টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশের ২৮ রানের হার

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
প্রকাশের তারিখ: 06:09 শুক্রবার, 21 জুন, 2024

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

প্যাট কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পা মিলে বাংলাদেশকে ১৪০ রানে আটকে দিয়ে আগেই অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পথ তৈরি করে রেখেছিলেন। বাকি কাজটা সারতে হতো কেবল ব্যাটারদের। সেটা খুব ভালোভাবেই করেছেন দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং ট্রাভিস হেড। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে শুরু থেকেই দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলেন তারা দুজন। হেড ফিরে গেলেও ঠিকই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ওয়ার্নার।

আহামরী বৃষ্টি না হওয়ায় খেলা বন্ধ হওয়ার পরও কয়েক মিনিটের মাঝে চালু করা গেছে। তবে ১১.২ ওভারের সময় শুরু হওয়া বৃষ্টি না থামায় আর ব্যাটিংয়ে নামতে পারেননি ওয়ার্নার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। বৃষ্টি আইনে ২ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে করতে হতো ৭২ রান। অথচ সেই সময় বাঁহাতি ওপেনারের হাফ সেঞ্চুরিতে ১০০ রান করে ফেলে তারা। ফলে রানের হিসেবে এগিয়ে থাকায় বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে ২৮ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

বেশিরভাগ ম্যাচে তানজিম হাসান সাকিব বোলিংয়ের শুরুটা করলেও দুই বাঁহাতি ওপেনার থাকায় নাজমুল হোসেন শান্ত বল তুলে দেন শেখ মেহেদীর হাতে। নিজের প্রথম ওভারে ৫ রান দেন ডানহাতি এই অফ স্পিনারের। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে ডেভিড ওয়ার্নারকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিলেন তানজিম সাকিব। তরুণ এই পেসারের বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ওয়ার্নার। বল ক্যারি করলেও ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়।

জীবন পেয়ে বাংলাদেশের বোলারদের বিপক্ষে চড়াও হন ওয়ার্নার। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দেয়ার সঙ্গে দ্রুত রান তুলেছেন আরেক ওপেনার ট্রাভিস হেডও। পাওয়ার-প্লেতে কোন উইকেট তুলে নিতে না পারায় ৫৯ রান তুলে অস্ট্রেলিয়া। পাওয়ার-প্লে শেষ হওয়ার পরই হানা দেয় বৃষ্টি। বেরসিক বৃষ্টি শেষে খেলা শুরু হতেই হেডের উইকেট তুলে নেন রিশাদ হোসেন। ডানহাতি এই লেগ স্পিনারের ভেতরে ঢোকা স্লোয়ার ডেলিভারিতে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন ৩১ রান করা হেড।

তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি মিচেল মার্শ। নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিং এসে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ককেও ফিরিয়েছেন রিশাদ। তরুণ এই লেগ স্পিনারের ফুল ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন মার্শ। রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। ফিরতে হয়েছে মাত্র ১ রানে। তবে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা ওয়ার্নার হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদের বলে ছক্কা মেরে। পঞ্চাশ ছুঁতে ৩৪ বল খেলতে হয়েছে তাকে। এরপর বৃষ্টির কারণে খেলা শেষ হয় এবং অস্ট্রেলিয়া বৃষ্টি আইনে ম্যাচ জিতে নেয়।

এর আগে টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এই ম্যাচে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। জাকের আলীর পরিবর্তে এই ম্যাচে খেলছেন অলরাউন্ডার শেখ মেহেদী। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় বলেই মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন তানজিদ হাসান তামিম। এই পেসারের ফুল লেংথ বলে দ্বিধান্বিত হয়ে খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন এই ওপেনার।

এরপর তিনে নেমে শান্ত নিজের খেলা তৃতীয় বলেই ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট নিয়ে চার মেরে রানের খাতা খোলেন। এরপর জশ হ্যাজেলউডের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে একটি ছক্কাও হাঁকান বাংলাদেশ অধিনায়ক। যদি শুরুতে উইকেট হারানোর পর লিটন দাসও বেশ রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। ১০তম বলে রানের হাতা খোলেন তিনি। তবে হাত খুলতেও বেশি সময় নেননি তিনি। শান্ত ও লিটনের ব্যাটে ভর করে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান নিয়েছে বাংলাদেশ।

অ্যাডাম জ্যাম্পা নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসেই লিটন দাসকে বোল্ড করে আউট হয়েছেন। ২৫ বলে ১৬ রান করা এই ব্যাটার স্লগ সুইপ খেলার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ড্রিফট করে ভেতরে ঢোকা বলে পায়ে লেগে ভেঙে যায় স্টাম্প। ফলে ফিরে যান বাংলাদেশের এই ওপেনার। বাংলাদেশ চার নম্বরে রিশাদ হোসেনকে নামিয়ে চমক দেখিয়েছিল। যদিও এই ব্যাটারকে বেশিক্ষণ থিতু হতে দেননি গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েল। এই অফ স্পিনারের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে জোরের ওপর খেলতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দিয়েছেন জ্যাম্পার হাতে।

পরবর্তীতে জুটি গড়তে পারেননি শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। জাম্পার ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন শান্ত। সাবধানী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে থাকা বাঁহাতি এই ব্যাটার খেলেছেন ৩৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস। মার্কাস স্টইনিস থিতু হতে দেননি সাকিব আল হাসানকে। স্টইনিসের কাটারে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে টপ এজ হয়ে বোলারকেই ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৮ রান করে ফেরেন সাকিব।

অবশ্য এরপর টানা দুই বলে স্টইনিসকে ছক্কা হাঁকান তাওহীদ হৃদয়। প্রথম ছক্কাটি ছিল মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। আর পরেরটি ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে, সেটি ছিল আরও বড় ছক্কা। প্যাট কামিন্স বোল্ড করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। মাত্র ২ রান করা এই ব্যাটার কামিন্সের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন বাংলাদেশের এই ব্যাটার। পরের বলে কামিন্সকে কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যান অঞ্চলে ক্যাচ দিয়েছেন শেখ মেহেদী। সেখানে সহজ ক্যাচ তুলবন্দি করেছেন অ্যাডাম জ্যাম্পা।

আগের ওভারের শেষ দুই বলে মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদীকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন কামিন্স। শেষ ওভারে এসে প্রথম বলেই কামিন্সের বলে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন হৃদয়। তবে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। তিনি ধরা পড়েছেন শর্ট ফাইন লেগে জশ হ্যাজেলউডের হাতে। কামিন্স অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক করলেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর-

বাংলাদেশ- ১৪০/৮ (২০ ওভার) (তানজিদ ০, লিটন ১৬, শান্ত ৪১, হৃদয় ২৪, তাসকিন ১৩*; জ্যাম্পা ২/২৪, কামিন্স ২৯/৩)

অস্ট্রেলিয়া-  ১০০/২ (১১.২ ওভার) (ওয়ার্নার ৫৩*, হেড ৩১, ম্যাক্সওয়েল ১৩*)