|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)- ৪৫০/৯ (১৪৪.১ ওভার) (লুইস ৯৭, আথানেজ ৯০, হজ ২৫, সিলভা ১৪, গ্রেভস ১১৫*, রোচ ৪৭, সেয়ালস ১৮, শামার ১১*; হাসান ৩/৮৭, তাসকিন ২/৭৬)
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৪০/২ (২০ ওভার) জাকির ১৫, জয় ৫, দিপু ১০*, মুমিনুল ৭*; সিয়ালস ১/১৫, আলজারি ১/২)
আগের দিনের দুই ব্যাটারের সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ দ্বিতীয় দিন দূর করেছেন জাস্টিন গ্রিভস। ডানহাতি এই ব্যাটারের অপরাজিত ১১৫ রানের সুবাদে ৪৫০ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে জোড়া উইকেট হারিয়ে দিন শেষে ৪০ রান স্কোরবোর্ডে তুলেছে বাংলাদেশ। ৪১০ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নামবে মেহেদি হাসান মিরাজের দল।
বাংলাদেশের ইনিংস-
৪৫০ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ঘোষণার পর ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনেই করেছিলেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। নতুন বলে কোন প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে বল ছেঁড়ে খেলার লক্ষ্যই ছিল তাদের। তাই তো ইনিংসের অষ্টম ওভার পর্যন্ত কোন বাউন্ডারিই আসেনি তাদের ব্যাট থেকে।
যদিও ধীরগতির শুরুর পর ধীরে ধীরে রান বাড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন জাকির। তবে আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল অনায়াসেই ছেড়ে দিতে পারতেন জয়। তা না করে আলতো করে ব্যাট পেতে দিয়ে গালিতে দেন ক্যাচ। তার ভাগ্য ভালো সেটি মুঠোয় নিতে পারেননি মিকাইল লুই!
সে সময় ৫ রানে ছিলেন জয়। এরপরের ওভারেই জেডন সিয়ালসকে দুটি বাউন্ডারি হাঁকালেও নবম ওভারের শেষ বলে বাউন্স ও গতিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন জাকির। ৩৪ বলে ১৫ রান করেন এই ওপেনার। সঙ্গী হারিয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরের ওভারে আলজারি জোসেফের দারুণ এক ডেলিভারিতে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন জয়। ৩৩ বলে ৫ রান করে ফেরেন তিনিও।
তাদের বিদায়ে ক্রিজে আসেন মুমিনুল হক ও শাহাদাৎ হোসেন দিপু। এরপর অবশ্য দুজন মিলে দেখেশুনে খেলে কোন প্রকার ঝুঁকি না নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেন। ২ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান নিয়ে দিন শেষ করে মিরাজবাহিনী।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস-
মিকাইল লুইস এবং অ্যালিক আথানেজে সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে প্রথম দিন ডাগআউটে ফিরেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দিন যেন নিজের করে নিয়েছেন জাস্টিন গ্রিভস। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানোর দিন এই ব্যাটারের কল্যানে স্বাগতিকরা স্কোরবোর্ডে ৯ উইকেটে ৪৫০ রান তোলার পর ইনিংস ঘোষণা করে।
দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ব্যাট করতে নামা জশুয়া সিলভাকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি হাসান মাহমুদ। দারুণ এক ইন সুইঙ্গারে এই উইকেটকিপার ব্যাটারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। এরপর রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি সিলভা। রিপ্লেতে দেখা যায় হাসানের বল লেগ স্টাম্প ছুঁয়ে গেছে। আম্পায়ার্স কলের কারণে ফিরে যেতে হয় তাকে।
এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে হাসান সাজঘরে ফেরান আরেক ক্যারিবীয় ব্যাটার আলজারি জোসেফকে। হাসানের বলে লেগ সাইডে পুশ করতে চেয়েছিলেন জোসেফ। তবে বল ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় গালিতে। সেখানে ফিল্ডিং করা জাকির হাসান লাফিয়ে সেই ক্যাচ নিয়েছেন। ফলে মাত্র ৪ রান করে ফিরে যেতে হয় এই ক্যারিবীয় ব্যাটারকে।
শুরুর ধাক্কা বেশ ভালো ভাবেই সামাল দেন গ্রেভস ও কেমার রোচ। দুজনে মিলে উইন্ডিজের রান ৩০০ পাড় করেন। অবশ্য শূন্য রানেই আম্পায়ার্ক কলের কারণে জীবন পেয়েছিলেন রোচ। হাসানের দ্রুত গতির ডেলিভারির বল লেগ স্টাম্পের বাইরে পেয়ে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন রোচ। তবে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো করতে পারেননি।
বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পের বাইরের দিকে লাগত। ফলে জীবন পেয়ে যান রোচ। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে ৬৩ রান নিয়ে গ্রেভস ও ১৯ রান নিয়ে রোচ অপরাজিত থাকেন।
লাঞ্চের পর ব্যাট করতে নামা উইন্ডিজ দুই ব্যাটার আরও দেখে শুনে বাংলাদেশের বোলারদের খেলতে থাকেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ তিনশ ছোঁয়া দলীয় ইনিংস পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলতে নেমে ফের তিনশ রানের দেখা পেল দলটি। তবে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠা জুটি ভাঙার সুযোগ এলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ।
কট বিহাইন্ডের রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। ১১৯তম ওভারে তাসকিনের দ্বিতীয় ডেলিভারি গ্রিভসের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে জাকের আলির গ্লাভসে। কিন্তু বদলি উইকেটরক্ষক কিংবা মাঠের অন্য কোনো ফিল্ডাররা যেন সেটি টেরই পায়নি। তাই হয়নি কোনো আবেদন।
তিন বল পর রিপ্লেতে দেখা যায়, বেশ ভালোভাবে কানা ছুঁয়েছিল বল। কিন্তু আবেদন বা রিভিউ না নেওয়ায় কোনো বিপদ ঘটেনি ৭৭ রানে থাকা গ্রিভসের। এমন হতাশার পর রোচ-গ্রেভস জুটি পৌঁছে যায় শতরানে।
বাংলাদেশের বোলারদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জুটি গড়ে যাচ্ছিলেন রোচ ও গ্রিভস। তবে চমৎকার এক ডেলিভারিতে রোচকে বোল্ড করে থামান হাসান মাহমুদ। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বলের লাইনে যেতে পারেননি রোচ। মিডল স্টাম্পের চূড়ায় আঘাত হানে বল। ভাঙে ২৮৯ বল স্থায়ী ১৪০ রানের জুটি।
লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে দারুণ ব্যাটিং করা জাস্টিন গ্রিভস তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। আগের দিন মিকাইল লুই ও আলিক আথানেজ নব্বইয়ের ঘরে ফিরেছিলেন। তাদের ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি গ্রিভস। ৯৮ থেকে তাইজুল ইসলামকে চার মেরে তিন অঙ্কে পৌঁছান তিনি। ১৮১ বলে সেঞ্চুরি করতে কেবল চারটি বাউন্ডারি মেরেছেন গ্রিভস।
গ্রিভস মাইলফলকে পৌঁছালে চা বিরতিতে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে বিরতির পর ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে আউট হন জেডন সিয়ালস। আর দলকে সাড়ে চারশোর ঘরে নিয়ে যেতেই ইনিংস ঘোষণা করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক গ্রেইগ ব্রাফেট। ১১৫ রানে অপরাজিত থাকেন গ্রিভস।