কামিন্স এবং একটি স্বপ্নের ডেলিভারি
.jpg)
ছবি: সংগৃহীত

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বিশ্রামে কামিন্স-স্টার্ক, অস্ট্রেলিয়ার ওয়ানডে দলে ওয়েন
৩০ জুলাই ২৫
‘বাবরের জন্য পুরো সকাল অপেক্ষা করেছি, মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য সিট থেকে উঠেছিলাম, ফিরে এসে দেখি বাবর আউট। এটা কী?’ ইএসপিএন ক্রিকইনফোর কমেন্ট সেকশনে খুররাম মালিক নামের একজন পাকিস্তান সমর্থকের হতাশার গল্প এটি। ম্যাচের বাকিটা সময় জুড়েই ক্রিকইনফোর কমেন্ট সেকশনে চলেছে বাবর আজমের আউট নিয়ে নানান মন্তব্য। কেউ বাবরকে দোষী করছেন তো, কেউ প্যাট কামিন্সের ডেলিভারির প্রশংসা করছেন।
কামিন্সের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারিতে সামনের পায়ের ওপর ভর করেই স্ট্রোক করলেন বাবর। অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পড়া বল উপড়ে দিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের স্টাম্পের বেলস। পেছনে ঘুরে যখন দেখলেন স্টাম্পের বেলসগুলো ততক্ষণে উড়ছে তখন যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। পরোক্ষণে সামনে তাকিয়ে আবারও একবার দেখে নেয়ার চেষ্টা করলেন বলটা আসলে কোথায় পড়ে কোথায় গেল।
স্ট্রোক খেলার জন্য প্রায় ঠিকঠাক জায়গাতেই ছিলেন বাবর। তবুও কামিন্সের কাছে পরাস্ত হলেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার। পুরো গ্যালারি তখন গর্জে উঠেছে, নিশ্চুপ কেবল বাবর, মুখ থেকে যেন কোনো কথাই বের হচ্ছিলো না। তবে মাথার ভেতরে যে অবিশ্বাস বাসা বেঁধে ছিল সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। ড্রেসিং রুমে ফিরে যাওয়ার সময় শান মাসুদের দিকে তাকালেও কিছু বললেন না বাবর।

এদিকে মাথা নাড়িয়ে পাকিস্তানের অধিনায়কও যেন বাবরকে বোঝাতে চাইলেন তিনি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। যাবার বেলায় আরও একবার জায়ান্ট স্ক্রিন দিকে তাকিয়ে নিজের আউটের শেষ ঝলকটা দেখে নিতে চাইলেন। বাবরকে এভাবে ফেরাতে খানিকটা কাঠখড়ও পোড়াতে হয়েছে কামিন্সকে। পার্থেও বাবরের জন্য ফাঁদ পেতেছিলেন অজি এই পেসার।
পাকিস্তান দলে ফিরলেন আফ্রিদি, টি-টোয়েন্টিতে ব্রাত্য বাবর
২৫ জুলাই ২৫
পার্থ টেস্টে বাবরকে ১৬টি বল করেছিলেন কামিন্স। যেখানে বেশিরভাগ বলই আঘাত করেছে বাবরের ব্যাটের স্টিকারে। ডানহাতি এই পেসারের লেংথ বোঝার চেষ্টা করলেও সেটা সহজে করতে দেননি তিনি। কখনও অনেকটা বাইরে থেকে অফ স্টাম্প তাক করে বল ছুঁড়েছেন, কখনও বা লেংথ, বাউন্সার দিয়ে বাবরকে ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়েছেন কামিন্স।
সেখানে বাবরকে আউট করার আগে দুটি বাউন্সার মেরেছিলেন তিনি। একটি অ্যালেক্স ক্যারির গ্লাভস ফাঁকিও দিয়েছিল। তবে ১৬তম ডেলিভারিটি কামিন্স করেছিলেন ওবলিং সিমে। এই ডেলিভারিটা মূলত যখন মাটিতে আঘাত করে তখন সিম স্টাম্পের দিকে তাক করানো থাকে। যার ফলে বিপাকে পড়তে হয় ব্যাটারদের। বাবরের ক্ষেত্রে ভিন্ন কিছু হয়নি। ব্যাটের মাঝ বরাবর খেলতে চাইলেও অসম বাউন্সে বল আঘাত করেছিল তার ডানহাতের বুড়ো আঙুলে।
এদিকে মেলবোর্নে বাবরকে করা কামিন্সের ডেলিভারিটিও খানিকটা স্টাম্পের দিকে তাক করানো ছিল। যার ফলে স্বাভাবিক ডেলিভারির পর আন্দাজ করে বোকা বনে যেতে হয়েছে বাবরকে। আব্দুল্লাহ শফিকের বিদায়ের পর বাবরের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল কামিন্সের লেংথ এবং অতিরিক্ত বাউন্স সামলানো। সেটির জন্য ক্রিজের বাইরে গার্ড নিয়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
বাবরের জন্য কামিন্সের প্রথম ডেলিভারিটা ছিল ব্যাক অব লেংথে, ১৩৭ কি.মি. গতিতে। প্রথম বলটা চতুর্থ স্টাম্পে করলেও পরেরটি কামিন্স করেছিলেন পঞ্চম স্টাম্পে। তবে একই লেংথে। তৃতীয় বলটা ছিল খানিকটা ফুলার লেংথে, তবে চতুর্থ স্টাম্পে। প্রথম কয়েকটি ডেলিভারি ঠিকঠাক সামলাতে না পারলেও এবার ঠিকই ব্যাটের মাঝখানে করে খেলেছিলেন বাবর। শেষ পর্যন্ত সিম ওবল ডেলিভারিতে বাবরের উইকেট তুলে নেন।
এটিকে স্বপ্নের ডেলিভারি বলছেন কামিন্স। ম্যাচ শেষে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক জানিয়েছেন, তিনি নিজেও জানতেন না বলটা আসলে কী হবে। কামিন্স বলেন, ‘এটি স্বপ্নের মতো একটি ডেলিভারি। এটা এমন একটা জিনিস যা আপনি সব বলেই করতে চাইবেন কিন্তু খুব কম সময়ই করতে পারা যায়। এমন না যে এটা ইচ্ছে করেই বল ভেতরে ঢুকিয়েছি। খানিকটা অ্যাঙ্গেল তৈরি করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি জানতাম না এটি কী করবে। আশা করি ব্যাটারও জানে না।’
বাবর যে জানতেন না কিংবা বুঝতে পারেননি সেটা বোধহয় বলেই দেয়া যায়। চলমান সিরিজে কামিন্সের ৪০টি বল খেলেছেন বাবর। যেখানে ১৫ রান তোলা এই ব্যাটার আউট হয়েছেন দুবার।