|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
অভিষেকের পর থেকে দুর্দান্ত বোলিং করে নিজেকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। খ্যাতি পেয়েছেন কাটার মাস্টার হিসেবেও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্যারিয়ার শুরুর সময় কাটার এবং স্লোয়ারই ছিল মুস্তাফিজের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। তাঁর কাছ থেকেই কাটার, ডেথ ওভারে বোলিং এবং স্লোয়ার দিয়ে ব্যাটসম্যানদের বোকা বানানোর কৌশল শিখতে চান মেহেদী হাসান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে এত এত মেহেদী নামের ছড়াছড়ি,যেখানে শুধু মেহেদী হাসান বললে হয়তো চেনা একটু কঠিন। কুমিল্লার লালমাইয়ে টেপ টেনিস বল দিয়ে খেলা শুরু তাঁর। তারপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পেস বোলিং হান্টে সুযোগ পেয়ে নজর কাড়েন ২০ না পেরুনো এই পেসার।
বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৭ ও অনুর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। এমনকি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়েও খেলেছেন কুমিল্লার এই পেসার। ঘরোয়া ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, ৫টি লিস্ট 'এ' ম্যাচ এবং দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। যেখানে সর্বসাকুল্যে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৪টি।
হঠাৎই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরুর আগে ফিটনসে টেস্টে ১৩.৬ মার্ক তুলে আলোচনায় এসেছেন এই পেসার। এরপর ড্রাফট থেকে দলও পেয়েছেন তিনি। ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের হয়ে খেলবেন ডানহাতি এই পেসার। যেখানে তাঁর সতীর্থ কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ।
মুস্তাফিজের কাছে থেকে কাটার শিখতে চাওয়ার ব্যাপারে ক্রিকেফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে মেহেদী বলেন, ‘উনি কাটার ভালো মারেন। তো আমি যদি উনার কাছে থেকে শিখতে পারি তাহলে সেটা আমার জন্য ভালো হবে। আমার ব্লকহোলটা মোটামুটি ভালোই হয় কিন্তু কাটারটা যদি শিখতে পারি তাহলে আমার জন্য সহজ হবে পুরনো বলে বল করা।'
প্রথমবারের মতো এত বড় টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত তরুণ এই পেসার। যদিও দল পাওয়ার আগে খানিকটা চিন্তিত ছিলেন তিনি। দল পেয়েছে ইতোমধ্যে নিজের পরিকল্পনা গুছিয়ে নিয়েছেন এই তরুণ পেসার। তাঁর পরিকল্পনা সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হতে না পারলেও অন্তত ১৫-১৬ উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরতে চান মেহেদী।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দল পাওয়ার আগে একটু চিন্তিত ছিলাম, দল পাব কি না পাব। ফিটনেস টেস্টে ভালো করে দল পাওয়াটা আমার হবে কি-না। সব মিলিয়ে একটু চিন্তিত ছিলাম। তো আমার কোচ আতিক স্যার আমাকে জানালো তুমি দল পাইছো। আমি তখন সিওর ছিলাম না। ড্রাফটে দেখছিলাম ১২ জন করে নিছে। নেয়ার পরে দেখি আমার নাম নেই। পরে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল, পরে দেখলাম আমার নাম। তারপর একটু ভালো লাগলো।’
এই ডানহাতি পেসার আরও বলেন, ‘তারপর টার্গেট করলাম কিছু একটা করতে হবে। ভালো কিছু করতে হবে। এই টুর্নামেন্টে যদি ভালো কিছু করতে পারি এমনকি আমার টার্গেট আছে। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তো সম্ভব না। আমার টার্গেট হলো ১৫-১৬ উইকেট নেয়ার। যে প্লান আছে ওই প্লান যদি কার্যকর হয় তাহলে তারপর সামনেরটা চিন্তা করব।’
প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করার সুযোগ পেয়েছেন মেহেদী। তাঁর দল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের হয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ মাতাবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরীক্ষিত ক্রিকেটার সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুমিনুল হকরা। তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে চান মেহেদী।
তাঁর ভাষ্য, ‘তারা জাতীয় দলে অভিজ্ঞতা খেলোয়াড়, অনেক বছর ধরে ক্রিকেট খেলতেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছে। তো চেষ্টা করব তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার। আমার পরিকল্পনা রয়েছে কিভাবে কি করলে কি হবে, এই বিষয়গুলো। মুস্তাফিজ ভাই আছে, উনি তো স্লগ ওভারে উনি কিভাবে বোলিং করে। তো উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখব।
করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বই স্থবির হয়ে পড়েছিল। এই সময় খেলা বন্ধ থাকলেও নিজের ফিটনেস নিয়ে সচেতন ছিলেন এই পেসার। বাড়ির পাশে মাঠ থাকায় সেখানেই নিজের ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছেন। ফিটনেস নিয়ে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার ফলও তিনি হাতে-নাতে পেয়েছেন।
ফিটনেস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কিছু খেলোয়াড় আছে যারা লকডাউনে ভয়ে বের হয় না, করোনা হবে দেখে ভয়ে কাজ করেনি। তো আমার আসলে তেমনটা ছিল না। আমার ঘরের সঙ্গে মাঠ তো সেখানে আমি আমার ফিটনেসটা নিয়ে কাজ করেছি। লকডাউনের কারণে খেলা তো চলবে না, ৭-৮ মাস খেলা বন্ধ ছিল। তো আমি লকডাউনে ফিটনেস নিয়ে কাজ করেছি। পরিকল্পনা ছিল নিজেকে ঠিকঠাকভাবে তৈরি করব, সুযোগ পেলে ভালো করতে হবে। এমনিতেই যুব বিশ্বকাপ থেকে বাদ গেছি ইনজুরির কারণে। তো ওইভাবে নিজেকে নিজে চ্যালেঞ্জ করছি যে আমাকে আরও উন্নতি করতে হবে।’
যুব বিশ্বকাপ জিতে তারকা খ্যাতি পেয়েছেন আকবর আলী, শরিফুল ইসলামরা। যেখানে নাম থাকতে পারতো মেহেদীরও। তবে বিশ্বকাপের আগে ইনজুরিতে পড়ে সেই স্বপ্ন ফিকে হয় যায় তরুণ এই পেসারের। যে কারণে এখনও আক্ষেপে পুড়েন তিনি। তাঁর ধারণা যুব বিশ্বকাপে খেলতে পারলেও ভবিষ্যতের জন্য অনেক কিছুই সহজ হয়ে যেতো।
যুব বিশ্বকাপের আক্ষেপ নিয়ে মেহেদী বলেন, ‘হ্যাঁ, অনেক কষ্টের। যদি থাকতাম তাহলে সামনের জন্য অনেক সহজ হয়ে যেতো। প্রেসিডেন্টস কাপ যেটা হলো সেটা সহজে খেলতে পারতাম। সেটা না হওয়ায় (দল পাওয়া) কিছুটা কঠিন হয়েছে। ফিটনেসটা যদি ভালো না করতাম, তাহলে যদি ১২ মারতাম তাও দল পেতাম। তখন দল পাওয়াটা এতটা কঠিন হতো না যতটা এখন হয়েছে।’