আইপিএল

বাসার ছাদে বাবার সঙ্গে অনুশীলন করে আইপিএলের মঞ্চে আয়ুষ

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
Publish Date: 17:02 Tuesday, March 29, 2022

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

জীবন যেন ম্যারাথান দৌঁড়ের মতো। যেখানে নির্দিষ্ট পথ পেরোবার সঙ্গে থাকে টিকে থাকার লড়াইও। কখনও কখনও এই টিকে থাকাটাই যেন দুষ্কর হয়ে ওঠে। সফলতার পথে যাত্রা করলে সেই পথে বাধা বিপত্তি আসবেই। আপনি হয়তো বারবার হারবেন, পথ হারিয়ে ছিটকেও যাবেন। তবে সেইসব দুষ্কর পথ কিংবা কত শত বাধা পেরিয়ে টিকে গেছেন এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

সুযোগ পেয়ে কখনও কখনও সেটার সদ্ব্যবহার করতে পারে না অনেকে, আমাদের সমাজে এমন মানুষের সংখ্যাটা ঢের বেশি। প্রথমবার সুুযোগ পেয়ে সেটা লুফে নিতে ভুল করেননি আয়ুষ বাদোনি। জীবনের অনেকটা পথ পেরিয়ে সাফল্যের পরশ পাথর ছুঁয়ে দেখার অবশেষে সুযোগ মিলেছে তার।মোহাম্মদ শামির পেস আর সুইং সামলাতে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের ব্যাটাররা যখন হিমশিম খাচ্ছেন তখন দীপক হুদার সঙ্গে দলের ত্রাতা বনে যান ২২ বছর বয়সি এই ব্যাটার।

লক্ষ্ণৌ জিততে না পারলেও ৪১ বলে ৫৪ রানের দারুণ এক ইনিংসে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন আয়ুষ। এমন ইনিংস খেলার পর গৌতম গম্ভীর একটা ধন্যবাদ পাবার যোগ্য বটে। কারণ ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কা যুব দলের বিপক্ষে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ১৮৫ রান এবং যুব এশিয়ার কাপের ফাইনালে ২৮ বলে ৫২ রানের ইনিংস খেলার পরও জায়গা মেলেনি দিল্লির রঞ্জি ট্রফি এবং বিজয় হাজারে ট্রফির দলে।

সর্বশেষ তিন বছরে আইপিএলের নিলামে নাম দিলেও তাকে কেনার আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। তবে এতকিছুর পরও আয়ুষ নজর এড়ায়নি লক্ষ্ণৌর মেন্টর গম্ভীরের। ফেব্রুয়ারির মেগা নিলাম থেকে মাত্র ২০ লাখ রুপিতে ডানহাতি এই ব্যাটারকে দলে নিয়েছিলেন গম্ভীরের। ভারতের সাবেক এই ব্যাটারের আস্থার প্রতিদান দিতেও ভুল করেননি আয়ুষ। এমন পারফরম্যান্সের পর গম্ভীরকে ধন্যবাদ দিতে ভুলেননি আয়ুষ।

ম্যাচ শেষে তাই গম্ভীরের প্রতি খানিকটা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেই এই ডানহাতি ব্যাটার বলেন, ‘দিল্লির হয়ে আমি খুব বেশি সুযোগ পাইনি। গৌতম ভাইয়া আমাকে প্রচুর সমর্থন যুগিয়েছে।’ অধিনায়ক লোকেশ রাহুল অবশ্য আয়ুষকে ভাবছেন এবি ডি ভিলিয়ার্সের কার্বন কপি হিসেবে। ম্যাচ শেষে তাই আয়ুষকে আখ্যা দিয়েছেন ‘বেবি এবি’।

সেই সঙ্গে আয়ুষকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন লক্ষ্ণৌর অধিনায়ক। রাহুল বলেন, ‘আয়ুষ বাদোনি আমাদের বেবি এবি। প্রথম দিনে তরুণ হিসেবে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। ৩৬০ ডিগ্রি খেলেছে। ওর জন্য খুব খুশি যে, সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পেরেছে। চারজন আউট হওয়ার পর ব্যাট করতে নেমেছিল সে। মোটেও অনুকূল পরিস্থিতি ছিল না ওর জন্য়। তবে আয়ুষ চাপেও দারুণ খেলেছে। আশা করি এভাবেই ও খেলতে থাকবে।’

আয়ুষ একদিন সুপারস্টার হবেন, এমনটা বুঝতে অবশ্য ভুল করেননি রাহুল দ্রাবিড়। বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে অতুল ওয়াসনকে আশার কথা শুনিয়েছিলেন ভারতের প্রধান কোচ। তাদেরই একজন আয়ুষ। তবে তাদেরকে ঠিকঠাক পরিচর্যা করতে না পারায় অতুলকে বেশ কয়েকবার খোঁচাও দিয়েছিলেন দ্রাবিড়। একবার বলেই তো বসেছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিভাবান চিহিৃত করে তুমি তাদের ঠিকঠাক দেখভাল করতে পারো না। এই ছেলেগুলোকে ভালোভাবে দেখে রাখো।’

অতুলকে ইঙ্গিত করে দ্রাবিড় যখন এমনটা বলেছিলেন তখন তিনি ভারত যুব দলের কোচ ছিলেন। দ্রাবিড়ের কথা কানে নিতে অবশ্য ভুল করেন ভারতের সাবেক এই পেসার। আয়ুষের জন্য দিল্লি জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে অনেকটা লড়াইও করতে হয়েছিল তাকে। তবুও দিল্লির দলে খেলাতে পারেননি তিনি। সেই আক্ষেপের কথাও শুনিয়েছেন অতুল।

ডিডিসিএ এর চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা আমার পরামর্শ অগ্রাহ্য করেছিল। বরং তারা উন্মুখ চাঁদকে বেছে নিয়েছিল। আমি মিটিং থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি হস্তক্ষেপ করতে পারি কিন্তু নির্বাচকদের এখতিয়ার নিয়ে সেটা করবো না।’ আয়ুষকে দিল্লির দলে খেলাতে না পেরে খানিকটা হতাশ হয়েছিলেন অতুল। দ্রাবিড়ের কথার প্রতিদান দিতে আয়ুষকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ট্রায়ালে পাঠিয়েছিলেন তিনি। সেই কিরণ মোরের কাছে আয়ুষের নামও সুপারিশ করেছিলেন অতুল। তখনও দিল্লির হয়ে একটি ম্যাচও খেলার ‍সুযোগ পাননি।

এমনকি দিল্লির প্রাক-মৌসুম দলে ৩০ বার সুযোগ পেলেও কখনও চূড়ান্ত স্কোয়াডে জায়গা মেলেনি আয়ুষের। এরপর সুযোগ আসলেও খুবই পরিমিত। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে পাঁচ ম্যাচে একাদশে সুযোগ পেলেও ব্যাটিং করেছিলেন মাত্র একটি ম্যাচে। যদিও সেখানে মাত্র ৮ রান করে ফিরতে হয়েছিল ডানহাতি এই তরুণ ব্যাটারকে। তবে কখনই দমে যাননি আয়ুষ।

মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা আয়ুষের। বাবা বিবেক বাদোনি একজন ডকুমেন্টরি ফিল্ম মেকার। আয়ুষের ক্রিকেটের হাতেখড়িতে বড় অবদান রেখেছেন তার বাবা। বাসার ছাদে সিমেন্টের পিচে অনুশীলনের আয়ুষের নিয়মিত সঙ্গী হয়ে উঠেছিলেন বিবেক। উইকেটের পাশে ফিল্ডার হিসেবে পাথর রেখে ছেলে আয়ুষের দিকে বল ছুঁড়তেন বাবা। প্রতিদিন প্রায় ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করতেন এই তরুণ ব্যাটার।

আয়ুষের উঠে আসার গল্পটা শুরু হয়েছে সনেট ক্লাব ক্রিকেট একাডেমি থেকে। যেখানে প্রধান কোচের দায়িত্বে ছিলেন তারাক সিনহা। প্রায় ডজনখানেক ক্রিকেটার জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছেন তার অধীনে। সেই তালিকায় রয়েছেন ঋষভ পান্ত, অতুল এবং আশিষ নেহরার মতো ক্রিকেটাররা। এবার পান্ত-নেহরাদের মতো নিজেকে বিশ্ব ক্রিকেটের নিজের নাম প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ আয়ুষের সামনে।