বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ জয়
ছবি: সংগৃহীত
যদিও একেবারে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক মেজাজে ছিলেন ব্রেন্ডন কিং। দারুণ ব্যাটিংয়ে তাকে প্রত্যাশিত সঙ্গই দিয়েছেন এভিন লুইস। তাদের দুজনের একশ পার করা জুটিতেই বড় জয়ের ভিতটা পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। লুইস হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও কিংয়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ৮২ রানের ইনিংস। ৪৫ রান করে স্বাগতিকদের আরও একটু এগিয়ে দিয়েছেন কেসি কার্টি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন জয় থেকে একটু দূরে তখন সময় না নিয়ে দ্রুতই খেলা শেষ করেছেন শেরফান রাদারফোর্ড ও হোপ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জিতে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পাকে জয়ের জন্য ২২৮ রান তাড়ায় কিং ও লুইসের ব্যাটে ভালো শুরু পেয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করছিলেন কিং। অন্য প্রান্তে থাকা লুইস শুরুতে একটু রয়েসয়ে খেললেও পরবর্তীতে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগ দিয়েছেন। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের বোলাররা তেমন কোন চ্যালেঞ্জ জানাতে না পারায় অনায়াসে বিনা উইকেটে ৫৪ রান তোলে স্বাগতিকরা। যদিও তাদের দুজনের জুটি ভাঙার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
ইনিংসের ১৪তম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়েছিলেন লুইস। তবে সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি সৌম্য সরকার। একটু পর দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা কিং পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। রিশাদ হোসেনের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে চার মেরে ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি এই ওপেনার। কিংয়ের পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর ১৯ ওভারে দলের রান একশ হয়েছে ক্যারিবীয়দের। কিংয়ের মতো হাফ সেঞ্চুরি পেতে পারতেন লুইসও।
যদিও বাঁহাতি ওপেনারকে পঞ্চাশ ছুঁতে দেননি রিশাদ হোসেন। ডানহাতি লেগ স্পিনারের মিডল অ্যান্ড লেগ স্টাম্পের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে রিশাদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৪৯ রান করা লুইস। তিনি ফেরার পর কেসি কার্টিকে সঙ্গে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন কিং। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি পাওয়া ডানহাতি ওপেনার ছিলেন সেঞ্চুরির পথেও। তবে তাকে সেঞ্চুরি পেতে দেননি নাহিদ রানা। ডানহাতি পেসারের দারুণ এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে কিং ফিরেছেন ৮২ রানের ইনিংস খেলে।
দ্রুত ম্যাচ শেষ করার তাড়ায় আফিফ হোসেনের বলে লং অনের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন কার্টি। তবে ঠিকটাক টাইমিং না হওয়ায় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা নাহিদের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরির খুব কাছে থাকলেও ৫ রানের আক্ষেপ নিয়ে ৪৫ রানে ফিরতে হয় তাকে। পরবর্তীতে দ্রতই খেলা শেষ করেছেন ২৪ রান করা রাদারফোর্ড ও ১৭ রানে অপরাজিত থাকা অধিনায়ক হোপ। এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে এখন বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ।
এর আগে প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির পর থেমে যাওয়া তানজিদ হাসান তামিম দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও শুরুটা করেছিলেন দারুণভাবে। মারকুইনো মিন্ডলের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ২টি ছক্কা ও ১ চারে মোট ১৮ রান নেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তবে পরের ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জেইডেন সিলসের বলে মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২ রান করা সৌম্য। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি লিটন দাস। অনেকটা টেস্ট মেজাজে ব্যাটিং করেছেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য হারিয়ে নিজের উইকেট দিয়ে গেছেন বাংলাদেশের এই উইকেটকিপার ব্যাটার। সিলসের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে লুইসের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ বলে ৪ রানের ইনিংস খেলে। আগের ম্যাচে ধীরগতির হাফ সেঞ্চুরি করলেও এদিন টিকতেই পারেননি মিরাজ। সিলসের বলটা ছাড়তেই চেয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিতে না পারায় ব্যাটে কানায় লেগে বোল্ড হয়ে ফেরেন ১ রানে। অন্যদের ব্যর্থতায় একপ্রান্তে ঠিকই রান তুলে যাচ্ছিলেন তানজিদ।
হাফ সেঞ্চুরি আক্ষেপ নিয়ে তানজিদকে ফিরতে হয়েছে চেজকে সহজ ক্যাচ দিয়ে। জাস্টিন গ্রিভসের বলে ফেরার আগে ৩৩ বলে খেলেছেন ৪৬ রানের ইনিংস। আফিফ হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ মিলে বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করলেও বড় জুটি গড়তে পারেননি তারা। গুড়াকেশ মোতিকে লং অফের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় শেরফান রাদারফোর্ডের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ২৪ রান করা আফিফ। আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা জাকের আলী অনিককেও ফিরিয়েছেন মোতিই। বাঁহাতি স্পিনারের বলে লেগ বিফোর ফাঁদে পড়ে ফিরতে হয় তাকে।
১১৫ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর দেড়শর আগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জাগে বাংলাদেশের। তবে এমন শঙ্কাকে উড়িয়ে জুটি গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও তানজিম। তাদের দুজনের ব্যাটেই একটু একটু করে দুইশর পথে এগোতে থাকে বাংলাদেশ। এক-দুই করে যেমন রান বের করেছেন তেমনি বাজে বলে বাউন্ডারিও আদায় করেছেন মাহমুদউল্লাহ। অনেকটা সাবধানী ব্যাটিংয়ে ৮৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহ যতটা সাবধানী ছিলেন তানজিম ছিলেন ততটাই আগ্রাসী।
শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে বিপদ মুক্ত করার পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরিরও খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন তিনি। তবে ৪৫ রানের ইনিংস খেলা ডানহাতি ব্যাটারকে হাফ সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন চেজ। ডানহাতি অফ স্পিনারের বলে খেলতে গিয়ে তাঁরই হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। তানজিম ফেরার একটু পর আউট হয়েছেন ৬২ রান করা মাহমুদউল্লাহও। পরবর্তীতে ১৫ রান করেছেন শরিফুল। তাতে শেষ পর্যন্ত ২২৭ রানে থামতে হয় সফরকারীদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ২২ রানে চারটি উইকেট পেয়েছেন সিলস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ২২৭/১০ (৪৫.৫ ওভার) (সৌম্য ২, তানজিদ ৪৬, মিরাজ ১, লিটন ৪, আফিফ ২৪, মাহমুদউল্লাহ ৬২, তানজিম ৪৫, শরিফুল ১৫; সিলস ৪/২২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ২৩০/৩ (৩৫.৫ ওভার) (ব্রেন্ডন কিং ৮২, লুইস ৪৯, কার্টি ৪৫, রাদারফোর্ড ২৪*, হোপ ১৭*)