|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
উইকেটের ঘাসের ছোঁয়া নেই, স্পিনারদের জন্যও নেই বাড়তি কিছু। চট্টগ্রামের খানিকটা মন্থর উইকেট হয়ে উঠল ব্যাটিং স্বর্গ। এমন উইকেটে হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম চ্যালেঞ্জ করতে পারলেন না সেভাবে। বিবর্ণ দিনে বোলাররা তবুও যতটুকু সুযোগ আদায় করতে পেরেছিলেন সেটাও লুফে নিতে পারেননি মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। সুযোগ মিস আর রিভিউ নষ্টের দিনে পুরোটা সময় আলোকরশ্মি নিজেদের দিকে টেনে রাখলেন টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টিয়ান স্টাবসরা। বাংলাদেশকে হতাশায় ডুবিয়ে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন দুজনই। ১০৬ রানের ইনিংস খেলে শেষ বিকেলে স্টাবস ফিরলেও ডি জর্জি অপরাজিত থেকেছেন ১৪১ রানে। তাকে সঙ্গ দেয়া ডেভিড বেডিংহাম অপরাজিত ১৮ রানে। প্রথম দিনের পুরোটা সময় নিজেদের করে নেয়া সাউথ আফ্রিকা ২ উইকেট হারিয়ে ৩০৭ রান তুলেছে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা সাউথ আফ্রিকার শুরুটা হয়েছে বেশ ভালোভাবেই। যদিও ইনিংসের সপ্তম ওভারে উইকেট হারাতে পারতো সফরকারীরা। হাসান মাহমুদের রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে ডি জর্জির ব্যাটের ভেতরে কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে চেষ্টা করলেও ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি অভিষিক্ত উইকেটকিপার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। উইকেটে বোলারদের জন্য খুব বেশি কিছু না থাকায় তাই তেমন চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি হাসান-নাহিদ রানারা।
ডি জর্জিকে সঙ্গে নিয়ে বড় জুটির পথেই এগোচ্ছিলেন এইডেন মার্করাম। সকালের শুরুতে তেমন কিছু করে দেখাতে না পারলেও ইনিংসের ১৮তম ওভারে বাংলাদেশকে উইকেট এনে দেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের ঝুলিয়ে দেয়া ডেলিভারিতে ডাউন উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অনে থাকা মুমিনুল হকের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন মার্করাম। সাউথ আফ্রিকার অধিনায়ককে ফিরতে হয়েছে ৩৩ রানে। দিনের প্রথম সেশন বাংলাদেশ উইকেট নিতে পেরেছে ওই একটিই। যেখানে এক উইকেট হারানো সাউথ আফ্রিকা লাঞ্চে যায় ১০৯ রান নিয়ে।
লাঞ্চ থেকে ফিরেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ডি জর্জি। নাহিদের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৭৬ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। যদিও একটু পর জীবন পেয়েছেন ডি জর্জি। ৬৭ রানে ব্যাটিং করার সময় রাউন্ড দা উইকেট থেকে তাকে বিপাকে ফেলেন হাসান। বাঁ’হাতি ওপেনারের ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো সাদমান ইসলামের একটু সামনে। ক্যাচটি হতে হতেও হয়নি। সেই বলে উল্টো দুই রান নেন ডি জর্জি। প্রথম দিনের প্রথম ৫০ ওভারের মাঝে দুইটি রিভিউ হারায় বাংলাদেশ।
তাইজুল একটু জোরের ওপর স্কিড করা ডেলিভারিতে কাট করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন স্টাবস। কট বিহাইন্ডের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। রিভিউতে দেখা যায়, বল ব্যাটেই লাগেনি। বাংলাদেশের বোলারদের ক্রমাগত হতাশায় ডুবিয়ে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন স্টাবস। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে চাহিদা থাকলেও চট্টগ্রামে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন একেবারে টেস্ট মেজাজে। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ১০৭ বলে পঞ্চাশ করেছেন স্টাবস। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি।
যদিও আগেই ফিরতে পারতেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তাইজুলের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে সামনে এগিয়ে এসে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন স্টাবস। বলের লাইন মিস করলেও প্রোটিয়া ব্যাটারকে ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ। মূলত উইকেটকিপার মাহিদুল অঙ্কন বল লুফে নিতে না পারায় জীবন পান স্টাবস। এদিকে আগেই হাফ সেঞ্চুরি ছোঁয়া ডি জর্জি পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখাও। মিরাজের বলে সুইপ করে চার মেরে ১৪৬ বলে ‘স্পেশাল’ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এমন শতকের পর তাই উদযাপন করেছেন মনের আনন্দে।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি হতাশায় পুড়েছে দ্বিতীয় সেশনে। সাউথ আফ্রিকার দুই ব্যাটার স্টাবস ও ডি জর্জির মিলে ২৮ ওভারে ৯৫ রান তুললেও বাংলাদেশের বোলাররা উইকেট নিতে পারেননি। একটু পর জুটির দেড়শ পেরিয়ে যায় তাদের দুজনের জুটি। আবার তাদের দুজনের ব্যাটে ৬৯.১ ওভারে আড়াইশ ছুঁয়ে ফেলে সাউথ আফ্রিকা। ঠাণ্ডা মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকা স্টাবস শেষ বিকেলে এসে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। মুমিনুলের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে সুইপার কভারে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে ১৯৬ বলে সেঞ্চুরি করেছেন।
২০১৯ সালের পর এবারই প্রথম একই টেস্টে সাউথ আফ্রিকার দুজন ব্যাটার সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। বছর পাঁচেক আগে ভারতের বিপক্ষে একই টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন কুইন্টন ডি কক ও ডিন এলগার। এদিকে সেঞ্চুরি পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি স্টাবস। তাইজুলকে রিভার্স সুইপে চার মেরে ডি জর্জির সঙ্গে দুইশ রানের জুটি পূর্ণ করেন তিনি। এশিয়ার মাটিতে দ্বিতীয় উইকেটে সাউথ আফ্রিকার এটি তৃতীয় দুইশ পেরোনো জুটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে অবশ্য প্রথম। আগের দুটিই এসেছিল ভারতের বিপক্ষে, কলকাতায়।
এক বল পরই অবশ্য বাঁহাতি স্পিনারের বলেই ফিরে যেতে হয়েছে সাজঘরে। তাইজুলের মিডল স্টাম্প বরাবর ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন। ১০৬ রানের ইনিংস খেলা স্টাবস ফেরার পর দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী হয়ে উঠেন ডি জর্জি ও ডেভিড বেডিংহাম। শেষ পর্যন্ত ২ উইকেট হারিয়ে প্রথম দিনে ৩০৭ রান তুলেছে সাউথ আফ্রিকা। সফরকারীদের হয়ে ডি জর্জি ১৪১ ও বেডিংহাম অপরাজিত ১৮ রানে। বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেটই পেয়েছেন তাইজুল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে)-
সাউথ আফ্রিকা (প্রথম ইনিংস)- ৩০৭/২ (৮১ ওভার) ( মার্করাম ৩৩, ডি জর্জি ১৪১*, স্টাবস ১০৬, বেডিংহাম ১৮*; তাইজুল ২/১১০)