|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সবুজাভ ঘাস নেই তবে বৃষ্টি, মেঘলা আকাশ আর স্যাঁতস্যাঁতে উইকেটের ষোলকলা সুবিধা নিলেন নিউজিল্যান্ডের পেসাররা। টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি, উইলিয়াম ও’রুর্কিরা ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দিলেন, পেস আগুনে পোড়ালেন। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা ফেরার মিছিলে ভারত গুটিয়ে গেল মাত্র ৪৬ রানে। স্বাগতিকদের এমন ব্যাটিং দেখে কিউইদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি প্রত্যাশার সুযোগ হয়ত ছিল না। তবে ডেভন কনওয়ে, টম লাথামরা ব্যাটিংয়ে নামতেই যেন বদলে গেল উইকেটের চরিত্র। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কুলদীপ যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা মিলে তিন উইকেট নিলেও বাঁহাতি ওপেনার কনওয়ের ব্যাটে ১৮০ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। ভারতের চেয়ে ১৩৪ রানে এগিয়ে থেকে তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নামবেন রাচিন রবীন্দ্র ও ড্যারিল মিচেল।
বেঙ্গালুরুর এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ভারতের ৪৬ রানের জবাব দিতে নেমে ওয়ানডে মেজাজে খেলতে থাকেন কনওয়ে এবং লাথাম। জসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজরা তেমন কোন চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেননি। ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন কনওয়ে। অশ্বিনের বলে লং অনের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ক্যারিয়ারের ১০ম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তিনি। আরেক ওপেনার লাথাম অবশ্য খানিকটা ধীরগতির ছিলেন। কনওয়ের হাফ সেঞ্চুরির পরই সাজঘরে ফিরেছেন লাথাম।
কুলদীপের বলে সুইপ করার চেষ্টায় লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন। অনফিল্ড আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও পরবর্তীতে রিভিউ নিয়ে লাথামকে ফিরিয়েছে ভারত। নিউজিল্যান্ডের স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার ম্যাচে ৪৯ বলে ১৫ রান করেছেন বাঁহাতি ওপেনার। ইনিংসের ২৮তম ওভারে কুলদীপের বলে চার মেরে দলের রান একশ পূরণ করেছেন উইল ইয়াং। তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন জাদেজা। বাঁহাতি স্পিনারের বলে টপ এজ কুলদীপকে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ইয়াং আউট হয়েছেন ৩৩ রানে।
একটু পর ডান পায়ের হাঁটুর ব্যথায় মাঠ ছেড়েছেন পান্ত। তাঁর বদলি হিসেবে উইকেটকিপিং করেন ধ্রুব জুরেল। দারুণ ব্যাটিং করলেও সেঞ্চুরির আগে ফিরছেন কনওয়ে। অশ্বিনের দারুণ এক ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ৯১ রানে বোল্ড হয়েছেন। শেষ বিকেলে আর কোন উইকেট হারাতে দেননি রাচিন ও মিচেল। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ১৮০ রান তুলেছে। ভারতের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন জাদেজা, কুলদীপ ও অশ্বিন।
বৃষ্টির কারণে মাঠে গড়ায়নি প্রথম দিনের খেলা। দ্বিতীয় দিনের সকালেও আকাশ খানিকটা মেঘলা ছিল। তবুও টস জিতে রোহিতের মতো ব্যাটিং নিতে চেয়েছিলেন টম লাথাম। ব্যাটিং করতে নেমে যশস্বী জয়সাওয়াল ও রোহিতের বিপক্ষে দারুণ সুইং এবং সিম মুভমেন্ট পেয়েছেন সাউদি-হেনরিরা। কিউই পেসারদের বিপক্ষে সুবিধা করতে না পেরে ইনিংসের সপ্তম ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন ভারতের অধিনায়ক। সাউদির অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়েছেন।
২ রান করা রোহিতকে সব সংস্করণ মিলে ১৩ বার আউট করলেন সাউদি। তিনে নেমে দ্রুতই ফিরেছেন কোহলি। ও’রুর্কির শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে সামনের পায়ে ভর করে খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে বাড়তি বাউন্স পাওয়া ডেলিভারিটি কোহলির গ্লাভসের উপরে লেগে চলে যায় লেগ স্লিপে থাকা গ্লেন ফিলিপসের হাতে। ভারতের সাবেক অধিনায়ককে ফিরতে হয়েছে রানের খাতা খোলার আগেই। টেস্ট ক্যারিয়ারে এটি কোহলির ১৫তম শূন্য।
পরের ওভারে ফিরেছেন সরফরাজ খানও। হেনরির বলে বটম এজ হয়ে এক্সট্রা কভারে থাকা কনওয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। ২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম ১০ রানের নিচে ৩ উইকেট হারিয়েছে ভারত। সবশেষ ২০১৮ সালের ওভাল টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২ রানে ৩ উইকেট হারিয়েছিল তারা। বৃষ্টি শেষে আবারও যখন খেলা শুরু হয় তখন প্রথম বলেই চার মেরে শুরু করেছিলেন পান্ত। তবে জয়সাওয়ালের সঙ্গে জুটি বড় হতে দেননি ও’রুর্কি। দারুণ এক ডেলিভারিতে ৬৩ বলে ১৩ রান করা জয়সাওয়ালকে নিজের শিকার বানিয়েছেন কিউই পেসার।
টিকতে পারেননি লোকেশ রাহুল। রানের খাতা খোলার আগেই ও’রুর্কির শর্ট অব লেংথের ডাউন দ্য লেগের ডেলিভারিতে টম ব্লান্ডেলকে ক্যাচ দিয়েছেন। কিউই পেসারদের খেলতে না পেরে বিদায় নিয়েছেন জাদেজা, অশ্বিনরা। ২০ রান করা পান্ত ফেরেন ৪৯ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে। কুলদীপ ও বুমরাহ দ্রুতই ফিরলে মাত্র ৪৬ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ঘরের মাঠে এবারই প্রথম পঞ্চাশের নিচে অল আউট হলো স্বাগতিকরা। ভারতকে এমন দিন দেখাতে বড় ভূমিকা রাখা হেনরি ৫টি, ও’রুর্কি চারটি এবং সাউদি নিয়েছেন একটি উইকেট।