|| স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ||
সেই ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে পিঠে ওজনদার ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড়াতে বের হওয়া। তাও আবার এমন দৌড় নয় যে কয়েক চক্কর মেরে এলেই হলো! রীতিমতো ‘ক্রস কান্ট্রি’ দৌড়াতে হত। সেই দৌড় শেষে ফিরে সকালের নাস্তা। এরপর কিছুক্ষণের বিশ্রামশেষে শারীরিক শ্রমের পুরোটা নিংড়ে নেওয়া একের পর এক রুটিন। দুপুরের খাবারের বিরতিশেষে আবার। দিনের শেষে ক্লান্তিতে নিজের শরীর টেনে নেওয়াই হয়ে যেত ভীষণ মুশকিলের ব্যাপার। এক যুগ পেছনে ফিরে গিয়ে ভাবলে এখনো শিউরে ওঠেন তামিম ইকবাল। ২০০৭ সালে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার আগে সিলেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের এক সপ্তাহের কমান্ডো ট্রেনিং যেন এখনো মূর্তিমান বিভীষিকাই হয়ে আছে তার কাছে।
এমনই যে বাংলাদেশের ওডিআই ক্যাপ্টেন আরেকবার ওরকম কোনো কমান্ডো ট্রেনিংয়ে যেতে হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরই নিয়ে ফেলবেন বলে ঠিক করেছেন। কিছুদিন আগে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং মুশফিকুর রহিমদের সঙ্গে নিজের পেইজ থেকে ফেসবুক লাইভে বসা ওপেনার ওরকম কষ্টের মুখে নিজেকে আর কখনো ঠেলে দেবেন না বলেও পণ করেছেন, ‘আমি ঠিক করেছি আর কখনো যদি কমান্ডো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট থেকে রিটায়ারই করে ফেলবো।’
এখনো তামিমের কমান্ডো ভীতি থাকলেও তার প্রায় সমসাময়িক ক্রিকেটার রনি তালুকদারের একদমই তা নেই। নিজের ফেসবুক পেজে একজনের সঙ্গে ফিটনেস ওয়ার্কের ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশন দিয়েছেন, ‘কমান্ডো বিমল।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাংলাদেশ আর্মির চাকুরে বিমলের সত্যি সত্যিই কমান্ডো ট্রেনিং আছে। স্পেশাল ফোর্সে কাজ করার অভিজ্ঞতায় সর্বোচ্চ শারীরিক সক্ষমতাও অর্জন করতে হয়েছে তাকে।
বাংলাদেশের হয়ে একটি টি-টোয়েন্টি ইন্টারন্যাশনাল খেলা রনির ছোটবেলার বন্ধু বিমল ছুটিতে ফিরেছেন নিজের শহর নারায়নগঞ্জে। করোনায় নিজেদের সংগঠন ফ্রেন্ডস ডটকমের মাধ্যমে অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দেওয়ার সামাজিক কার্যক্রমের মধ্যেও নিজেকে ফিট রাখতে হচ্ছে রনিকে। কারণ ক্রিকেট তো আবার কখনো না কখনো শুরু হবে। সেই সময়ের জন্য শরীরটাকেও ছেড়ে রাখা যাবে না। নিজেকে ফিট রাখতে হবে।
হাতের কাছে কমান্ডো পেয়ে তুলনামূলক কঠিন ড্রিলেই নিজেকে অভ্যস্ত করতে শুরু করে দিয়েছেন এই মারকুটে ব্যাটসম্যান, ‘বিমল আমার ছোটবেলার বন্ধু। আমরা একই এলাকায় থাকি। বিমল আগে ক্রিকেট খেলতো। প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে খেলেছে। ২০০৪ সালে বিমল আর্মিতে জয়েন করে। ও ছুটিতে বাসায় এসেছে। এখন আমরা এক সঙ্গেই ট্রেনিং করি। এই আর কী!’ কমান্ডোর কঠিন সব ব্যয়ামে ভড়কে না গিয়ে বরং উপভোগই করছেন রুনি, ‘ওর সঙ্গে ট্রেনিং করতে খুবই ভালো লাগে। ও অনেক হার্ডওয়ার্ক করায়। বিমল স্পেশাল ফোর্স এবং কমান্ডো ট্রেনিং দুটোই করেছে। বিমলের সঙ্গে আমি ফিটনেস নিয়ে কাজ করছি। একটি কথা বলে রাখি। ক্রিকেটে কিন্তু ও খুব ভালো অলরাউন্ডারও ছিল।’