বাংলাদেশ ক্রিকেট

টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিলেন সাকিব, ছাড়ছেন টেস্টও

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 14:05 বৃহস্পতিবার, 26 সেপ্টেম্বর, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সাধারণত অধিনায়কের আসার কথা। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রধান কোচকেও দেখা যায়। তবে ভারতের বিপক্ষে কানপুর টেস্টের আগেরদিন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কেউই এলেন না। একদিন আগেই যেহেতু বাংলাদেশের প্রধান কোচ সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন তাই তিনি আসবেন না এটা অনুমেয়ই ছিল। তবে মিডিয়া ম্যানেজার রাবীদ ইমাম যাকে সাথে করে নিয়ে এলেন তাতে চোখ কপালে ওঠার মতো ব্যাপার।

হাস্যোজ্জ্বল মুখে হাঁটতে হাঁটতে গ্রিনপার্কের মিডিয়া কনফারেন্স রুমে এলেন সাকিব আল হাসান। হুট করে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক কেন এমন সময়ে সংবাদ সম্মেলনে এলেন সেটা বুঝতে খানিকটা সময় লাগল সবার। কয়েকটা প্রশ্নের পর সাকিব নিজেই জানালেন টেস্ট থেকে অবসরের কথা। লম্বা সময় ধরে ছন্দে না থাকা তারকা অলরাউন্ডার নিশ্চিত করলেন দেশের মাটিতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টের জার্সি তুলে রাখবেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো এভেলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে আমার কি পরিকল্পনা। এই সিরিজ আর হোম সিরিজটা আমি ফিল করেছিলাম আমার শেষ সিরিজ হবে, টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘এভাবেই ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে যাই, খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তাঁরা চেষ্টা করছেন কিভাবে সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়।’

কানপুর টেস্টও সাদা পোশাকের ক্রিকেটের শেষ ম্যাচ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে প্রবল। বাংলাদেশের সবশেষ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের বাইরে থাকলেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়কার হত্যার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদিকে কদিন আগে শেয়ারবাজারের লেনদেন ইস্যুতে ৫০ লাখ টাকা জরিমানার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে। 

এমন অবস্থায় বেশিরভাগের ধারণা, বাংলাদেশে ফেরাটা সাকিবের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়। যার ফলে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে পারবেন কিনা সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। যদিও দিন কয়েক আগে শাহরিয়ার নাফীস নিশ্চিত করেছিলেন সাকিবের খেলা নিয়ে তেমন কোন সংশয় দেখছেন না। তবে প্রোটিয়া সিরিজ খেলতে বিসিবির নিরাপত্তা চেয়েছেন সাকিব। 

বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক জানিয়েছেন, দেশে ফিরে নিরাপদ অনুভব করলে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে চান। সাকিব বলেন, ‘আমি যেন গিয়ে খেলতে পারি এবং নিরাপদ অনুভব করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোন সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাঁরা দেখছেন। তাঁরা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবে, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।’

টেস্টের জার্সি তুলে রাখার জন্য সাকিবের হাতে কিছুটা সময় থাকলেও টি-টোয়েন্টির জার্সিটা তুলে রেখেছেন আরও আগেই। আনুষ্ঠানিকভাবে আগে থেকে না জানা গেলেও বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক নিশ্চিত করেছেন সবশেষ বিশ্বকাপেই ২০ ওভারের ক্রিকেটের ইতি টেনেছেন তিনি। নতুনদের সুযোগ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারকা অলরাউন্ডার।

সাকিব বলেন, ‘এটাই সেরা সময় যে টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি মুভ অন করি। আমি বাইরের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলি ৬ মাস বা ১ বছর। এর মধ্যে নতুন প্লেয়াররা সুযোগ পাক, নতুন প্লেয়াররা আসুক। এরপর যদি বোর্ড মনে করে আমার টি-টোয়েন্টিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে তাহলে আমরা বসে আলোচনা করতে পারি। আমি নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না।’

২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে ভারতের বিপক্ষে টেস্টে অভিষেক হয় সাকিবের। দেড় দশকের ক্যারিয়ারে ৭০ টেস্ট খেলেছেন তিনি। যেখানে ৩৮.৩৩ গড়ে ৪ হাজার ৬০০ রান করেছেন ৫ সেঞ্চুরি ও ৩১ হাফ সেঞ্চুরিতে। বল হাতে সাকিব শিকার করেছেন ২৪২ উইকেট। ইনিংসে ১৯বার ৫ উইকেট এবং ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন দুবার। 

টি-টোয়েন্টিতে সাকিবের অভিষেক হয়েছিল ২০০৬ সালের নভেম্বর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, খুলনায়। ২০ ওভারের ক্রিকেটের ইতি টানার আগে খেলেছেন ১২৯ ম্যাচ। যেখানে ব্যাট হাতে ২ হাজার ৫৫১ রান করেছেন। কোন সেঞ্চুরি না থাকা সাকিবের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস আছে ১৩টি। বল হাতে ১৪৯ উইকেট মালিক সাকিব।