|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
বিশ্ব জুড়ে এখন নিত্য নতুন অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। টি-টোয়েন্টি থেকে টি-টেন ক্রিকেট খেলুড়ে প্রায় সব দেশেরই একাধিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্ট বাড়ার সঙ্গে দূর্নীতির ঝুঁকিও বেড়েছে। বিশেষ করে গত এক দশকে ক্রিকেটে ফিক্সিং ও দুর্নীতি রোধ করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে আইসিসিকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা মানা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএল। এই টুর্নামেন্টেও গত দুই বছরে ৩০টির বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে এই সময়ে কোনো ক্রিকেটারকেই নিষিদ্ধ করা হয়নি। এমনকি দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অনেকেই বছরের পর বছর ধরে খেলা চালিয়ে যান। এমনটাই অভিযোগ তুলেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। সেখানে আইসিসির সাবেক দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের প্রধান স্টিভ রিচার্ডসন ক্রিকেটের অন্ধকার জগতের বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রতি টেলিগ্রাফ প্রকাশ করেছে ‘কীভাবে ক্রিকেট নিজেকেই খেয়েছে’ শিরোনামের একটি বিশেষ প্রতিবেদন। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে চলা বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ও লিজেন্ডস লিগেও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। বিপিএলের আয়োজকরা দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য আইসিসির কোনো সহায়তা নেয় না আইসিসি। বরং নিজেরা স্বল্প খরচে সেই কাজ করে থাকে। ফলে বিপিএলের দুর্নীতিবিরোধী স্বচ্ছতা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘সর্বশেষ দুই বছরের বিপিএলে ৩০টির বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু একজনও নিষিদ্ধ হয়নি। প্রায়ই দুর্নীর্তির অভিযুক্তরা প্রমাণ হওয়ার আগপর্যন্ত বছরের পর বছর খেলায়ও থেকে যান।’
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি টেলিগ্রাফকে জানিয়েছেন অনেক ক্রিকেটারই এসব ব্যাপারে অভিযোগ জানাতে চাইলেও তারা নিরাপত্তারহীনতার কারণে তারা সেসব জানাতে ভয় পান। শুধু সরাসরি কাউকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হলেই সেই খবর জানান কতৃপক্ষকে। অনেক সময় সন্দেহ থাকলেও কেউ মুখ খুলেন না।
এমনটা জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অভিযোগ জানাতে অনেক খেলোয়াড়ই ভয় পান। প্রথম কারণ, তাঁদের পারিশ্রমিক না–ও দেওয়া হতে পারে, দ্বিতীয় কারণ তাঁরা নিজেদের অনিরাপদ বোধ করতে পারেন। তাঁরা তখনই জানান, যখন সরাসরি অ্যাপ্রোচ করা হয়। কিন্তু শুধু সন্দেহের ওপর খুব কমই বলেন।’ এই ব্যক্তির নাম বা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
রিচার্ডসন জানিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো নিজেদের মতো করে যে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে তাতে অনেক ঝুঁকিও আছে। তারা শক্তিশালী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আইসিসির এই কর্মকর্তা। আইসিসি সাহায্য ছাড়া শুধু একজন দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তা মাঠে থাকলেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত রাখা যায় কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইসিসির এই কর্মকর্তা।
রিচার্ডসন টেলিগ্রাফকে বলেছেন, ‘যখন ছোট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিজস্ব ইভেন্ট কাভার করে, তখন ঝুঁকি হচ্ছে, এর মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী বিধান কি ততটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে? আইসিসি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে, তাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও তথ্যের জন্য যোগাযোগ না করে একজন দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তা মাঠে থাকলেই লিগকে সর্বোত্তমভাবে রক্ষা করা যায় না। এর মধ্যে অনেক কিছুই আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সব সময়ই দুর্নীতিবাজরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা করেন। এর অর্থ এই নয় যে সব লীগে দুর্নীতিবাজরা কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভালো উদ্দেশ্যের মানুষ, যাঁরা হয়তো বুঝতেই পারছেন না যে তাঁরা কী করছেন।’
বিপিএলে দুর্নীতির কালিমা নতুন কিছু নয়। এর আগে বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে একাধিক ম্যাচে ফিক্সিংয়ের প্রমাণ পেয়েছিল আইসিসি। বিপিএলের দ্বিতীয় আসরে চট্টগ্রামে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস-চিটাগং কিংসের ম্যাচ নিয়েও ছিল সন্দেহ। সন্দেহের তালিকায় ছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সের আরও দুটি ম্যাচ। এর মধ্যে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস ও বরিশাল বার্নাসের মধ্যকার ম্যাচেও ফিক্সিংয়ের প্রমাণ পেয়েছিল আকসু।
এ ছাড়াও ২০১৯ বিপিএলে ম্যাচ পাতানোর চেষ্টায় ৬ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন আফগানিস্তানের উইকেটকিপার ব্যাটার শফিকুল্লাহ। তিনি খেলেছিলেন সিলেট থান্ডারের হয়ে। এর আগে ২০১৬ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তৎকালীন ফ্র্যাঞ্চাইজি রংপুরের হয়ে ফিক্সিংয়ের চেষ্টা করেছিলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটার নাসির জামশেদ। এ জন্য ঘুষও নিয়েছিলেন জুয়াড়িদের কাছ থেকে। বিপিএলে তার হয়ে ছয়জন ক্রিকেটার কাজ করেছিলেন।