|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ছয়শ রান সংগ্রহ করার আগেই ইনিংস ঘোষণা দিলো সাউথ আফ্রিকা। তিন ব্যাটারের সেঞ্চুরিতে ছয় উইকেটে ৫৭৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা। ২০১০ সালের পর এশিয়ার মাটিতে টেস্টে এটাই তাদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এ ছাড়া এই ইনিংসে ১৭টি ছক্কা হাঁকায় প্রোটিয়ারা, যা এক ইনিংসে তাদের সর্বোচ্চ সংখ্যক ছক্কা। টনি ডি জর্জি, ট্রিস্টান স্টাবসের পর দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি তুলে নেন উইয়ান মুল্ডারও। এ ছাড়াও হাফ সেঞ্চুরি আসে ডেভিড বেডিংহাম এবং সেনুরান মথুসামির ব্যাটে। টাইগার বোলারদের মধ্যে তাইজুল ইসলাম পাঁচ উইকেট নিলেও বাকিরা ছিলেন একেবারেই সাদামাটা। শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখা গেল সেই পুরোনো চিত্র। ৩৮ রান তুলতেই চার উইকেট হারায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
এদিকে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেই পাঁচ রান 'উপহার' পায় বাংলাদেশ। সাউথ আফ্রিকার ইনিংস চলাকালে কয়েকবার ক্রিজের মাঝ দিয়ে দৌড়ে সতর্কতা পাওয়ার পর শাস্তি পান মথুসামি। ১৪৪তম ওভারে মুথুসামি পিচের মাঝ দিয়ে দৌড়ানোয় কারণে ৫ রান পেনাল্টি করা হয় সাউথ আফ্রিকাকে, যার কারণে পেনাল্টি থেকে ৫ রান পেয়ে ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ।
প্রথম ওভারেই সাফল্য পান রাবাদা। পঞ্চম বলে লেগ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন সাদমান ইসলাম। শুরুতে আম্পায়ার তাকে আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরায় সাউথ আফ্রিকা।
পঞ্চম ওভারে ফিরে যান জাকির হাসান। রাবাদার অফ সাইডের বাইরের একটি বল লুজ শট খেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আট বলে দুই রান করা জাকির। যাওয়ার আগে একটি রিভিউ নষ্ট করেন তিনি।
ষষ্ঠ ওভারের মধ্যে ফিরে যান মাহমুদুল হাসান জয়ও। ডেন প্যাটারসনের অফসাইডের বাইরে করা বলে খোঁচা মেরে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। ২১ বলে ১০ রান আসে তার ব্যাটে। ২৯ রানে তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
উইকেট বিপর্যয় দেখে 'নাইটওয়াচম্যান' হিসেবে নামেন হাসান মাহমুদ। কিন্তু সাত বলে তিন রান করা হাসানকেও ফেরায় প্রোটিয়ারা। তাকে বোল্ড করেন কেশভ মহারাজ। মুমিনুল ইসলাম ছয় এবং নাজমুল হোসেন শান্ত চার রানে অপরাজিত থেকে দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ।
এর আগে দুই উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করে সাউথ আফ্রিকা। এ দিনও শুরু থেকে বাংলাদেশি বোলারদের চাপের মধ্যে রাখেন তারা। সকাল থেকে নাহিদ রানা, তাইজুল ইসলামরা চেষ্টা করে গেলেও উল্লেখ করার মতো কিছুই করতে পারেননি।
দিনের শুরুর ভাগেই দেড়শ স্পর্শ করেন টনি ডি জর্জি। ২৩৫ বলে এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। এর একটু পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ডেভিড বেডিংহামও। ৭০ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরি পর্যন্ত দুটি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকান তিনি। ১৪২তম বলে শতরানের জুটিতে পৌঁছায় এই দুজন।
এরপর অবশ্য বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেনি এই জুটি। ৯৯তম ওভারের প্রথম বলে তাইজুলকে বিশাল এক ছক্কা হাঁকান বেডিংহাম। পরের বলেই তাকে বোল্ড করেন তাইজুল। সামনের পা সরিয়ে মিড উইকেট দিয়ে তাইজুলকে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান বেডিংহাম। ৭৮ বলে ৫৯ রানে তিনি ফিরে গেলে ১১৬ রানের এই জুটি ভাঙে।
এর একটু পর ফিরে যান ডাবল সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাওয়া ডি জর্জিও। তাইজুলের মিডল স্টাম্পে তাক করা বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন এই ওপেনার। বলটি তার প্যাডে লাগলে বিদায় নিতে হয় ইনিংসজুড়ে অসাধারণ সব সুইপ খেলা ডি জর্জিকে। ফেরার আগে অবশ্য রিভিউ নেন বাঁহাতি এই ব্যাটার, কিন্তু লাভ হয়নি।
২৬৯ বলে ১৭৭ রানে ফিরে যান ডি জর্জি। ইনিংসে ছিল ১২টি ছক্কা এবং চারটি ছক্কার মার। বেডিংহাম ও টনি ডি জর্জিকে ফেরানোর পর কাইল ভেরাইনিকেও দ্রুত থামান তাইজুল। একইসঙ্গে ১৪ বারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন তিনি।
আগের টেস্টে অসাধারণ সেঞ্চুরি হাঁকানো ভেরাইনি এবার ফিরে যান রানের খাতা খোলার আগেই। ডি জর্জির মতো এই উইকেটরক্ষক ব্যাটারও আউট হন সুইপের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে। তিনিও রিভিউ নেন। ভিডিওতে দেখা যায় বল লেগেছিল মিডল স্টাম্পে। পাঁচ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারায় দলটি।
রায়ান রিকেলটন ও উইয়ান মুল্ডারের ব্যাটে চারশ পার করে দলটি। প্রথম সেশনে ২৯ ওভারে ১০৬ রান নিয়েছে সফরকারীরা। তিনটি উইকেট নেন তাইজুল। মধ্যাহ্নভোজ বিরতির পর প্রোটিয়া শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন নাহিদ রানা। রায়ান রিকেলটনকে উইকেটে স্থায়ী হতে দেননি তিনি। ৪১ বলে ১২ রান করা এই ব্যাটার নাহিদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান। ৪২৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা।
এরপরও অবশ্য দমানো যায়নি প্রোটিয়াদের। সেনুরান মথুসামি উইকেটে এসে মুল্ডারের সাথে ইতিবাচক ভঙ্গিমায় ব্যাট চালাতে থাকেন। এই দুজনের জুটি বেশ দ্রুতই পঞ্চাশ পেরিয়ে যায়। এরমধ্যে ৮৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মুল্ডার। ক্যারিয়ারে এটি তার দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি।
প্রথম সেশনে লড়াই করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে কিছুই করতে পারেনি। ২৫ ওভারে কেবল এক উইকেট হারিয়ে ১১৪ রান যোগ করে সাউথ আফ্রিকা। দ্বিতীয় দিন চা-বিরতিতে যাওয়ার সময় দলটির রান ছিল ছয় উইকেটে ৫২৭।
চা বিরতি পার করে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মথুসামি। বাঁহাতি এই অর্থোডক্সের ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি এটি। ৬২ বলে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানোর পথে তিনটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান তিনি। রান বাড়াতে বাড়াতে সেঞ্চুরি তুলে নেন মুল্ডারও। তাইজুলকে ছক্কা মেরে মুল্ডার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পরই ইনিংস ঘোষণা করে সাউথ আফ্রিকা।
১৫০ বলে আটটি চার ও চারটি ছক্কায় ১০৫ রান করেন মুল্ডার। মথুসামি অপরাজিত থাকেন ৭৫ বলে পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কায় ৭০ রান করে। সাউথ আফ্রিকার সংগ্রহ ছয় উইকেটে ৫৭৭।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
সাউথ আফ্রিকা (প্রথম ইনিংস)- ৫৭৫/৬ (১৪৪.২ ওভার) (ইনিংস ঘোষণা) (ডি জর্জি ১৭৭, স্টাবস ১০৬, মুল্ডার ১০৫*, মথুসামি ৭০*, বেডিংহাম ৫৯);
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৩৮/৪ (৯ ওভার) (মুমিনুল ৬*, শান্ত ৪*)।