সাক্ষাৎকার

মুক্তার আলীঃ হেলায় হারানো প্রতিভা

ইনতেছার

ইনতেছার
প্রকাশের তারিখ: 00:19 শনিবার, 02 জুন, 2018

সামনেই ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। আর এই বিশ্বকাপে দল হন্য হয়ে খুঁজছে একজন পেস অলরাউন্ডারকে। প্রতিনিয়ত আতশি কাঁচের নিচে পরীক্ষা দিচ্ছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, আরিফুল হকরা। বিশ্বকাপ মাথা রেখে সৌম্য সরকারকে শতভাগ অলরাউন্ডার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টাও করা হচ্ছে।

অথচ কয়েক বছর অনেক পরিণত ক্রিকেট খেলেও জাতীয় দল থেকে ব্রাত্য মুক্তার আলী। জাতীয় দলের হয়ে একমাত্র টি-টুয়েন্টি খেলেছেন সেই ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে যাওয়া সেই ম্যাচে অভিষিক্ত হিসেবে তার পারফর্মেন্সও খারাপ ছিলনা।

দুই ওভার বোলিং করার সুযোগ মিলেছিল তার। উইকেট পাননি, রান দিয়েছেন ১৭। এরপরে ব্যাটিং করতে নেমে করেছিলেন একটি করে চার ছক্কায় ১৫ বলে অপরাজিত ১৯ রান। কিন্তু এক ম্যাচ সুযোগ দেয়ার পরেই শেষ। 

দীর্ঘ চার বছরে 'এ' দল বা হাইপারফেন্স দলে পারফর্ম করতে থাকা এই পেস অলরাউন্ডারকে একরকম হাতে গড়েই বাদ দিয়ে দিল বিসিবি। তবে এখনো পারফর্মেন্স থামাননি মুক্তার আলী।

ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের গেলো আসরে খেলেছেন কলাবাগানের হয়ে। ১১ টি ম্যাচ খেলার সুযোগ মিলেছে তার। লোয়ার অর্ডারে নেমে ফিনিশিং দেওয়া বা বল হাতে কার্যকরী ১০ টি ওভার করে করেছেন প্রায় সব ম্যাচেই।

পারফর্মেন্সও করেছেন দলের চাহিদা মতো। দল থেকে হারিয়ে যাওয়া এই ক্রিকেটার আবারো ফিরতে চান জাতীয় দলের পোশাকে। ক্রিকফ্রেঞ্জিকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এমনটাই। পাঠকদের সুবিধার জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল...

এবারের আসরে দলগত পারফর্মেন্স (কলাবাগানের হয়ে) নিয়ে আপনার মতামত কি। কেমন ছিল এবারের আসরে কলাবাগানের যাত্রা?

- আশরাফুল সহ মাত্র কয়েকজন পার্ফরমার ছিলাম আমরা। দলে পারফর্মার ছিল বেশ কয়েকজন। তবে কথা হচ্ছে এগার জন মিলে ক্লিক করতে পারতাম না, এজন্য ফল আসত না।

এবারের প্রিমিয়ার লিগের পারফরমেন্স নিয়ে বলেন। বোলিংয়ে দারুণ ছিলেন সব দিনই। তবে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে নিচের দিকে। সেভাবে বড় ইনিংস খেলা হয়নি। সব মিলিয়ে নিজের এবারের আসরকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

- এবার প্রিমিয়ার লিগে যে ১১ টা ম্যাচে আমি খেলেছি, সবগুলোতে খুব ভাল পারফরমেন্স ছিল আমার। আমার পারফরমেন্স দলের জন্য কাজেও লেগেছে। যেই ম্যাচগুলোতে ব্যাটিং করেছি, সেটা একদম শেষের দিকে।

খুব একটা সেট হওয়ার সময় পাইনি। অল্প কয়েকটি বল থাকতো তখন। তবে আমার পারফরমেন্স দলের জন্য কাজে লাগত। এছাড়া শেষ কয়েক বছর আমার পারফরমেন্স ভালই।

সবসময় ভাল খেলাটা তো আসলে সম্ভব না, পারফরমেন্স তো খারাপ হয়ই। তবে আমি সব ফরম্যাটে (ওয়ানডে, চার দিনের ক্রিকেট, টি-টুয়েন্টি) সমান তালে ব্যাটিং বা বোলিং করার চেষ্টা করেছি। যেদিন সুযোগ আসবে কাজে লাগাবো।

ব্যাটিং পজিশন নিয়ে সন্তুষ্ট? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কয়েকজন বড় অলরাউন্ডার উপরে ব্যাট করে সফল হয়েছে।

-খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন করলেন। আমি আসলে সবসময় নতুন বলে অনুশীলন করি। আর ওয়ানডাউন বা টু ডাউনে নামার মত প্রস্তুতি রাখি। অন্য কোথাও খেলতে গেলে বা খেপে খেলতে গেলে এই পজিশনেই নামি। তবে দল চায় আমি ফিনিশার হিসেবে খেলি। তাই আমাকেও নামতে হয় ফিনিশার হিসেবে।

দলের চাওয়ার কাছে নিজের চাওয়াটা খুবই ক্ষুদ্র আসলে। তবে এখানে কোচরা অন্যরকম কিছু চিন্তা করে না। আর তাই একই জায়গায় নামা লাগে সবসময়। কিন্তু আমি যখন রাজশাহিতে খেলেছি আমাকে কিন্তু পাইলট ভাই ওপেনিংয়ে নামিয়েছিল।

সামনে ইংল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ। দলে একজন পেস অলরাউন্ডারের খুবই চাহিদা অনেক। জাতীয় দলেও প্রতিযোগিতা চলছে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, আরিফুল হকের মত ক্রিকেটারদের। এই ভিড়ে নিজেকে কিভাবে দেখছেন, লাল সবুজের পোশাকে তো ফিরে আসার ইচ্ছে আছেই.. 

- আমি যখন জাতীয় দলে জায়গা করে নেই তখন কিন্তু সেই সময়ের জাতীয় দলে সেট হওয়া ক্রিকেটারকে অতিক্রম করে যাই। ফরহাদ রেজা, এমনকি জিয়া ভাই (জিয়াউর রহমান) সবার সাথে প্রতিযোগিতা দিয়ে দলে জায়গা পাই আমি।

এখন অবশ্যই আবার জাতীয় দলে ফিরতে চাই। এজন্য কাউকে আসলে প্রতিযোগী মনে করিনা। আমি মনে করি সুদিন আসলে জাতীয় দলে আবারো ফেরা হবে আমার।

২০১৬ সালেই প্রথমবার এবং শেষবার জাতীয় দলে খেলেছেন। অভিষেক ম্যাচের হিসেবে পারফর্মেন্স খারাপ ছিল না। তবুও বাদ পড়লেন। পুরো বিষয়টা চিন্তা করলে খারাপ লাগেনা?

- খারাপ লাগে আসলে জাতীয় দলে আমি সেভাবে সুযোগ পাই নি। এখন যেভাবে বছরের পর বছর ক্রিকেটাররা সুযোগ পেয়েছে এর কিছুই আমি পাইনি। বিসিবি আমাকে গড়ে তুলেছে অনেক বছর ধরে।

প্রায় চার বছরের মত 'এ' দলে আর হাই পারফরমেন্স দলে ছিলাম আমি। কিন্তু সেভাবে সুযোগ পেলাম কই? সুযোগ পেয়েই বাদ পরে গেলাম আমি। অভিষেক হিসেবে খারাপও করিনি। এই বিষয়টাই খারাপ লাগে।

বোলিং কোচ হিসেবে কোর্টনি ওয়ালশ আছেন। এছাড়া বোলিংয়ের সমস্ত খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করার জন্য আছেন চাম্পাকা রামানায়েকে। তাদের কাছ থেকে কিভাবে সাহায্য পাচ্ছেন? 

- চাম্পাকা রামানায়েকের হাতেই আমার হাতে খড়ি। একেবারেই শুরুতেই আমি তার কাছে বোলিংয়ের দীক্ষা নেই। এরপরে ইমরান স্যারের (সরোয়ার ইমরান ) কাছে দীক্ষা নেই। এইগুলো কাজে লেগেছে আমার। আর এখনকার পেস ক্যাম্পে নতুনরাই বেশী।

জাতীয় দলের সিনিয়ররা তো সব ক্রিকেটারেরই খুব কাছের। জাতীয় দল থেকে বের হওয়ার পরে বা আগে মানসিকভাবে কে কতটুকু অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে?

-মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ভাইকে আমি আমার ক্রিকেটের বড় ভাই হিসেবে পেয়েছি। মানসিক সাপোর্ট সবসময় উনি দিত। উনার থেকে পরামর্শ নিতাম আমি। আমাকেও পছন্দ করত।

এছাড়া অন্যদের সাথে সম্পর্ক ছিল ভালই। কেননা ভালই খেলছিলাম। সেই সুবাদে সম্পর্কও ছিল ভাল। সাকিব ভাই, তামিম, মাশরাফি ভাই বা মুশফিক ভাই সবার সাথেই ভাল বোঝাপড়া আমার।