|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
গুজরাটের সুরাট থেকে আহমেদাবাদের দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। এই দূরত্ব পাড়ি দিতে স্বপ্নবাজ তরুণ অর্জন নাগাসওয়ালা অপেক্ষায় থাকতেন লোকাল ট্রেনের। সেখান থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে সোজা আহমেদাবাদ স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শুরু হতো সকাল ১০টায়। তাই ভোর তিনটায় ধরতে হতো প্রথম ট্রেন। মিস করলে পরের ট্রেন দুই ঘণ্টা পর!
এমন সমীকরণ নিয়ে ম্যাচ খেলতে নামা বাঁহাতি এই পেসার হয়তো জানতেন না স্বপ্ন এতো দ্রুত ধরা দেবে। তবে বিশ্বাস ছিল। সেই বিশ্বাসই নাগাসওয়ালাকে পৌঁছে দিয়েছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতে যাওয়া ভারতীয় দলের বিমানে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আগামী ১৮ জুন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামবে ভারত। এই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন দুই কিউই বাঁহাতি পেসার নিল ওয়েগনার ও ট্রেন্ট বোল্ট। তাদের মোকাবেলার আগে নেটে বাঁহাতি পেস অনুশীলনে জন্য কোহলিরা ইংল্যান্ডে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাঁহাতি সুইং বোলার নাগাসওয়ালাকে।
ইংল্যান্ড সফরের ভারতীয় দলে দুই দিকেই সুইং করতে পারা এই পেসারকে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত ক্রিকেটার হিসেবে। ভারতের মহারাষ্ট্রের সীমান্ত ঘেঁষা গুজরাটের পার্সি সম্প্রদায়ের এই ক্রিকেটার ভারতীয় দল ডাক পেয়েই ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছেন। ২৮ বছর পরে ভারতীয় টেস্ট দলে কোনো পার্সি ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন।
সর্বশেষ ১৯৭৫ সালে ফারুক ইঞ্জিনিয়ার ভারতের হয়ে টেস্ট খেলেছিলেন এরপর পার্সি ক্রিকেটাররা প্রায় ব্রাত্যই হয়ে পড়েছিলেন ভারতীয় দলে। তবে হুট করে যে নাগাসওয়ালা ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছেন তেমনটা নয়। তাঁর স্বপ্নের শুরুটা ২০১১ সালে।
বিশ্বকাপে মহেন্দ্র সিং ধোনির ছক্কাতে বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারতের অনেক তরুণই স্বপ্ন দেখা শুরু করেন ব্যাটসম্যান হওয়ার। তবে নাগাসওয়ালার মনে ধোনির ব্যাটিং সেভাবে দাগ কাটেনি। তাঁর মন কেড়েছিল জহির খানের বোলিং। সেখান থেকেই পেস বোলার হয়ে ওঠার স্বপ্নের শুরু। পাড়ার ক্রিকেটে টেনিস বলে হাতেখড়ি। সেখানে বয়ভিত্তিক স্তরে ভালো খেলে ডাক পান রাজ্য স্তরের বয়সভিত্তিক দলে।
এরপর গুজরাটের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ২০১৮ সালে তাঁর দরজা খুলে যায় রঞ্জি ট্রফির। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি এই পেসারকে। এখন পর্যন্ত ১৬টি প্রথম শ্রেনির ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ৬২ উইকেট। আর লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে তাঁর সংগ্রহে ৩৯ উইকেট। আর ২০১৯-২০ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফিতে তাঁর দখলে ছিল ৪১টি উইকেট। এমন পারফরম্যান্সের পর কোহলিদের সঙ্গে ইংল্যান্ডের বিমান ধরতে আগ বেগ পেতে হয়নি এই তরুণের।
অবশ্য একটা আক্ষেপ রয়েই গেছে এমন পারফরম্যান্সের পরও তাঁর জায়গা হয়নি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) কোনো দলে। সেই আক্ষেপ কিছুটা হলেও ঘুচিয়েছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের নেট বোলার হয়ে। সেখানেই সানিধ্য পেয়েছেন শৈশবের অনুপ্রেরণা জহির খানের। দেখা পেয়েছেন বর্তমান বিশ্বের আরেক তারকা ট্রেন্ট বোল্টের। তাঁর কাছ থেকে সুইংও রপ্ত করে নিয়েছেন নাগাসওয়ালা। সুযোগ পেলে নিউজিল্যান্ডকে সেই সুইং দিয়েই কাবু করতে চান তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই পেসার বলেছেন, 'আমার সব চেয়ে প্রিয় দুই পেসারকে এত কাছ থেকে দেখব, স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে জহির ভাই কখনও বুঝতেই দেননি তিনি এত বড় মাপের বোলার ছিলেন। আমার কোথায় সমস্যা হচ্ছে জানতে চাইতেন। অ্যাকশনে কোনও খুঁত দেখতে পেলে শুধরে দিতেন। টেস্ট দলে সুযোগ পেলে বোল্টের শেখানো ইনসুইং ইয়র্কার দিয়েই নিউজ়িল্যান্ডকে পরাস্ত করার ইচ্ছে আছে।'
আইপিএলের নেটে রোহিত শর্মা, কাইরন পোলার্ডদেরও পরাস্ত করার অভিজ্ঞতা আছে নাগাসওয়ালার। রোহিতকে বোল্ডও করেছেন একবার। তবে তাকে বাউন্স দিয়ে কোনো সুবিধা পাননি এই পেসার। জানিয়েছেন রোহিত এতো ভালো হুক-পুল করেন তাতে ছক্কা না হয়ে যায় না।
বাঁহাতি এই পেসারের ভাষ্য, 'রোহিত ভাইকে বাউন্সার দেয়া যায় না। এত ভাল পুল আর হুক করেন যে নিশ্চিত ছয় হবেই। তাঁর পা লক্ষ্য করে বল করে একদিন সফল হয়েছি। তারপর থেকে রোহিত ভাই আমাকে বল করতে ডাকত। পোলার্ডকে বল করেও অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি।'
ঘরোয়া ক্রিকেটে নাগাসওয়ালার নামডাক রয়েছে 'ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন আর্ম'। নাগাসওয়ালাকে এই নাম দিয়েছিলেন তাঁর গুজরাট দলের অধিনায়ক পার্থিব প্যাটেল। সেই সুখ্যাতি এবার তিনি বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ইংল্যান্ডে। শুধু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলতেই নয়, ইংল্যান্ডে এবার স্বাগতিকদের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজ খেলবে ভারত। সেই সিরিজেও ভারতীয় দলের সঙ্গে থাকবেন তিনি।