|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
২০১৮ সালে ব্রিস্টলে মারামারি করে হারিয়েছিলেন সহ-অধিনায়কত্ব। সেই অভিযোগে আসামী হয়েছিলেন মামলারও। ইংল্যান্ড ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল জন্মভূমি নিউজিল্যান্ডে। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি, কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম বনে গিয়ে খুইয়েছেন নিজের সুনাম। বলছি বিশ্বকাপজয়ী ইংলিশ অলরাউন্ডার বেন স্টোকসের কথা। ক্রিকেটের 'ব্যাড বয়' স্টোকস আজ ইংল্যান্ড টেস্ট দলের অধিনায়ক।
ব্রিস্টলের সেই ঘটনার পর হারানো খ্যাতি ফিরিয়ে আনার জন্য কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন স্টোকস। যার ফলশ্রুতিতে গত বছরের অ্যাশেজের হেডিংলি টেস্টে হাজার হাজার অস্ট্রেলিয়ান সমর্থকদের হৃদয় ভাঙার মূল কারিগর হিসেবে কাজ করেছিলেন এই অলরাউন্ডার। চিনিয়েছিলেন নিজেকে।
একটা সময় ক্রিকেট থেকে নিষেধাজ্ঞা পাবার মত অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে পরিত্রাণ পেয়ে দলকে অ্যাশেজ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ জেতানোয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন স্টোকস। আর তাঁর হাতেই এবার দায়িত্ব তুলে দেয়া হল সাদা পোশাকের ইংল্যান্ডকে।
এক সময়ের খারাপ ছেলে এবং অ্যাশেজ জয়ের নায়ক হিসাবে বিশ্বকাপে পরিণত হওয়া স্টোকস ইংল্যান্ডকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজের প্রথম টেস্টে।
অধিনায়কত্ব পেয়ে স্টোকস যে বেশ উচ্ছ্বাসিত তা স্পষ্ট বোঝা যায় তাঁর এই কথা শুনে, 'ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হওয়ার সুযোগ পাওয়া এক বিশাল সম্মানের বিষয়। আপনি একবার হলেও বলতে পারেন আপনি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক ছিলেন। এটি এমন একটি জিনিস যা আমি খুজছিলাম। যেহেতু সুযোগটি পেয়েছি তাই এটি কাজে লাগানোর জন্য আমি অপেক্ষা করছি।'
২০১৮ সালের মারামারির ঘটনায় হারিয়েছিলেন সহ-অধিনায়কত্ব। পরিস্থিতি তাঁকে নিউজিল্যান্ডে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল তখন। সেই ঘটনার রেশ কাটিয়ে ক্রিকেটে ফিরেছেন। তবে ফেরাটা আগের রূপে ছিলো না। স্টোকস ফিরেছিলেন আরও বিধ্বংসীরূপে।
সেই ঘটনার পর থেকে স্টোকস তার জীবন এবং ক্যারিয়ারকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। যার প্রমাণ মিলে গেল বছরের অ্যাশেজে।
অ্যাশেজের শেষ ম্যাচে হেডিংলি টেস্টে একক প্রচেষ্টায় দলকে এনে দিয়েছিলেন জয়ের স্বাদ। ২৮৬ রানে ৯ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়ে কান্নার কারণ হয়েছিলেন অজিদের। জ্যাক লিচের সঙ্গে শেষ উইকেটে গড়া ৭৬ রানের পার্টনারশিপে স্টোকস হাঁকিয়েছিলেন ৮টি ছয় এবং ১১টি চার।
২৯ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডারের মতে, 'সেই ঘটনার (ব্রিস্টলের মারামারি কাণ্ড) পর শুধু একটা জিনিসই আমার মাথায় ঘুরেছে। আমি এই জায়গাটি থেকে কী করব? আমি কীভাবে নিজেকে পরিচালনা করব? তবে আমি কঠোর পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছি বলে বেশ গর্বিত।'
'আমি সাধারণত নিজের সম্পর্কে এইভাবে কথা বলতে চাই না তবে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি যে ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার পর থেকে আমি যা করতে পেরেছি তাতে আমি গর্বিত।'
১৯৯১ সালের ৪ জুন নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জন্ম নেয়া বেন স্টোকস জাতীয় দলে উঠে আসেন অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে। ২০১১ সালে অভিষিক্ত হন ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে। শুরু থেকেই বদমেজাজি তকমা পাওয়া বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান জাতীয় দলের পাশাপাশি খেলেছেন ডারহাম, ডারহাম দ্বিতীয় একাদশ, ইংল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম অনূর্ধ্ব-১৯, ইংল্যান্ড পারফরম্যান্স প্রোগ্রাম একাদশ, ইংল্যান্ড লায়ন্সের হয়ে।
দেশের বাইরেও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এবং বিগ ব্যাশে। আইপিএলে খেলেছেন রাজস্থান রয়্যালস এবং রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টসের হয়ে আর বিগ ব্যাশে ছিলেন মেলবোর্ন রেনেগেডস নামক দলে।
ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে ৯ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৬৩টি টেস্ট, ৯৫টি ওয়ানডে এবং ২৬টি টি-টোয়েন্টি। ব্যাট হাতে সাদা পোশাকে তাঁর সংগ্রহ ৪০৫৬ রান; যেখানে রয়েছে ২৫৮ রানের একটি অনাবদ্য ইনিংস। সেই সঙ্গে আরও রয়েছে ৯টি শতক এবং ২১টি অর্ধশতক।
৯৫ ওয়ানডেতে স্টোকসের সংগ্রহ ২৬৮২ রান। অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংসের পাশাপাশি রয়েছে ৩টি শতক এবং ২০টি অর্ধশতক। টি-টোয়েন্টিতে করেছেন ৩০৫ রান। যেখানে সর্বোচ্চ সংগ্রহ তাঁর অপরাজিত ৪৭ রান।
বল হাতেও বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন ডান হাতি এই পেসার। সাদা পোশাকে ঝুলিতে পুরেছেন ১৪৭ উইকেট। সেখানে রয়েছে ৫টি ৪ উইকেট এবং ৪টি ৫ উইকেটের ম্যাচ। সেরা বোলিং ইনিংসে ৬/২২ এবং ম্যাচে ৮/১৬১। ওয়ানডেতে শিকার করেছেন ৭০টি উইকেট যেখানে সেরা বোলিং ফিগার তাঁর ৫/৬১। আর টি-টোয়েন্টিতে ১৪ উইকেট বাগিয়েছেন এই অলরাউন্ডার।