|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
২০১৯ বিশ্বকাপে এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেই ফাইনালে খেলার আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল ভারতের। ৫ বছর পর ঘরের মাঠে সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেয়নি ভারত। কিউইদের ৭০ রানে হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে ১২ বছর পর বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। যদিও এক সময় মনে হচ্ছিল এই ম্যাচ যে কেউই জিততে পারে। তবে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। তার বোলিং তোপে শেষদিকে দাঁড়াতেই পারেনি নিউজিল্যান্ড।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন ডেভন কনওয়ে। তবে জসপ্রিত বুমরাহর প্রথম ওভারের পর কনওয়েকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি ভারতের পেসারদের সামনে। রান তোলার চাপে শেষ পর্যন্ত বিদায় নিতে হয় কনওয়েকে। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে মোহাম্মদ শামির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাউভ করতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক না হওয়ায় এজ হয়ে উইকেটের পেছনে থাকা লোকেশ রাহুলের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
কনওয়ের ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ১৩ রান। আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্ররও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। শামির দারুণ এক ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন রাহুলের গ্লাভসে। দারুণ ছন্দে থাকা তরুণ এই ওপেনার এদিন আউট হয়েছেন ২২ বলে মাত্র ১৩ রান করে। দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর নিউজিল্যান্ডকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন উইলিয়ামসন এবং মিচেল। কাজটা দারুণভাবে করেছেনও তারা দুজন।
সময় যত বেড়েছে নিউজিল্যান্ডের রান তোলার গতি ততই বেড়েছে। উইলিয়ামসন খানিকটা ধীরগতিতে ব্যাটিং করলেও মিচেল প্রায়শই ভারতীয় বোলারদের আক্রমণ করার চেষ্টা করেছেন। ৪৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়ার পর রান তোলার গতি আরও বাড়িয়ে দেন তিনি। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেয়া উইলিয়ামসন হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৫৮ বলে। এদিকে ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে সেঞ্চুরিও তুলে নেন মিচেল। মাত্র ৮৫ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক্যাল ফিগার ছুঁয়েছেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
ভারত যখন তাদের দুজনের জুটি ভাঙতে মরিয়া তখন উইলিয়ামসনের ক্যাচ ছাড়েন শামি। যদিও পরবর্তীতে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ককে সাজঘরে পাঠিয়েছেন ডানহাতি এই পেসারই। শামির লেগ স্টাম্পের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সূর্যকুমার যাদবের হাতে ধরা পড়েন ৬৯ রানের ইনিংস খেলা উইলিয়ামসন। একই ওভারে আউট হয়েছেন টম লাথাম। শামির দারুণ এক ডেলিভারিতে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন কিউই এই উইকেটকিপার ব্যাটার।
গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে তারপরও নিউজিল্যান্ডকে কক্ষপথেই রেখেছিলেন মিচেল। ৪১ রান করা ফিলিপসকে ফিরিয়ে ভারতকে ব্রেক থ্রু এনে দেন জসপ্রিত বুমরাহ। এরপর নিউজিল্যান্ডের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার মার্ক চ্যাপম্যানও আউট হয়ে যান মাত্র ২ রান করে। তখনই মূলত ম্যাচ হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যায় কিউইদের। একপ্রান্ত আগলে খেলতে থাকা মিচেলকে ফিরিয়ে ৫ উইকেট স্পর্শ করেন শামি। আউট হওয়ার আগে মিচেলের ব্যাট থেকে আসে ১১৯ বলে ১৩৪ রানের ইনিংস। তার ইনিংস জুড়ে ছিল ৭টি ছক্কা ও ৯টি চারের মার।
এরপর আর কেউ দাঁড়াতে পারেননি। মিচেল স্ট্যান্টনারও ফিরে গেলে বড় হার সঙ্গী করেই বিশ্বকাপে পথচলা শেষ হয় কিউইদের। নিউজিল্যান্ডের শেষ দুই উইকেট তুলে নিয়ে শামি নিজের বোলিং শেষ করেন ৫৭ রানে ৭ উইকেট নিয়ে। আর তাতেই নিউজিল্যান্ড গুটিয়ে গেছে ৩২৭ রানে। ভারতের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব।
এর আগে সেমিফাইনালের বাঁধা টপকাতে যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল ঠিক তেমন শুরুই এনে দিলেন। বাকি কাজটা সারলেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ার। তাদের দুজনের সেঞ্চুরিতে ভারত শেষ পর্যন্ত তুলেছে ৩৯৭ রানের বড় পুঁজি। এদিন ওয়ানডেতে ৫০তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে শচিন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে গেছেন কোহলি।
গিল ও রোহিতের ব্যাটে ভারত উড়ন্ত সূচনা পাবে এবারের বিশ্বকাপে যেন সেটা একটা রীতি হয়ে গেছে। প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও ভিন্ন কিছু দেখা যায়নি। ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম ওভারে দুই চারে দারুণ শুরুর আভাসই দিলেন রোহিত। এরপর কিউই বোলারদের উপর রীতিমতো তাণ্ডব চালালেন ভারতের অধিনায়ক। এদিন বোল্টকে ছক্কা মেরে ক্রিস গেইলকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। বিশ্বকাপে গেইলের ৪৯ ছক্কার রেকর্ড ভেঙে সবার উপরে উঠে গেছেন ডানহাতি এই ওপেনার।
শুধু তাই নয় বিশ্বকাপের এক আসরে গেইলের সবচেয়ে বেশি ২৬ ছক্কার রেকর্ডও ভেঙেছেন তিনি। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি পাওয়ার খুব কাছেও ছিলেন রোহিত। তবে টিম সাউদির স্লোয়ার ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উইলিয়ামসনের হাতে ধরা পড়েন ৪৭ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার। এরপর গিলকে নিয়ে ভারতকে এগিয়ে নিতে থাকেন কোহলি। শুরুতে একটু ধীরগতিতে খেললেও ৪১ বলে ক্যারিয়ারের ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন গিল। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন তরুণ এই ওপেনার।
যদিও শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে অস্বস্তিতে ভোগায় ৬৪ বলে ৭৯ রানের ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন গিল। কোহলিকে সঙ্গ দিতে চারে আসেন আইয়ার। তারা দুজনে মিলে নিউজিল্যান্ডকে রীতিমতো চাপে ফেলে দেন। রাচিনের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৫৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে যা তার প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। এটির মাধ্যমে ছাড়িয়ে গেছেন সাকিব আল হাসান ও শচিনের গড়া বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি সাতটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসের রেকর্ডকে।
এদিন শচিনকে ছাড়িয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে সবচেয়ে রানের মালিক হয়েছেন কোহলি। ২০০৩ বিশ্বকাপ ৬৭৩ রান করে এতদিন সবার উপরে ছিলেন শচিন। কোহলিকে সঙ্গ দেয়ার পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন আইয়ারও। ৩৫ বলে ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। পঞ্চাশ পেরোনোর পর দ্রুত রান তুলতে থাকেন কোহলি। পেয়ে যান সেঞ্চুরিও। লকি ফার্গুসনের বলে ডাবলস নিয়ে ওয়ানডেতে নিজের ৫০তম সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। তাতে ছাড়িয়ে যান ৪৯ সেঞ্চুরি করা শচিনকে।
সেঞ্চুরির পর যদিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি কোহলি। সাউদির বলে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে কনওয়ের হাতে ধরা পড়েন ১১৭ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটার। কোহলি ফেরার পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন আইয়ারও। সাউদির বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৬৭ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। শেষ দিকে লোকেশ রাহুলও খেলেছেন ২০ বলে ৩৯ রানের ইনিংস। তাতেই ৩৯৭ রানের পুঁজি পায় ভারত। নিউজিল্যান্ডের হয়ে তিন উইকেট পেয়েছেন সাউদি।