|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
জাতীয় ক্রিকেট লিগের দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা তখনও শুরু হয়নি। ম্যাচের আগে তাই কেউ ব্যাটিং অনুশীলন করছেন, কেউ বোলিং আবার কারও মনোযোগ ফিল্ডিংয়ে। তবে সেন্টার উইকেটের দিকে চোখ পড়তেই খানিকটা হচকিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। একটু ভালো করে নজর দিতেই মুশতাক আহমেদকে চিনতে ভুল হলো না। একই অ্যাকশনে বারবার বোলিং করানোর প্রচেষ্টায় রিশাদ হোসেনের সঙ্গে কাজ করছিলেন তিনি। এমন চিত্র দেখে আপনি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই পারেন। হজম করতেও হয়ত খানিকটা সময় লেগে যাওয়ার কথা। বিদেশি কোচদের এমন ডেডিকেশন বাংলাদেশের সমর্থকরা খুব একটা দেখেননি।
মুশতাক অবশ্য পুরনো সংস্কৃতিতে একটা চাপড় মারলেন বড়সড়ই। অথচ এমন সময়ে চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য ব্যাগ গোছানোর কথা ছিল তার। পাকিস্তানের সাবেক লেগ স্পিনার অবশ্য ছুটে এলেন ভালোবাসার টানে, কাজের প্রয়াসে। বেশ খানিকটা কাঠ-খড় পোড়ানোর পর মুশতাককে রাজি করানো গেল কথা বলাতে। ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে জানালেন, সাঝ সকালে বিকেএসপিতে আসার কথা। বিশদ আলাপে রিশাদকে নিয়ে পরিকল্পনা, ভাবনা, বাংলাদেশের স্পিন বিভাগ, ঘরোয়া ক্রিকেট; সব কিছু নিয়ে কথা বললেন মন খুলে। মুশতাকের একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ক্রিকফ্রেঞ্জির প্রতিনিধি জয়ন্ত বিন্দু।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আমরা যখন এখানে কথা বলছি তখন বাংলাদেশ দল চট্টগ্রামে যাচ্ছে, অথচ আপনি এখানে। কারণটা জানতে পারি?
মুশতাক আহমেদ: রিশাদের কারণেই আমি আজ এখানে এসেছি। কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে আমি তাকে দেখিনি। সে ভারতে এবং এখানে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলেছে। অবশ্যই, আমি ক্রিকেট বোর্ড, নির্বাচক এবং সবাইকে বলেছি তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলা উচিত। রিশাদের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা খুবই ভালো। সেরা খেলোয়াড়ের জন্য চট্টগ্রাম যাওয়া বিসর্জন দিয়ে কয়েকদিন তার সঙ্গে কাজ করব।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি এত সকালে বিকেএসপিতে এলেন। মিরপুর থেকে তো এটা অনেক দূর। এমন কাজের মোটিভেশনটা কিভাবে আসে?
মুশতাক: আমার মনে হয় কাজটা আমি খুব উপভোগ করি। সবশেষ তিন-চারটা আন্তর্জাতিক অ্যাসাইনমেন্টে আমি বড় দলের সঙ্গে কাজ করেছি। তাদের হয়ে আমি তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেছি যেমন অনূর্ধ্ব-১৯ দল, ১৭ বছরের ছেলেদের সঙ্গেও কাজ করেছি। তারা সবাই খুবই ভালো স্পিনার। আমার মনে হয় শাহেদ মাহবুব খুব ভালো কাজ করছে। সে অনূর্ধ্ব-১৯, ১৫, ১৭ দলের সঙ্গে দারুণ কাজ করেছে। আমি তাকে খুব ভালো করে জানি সে পাকিস্তানেও কাজ করেছে। আমি যখন ওই সেশনগুলো করি তখন স্পিন বিভাগে বাংলাদেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যত দেখতে পাই।
তুমি খুব ভালো একটা প্রশ্ন করেছো, আমি নিজেই কাজগুলো উপভোগ করি। তুমি একদিনেই একটা বড় গাছ পেয়ে যাবে না। সেটার জন্য তোমাকে পরিশ্রম করতে হবে এবং বাগানের মালির মতো কাজ করতে হবে। তরুণ ছেলেদের ওই জায়গাগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে যাতে বেসিক, একই অ্যাকশন, খেলা যেন বুঝতে পারে, নিজেদের বুঝতে পারে। তুমি যখন তাদের এভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে তখন তারা যখন তাদের দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবে তার কাছ থেকে প্রত্যাশিত জিনিসটা পাবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: এই যে আপনি এত ডেডিকেশন দেখাচ্ছেন, অন্যরাও তো এটা শিখতে পারে নিশ্চয়...
মুশতাক: আপনি কোনো কিছু স্যাক্রিফাইস না করলে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন না। আমার জন্য সহজ ছিল চিটাগং গিয়ে ছেলেদের সঙ্গে কাজ করা। ক্রেডিট কিন্তু সবাইকে দিতে হবে। একজনকে না। আমি মনে করি এটাই আমার লক্ষ্য। আমি তিনটি-চারটি দেশের হয়ে কাজ করেছি। আমি আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করেছি। আমি কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের সঙ্গে। রিশাদ হোসেন খুব স্পেশাল মনে করছে নিজেকে কারণ ক্রিকেট বোর্ড-নির্বাচকরা ও কোচেরা তার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। তাই এই মানুষটাকে পাঠিয়েছে। যখন একজন এটা বুঝতে পারবে তখন সে আপনাকে সেরাটা দেবে। এটা অনেক বড় বিষয়। এজন্য প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা উচিত। এটা তখনই করতে পারবেন আপনি যখন নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসবেন।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো তাকে নিয়ে কাজ করলেন। দেখে কী মনে হলো, সে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত?
মুশতাক: আমার মনে হয় এটা (রিশাদ টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত কিনা) বলাটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। তাকে আগে পুরো মৌসুম খেলতে হবে এবং অনেক বেশি ওভার বোলিং করতে হবে। তাকে এই জিনিসটা বুঝতে হবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে লাঞ্চের আগে লেগ স্পিনার হিসেবে তার ভূমিকাটা কী। লাঞ্চের পর, চা বিরতির পর কখন একজন ব্যাটারকে অ্যাটাক করতে হবে আবার কখন অ্যাটাক করা যাবে না। কোন সময় রান না দেয়ার কথা ভাবতে হবে, কখন উইকেটের জন্য বোলিং করতে হবে সেগুলো আগে জানতে এবং বুঝতে হবে। টেস্ট ক্রিকেট মূলত টেম্পারমেন্ট এবং ওভারে ওভারে ভালো বোলিং করা।
এজন্যই আমরা একেবারে বেসিক জিনিসগুলো নিয়ে কাজ করছি। একই ধরনের অ্যাকশন নিয়েও কাজ করা হচ্ছে। যদি বেসিক এবং একই ধরনের অ্যাকশনে বোলিং করাটা উন্নতি করতে পারে তাহলে সে টানা ভালো বোলিং করতে পারবে। সে যদি বেশ কয়েকটি ভালো করতে পারে এবং সে যদি নিজের প্রক্রিয়াটা বুঝতে পারে তাহলে আমি বিশ্বাস করব রিশাদ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এখনই এটা বলে ফেলা তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। যেটা আগেও বললাম তাকে পুরো মৌসুমে খেলতে হবে, হয়ত একটা-দুইটা মৌসুম খেলতে হবে। তখন সে বুঝতে পারবে টেস্ট ক্রিকেটে কিভাবে উইকেট নিতে হয়।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি তো অনেকগুলো বিষয় সামনে আনলেন। আপনার কী মনে হয় কয় মাস কিংবা কয় বছরের মাঝে রিশাদ টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তু হবে..
মুশতাক: এটা (কত দিনের মাঝে রিশাদকে টেস্ট ক্রিকেটে দেখছেন) বলা খুবই কঠিন। আমার মনে হয় দুইটা চারদিনের ম্যাচের পর সে প্রস্তুত হয়ে যাবে। লেগ স্পিনার অনায়াসে আপনাকে চার উইকেট এনে দেবে। এখনকার সময়ে টেইলএন্ডাররা অনেক বেশি রান করছে। আপনি যদি টেস্ট ক্রিকেটে খুব ভালো করে খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন ৮, ৯ নম্বরের ব্যাটাররা হাফ সেঞ্চুরি পাচ্ছে।
রিশাদের মতো লেগ স্পিনার যে কিনা বাউন্স, স্পিন, গুগলি সব করতে পারে। সে দলের জন্য খুবই কার্যকরী হবে। আমরা তাকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। নির্বাচকরা তাকে তিন সংস্করণের জন্য বিবেচনা করছে। কিন্তু আমার মনে হয় ভালো ওভার কিভাবে বোলিং করতে হয় সেটা তাকে শিখতে হবে। সে যত তাড়াতাড়ি শিখবে ততই বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর হবে ইনশাআল্লাহ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: বিশ্বকাপের আগে থেকেই তো বাংলাদেশের স্পিনারদের সঙ্গে কাজ করছেন। রিশাদের মাঝে কতটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে...
মুশতাক: আমার মনে হয় তার কতটা উন্নতি হয়েছে সেটা বিশ্বকাপে অনেক মানুষই দেখেছে। বিশ্বকাপে সে দারুণ বোলিং করেছে। অনেক সময় একজন লেগস্পিনারের কোচিং, মানসিক, ট্যাক্টিক্যাল, টেকনিক্যাল কোচিংয়ের প্রয়োজন আছে। শুরুর দিকে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্তত তিন-চার বছর এটার প্রয়োজন আছে। তারপর হয়ত সে উইকেট পড়তে পারবে, ব্যাটারকে কিভাবে আউট করতে হবে, ব্যাটারদের কিভাবে কাজ করতে হবে সবগুলো জিনিসই খুব গুরুত্বপূর্ণ। রিশাদ হোসেন এখনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নতুন। তার মাঝে টেম্পারমেন্ট আছে, সে ব্যাটিং-বোলিং দুটোই করতে পারে।
সে খুবই ভালো ক্রিকেটার। সে একের ভেতর তিন। আমাদের তার উপর নজর রাখতে হবে কারণ সে আপনাকে যেকোন সময় ম্যাচ জেতাবে। সে উইকেট নিতে পারে, ব্যাটিংয়ে রান করতে পারে, ভালো ফিল্ডিং করে, টিম ম্যান হিসেবেও ভালো। আমার তার মতো রহস্যময় খেলোয়াড় দরকার। যেটা আপনি ‘এক্স ফ্যাক্টর’ বলতে পারেন। এজন্যই আমি এখানে এসে রিশাদের সঙ্গে কাজ করছি। আমারও ভালো লাগছে কারণ রিশাদের সঙ্গে অন্তত ভালো সময় পার করছি। আশা করি এটা দিয়ে সে তার ক্রিকেটে লাভবান হবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি হয়ত দেখেছেন ভারতে সে এক ওভারে ৫ ছক্কা হজম করেছে। এটা তাকে পোড়াচ্ছে নিশ্চয়?
মুশতাক: অবশ্যই না। সকালে প্রথম সেশন শেষে যখন চা খাচ্ছিলাম তখন তাকে মনে করিয়ে দিয়েছি। আমি তাকে বলেছি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেন স্টোকসের কি হয়েছিল? কার্লোস ব্র্যাথওয়েট কয়টা ছক্কা মেরেছিল? ২৪ রান নিয়েছিল সেই ওভারে। এখন সেরা অলরাউন্ডার কে? স্টুয়ার্ট ব্রডকে যুবরাজ ছয়টা ছক্কা মেরেছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা বোলার কে? ক্রিকেট এমন জিনিস ঘটে। বড় খেলোয়াড়রা মনে করে তারা যে কাউকে ছক্কা মারতে পারে, বিশেষ করে লেগ স্পিনারদের। কিন্তু তারা আপনাকে ম্যাচ জেতাতে পারে।
আপনার তাকে এটা মনে করাতে হবে বিশ্বকাপে সে বাংলাদেশের জন্য কত খেলেছে এবং সে কত ভালো খেলতে পারে। সে খুবই সাহসী এবং ভালো মনের মানুষ। মানসিকভাবে এই ব্যাপারগুলো তাকে মনে করাতে হবে। তাই আপনি যখন এমন ছেলেদের সাথে কাজ করবেন তখন আপনার এটা বলতে হবে ছক্কা হতেই পারে। এসব জিনিস মাথায় রাখলে আপনি সাহসী হতে পারবেন না। কারণ সে ম্যাচ উইনার আর ম্যাচ উইনাররা কিছু রান দিতেই পারে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সেই ঘটনার পর সে এখন কেমন ফিল করছে এবং আপনি তাকে কি পরামর্শ দিলেন?
মুশতাক: বিশ্বের যে কেউ চার-পাঁচটা ছক্কা খেতে পারে। যখন এমন হবে তখন সবসময় তাদের খারাপ লাগে। এটা খুবই স্বাভাবিক। কেউ যদি মিথ্যা বলে তাহলে বলবে আমি ভালো অনুভব করছি। তাদের সবারই খারাপ লাগে। এজন্যই তোমার আশেপাশের পরিবেশটা ভালো প্রয়োজন। তুমি খারাপ বোলিং করেছো, ভালো হয়নি এসবের চেয়ে চারপাশে ইতিবাচক থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি সবসময় মন করি স্পিনারদের জন্য ভালোবাসা প্রয়োজন। ভালোবাসাটা যেকোন জায়গা থেকেই আসতে পারে। এখানে আমি তার যত্ন নেয়ার জন্য এসেছি। এবং এটা বোঝাতে চেয়েছি সাদা বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের জন্য সে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, নাঈম হাসান আরও অনেকেই আছে। বাংলাদেশের স্পিন বিভাগকে আপনি কিভাবে দেখেন?
মুশতাক: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের প্রতিটা দেশ জয় পাচ্ছে, সেখানে স্পিনাররা অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। আমি যদি উদাহরণ দিই পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে জিতেছে। কে ম্যান অব ম্যাচ হয়েছে? মেহেদী হাসান মিরাজ। সে খুব সম্ভবত ১৩-১৪ টা উইকেট পেয়েছে এবং সাকিব বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পেয়েছে। আমাদের বেশ কয়েকজন ভালো স্পিনার আছে। সবশেষ টেস্টটা হয়ত আমরা হেরেছি কিন্তু তাইজুল ইসলাম ৮ উইকেট নিয়েছে। প্রথম ইনিংসে যদি আমরা ভালো বেশি রান করতে পারতাম তাহলে সহজেই আমরা ম্যাচটা জিততে পারতাম। স্পিনারদের অনেক বড় ভূমিকা আছে।
এজন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে আমি বলেছি প্রথম শ্রেণির দিকে তাকাও, অনূর্ধ্ব-১৯, ১৭ ছেলেদের সঙ্গে কাজ করো। তাহলে আমরা বেশ কয়েকজন স্পিনার, রহস্যময় স্পিনার, লেগ স্পিনার, বাঁহাতি চায়নাম্যান স্পিনার যারা কিনা ভবিষ্যতের জন্য ভালো হতে পারে। আমাদের এখন তাইজুল, সাকিব, রিশাদ, মিরাজ, শেখ মেহেদী, নাঈম, তানভীর আছে। একই সাথে আমাদের বেঞ্চের শক্তিও বাড়াতে হবে। আমরা রহস্যময় স্পিনার খুঁজছি। আমি খুব খুশি যে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে বেশ কিছু চায়নাম্যান স্পিনার, লেগ স্পিনার আছে। তাদের বেসিক নিয়ে কাজ করে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলতে দিতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে তাদের আশেপাশে ভালো কোচ আছে। তাহলে বাংলাদেশের দারুণ সব স্পিনার তৈরি করতে পারবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: একটা সময় তো নিশ্চয় বাংলাদেশ ছেড়ে যাবেন। আপনি যখন যাবেন তখন বাংলাদেশের স্পিন বিভাগকে আপনি কোথায় দেখে যেতে চান?
মুশতাক: আমি শুধু স্পিন বিভাগের কথা বলছি না। আমি বাংলাদেশের উন্নতির কথা ভাবি। কোচ হিসেবে আপনাকে আগে বিশ্বাস করতে হবে। আমার সামনে আরও অনেক অফার ছিল আল্লাহর রহমতে। আমি বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছি কারণ তাদের সামর্থ্য আছে এবং তারা যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। আমি আপনাকে উদাহরণ দিতে পারি পাকিস্তান ঘরের মাঠে অনেক শক্তিশালী তাদের বিপক্ষে পাকিস্তানের মাটিতে তারা দারুণ ক্রিকেট খেলেছে। বিশ্বকাপেও তারা ভালো খেলেছে। তারা যে কাউকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে।
তারা কয়েক বছর আগে ইংল্যান্ডকেও হারিয়েছে তারা সবাইকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। আমাদের উচিত তাদের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করে দেয়া। তাদের ভালো কোচের অধীনে কাজ করা উচিত। এবং বলা উচিত কীভাবে তারা ম্যাচ জিততে পারবে। এই আর্টটাই তাদের শিখতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে তাদের কীভাবে ম্যাচ জিততে হবে। শেষ ম্যাচে মিরাজ আশির ঘরে একটি ইনিংস খেলেছে। মুশফিক ১৯০ করেছে (পাকিস্তানে)। মুমিনুল কঠিন পরিস্থিতিতে হাফ সেঞ্চুরি করেছে (ভারত)।
এর বাইরে সাদমান-জাকের তারা প্রত্যেকেই প্রতিভাবান। তাদের ওপর আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। বাংলাদেশের পেস বোলিং ব্যাটারিও অনেক শক্তিশালী। তাসকিন থেকে শুরু করে প্রত্যেক বোলারই ১৪০ এর ওপরে গতিতে বল করে থাকে। আপনার যদি এরকম গতির তিন-চারজন পেসার থাকে এবং ভালো কয়েকজন অলরাউন্ডার থাকে আমি বিশ্বাস করি তারা অনেক টুর্নামেন্ট জেতাবে। এটা সবাই বিশ্বাস করে। এটা হয়তো একটু সময় নিচ্ছে কিন্তু আমি এখানে কারণ আমি বাংলাদেশকে সেই পর্যন্ত নিয়ে যেতে চাই।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনাকে যদি বলা হয় ক্রিকেটের বাইরে আপনি ক্রিকেটারদের দুই-একটা পরামর্শ দেবেন তাহলে কী বলবেন?
মুশতাক: ডিসিপ্লিন জীবনের সবকিছু। একটাই শব্দ ডিসিপ্লিন। সহজে সফলতার কোনো সুযোগ নেই। সফলতার কোনো রকেট সাইন্স নেই। আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেরা ক্রিকেটার হতে হলে কী করতে হবে সেটা খুঁজতে হবে। নিজেদের মধ্যে সেরা হওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে হবে। আমাদের অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে প্রতিযোগীতা করতে হবে, ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে সেরা দলগুলোর সঙ্গে। এটা আপনি করতে পারবেন যখন আপনি মানসিকভাবে শক্তিশালী হবেন, যখন কঠোর অনুশীলন করবেন।
শুধু আমি না সব কোচই তাদের এটাই শেখাচ্ছে। তাদেরকে ওয়ার্ক এথিক্সের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। এই তিন চারটি বিষয় নিয়ে কাজ করলে আমি বিশ্বাস করি যেকোনো জায়গায় যে কারো বিপক্ষে লড়াই করতে পারবে। আগে এটা আমার বিশ্বাস করতে হবে। আমরা হাল ছেড়ে দিচ্ছি না। বাংলাদেশ এখন ভালো অবস্থায় আছে। আশা করবো একদিন তারা অস্ট্রেলিয়ায় যাবে অস্ট্রেলিয়ায় জিতবে, ইংল্যান্ডে খেলে সেখানে জিতবে। আইসিসি টুর্নামেন্টে তারা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবে। এর আগে তাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থ্যক্যটা কমিয়ে আনতে হবে। আপনি যদি সেই পার্থ্যক্য কমিয়ে আনতে পারেন তাহলে দেখবেন বাংলাদেশ আরও ভালো ক্রিকেটার তৈরি করতে পারবে।