজ। উইকেট আগলে রেখে তাঁরা মনোযোগী হন বড় জুটি গড়ার দিকে। ইমরান (১১০ বলে ৭২) ও মিয়াঁদাদের (৯৬ বলে ৫৮) গড়ে দেয়া ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে শেষ দিকে ঝড় তোলেন ইনজামাম (৩৫ বলে ৪২) আর ওয়াসিম আকরাম (১৮ বলে ৩৩)। নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৪৯।

জবাব দিতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটাও ছিল নড়বড়ে। মাত্র ২১ রান তুলতেই হারায় দুই উইকেট। লেগ স্পিনার মুশতাক আহমেদের 'জোড়া' আঘাতে ৬৯ রানের মধ্যে আরও দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ইংলিশরা। তবে অ্যালান ল্যাম্ব ও নিল ফেয়ারব্রাদারের ৭২ রানের জুটির সুবাদে আবারও ম্যাচে ফিরে আসে তারা।

এমন সময় ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায় ওয়াসিম আকরামের জাদুকরী এক স্পেল। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে এসেই অসাধারণ দুটি ইনসুইঙ্গারে অ্যালান ল্যাম্ব (৩১) ও ক্রিস লুইসের (০) স্টাম্প উপড়ে ফেলেন কিংবদন্তি এই বাঁহাতি পেসার। ব্যস, ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়!

কিছুক্ষণ পর আকিব জাভেদের বলে ফেয়ারব্রাদার (৬২) আউট হতেই ধূলিসাৎ হয়ে যায় ইংলিশদের শিরোপা-স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত ৪ বল বাকি থাকতে তারা অলআউট হয় ২২৭ রানে। আর এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে পাকিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান: ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৪৯ (ইমরান ৭২, মিয়াঁদাদ ৫৮, ইনজামাম ৪২, প্রিঙ্গল ৩/২২)

ইংল্যান্ড: ৪৯.২ ওভারে ২২৭ অলআউট (ফেয়ারব্রাদার ৬২, ল্যাম্ব ৩১, ওয়াসিম ৩/৪৯)

ম্যাচসেরা: ওয়াসিম আকরাম।

টুর্নামেন্ট সেরা: মার্টিন ক্রো।

১৯৯২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বলেই মনে করা হয়। সন্ত্রাসবাদ আর সহিংসতার আগুনে জ্বলতে থাকা পাকিস্তানের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল এই বিজয় যার পেছনে 'মাস্টারমাইন্ড' ছিলেন ইমরান খান।

১৯৯২ সালে ইমরান যেভাবে টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় ছিটকে পড়া একটা দলকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন তা আজও বারবার আলোচনায় ফিরে আসে। অধিনায়ক হিসেবে ইমরান ছিলেন স্বাধীনচেতা। তাঁর প্রতিটি কথায়, প্রতিটি সিদ্ধান্তে, প্রতিটি পদক্ষেপে পাওয়া যায় সাহসিকতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বের ছাপ। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত 'ছন্নছাড়া' একটা দলের ভেতর টিম স্পিরিট জাগ্রত করা, খেলোয়াড়দের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা, তাদের সাফল্যের তাড়নায় উদ্বুদ্ধ করা - এসবই ছিল ইমরানের কৃতিত্ব।

এবারে চলুন এক নজরে দেখে নিই ১৯৯২ বিশ্বকাপের উল্লেখযোগ্য কিছু পরিসংখ্যান।

ব্যাটিং:

• সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর: শ্রীলঙ্কা ৩১৩/৭, বিপক্ষ জিম্বাবুয়ে।

• সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক: মার্টিন ক্রো (নিউজিল্যান্ড) ১১৪ গড়ে ৪৫৬ রান; দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান) ৬২.৪২ গড়ে ৪৩৭ রান।

• ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস: রমিজ রাজা ১১৯*, বিপক্ষ নিউজিল্যান্ড।

• সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি: ২টি করে যথাক্রমে ডেভিড বুন (অস্ট্রেলিয়া) এবং রমিজ রাজা (পাকিস্তান)।

• সবচেয়ে বেশি হাফ সেঞ্চুরি: ৫টি, জাভেদ মিয়াঁদাদ (পাকিস্তান)।

বোলিং:

• সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি: ওয়াসিম আকরাম (পাকিস্তান) ১৮ উইকেট; এছাড়া ইয়ান বোথাম (ইংল্যান্ড), ক্রিস হ্যারিস (নিউজিল্যান্ড) ও মুশতাক আহমেদ (পাকিস্তান) নিয়েছিলেন ১৬টি করে উইকেট।

• সেরা বোলিং: মেইরিক প্রিঙ্গল (দক্ষিণ আফ্রিকা) ৪/১১, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

উইকেটকিপিং:

• সর্বোচ্চ ডিসমিসাল: ডেভ রিচার্ডসন (দক্ষিণ আফ্রিকা), ১৫টি।

ফিল্ডিং:

• সর্বোচ্চ ক্যাচ: ৭টি, কেপলার ওয়েসেলস (দক্ষিণ আফ্রিকা)।