বাংলাদেশ ক্রিকেট

ইবাদতের ১৬ মাসের দুঃখ-হতাশা ও প্রত্যাবর্তন

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 17:39 সোমবার, 11 নভেম্বর, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

এন্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট (এসিএল) ইনজুরিকে বিবেচনা করা হয় অ্যাথলেটদের ক্যারিয়ার বিনাশী হিসেবে। বিশেষ করে ফুটবল দুনিয়ায় এই ইনজুরি সবচেয়ে বেশি আলোচিত। রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া থেকে শুরু করে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার। তাদের ক্যারিয়ারের উল্লেখযোগ্য বড় একটা সময় কেড়ে নিয়েছে এই চোট। ক্রিকেটারদের এই চোট সচরাচর দেখা যায় না। তবে ইবাদত হোসেনের সুবাদে এই চোট বাংলাদেশের ক্রিকেটেও এসে পড়েছে।

এই চোটের কারণে দীর্ঘ ১৬ মাস মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে তাকে। এর মধ্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দুটি বিশ্ব আসর মিস করেছেন তিনি। দেশে এবং দেশের বাইরে খেলতে পারেননি অসংখ্য সিরিজ। এক সময় ইবাদত হয়েছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের প্রাণ। তার শূন্যতা পূরণ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে বাংলাদেশকে। যদিও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সেই শূন্যতা অনেকাংশেই পূরণ করেছেন তানজিম হাসান সাকিব-হাসান মাহমুদরা। তবে ইবাদতের শূন্যতা এখনও টের পাওয়া যায় টেস্টে।

দীর্ঘ প্রতিকূলতা পেরিয়ে শনিবার (৯ নভেম্বর) আবারও প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেটে ফিরেছেন তিনি। এর আগে গত বছরের জুলাইতে ইনজুরিতে পড়েন ইবাদত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলিং করার সময় আম্পায়ারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে চোট পান বাঁ-হাঁটুর লিগামেন্টে। শুরুতে বোঝা যায়নি চোট এতটা গুরুতর হবে। এরপর তাকে যেতে হয়েছিল অস্ত্রোপচারের টেবিলেও। দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার পর পেরিয়েছেন পুনর্বাসনও। এরপর জাতীয় লিগে মাঠে নামতে পেরেছেন সিলেট এক্সপ্রেস খ্যাত এই পেসার।

কক্সবাজারে নিজের সেই কঠিন সময়ের ঝাঁপি খুলে দিয়েছেন ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে। চোট সেরে উঠতে এত বেশি সময় লাগার কারণও খোলাসা করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে জাতীয় দলের ট্রেনার ফিজিওদের সহযোগীতার কথাও উল্লেখ্য করেছেন ইবাদত। এই চোট থেকে সেরে উঠতে অস্ত্রোপচারের বিকল্প ছিল না ইবাদতের সামনে। তার পুরো হাঁটুকেই যেতে হয়েছে ছুড়ি কাঁচির নিতে।

ইবাদত বলেছেন, 'আমার তো পুরো হাঁটুর অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। আমার এসিএলটা রিকনস্ট্রাকশন করতে হয়েছে, আমার দুটো মিনিসকাস রিপিয়ার করা হয়েছে, আমার এমসিএল, পিসিএলও রিপিয়ার করতে হয়েছে। হাঁটুতে অনেক বড় একটা অস্ত্রোপচার। যার কারণে এত সময় লেগেছে। এখনও পেশির বাল্ক করার জন্য কাজ চলছে। জাতীয় দলের ট্রেনার আমাকে যে প্রোগ্রাম দিয়েছে আমি সেটা অনুসরণ করছি।'

অস্ত্রোপচারের পর তিন-চার মাস উঠে দাঁড়াতে পারেননি ইবাদত। তবে কিছুটা সেরে ওঠার পর যখন হাঁটা শুরু করেন তখন নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছিল তার। অনেক সময় জাতীয় দলের অনুশীলনেও ক্রেচে ভর করে ছুটে এসেছিলেন ইবাদত। কাছ থেকে দেখেছেন দলের অনুশীলন। তবে নিজে মাঠে নামতে না পেরে সেই সময় কিছুটা কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি।

নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইবাদত বলেন, 'না, কখনই মনে হয়নি আমি খেলতে পারব না। যে জিনিসটা হচ্ছে অপারেশনের পরে প্রথম ২-৩ মাস আমি কিছু করতে পারিনি। তারপর আস্তে আস্তে যখন আমি হাঁটতে শুরু করেছি বা জগিং করা শুরু করেছি তখন নিজের কাছে একটু আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। আমি যদি কষ্ট করতে পারি সঠিকভাবে তাহলে আমি খেলতে পারব ইনশাআল্লাহ।'

দুটি বিশ্ব আসরে না খেলতে পারাই সবচেয়ে বেশি পোড়ায় ইবাদতকে। নিজে না থাকলেও বাংলাদেশের জয় উপভোগ করেছেন তিনি। ইবাদত বলেছেন, 'ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিস করেছি, খারাপ লেগেছে অনেক। যখন দল জিতেছে খুব ভালো লেগেছে, যখন হেরেছে তখন খারাপ লেগেছে। এটা মানুষের স্বাভাবিক একটা ব্যাপার, আমরা মানুষ আমাদের ইমোশন আছে, খারাপ লাগবে আবার ভালোও লাগবে।' 

প্রতিযোগীতামূলক ক্রিকেটে ফিরলেও লাল-সবুজের জার্সি গায়ে ইবাদতের ফেরাটা সহজ হবে না। জাতীয় দলে এখন পেসারদের লাইনআপ অনেক লম্বা। তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানদের সঙ্গে নিয়মিত খেলছেন তানজিম হাসান সাকিব, নাহিদ রানা, খালেদ আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। ইবাদত জানেন দলে ফিরতে হলে পারফর্ম করেই ফিরতে হবে। তাই দলে ফেরার জন্য সেটাকেই ধ্যান জ্ঞান করতে চান সিলেটের এই পেসার।

দলে ফেরা নিয়ে ইবাদত বলেছেন, 'অবশ্যই, পারফর্ম করেই ফেরা উচিত। আমার কাছে সবসময় মনে হয় পেস বোলিং বিভাগের যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগীতা আছে, এটা সবসময় থাক। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ দলে যারা খেলছে যে স্কিল, তাদের চেয়ে বেশি স্কিল নিয়ে দলে ঢুকতে হবে। আমার মনে হয় বাংলাদেশ দলের সব জায়গায় এমন প্রতিযোগিতা থাক।'

ইবাদত লড়াই করে জাতীয় দলে আবার ফিরতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে। তবে এই পেসারের লড়াকু মনোভাব ও আত্মবিশ্বাসী প্রেরণা নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের অন্য পেসারদের অনুপ্রেরণা হয়ে রইবে অনেকদিন।