|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
‘জীবনের বাঁক মাঝেমধ্যে বদলে যায়’... উক্তিটির সঙ্গে হয়তো একমত পোষণ করবেন সাব্বির রহমান। বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার পথে তার জন্য দুয়ার খুলেছে জাতীয় দলের। ক্রিকেট পাড়ার গুঞ্জন হয়েছে সত্য, তবে বিমানে থাকায় দলে ফেরার বার্তা তিনি পেয়েছেন খানিক দেরিতে। তাতে কি! ৩ বছর পর দেশের হয়ে ফের খেলার সুযোগটা যে সহজেই আসেনি তা ভালো করেই জানেন সাব্বির।
লাল-সবুজের জার্সিতে সাব্বির সর্বশেষ খেলেছেন ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। মাঝের ২ বছর ১১ মাসে কত কিছুই না বদলেছে। মাশরাফি বিন মর্তুজার হাত থেকে ওয়ানডের নেতৃত্ব উঠেছে তামিম ইকবালের কাঁধে। টেস্টের নেতৃত্ব বদল হয়েছে তিনবার, টি-টোয়েন্টিতে বদলেছে চারবার। বদলে গেছে কোচিং স্টাফও। এতসব পরিবর্তনের মাঝে সাব্বির নিজেও বদলে গেছেন।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আরও গুছিয়ে নিয়েছেন মারকুটে এই ব্যাটার। হয়েছেন আরও পরিশ্রমী। ধারাবাহিকতাটাও অনেকখানি যুক্ত করেছেন নিজের পারফরম্যান্সে। এ বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রায় ৪০ গড়ে করেছেন ৫১৫ রান। রাজশাহী লিগ ও বাংলাদেশ টাইগার্সেও রান পেয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সুযোগ পেয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজে 'এ' দলের ওয়ানডে সিরিজে।
উইন্ডিজের বিমানে ওঠার আগেই সাব্বির গুঞ্জন শুনেছিলেন এশিয়া কাপ নিয়ে। মনে আশা বেধেছিলেন সেখানে ভালো খেললে হয়তো সুযোগ আসবে। কিন্তু বিমান থেকে নামার আগেই সুখবর পেয়েছেন এই ক্রিকেটার। যদিও তার বিশ্বাস ছিল পরিশ্রম করলে একদিন না একদিন জাতীয় দলে ফিরবেন।
ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় জাতীয় দলে ফেরার প্রসঙ্গে সাব্বির বলেন, ‘না, কোন আভাস পাইনি। শুধু শুনেছিলাম আমি-সৌম্য বিবেচনায় আছি। ‘এ’ দলে যাচ্ছি, যদি এখানে ভালো খেলি ভেবেছিলাম হয়তো সুযোগ থাকবে। বাকি সবাই যেটা ভালো করেছেন সেটাই হয়েছে।’
‘যখন শুনেছি তখন আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্লেনে ছিলাম, অনেক মেসেজ আসছিল কিন্তু দেখতে পারছিলাম না। এরপর খবরে দেখলাম যে আবারও সুযোগ পেয়েছি। আমার চেয়ে বেশি আমার পরিবার অনেক আত্মবিশ্বাসী ছিল যে আমি একবার না একবার জাতীয় দলে ফিরব। আজ হোক বা কাল হোক। এর জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে গিয়েছি। এতোদিন কষ্ট করেছি। একটা লক্ষ্য ছিল’, আরও যোগ করেন তিনি।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে দেশের হয়ে সাব্বির এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছেন মোট ৪৪টি। ৪টি হাফ সেঞ্চুরিসহ প্রায় ২৫ গড় ও ১২০ স্ট্রাইক রেটে এই ব্যাটারের রান ৯৪৬। তবে অধিনায়ক মাশরাফির অধীনে তিনি সবচেয়ে বেশি সফল ছিলেন। ২৭ ম্যাচে ১২২ স্ট্রাইক রেটে ৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ প্রায় ৩১ গড়ে রান করেছেন ৬৯৭।
সাব্বির এশিয়া কাপে খেলবেন সাকিবের অধীনে। এই অধিনায়কের অধীনেও খারাপ করেননি তিনি। ৯ ম্যাচে প্রায় ১৯ গড়ে এক হাফ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ১৬৭ রান। তবে সাকিবের অধীনে তার স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে বেশি, প্রায় ১২৬। সাব্বির নিজেও মনে করেন, 'অধিনায়ক' সাকিবের অধীনে ২২গজে বাড়তি স্বাধীনতা পান তিনি। সেই সঙ্গে তিনি এটাও জানেন যে দেশের হয়ে খেলাকালীন সর্বদা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
সাব্বির বলেন, ‘সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে তো সবারই ভালো সম্পর্ক। উনার সঙ্গে আমার জুটিটা ভালো হয়, আমরা দুজনই স্বাধীনভাবে খেলতে পছন্দ করি। উনার অধীনে এটা পাব খুব ভালোভাবে। আর জাতীয় দলে তো কারও জায়গা পাকাপোক্ত থাকে না, সব সময় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়েই যেতে হয়। চেষ্টা থাকবে শতভাগ দেয়ার এবং দলকে জেতানোর জন্য যে মুহূর্তগুলো দরকার হয় সেগুলো তৈরি করার জন্য।’
কয়েকদিন আগে জিম্বাবুয়ে সিরিজে টি-টোয়েন্টি সিরিজের নেতৃত্ব পেয়ে নুরুল হাসান সোহান জানিয়েছিলেন, এই ফরম্যাটে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে চায় বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে সাব্বির হতে পারেন নতুন এই ব্রান্ডের ক্রিকেট খেলার পথ প্রদর্শক। ভয়ডরহীন ক্রিকেট নিয়ে সাব্বির বলেন, ‘আর অন্ধের মতো মেরে লাভ নেই, নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী খেলব। সেটা ফিয়ারলেস (ভয়ডরহীন) ক্রিকেট হোক বা স্বাধীনভাবে খেলার।’