|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
দাপুটে পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বধ। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি জয়ের পর দেশের পত্রিকা কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর লিড নিউজগুলো ছেয়ে গেছে এমন শিরোনামে। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে দেখা মিলেছে নতুন এক বাংলাদেশের। যে দলটার বোলিং, ফিল্ডিং কিংবা ব্যাটিংয়ে দাপট দেখানোর মানসিকতায় খুশি দেশের ক্রিকেট সমর্থক থেকে শুরু করে বোর্ড কর্তারা।
‘নতুন’ বাংলাদেশে মনের মাঝে আশা সঞ্চার হয়েছে খালেদ মাহমুদ সুজনেরও। ইংলিশদের বিপক্ষে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়, সাকিব আল হাসান, লিটন দাসদের আইপিএল খেলা, সাকিব-চান্দিকা হাথুুরুসিংহের জুটি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বিশ্রামসহ মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেন ধ্রুবদের অফ ফর্ম নিয়ে ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে কথা বলেছেন সুজন।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: টি-টোয়েন্টিতে বর্তমানে ইংল্যান্ড বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দল। তাদের বিপক্ষে আমরা সিরিজ জিতলাম। সিরিজ জয়টা কীভাবে দেখছেন?
সুজন: এক কথায় দারুণ। যদিও আমরা এখনও এই সংস্করণে প্রতিষ্ঠিত দল না। আমার মতে, ওয়ানডেতে আমরা যতটা ভালো ক্রিকেট খেলি তার থেকে টি-টোয়েন্টি ও টেস্টে পিছিয়ে আছি। ওইখান থেকে চ্যাম্পিয়ন একটা দলের সঙ্গে জেতা অবশ্যই একটা বড় ব্যাপার। দলটা নতুন, বেশ কিছু নতুন ছেলে খেলছে।
প্রথম ম্যাচটা আমরা যেভাবে খেলেছি সত্যি কথা বলতে গেলে আমি খুবই খুশি, বিশেষ করে চট্টগ্রামে। অনেকদিন ধরে আমি বাংলাদেশের এমন খেলাটাই দেখতে চেয়েছিলাম। ফেয়ারলেস ক্রিকেট খেলবে, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলবে এবং শরীরীভাষা এমন থাকবে, রানিং বিটুইন দ্য উইকেট, ফিল্ডিং যেমন দেখেছি তাতে আমি খুবই খুশি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আমরা হয়ত ওয়ানডে সিরিজ জেতার আশা করেছিলাম। কিন্তু জিতলাম টি-টোয়েন্টি। যেভাবে সাকিবরা ক্রিকেট খেলেছে সেটা বিশ্বকে নতুন বার্তা দেয় কিনা..
সুজন: এটা বলা অনেকটা দ্রুত হয়ে যাবে। এটা এমন একটা ফরম্যাট আপনি হারবেন, আপনি জিতবেন। কিন্তু যদি ধারাবাহিকতা থাকে, এমন শরীরীভাষা থাকে, ফেয়ারলেস ক্রিকেট ছেলেরা যেটা খেলেছে। আমার মনে হয় যে আমাদের জয়ের হারটা আস্তে আস্তে বাড়বে। একটা সময় গিয়ে হয়ত আপনি সব বড় দলকেই থ্রেট করবেন। যেটা আমরা ওয়ানডেতে করি। এটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার, সময়ের ব্যাপার। হঠাৎ করে বেশি কিছু প্রত্যাশা করাও ঠিক হবে না সবার জন্য। ভালো খেলছে, অবশ্যই আমরা চাই এরকম খেলুক। এই ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট বাংলাদেশ খেলুক এবং সেটা যেন কন্টিনিউ করে।
এমন হলে হবে না একটা সিরিজ ভালো খেললাম আবার খারাপ খেললাম সেটা করলে হবে না। আমাদের আসলে ধৈর্য ধরতে হবে। বাংলাদেশ হয়ত আয়ারল্যান্ডের কাছেও ম্যাচ হারতে পারে, ইংল্যান্ডের সঙ্গে পরবর্তী ম্যাচেও আমরা হারতে পারি। এটা যেন আমরা নেতিবাচক অর্থে না নিই। একটা দল বিল্ডআপ হতে সময় লাগে। হাথুরুসিংহে আবারও নতুন করে এসেছে, সুতরাং ওরও একটা বিল্ডআপ প্রসেস আছে। হয়ত দেখবে কারা আমাদের এই ফরম্যাটে ভালো খেলে, কারা পারছে না। ওইভাবে আমরা চিন্তা করবো।
আর যে দলের অধিনায়ক সাকিব সেখানে আমি মনে করি যে সেই ইতিবাচক ব্যাপারটা থাকবেই। সাকিব নিজেই আক্রমণাত্মক একজন ক্রিকেটার। ও চায় দলটা এভাবেই খেলুক। ওর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে আমার একটা জিনিস ভালো জানা আছে যে ও কোনো সময় হারতে চায় না বা আগেই হেরে যায় না। সে সবসময় লড়াই করতে চায়। আমি মনে করি সে যদি এই দলটাকে সেভাবে তৈরি করতে পারে তাহলে দারুণ ব্যাপার হবে। সাকিবের যে মানসিকতা সেটা যদি দলের সবার মাঝে ছড়িয়ে যায় তাহলে দলটা (টি-টোয়েন্টি) অপ্রতিরোধ্য হবে।
আমি চাই যে আমরা ধৈর্য ধরি। আস্তে আস্তে এগোলে বেশি স্টেবল হবে। হয়ত আয়ারল্যান্ড সিরিজ জিতলাম, প্রত্যাশা বেড়ে গেল মানুষের। তারপর হঠাৎ করে আমরা একটা সিরিজ খারাপ খেললাম যেটা বাংলাদেশে হয় জিতলে আমরা মাথা তুলে নাচি আবার খারাপ খেললে লাথিও দিতে সময় লাগে না। শান্তর কথাই যদি আমি বলি যেভাবে ট্রল হয়েছে। সত্যি কথা কি সেটা খুব দুঃখজনক। কারণ শান্ত যে ভালো ক্রিকেটার সেটা আমরা সবাই জানি। শান্তকে জাতীয় দলে কেন নেয়, কেন ওকে সবাই পছন্দ করে এসব প্রশ্ন উঠে। কিন্তু ওর মাঝে সেই কোয়ালিটি আছে। সে ভালো একজন ক্রিকেটার। ওর ফিল্ডিং, শরীরীভাষা দারুণ।
সুতরাং এরকম যাতে না হয় একটা ছেলে খারাপ খেলল বা বাংলাদেশ দল হিসেবে খারাপ খেলল, তারপর আবার ট্রল করবো। এটা ওদের উপর প্রভাব ফেলে না কিন্তু ওদের পরিবারের উপর প্রভাব পড়ে। তখন এটা ওদের মাঝেও প্রভাব ফেলতে শুরু করে। কারণ যখন পরিবারের সবার মন খারাপ থাকে তখন এটা ওদের মাঝেও থাকে। হয়ত কেউ পড়ে না ওদের নিয়ে কি লেখা হচ্ছে। বন্ধু-বান্ধব হয়ত বলে তোর নামে এই লিখল, ওই লিখল। যেটা হয়তবা ওদের মাঝে প্রভাব ফেলে। আমি অনুরোধ করবো যাতে তাড়াতাড়িতে খুশি না হই, তাড়াতাড়িতে আবার রাগও না হই। আমরা যদি ধৈর্য ধরতে পারি আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা আছে।
ভালো করার, উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে আমাদের। সব সংস্করণেই আমাদের উন্নতির জায়গা আছে। সেটা ওয়ানডে সংস্করণেও। আমরা আস্তে আস্তে যদি সেই গ্রাফটা উপরে নিয়ে যেতে পারি তাহলে আমি বলবো যে আমরা ভালো দল হচ্ছি। গ্রাফটা যদি উপরে-নিচে হয় তাহলে সেটা কখনও ধারাবাহিক হবে না। ধারাবাহিক হতে হলে আপনাকে গ্রাফটা উপরে নিতে হবে। সেটা আস্তে আস্তে হোক কিন্তু স্থির থাকুক, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এটা।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আপনি শান্তকে নিয়ে ট্রলের কথা বলছিলেন, একটা সময় ট্রল হতো কিন্তু এখন তাকে স্টেডিয়ামে বাহবা দেয়া হয়। বিপিএল থেকে আমরা অন্যরকম একটা শান্তকে দেখতে পাচ্ছি। আবাহনীতে খেলার সুবাদে কোচ হিসেবে অনেকটা কাছ থেকে দেখেছেন। কোচ হিসেবে শান্তর এমন পরিবর্তন দেখে কেমন অনুভব হচ্ছে?
সুজন: আমি খুব খুশি (শান্তর পরিবর্তনে)। দেরিতে হলেও ছেলেটাকে মানুষ উৎসাহ দিচ্ছে এটা বড় ব্যাপার। বলতে গেলে শান্তর সঙ্গে আমার প্রতিদিনই কথা হয়। ম্যাচের আগে পড়ে সবসময়ই কথা হয়। যখনই ভালো করে, খারাপ করে সবসময়ই কথা হয়। আমি ওকে একটা জিনিসই সাহস দিয়েছি এটা কিন্তু বেশিদিন থাকবে না। এটার (ট্রল) জবাব দেয়ার একটাই উপায় তোর ব্যাট। কে কি বলছে এগুলো কোনো ব্যাপার না।
এটা তোর পেশা, তোর ক্যারিয়ার, এটা অন্য কারও না। তুই ভালো করলেই তোর ক্যারিয়ার ঠিক থাকবে। আমি মনে করি সে প্রচুর পরিশ্রম করেছে। আসলে ওই ওর পরিশ্রমের ফল পাচ্ছে। আমি মনে করি শান্ত লম্বা রেসের ঘোড়া। ও বাংলাদেশকে লম্বা সময় বাংলাদেশকে সার্ভিস দেবে এটা আমি বিশ্বাস করি। ওর সঙ্গে অনেকদিন কাজ করায় যেটা বুঝেছি ও ছেড়ে দেয়ার পাত্র না। ও প্রচুর পরিশ্রম করে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সাকিব আল হাসান এবং রনি তালুদকারকে বাদ দিলে এই দলটা তরুণই বলা যায়। দলটাকে কেমন দেখলেন বা দেখছেন...
সুজন: আমাদের আসলে ফ্রেশ ব্লাড লাগবেই। আপনি পরিবর্তনগুলো দেখেন আমাদের রানিং বিটুইন দ্য উইকেট বা ফিল্ডিং, শরীরাভাষায়। আফিফ, হৃদয়, শান্ত, মিরাজ যারাই আছে তারা সবাই বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডার। রনিকে আমরা যদিও বলি বয়স ৩০ এর উপরে কিন্তু সে খুব ফিট। সেও ফিল্ডিংয়ে খুব ভালো। আপনি প্রত্যেকটা বোলারকে দেখুন সবাই খুব উন্নতি করেছে। মুস্তাফিজ আগে এত ভালো ফিল্ডার ছিল নাম, যেটা তাসকিনও ছিল না। তাসকিন কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ও বিপিএলে বেশ কিছু দারুণ ক্যাচ ধরেছে। সবাই উন্নতি করছে, এটা আমাদের জন্য ভালো ব্যাপার।
পেস বোলার হিসেবে যারা খেলেছে হাসান, মুস্তাফিজ, তাসকিন, ইবাদত সবাই ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করেছে। এটা একটা ভালো দিক যে আমরা ভালো ফিল্ডিং সাইড হিসেবে গড়ে উঠছি। আপনি কিন্তু সাকিবরে ফেলে দিতে পারবেন না যে ওর বয়স হয়ে গেছে ভালো ফিল্ডার না। সাকিবও ভালো ফিল্ডার। এই ফরম্যাটে অভিজ্ঞতার দিক থেকে ওর কাছে আমরা কেউ নেই। আমাদের যোগ্য লোকই অধিনায়কত্ব করছে টি-টোয়েন্টিতে। যার গেম রিডিং ভালো, যার চিন্তা-চেতনা, অ্যাটিচিউড খুবই আক্রমণাত্মক। এই দলটাকে নিয়ে আমি খুবই খুশি। শুধুমাত্র সময় দিতে হবে, যেটা আমি শুরুতে বললাম।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে নির্বাচকরা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বিশ্রাম দিয়েছেন। বাংলাদেশে আসলে অনেক সময় বিশ্রামের কথা বলে একজন ক্রিকেটারকে বাদ দেয়া হয়। মাহমুদউল্লাহর বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনার মতামত যদি জানতে চাই...
সুজন: অবশ্যই এটা নিয়ে কথা হয়েছে। আমি আসলে এই আলোচনার অংশ না। কি কথা হয়েছে আমি বলতে পারবো না। হাবিবুল বাশার যদি বলে থাকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে তাহলে অবশ্যই বিশ্রাম। রিয়াদ আমাদের স্কোয়াডে গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা পালন করে। কিন্তু এটা টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করবে কী প্রয়োজন দলে, ওকে বিশ্রামটা কেন দেয়া হয়েছে, কী জন্য দেয়া হয়েছে। সামনে অনেক খেলা আছে, খেলোয়াড়দের বয়সেরও একটা ব্যাপার আছে। সাকিব, মুশি (মুশফিকুর রহিম), রিয়াদ, তামিম এরা কিন্তু সিনিয়র হয়ে যাচ্ছে।
এদেরকে একটু ব্রেক দিয়ে খেলানা, ফিটনেসটা ধরে রাখা বা সময় মতো এদের পারফরম্যান্সটা বের করে আনা। এটাও আমাদের দরকার আছে। আমরা হয়ত এরকমও দেখবো সবাইকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। হয়ত টিম ম্যানেজমেন্ট রিয়াদের বিশ্রাম মনে করেছে অথবা ছোট খাটো চোটও থাকতে পারে। আমি এটা বলতে পারবো না। রিয়াদের সঙ্গে কথা বলেই টিম ম্যানেজমেন্ট বিবেচনা করেছে। আমার মনে হয় যেটা টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ, অধিনায়ক চিন্তা করেছে সেটা অবশ্যই ভালো।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: সামনেই বিশ্বকাপ আছে। আমরা এই বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখছি। তার আগে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ কিংবা আফিফ হোসেনের অফ ফর্ম চিন্তার কারণ কিনা...
সুজন: দেখুন, আমি একটা কথা বলি ক্লাস ইজ পারমানেন্ট, ফর্ম ইজ টেম্পোরারি। আমি রিয়াদ, মুশফিকের কথা বলব ওরা ক্লাস প্লেয়ার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অনেক সার্ভিস দিয়েছে। একটা মানুষের খারাপ সময় যেতেই পারে। কিন্তু আফিফকে নিয়ে আমি বলবো সে এখনও অনেক তরুণ। সে চার্মিং প্লেয়ার, ম্যাচ উইনার। আমি যদি এক বছর আগের কথাই বলি আফগানিস্তানেরে বিপক্ষে যে ম্যাচটা আফিফ আর মিরাজ জেতালো। সেই ম্যাচটা কিন্তু বাংলাদেশ হেরে যাচ্ছিলো। ওই রকম কোয়ালিটি আফিফের মধ্যে আছে। খারাপ সময় যাবেই কিন্তু আমি মনে করি তারা কোয়ালিটি প্লেয়ার। আমি খুব একটা চিন্তিত না।
ভালো খেলবে, খেলবে না, ফর্ম থাকবে, থাকবে না। কিন্তু আমাদের ভালোভাবে নার্সিং করতে হবে, গাইড করতে হবে, সেই আত্মবিশ্বাসটা দিতে হবে। যেহেতু আফিফ ইয়াংস্টার তাই ওর জন্য সময় পড়ে আছে। আর মুশি কদিন আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রান করেছে, ফর্মে কিছুটা হয়ত ফিরেছে। খারাপ সময় যায়, এটা আপনাকে মানতেই হবে। আমাদের এটা ঠিক করতে হবে কোনটা বাংলাদেশের জন্য ভালো আর কোনটা ভালো নয়। দিনশেষে আমরা সবাই চিন্তা করি বাংলাদেশ জিতুক। এই যে মানুষ বাংলাদেশ, বাংলাদেশ বলে চিৎকার করে এটা জিতলেই চিৎকার করে। বাংলাদেশের মানুষও চায় দল জিতুক। আমরাও বোর্ড থেকে ওইভাবেই চাই। আমার কাছে মনে হয় নাম কোনো ব্যাপার না। পারফরম্যান্সটা গুরুত্বপূর্ণ।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: একবারের আইপিএলে বাংলাদেশের তিনজন ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছেন। যদিও সেসময় সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাসদের জাতীয় দলের খেলা আছে। তবুও বিশ্বকাপ বিবেচনায় তাদের পুরো মৌসুমে খেলতে দেয়াটা লাভজনক হবে বলে মনে হয় কিনা...
সুজন: আইপিএল অনেক বড় একটা টুর্নামেন্ট। এটা নিয়ে আসলে কোনো সন্দেহ নেই। ওরা খেলবে এটা আমরাও চাই। কিন্তু আমি একটা জিনিস বলবো দেশের আগে না। এটা আপনার দেশ, হারবে জিতবে। আমাদের ওই বিলাসিতা নেই, অন্যদের ওই বিলাসিতা থাকতে পারে কারণ তাদের অনেক ক্রিকেটার আছে। আমাদের তো সাকিবের মতো ক্রিকেটার আরেকটা নেই বা লিটনের মতো ওপেনিং ব্যাটার বা মুস্তাফিজের মতো পেসারও নেই। তবে আমি বলব যদি ফ্রি থাকে ওরা অবশ্যই খেলতে দেয়া উচিত।
দেখুন, আমরা যদি এই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো না খেলি তাহলে উন্নতি হবে না। সব দল থেকেই কিন্তু অনেক ক্রিকেটার যাচ্ছে। বাংলাদেশ একটা দেশ যেখান থেকে নিতে চায় না। যখন এখানে যাবে তখন তরুণরা তৈরি হবে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেললে অবশ্যই আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে। কারণ ওইখানে দারুণ ক্রিকেট হয়। আমি মনে করি যখন ফ্রি থাকবে তখন অবশ্যই খেলতে দেয়া উচিত। আমি একদম ওদের পক্ষে। যখন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলা থাকবে, যেটা আমাদের জিততেই হবে, যখন ওদের দরকার আমাদের তখন দেশের হয়ে খেলাটার পক্ষে আমি। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।
আমার মনে হয় খেলোয়াড়েরাও এটা প্রেফার করে। এমন না যে সাকিব বাংলাদেশের খেলা না খেলে আইপিএল খেলবে। এটা বোঝার ভুল থাকে। ওরাও চায় দেশের জন্য খেলতে। কারণ সাকিবের দেশের সন্তান। সাকিব বাংলাদেশের ব্র্যান্ড। লিটন, মুস্তাফিজ যাদের কথাই বলেন। তারা আমাদের ক্রিকেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি এটা ওরা চিন্তা করবে। যেটা ভালো হবে সেটাই করবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: চান্দিকা হাথুরুসিংহের ফেরার খবরে আপনি সাধুবাদ জানিয়েছিলেন। তাকে প্ল্যানের মাস্টার বলা হয়ে থাকে। এদিকে সাকিবের ক্রিকেট ব্রেইন তো দুর্দান্ত। তাদের দুজনের জুটি বাংলাদেশকে কতদূর নিয়ে যাবে বলে আশা করছেন।
সুজন: আমি মনে করি অনেকদূর। এই জুটি যদি না পারে তাহলে আর কেউ পারবে না। আমি আশা করি সাকিব বাংলাদেশের হয়ে আরও বেশি সময় খেলুক। বাংলাদেশেরকে ক্রিকেটকে ওর আরও অনেক কিছু দেয়ার আছে। কারণ ওর যে অভিজ্ঞতা এটা আপনি ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবেন না। এই অভিজ্ঞতাটা যদি দলের সবার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে আর দলটাকে তৈরি করতে পারে তাহলে দারুণ কিছু হবে। আর চান্দিকা অন্যরকম একজন মানুষ। সে ফুলটাইম কোচ, এমন না যে মাঠে আসলাম, কাজ করলাম চলে গেলাম। শুধু অনুশীলনে কথা বলবে তা নয়।
ও সারাদিন কাজ করে, ওর পরিকল্পনা থাকবে, কীভাবে দল সাজাবে, প্রতিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে কাজ করে সেটা খেলোয়াড়দের মাঝে বলা বা সেইভাবে কার্যকর করা এগুলো সব ওর মাঝে আছে। এগুলো সব কোচই হয়তবা করে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ওরটা একটু বেশি। আমি অনেক কোচের সঙ্গেই কাজ করেছি। কিন্তু হাথুরুসিংহের মতো কাউকে দেখিনি। ওকে নিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। প্রথমবার যখন আসলো তখনও বোর্ডে আমার সুপারিশ ছিল। আমিও দারুণ খুশি যে বাংলাদেশের কোচের জন্য আমরা সঠিক মানুষকে বাছাই করেছি।
ক্রিকফ্রেঞ্জি: তাহলে তামিম ও হাথুরুসিংহের জুটি কিভাবে দেখছেন?
সুজন: সাকিব-তামিম দুজনই আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটার। সাকিব দুই ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব করে, তামিম একটাতে করে। ওর অভিজ্ঞতা কম না। আমার মনে হয় তামিম-হাথুরুসিংহের রসায়নটাও ভালো হওয়ার কথা। তামিম কিন্তু ভালো নেতা। এটা একটা বিশ্বাসের ব্যাপার, তামিম যা চাচ্ছে বা হাথুরুসিংহে যা চাচ্ছে তা মিলছে কিনা। কোচ-অধিনায়কের মাঝে মতের অমিল থাকতেই পারে কিন্তু যখন আপনি দলটা বানাবেন তখন দুজনেরই যেন মনে হয় এটাই সেরা দল।
এই জিনিসটা যদি থাকে... আমার মনে হয় তামিম-হাথুরুসিংহের মধ্যে হওয়া উচিত, আমার মনে হয় হবে। তামিম সব সময় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখন তো আরও সেটা বেশি কারণ ও এখন অধিনায়ক। আর ওর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কিন্তু খুব ভালো খেলছে। আমার মনে হয় এখান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আরও ভালো করবে ইনশাআল্লাহ। আশা করি তামিমের অধীনে এই বিশ্বকাপে আমরা অনেক ভালো করবো। সেটা হলে আমাদের ক্রিকেটের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে।